নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধকার রাত

সাধারণ মানুষ, কিন্তু এই দেশে সাধারণের দাম নেই

রাতুল রেজা

আলো কে ঢাকতে পারে শুধুমাত্র অন্ধকার

রাতুল রেজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার নেপাল ভ্রমন কাহিনী - পর্ব ২ পোখারা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:১১

পর্ব - ১



নেপালে গিয়ে ঘড়ির সময় ১৫ মিনিট না পিছিয়ে বেশ গোলমালেই পরেছিলাম। তাই সকাল সারে ৭ টার পোখারার বাসে উঠতে সকাল সারে পাঁচটায় বের হয়ে গিয়েছিলাম। আমার হোটেল থেকে সামনে কিছুদুর এগোলেই ট্যুরিস্ট বাস স্ট্যান্ড কান্তিপথ। গিয়ে দেখি অনেক বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমার বাসের নাম ব্লু স্কাই ট্রাভেলস। লাইন খুজে বের করলাম বাস। টিকেট চেক করে দেখি সিট নাম্বার দেয়া নাই, লে হালুয়া। এরই মধ্যে ভোর সকালে বিজয় দাদার ফোন, (১ম পর্বে বলেছি এনার সম্পর্কে) , বললো তাকে বাদ দিয়ে এতো তারাতারি বাস স্ট্যান্ডে গেলাম ক্যানো। সে কি আর জানে আমি ঘড়ির টাইমে গোলমাল বাধিয়ে রেখেছি, যাই হোক, সে বললো সে আসতেসে। কিচ্ছুক্ষনের মদ্ধ্যে বিজয় দাদা হাজির, আমার টিকেট নিয়ে বলল সিট নাম্বার সেই দিতে মানা করেছিল যাতে সামনের সবচেয়ে ভাল সিটটা পাওয়া যায়। মনে মনে বললাম বাহ, ভালই তো। বাস ছাড়া পর্যন্ত বিজয় দাদা থাকলো আমার সাথে। ঠিক সারে ৭ টায় আমার বাস ছেরে দিল।









গাড়ি পাহারে উঠছে তো উঠছেই। একবার নামে একবার ওঠে। মনে মনে ভাবছিলাম এই রাস্তায় জ্যাম লাগলে কি হবে ! আমার মনের ভাবাটাই মনে হয় ভুল ছিল, পাহার থেকে সামান্য নেমেই পড়ে গেলাম ৩০ মিনিটের জ্যামে।





জ্যাম ছাড়ার পর চলতে শুরু করলো বাস। আমিও দেখতে লাগলাম অপরুপ পাহারি দৃশ্য। নাস্তা করার জন্যে বাস একটা হোটেল এ থামলো। নাস্তা করলাম এক বিদিক নাস্তা। ২ টা ডিম সেদ্ধ, পেয়াজ আর আলু দিয়ে ভাজা এক অদ্ভূত খাবার, ২ টা টোস্ট আর জেলি। পরে ভাবলাম ডিম একটা অমলেট নিলেই ভাল হত, চোর পালালে বুদ্ধি বারে আর কি। বিল আসলো ২০০ রুপির মত। আমাদের দেশের মতই হাইওয়েতে এদেরও খাবারের দাম একটু বেশি।







হোটেল







আমার বাস



নাস্তা শেষ করে চলা শুরু করলো। দুপুরে লাঞ্চের জন্যে আরেকটা হোটেল এ থামলো বাস। ২২০ টাকায় বুফে নিয়ে নিলাম।







আমার লাঞ্চ :)







একটু পরেই আরেকটা বাসে কয়েকজন বাংলাদেশীকে দেখলাম, বন্ধু বান্ধব, স্ত্রী নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। খাওয়া শেষে বাসে উঠে পড়লাম। কিচ্ছুক্ষন চলার পরে পরে আবার বিপত্তি, মানে জ্যাম। এবার আবার নেপালীদের কি এক অনুষ্ঠানে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা লাইন ধরে র‍্যালি করছে, ফলাফল রাস্তা বন্ধ।





এখানে আরো প্রায় আধা ঘন্টা আটকে থাকার পর বাস ছাড়লো।





যাওয়ার পথে পড়ল মনোকামনা ক্যাবল কার। এই ক্যাবল কারে ওঠার খুব ই ইচ্ছে ছিল। দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্যাবল কার এটা। অনেক উপরে উঠে মনোকামনা নামক একটা মন্দির আছে, যেখানে যাওয়ার জন্যেই এই ক্যাবল কার। কিন্তু ট্যুরিস্ট বাস এখানে থামেনা বিধায় অধরাই রয়ে গেল আমার মনোকামনা :(



