নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধকার রাত

সাধারণ মানুষ, কিন্তু এই দেশে সাধারণের দাম নেই

রাতুল রেজা

আলো কে ঢাকতে পারে শুধুমাত্র অন্ধকার

রাতুল রেজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিয়াস নদীর তীরে (মানালী ভ্রমন) শেষ পর্ব

২২ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:০০

৫ম পর্বের পর



খুব সকালে ঘুম ভেংগে গেল। এদিকে উঠে দেখি গিন্নী আগে থেকেই উঠে বসে আছে। কি ব্যাপার? বারান্দায় যেয়ে দেখি মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড়ি বৃষ্টি আমি কখনো দেখিনি। সকাল সকাল সাদা কাল সাদা মেঘ ঢেকে দিয়েছে মানালিকে। অদ্ভূত সুন্দর বৃষ্টি। আমরা হোটেলের ভিউ টা পেয়েছিলাম বেশ চমৎকার। বেশ কিছুক্ষন বৃষ্টি দেখে ভেতরে সৎবিত ফিরে পেলাম আর তা হল এই বৃষ্টিতে বাহিরে বের হব কিভাবে?

আজকেই আমাদের মানালীতে শেষ দিন। সন্ধায় দিল্লীর বাসের টিকেট কাটা আছে। তাই সারাদিন সময় আছে ঘুরে দেখার। আমাদের প্ল্যান ছিল গাড়ি রিসার্ভ করে মনিকরন যাব। মনিকরন মানালী থেকে ৮০ কিমি দূরে। মনিকরনে একটু উষ্ণ ঝরনা আছে, সাথে একটা অনেক পুরোনো গুরুদোয়ারা। এটা একটা ট্যুরিস্ট স্পট যেখানে প্রায় সবাই যায়। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এদিকে আর যাবনা। এমনিতে এই বৃষ্টিতে ঘোরাঘুরি ভাল লাগবেনা। কিন্ত আশেপাশে তো ঘোরাই যায়। তাই চিতা করলাম সোলাং ভ্যালিটা ঘুরে আসি। সোলাং ভ্যালিতে এখন অবশ্য বরফ পাওয়া যাবেনা কিন্তু তার পরেও যায়গাটা সুন্দর।



ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। নাস্তাটা আমাদের হোটেলেই করলাম। কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট ছিল বেশ ভালই। নাস্তা করে ১০ টার দিকে একবারে চেকাউট করে বের হয়ে আসলাম। এবার যেতে হবে মল রোডের বাস স্ট্যান্ডে। সেখানে ক্লক রুমে ব্যাগ জমা রাখবো। হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা বৃষ্টিস্নাত মানালী দেখতে দেখতে বাস স্ট্যান্ডে চলে এলাম। এখানে ক্লক রুমে ২জনের ব্যাগ জমা দিলাম। ৬০ টাকা খরচ পড়ল। ব্যাগ রেখে বাস স্ট্যান্ডের সাথেই সি এন জি দাঁড়িয়ে ছিল অনেক গুলা। একটা সি এন জি ঠিক করলাম সোলাং ভ্যালি যাওয়া আসা ৯০০ টাকা। মাঝে ২ ঘন্টা সময় আমাদের ঘোরার। মন্দ না। সোলাং ভ্যালি মানালী থেকে ১৪ কিমি প্রায়। সি এন জি চলছে আর আমরা বৃষ্টিস্নাত অপূর্ব মানালী দেখছি। মানালি আসলেই অনেক সুন্দর। এর আসর রূপ দেখতে হলে শহর থেকে বাহিরে আসতে হবে।

মোটামুটি ৪৫ মিনিট লাগলো আমাদের সোলাং ভ্যালিতে আসতে। সি এন জি ওয়ালা কে নিচে রেখে আমরা উপরে হেটে চললাম সোলাং ভ্যালিতে



সোলাং ভ্যালী একটা উপত্যকা যায়গা। এখানে শীতকালে প্রচুর বরফ পরে বিধায় এখানে তখন এডভেঞ্চার এক্টীভিটি হয়। এখন এখানে তেমন কিছুই নেই কারন বরফ নেই। তবে যায়গাটা অনেক সুন্দর। এখানে একটা ক্যাবল কার রাইড আছে তবে দাম শুনলে অক্কা পাওয়ার মত অবস্থা হবে। আমরা ক্যাবল কারে উঠিনি।



