নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধকার রাত

সাধারণ মানুষ, কিন্তু এই দেশে সাধারণের দাম নেই

রাতুল রেজা

আলো কে ঢাকতে পারে শুধুমাত্র অন্ধকার

রাতুল রেজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিয়াস নদীর তীরে (মানালী ভ্রমন) পর্ব-২ দিল্লী

১২ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৩৯

প্রথম পর্বের পর

ইন্দিরা গান্ধী এয়ারপোর্টা বেশ বড় ও সুপরিসর। বিমান থেকে নেমে প্রায় ১৫ মিনিট হাটতে হয়েছে কনভেয়ার বেল্টে পৌছানোর জন্য। এখানে কেউ যদি হাটতে না চায় তারও ব্যবস্থা আছে, মানে লিফট আছে যা আপনি না হাটলেও আপনাকে পৌছে দেবে। লোকজন খুব ই কম চোখে পড়ল। আস্তে আস্তে আমরা কনভেয়ার বেল্টের কাছে চলে গেলাম লাগেজ নেয়ার জন্য। বেশি অপেক্ষা করতে হল না, কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাদের ২ জনের লাগেজ চলে আসলো। লাগেজ কাধে করে আমরা এগোতে লাগলাম। অনেক বড় বিমানবন্দর, পথ যেনো শেষ ই হতে চায়না। হাটতে হাটতে চোখে পড়ল ভারতের প্রধানমন্ত্রি নরেন্দ্র মোদীর বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিলবোর্ড। আমি আসলে খুজছিলাম এয়ারপোর্ট মেট্রো স্টেশনের রাস্তা। দিল্লী এয়ারপোর্টের সাথেই রয়েছে স্পেশাল মেট্রোরেল "এয়ারপোর্ট এক্সপ্রেস" এর সংযোগ যা সরাসরি নতুন দিল্লী রেল স্টেশনে নিয়ে যায়। দিল্লীর মেট্রো রেল নাকি বেস্ট। আমারো তাই মনে হয়েছে।



বেশি খুজতে হল না, এরাইভাল দরজা পাওয়ার আগেই মেঝেতে খুব সুন্দর ভাবে মেট্রো রেলের পথ নির্দেশনা দেয়া আছে। সেগুলো দেখেই এগোতে এগোতে পৌছে গেলাম এয়ারপোর্ট IGI 2 মেট্রোস্টেশনে। আমরা যাব নিউ দিল্লী রেলস্টেশন লাগোয়া পাহারগঞ্জ এলাকায়। তাই টিকেট নিলাম নিউদিল্লী স্টেশন ২ জন ১২০ রুপি। দামটা কিঞ্চিত বেশি কিন্তু পথের দুরত্ত এবং দিল্লীর ট্রাফিক জ্যামের থেকে রেহাই পাওয়া যায়। টিকেট নিয়ে ট্রেনে ওঠার পূর্বে আমাদের সমস্ত লাগেজ স্ক্যানারে চেক করা হল, সাথে আমাদেরও। দিল্লীর প্রতিটা মেট্রো স্টেশনেই এভাবেই তল্লাশি করা হয়। এর জন্যে রয়েছে স্পেশাল বাহিনী। সব কিছু শেষ করে আমরা উঠলাম মেট্রো রেলে। অনেক সুন্দর ও পরিপাটি। এয়ারপোর্ট মেট্রো বলে লাগেজ রাখারও ব্যাবস্থা আছে। লাগেজ হ্যাংগারে রেখে বসে পড়লাম সিটে। খুব বেশিক্ষন থামেনা এই মেট্রো ট্রেন। মোটামুটি ২৩-২৪ সেকেন্ড খোলা থাকে ট্রেনের দরজা। তাই তারাতারি উঠতে হয়। এয়ারপোর্ট স্পেশাল ট্রেন বলে হয়ত ১ মিনিট থেমেছিল ট্রেনটি। এখানে নরমাল স্টেশন গুলোতে ২ মিনিট অন্তর ট্রেন পাওয়া যায়। এয়ারপোর্ট স্পেশাল পাওয়া যায় ১৫ মিনিট অন্তর। আমাদের ওঠার ১ মিনিট পর ছেরে দিল ট্রেন। প্রথম কিছুক্ষন মাটির নিচ দিয়ে গেলেও অল্প কিছু পরেই উঠে এলো উচুতে। আমরাও দেখতে লাগলাম দিল্লী শহর। ট্রেনে খুব পরিষ্কার ভাবে প্রতিটা স্টেশন আসার আগে তার নাম এবং দরজা কোন দিকে খুলবে তা ঘোষনা করা হয় হিন্দিতে এবং ইংরেজিতে। কোনো ছবি তুলতে পারলাম না কারন মেট্রো ট্রেনে এবং স্টেশনে ছবি তোলা সম্পূর্ন নিষেধ। যে ছবি গুলো দেয়া হয়েছে তা গুগল থেকে প্রাপ্ত।