বিকেল সারে ৩ টায় এসে পৌছালাম পোখারা। বাস থামলো ট্যুরিস্ট বাস স্ট্যান্ডে। বাস থেকে নেমেই ট্যাক্সি ওয়ালারা জেকে ধরলো হোটেল নিবো নাকি, অনেক কমে দিবে, অনেক যায়গায় ঘোরাবে হেন তেন। এই জিনিসটা আমার খুব ই বিরক্ত লাগে, যার কারনে আগে থেকেই নেট এ পোখারার হোটেল বুক করে রেখেছিলাম। নেমেই দেখলাম আমার হোটেলের গাড়ি নেমপ্লেট নিয়ে অপেক্ষা করছে। গাড়িতে উঠে চলে গেলাম লেক সাইডের হোটেল গ্র্যান্ড হলিডে তে।



হোটেল পৌছে ম্যানেজার স্বাগত জানালো। নাম রমেশ। আমি আমার নাম বলার সাথে সাথেই বলল যে সেই আমাকে মেইল এ রিপ্লাই দিয়েছিল রিসার্ভেশন কনফার্ম করে। ২ রাতের রুম বুক করেছিলাম ৪৩ ডলার। একটু বেশি কারন একা একা যাওয়ার কারনে সস্তা জায়গায় থাকার মন চায়নি। এর চেয়ে অনেক কমে রুম রয়েছে লেকসাইডে, খুজলেই পাওয়া যাবে।



ফ্রেশ হয়ে নিলাম। জানালা খুলেই বুঝলাম রুমের দাম ক্যানো এতো। জানালা খুল্লেই অন্নপূর্না রেঞ্জ সরাসরি দেখা যায়, দেখা জায় মাউন্ট ফিশটেইল এর চূড়াও। ভাবলাম পয়সা উসূল :)







আমার রুমে দাঁড়িয়ে আমি



হোটেল থেকে বের হয়ে চলে গেলাম ফিউয়া লেক। যায়গাটা সুন্দর, অনেকটা আমাদের কাপ্তাই লেকের মত। এখানে বোটিং করা যায় নিজেই অথবা মাঝি নিয়ে। প্রতি ঘন্টা ৩০০ টাকা নিজে বোটিং এর জন্যে, মাঝি নিলে ৪০০ টাকা। আর ৮০০ টাকায় সারা দিন নিজে চালানো যায়। আমি ভাবলাম মাঝি নিয়েই যাই, একা একা নৌকা চালানো ঝামেলা, আর তাছারা একা চালালে নৌকা ডুবায়েও দিতে পারি ;)



















নৌকা চালানো শুরু করলো মাঝি, আর আমি আপন মনে ছবি তুলতে লাগলাম। কপাল খারাপ থাকলে ভাল ছবি পাওয়া যায়না, ওইদিন কপাল খারাপ ই ছিল। কুয়াশায় কিছুই দেখা যাচ্ছিলনা। ফিউয়া লেক থেকে ফিশটেইল এর চূরা পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়, কিন্তু কুয়াশার কারনে আবছা ভাবে আমি দেখতে পেলেও আমার ডিএসএলআর দেখতে পেলনা :(



অনেক্ষন কথা বললাম মাঝির সাথে। তার জীবিকা, কতদিন ধরে এখানে বোট চালাচ্ছে, ইত্যাদী। মজার ব্যাপার হল এখানে প্রায় সবাই আবছা আবছা ইংরেজী বলতে পারে সে হোক না রাস্তার হকার। আমার মাঝিও মোটামুটি ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভালই ইংরেজী বলল। অনেক ট্যুরিস্ট আসে কিনা এজন্যেই শিখে গেছে।





আমার মাঝি।



১ ঘন্টার কম সময়ে ঘাটে এসে পড়লাম। কারন আমি যখন গিয়েছি তখন প্রায় বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল। সন্ধায় পোখারা দেখতে বের হলাম। লেকসাইড যায়গাটা পুরাই ট্যুরিস্টদের জন্যে বানানো। তাই সন্ধায় জমে ওঠে। প্রচুর দোকান রয়েছে বাহারি জিনিসের। পাহারে ওঠার জ্যাকেট, স্লিপিং ব্যাগ, গহনা, শাল, বিভিন্ন রকমের দেবতার মূর্তি, খঞ্জর, জুতা আরো বহু কিছু। আমি খালি দেখলাম, কারন দাম যা চায় তা দিয়ে কিছু কিনলে নেপাল আর ঘোরা হবেনা B-)