দিল্লী এয়ারপোর্ট মেট্রো



মোটামুটি ১৫ মিনিটের মধ্যে মাত্র ৪ টি স্টেশনে থেমে পৌছে গেলাম নিউ দিল্লী। ট্রেন থেকে নেমে বের হওয়ার রাস্তা খুজতে লাগলাম। বেশি খুজতে হলো না অবশ্য, তারাতারি ই পেয়ে গেলাম। দিল্লীর সব মেট্রো স্টেশনেই খুব সুন্দর ভাবে পথ নির্দেশিকা দেয়া আছে। যার ফলে কেও ই পথ হারাবেনা। মেট্রো স্টেশন থেকে বের হয়ে পাহারগঞ্জ যাওয়ার জন্য রিকশা ঠিক করলাম। ভারা ঠিক হল ৬০ রুপি। স্টেশনের ভেতর দিয়েও ওইপার পাহারগঞ্জ যাওয়া যায়, লাগেজ থাকার কারনে রিকশা নিলাম। আমরা যাব পাহারগঞ্জের আরাকাশান রোডে হোটেল আরিয়া ট্যুরিস্ট লজ এ। এই হোটেলেই যত বার দিল্লী এসেছি উঠেছি। রিকশা ওয়ালা বেটা অনেক আগে নামিয়ে দিল। কি আর করা হাটা দিলাম আমরা ২ জনে। এই পাহারগঞ্জ এলাকাটা হলো হোটেল এলাকা। এখানে প্রচুর হোটেল রয়েছে ট্যুরিস্টদের জন্য। রয়েছে অনেক দালাল ও বাটপার। আমি যেহেতু এদের দেখে অভ্যস্ত তাই খুব একটা পাত্তা না দিয়ে আরাকাশান রোডে চলে গেলাম। হোটেল খুজে পেয়ে রুমও পেয়ে গেলাম, দরদাম করে ১১০০ রুপি ঠিক করা হল ভারা। ফরমালিটি শেষ করে রুমে চলে গেলাম আমরা ফ্রেশ হতে। এখন প্রধান চিন্তা ফেরার ট্রেনের টিকেট কাটা। আমাদের হোটেলের সাথেই লাগানো রেল স্টেশন, তাই ভাবলাম ফ্রেশ হয়েই টিকেট কাটতে যাব। ফ্রেশ হতে গিয়ে কমোড দেখে আমার অক্কা পাওয়ার অবস্থা হল :(। কমোডে কোনো হ্যান্ডেল শাওয়ার নাই, এর বদলে কমোডের ভেতরে শাওয়ার ফিট করা আছে যা আপনার **** টার্গেট করে পানি ছুড়বে :|। এমন অত্যাধুনিক কমোড দেখে আমি কিংকর্তব্যবিমূর খেয়ে গেলাম। মহা চিন্তায় পড়া গেল, এখন বাথরুম সারবো কি করে,টার্গেট যদি মিস হয়। ধুত্তোরি। বাথরুম বাদ দিয়ে শুধু ফ্রেশ হয়ে ডলার ভাংানোর জন্য মানি এক্সচেঞ্জ খুজতে বের হলাম ২ জনে। বেশি খুজতে হল না, পাশেই পেয়ে গেলাম। আমাদের বাংলাদেশীদের চেহারা দেখলেই বোঝা যায় কিনা আমার জানা নেই তবে মানি এক্সচেঞ্জার বেটা আমাকে দেখেই বাংলায় কথা বলা শুরু করলো। লোকটার বাড়ি আসামে। তাই বাংলা ভাষাটা ভালই জানা আছে তার। ডলার ভাংগিয়ে রেট পেলাম ৬৫ টাকা করে। ভালই পেলাম তাই ভাংগিয়ে ফেললাম। কুশল বিনিময় শেষে বের হয়ে সোজা রেল স্টেশনে ঢুকে পড়লাম। আমাদের যেতে হবে ইন্টারন্যাশন্যাল ট্যুরিস্ট ব্যুরো তে যা স্টেশনের পাহারগঞ্জ সাইডের ২য় তলায় অবস্থিত। আমি এর আগেও এখান থেকে টিকেট করেছি। এখানে পাসপোর্ট দেখিয়ে বিদেশী কোটায় টিকেট কেনা যায় ২৪ ঘন্টা। ২য় তলায় পৌছে খুজে পেলাম ট্যুরিস্ট ব্যুরো। আমরা যাব দিল্লী শিয়ালদাহ রাজধানি এক্সপ্রেস এ। সেই মোতাবেক ফর্ম নিয়ে পুরন করে টোকেন নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ২-৩ জন বাংলাদেশিও ছিল সেখানে। অপেক্ষার পালা শেষ হলে অফিসার আমাকে ডাকলো। বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে সে ভালই বিরক্ত হল এবং ওয়াশ রুমের দিকে গেল। আমাকে শুনিয়েও দিল আমরা বাংলাদেশিরা রাত ৮ টার পরেই টিকেট কাটতে আসি। আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম। এদিকে পিছনে তাকিয়ে দেখি গিন্নী ঘুমিয়ে পরেছে।