রাতের পোখারা



কাছে পিঠে ইন্ডিয়ান একটা রেস্টুরেন্ট এ রাতের খাবার খেয়ে হোটেল এ ফিরে গেলাম। পরের দিন সকালে সারেংকট যাব অন্নপূর্নার পাশে থেকে সুর্যদয় দেখতে, সে জন্যে ট্যাক্সি ঠিক করতে হবে। হোটেল ম্যানেজার কে বললাম, সে বলল ঠিক করে দিতে পারবে, পাশাপাশি পোখারা সাইট সিইং করাবে। আমি বললাম কত টাকা লাগবে, তার উত্তর ৩০০০ রুপি। আমি মনে মনে বললাম আমারে কি মফিজ পাইছস ;) । তাকে বললাম যদি ১৫০০ টাকার মধ্যে করতে পারে করতে নাহলে আমি নিজেই ঠিক করে নেব। সে আমাকে বোঝাতে শুরু করল "ইট ইস ভেরি গুড প্রাইস" এর চেয়ে কমে পাবেনা না এহেন তেন। আমি মনে মনে কইলাম, চান্দু এই গুলা আম্রিকান, ইউরোপিয়ান দের কউগা যাইয়া ;)। আমি আমার কথায় অটুট থাকলাম। অবশেষে দমে গিয়ে ১৬০০ টাকায় রাজি হল। এর চেয়েও কমে পাওয়া যাবে, বাইরে থেকে ট্যাক্সি আগের দিন সন্ধায় ঠিক করতে হবে। ১২০০ টাকার মধ্যে মনে হয় পাওয়া যাবে। তাছারা সিসন টাইমে একটু বেশি নেবেই। আমি একা গেসিলাম, তাই বেশি খোজা খুজি করি নাই। হোটেল থেকে গাড়ি নিলে সবসময় ই বেশি নেবে।



যাই হোক, রুমে ফিরে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে কিচ্ছুক্ষন নেট ব্রাউজ করলাম, ও বলা হয়নি এখানে প্রায় সব হোটেলেই গেস্ট দের জন্যে ওয়াই ফাই ফ্রি। কাঠমান্ডু তেও তাই। পরে ঘুমিয়ে পড়লাম।



চলবে....



পোখারার ২য় দিন নিয়ে লিখবো পরের পর্বে ইন শা আল্লাহ।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৩

সুমন কর বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
শেষ পর্বে সবগুলো পর্বের লিংক দিয়ে দিলে খুশি হব।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:১৫

রাতুল রেজা বলেছেন: ইন শা আল্লাহ দিব। পড়ার জন্য ধন্যবাদ

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০৫

দ্য েস্লভ বলেছেন: দারুন লাগল। কয়েক বছর আগে আমিও পোখারা গিয়েছিলাম। ...এখন আমেরিকা ঘুরছি...ভাবছি লেখা ছাড়ব... আপনার জন্যে শুভকামনা রইল...

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১০

রাতুল রেজা বলেছেন: আমারো আশে পাশের কয়েকটা দেশ ঘুরে আমেরিকা ঘোরার ইচ্ছে আছে। অবশ্যই ভ্রমন কাহিনী লিখবেন, তাতে আমরা সবাই তথ্য পাবো এবং উপকৃ্ত হব। ধন্যবাদ

৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:১২

অথৈ সাগর বলেছেন:
ভাল লাগল । ভ্রমণ আমার খুব প্রিয় ।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৫১

রাতুল রেজা বলেছেন: আমারো খুব ই প্রিয়। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ

৪| ২১ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:০৯

মোজাহিদুর রহমান ব বলেছেন: সবগুলো পর্বের লিংকর জন্য অপেক্ষাই আছি। লিখা চালিয়ে যাবেন

৫| ২৪ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১০

নতুন বলেছেন: আমি যখন গিয়েছিলাম তখন খুব কম সময় বিদুত থাকতো... ২০১১এর প্রথম দিকে..

৬| ২৪ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২৯

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
পড়ে গেলাম নেপাল ভ্রমণের প্রথম পর্ব।

লেখকের জন্য অনেক শুভেচ্ছা :)

৭| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১০

আশমএরশাদ বলেছেন: এই ধরনের লিখা গুলা আরেকজনকে কি পরিমাণ উপকার করে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আপনাকে সাধুবাদ।
কলকাতা নিয়ে আমারো একটা সিরিজ পোস্ট আছে।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৫৪

রাতুল রেজা বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার সিরিজ পড়ার অপেক্ষায় রইলাম

৮| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৫৩

লিখেছেন বলেছেন: manush eto valo lekhe !! pore valo laglo

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:০৩

রাতুল রেজা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

৯| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৬

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: খুব সুন্দর করে বর্ননা করেছেন সাথে ছবি গুলোও দারুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.