একটু বাদে লোকটা ফিরে এলো এবং আমিও টিকেট পেয়ে গেলাম ২ টায়ার এসির। ভারা পড়ল ৮৩৭০ রুপি। এবারে অবশ্য লোকটার ব্যাবহার মার্জিত ছিল। হয়তো আমার নিশ্চুপ থাকাতেই সে ব্যাপারটা বুঝতে পারে। টিকেট নিয়ে ফিরে এলাম হোটেলে। এখন আবার আরেক চিন্তা, তা হল মানালীর বাসের টিকেট। মানালীতে সরকারি বেসরকারি ২ ধরনের বাস ই যায়। আমি পরামর্শপ্রাপ্ত হয়েছি সরকারি বাসে যাওয়ার। কারন বেসরকারি বাস গুলো মূলত বাটপার হয়। ফেরার পথে অবশ্য এদের বাটপারি দেখেছিলাম সেটা পরে লিখবো। এখন সরকারি বাসের টিকেটে সব সময় চাপ বেশি থাকে। হিমাচল প্রদেশের সরকারি বাস হিমাচল রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন এসি ভলবো ও নন এসি বাস পরিচালনা করে মানালীর উদ্যেশ্যে। আমি মূলত ভলবো বাসের টার্গেট নিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু টিকেট নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। বাজে রাত ৯ টা। কিছু আশেপাশের ট্রাভেল এজেন্সিতে খোজ নিলাম, কিন্তু কোথাও ই সরকারি বাসের টিকিট পেলাম না। মানে সব সোল্ড আউট। যা আছে তা প্রাইভেট বাসের। অগত্যা রাত ৯ টায় গিন্নীকে নিয়ে রওনা দিলাম কাশ্মিরি গেট ইন্টার স্টেট বাস টার্মিনাল। একটা সিএন জি নিয়ে ভারা মিটালাম ৬০ রুপি। দিল্লীতে হিন্দিতে কথা বলতে পারলে সি এন জি ভারা ও অনেক কিছুই সস্তায় পাওয়া যায়। আমার হিন্দিটা একটু ভালই বলা চলে তবে সেটা ব্যাবহার করি শুধুমাত্র যেখানে বাংলাদেশী পরিচয় দেয়ার দরকার নেই। মোটামুটি ৪৫ মিনিট পর আমরা পৌছালাম মহারানা প্রতাপ ইন্টার স্টেট বাস টার্মিনালে। এখানেও ঠিক একই ভাবে লাগেজ ও শরির চেক করিয়ে ঢুকতে হয়। বাস টার্মিনাল যে এতো পরিষ্কার ও হাইফাই হতে পারে তা আমার জানা ছিলনা। এই বাস টার্মিনাল দেখে আমার আফসোসের সাথে গাবতলির কথা মনে পরল :||


কাশ্মিরি গেট বাস টার্মিনাল

ভেতরে ঢুকে লিফটে ২য় তলায় চলে গেলাম। খুজে পেলাম হিমাচল রোড ট্রান্সপোর্টের টিকেট কাউন্টার। কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকলে যা হয় আরকি, আমি যাওয়া মাত্রই কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেল :(। কি আর করা, এদিকে রাত বেজে গেছে ১০ টার মত আর দিল্লী শহর কে রাতে মোটেই ভাল চোখে দেখার ইচ্ছে নাই আমার। তাই সি এন জি নিয়ে আবার হোটেলে ফিরে এলাম। কাল সকালে আবার চেষ্টা করতে হবে। রাতে খেয়ে নিলাম এক অসমিয় ঢাবায়। বাংলা থালি দাম পড়ল ৭০ টাকা করে। ভালই খেলাম। হোটেলে ফিরে বাসায় ফোন করে জানালাম সবাইকে। বাথরুমে যাওয়ার ই সাহস হলো না :|| । সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখে ঘুম এসে গেল।

চলবে

পর্ব-৩

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.