বেশ কিছুক্ষন আমরা উপরে উঠে বসে ছিলাম। কখনো মেঘ আমাদের ভেদ করে চলে যাচ্ছে কখনো আমরা মেঘের ভেতরে গিয়ে ঢুকছি। এরকম করতে করতে কালো মেঘ চলে এল আর আমরাও সেধে গিয়ে ঢুকলাম মেঘের মধ্যে। বিপত্তি টা ঘটলো এখানেই। আমাদের সাথে মেঘের ঘর্ষনের ফলেই হল কিনা বুঝলাম না কিন্তু প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। মেঘ বাবাজি বোধ হয় আমাদের পছন্দ করলো না। এদিকে আমরা আনি নি ছাতা। ২জনেই দিলাম দৌড়। কিন্তু পাহারী রাস্তায় কি আর দৌড়ানো যায়, ভিজতে ভিজতে কাক হয়ে সি এন জির ভেতরে ঢুকলাম। সি এন জি আমাদের নিয়ে রওনা দিল মানালি শহর



২টা বেজে গেছে। এদিকে বিকাল ৬ টায় দিল্লীর বাস। খিদেও লেগেছে ভালই। তবে আজ আর মানালীর কোনো থালী খেতে ইচ্ছে করছে না। মাংস খেতে হবে। মানালীর মল রোডে একটা মুসলীম রেস্টুরেন্ট আছে শুনেছিলাম। সেটাই খুজতে লাগলাম। অল্প খোজার পরেই পেয়ে গেলাম দিল্লী মুঘল রেস্টুরেন্ট। আমরা রেস্টুরেন্ট এর ভেতরটা দেখে পুরাই অবাক। একজন কাস্টমার ও নেই। একবার ভাবলাম দোকান মনেহয় বন্ধ। কিন্তু কি ভেবে ঢুকে পড়লাম। আমি ভেবেছিলাম যেটা খেতে চাইব সেটা হয়ত পাবোনা কারন দোকান হয়ত চলে না। কিন্তু অবাক করে মুসলীম ওয়েটার আমার বিরিয়ানীর অর্ডার নিল এবং খুব তারাতারি পরিবেশন করল। এখানে একটা জিনিস আমার খুব ভালো লেগেছে তা হল মানালীতে এই হোটেল গুলোতে খাবার থাকে ভালই যা ১টা নিলে ২জনের আরামে হয়ে যায়। ভাল লাগার বিষয়টা হল ওয়েটার বলেই দেয় যে ২জনের জন্য ১টাই যথেষ্ট। তারা তাই ২জনের জন্য ২টা নিতে গেলে অবাক হয়। যা আমাদের দেশের ওয়েটার রা কখনোই বলবে না। তারা ২টাই কিনিয়ে ছারবে।

আমরা খাওয়া শুরু করলাম।স্বাদ ভালই ছিল। এদিকে দেখি আরো ২জন কাস্টমার ঢুকলো। তাদের কথাবার্তা শুনে নিশ্চিত হলাম তারাও বাংলাদেশী। তারা অর্ডার দেয়ার আগে জিজ্ঞেস করে নিল যে খাবার হালাল কিনা। এখানে অবশ্য মেনুতেই লেখা আছে ১০০% হালাল। যাই হোক, তারা এটাও জিজ্ঞেস করলো যে, যে রান্না করে সে মুসলীম কিনা। এ ব্যাপারটা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। আমরা বাংালীরা সব কিছু একটু বেশি ই জানতে চাই। রেস্টুরেন্ট বেয়ারা অতিশয় ভদ্রতার সাথেই তাকে আশস্ত করলো।



খেয়ে আমাদের বিল আসলো ১৬০ রুপি ২ জনের জন্য। ভালই সস্তা। বিল মিটিয়ে নিচে নেমে এলাম। টিকেট কাউন্টারে যাওয়া দরকার কারন গতকাল বাসের নাম্বার নিতে পারিনি। এখানে প্রাইভেট বাসে টিকেট কাটলে বাসের নাম্বার দিয়ে দেয় এজেন্ট কারন আমাদের দেশের মত বাসের কোনো নাম নেই। বাস স্টান্ডে নাম্বার দেখে নিজেকে বাস খুজে নিতে হবে। বেচারা এজেন্ট আমার জন্যে অপেক্ষা করছিল না খেয়ে। অবশ্য এ নিয়ে তার কোনো অভিযোগ তো ছিলনা।

বাসের নাম্বার নিয়ে মল রোডে এসে বসলাম। এখন আর কোথাও যাওয়ার নেই। তাই ভাবলাম টুকটাক শপিং করা যাক। মল রোডে অনেক দোকান আছে। আমরা কয়েক দোকান ঘুরে কয়েকটা স্ট্রল কিনলাম। স্ট্রল জিনিসটা শালের মতই। কি ভেবে এটার নাম স্ট্রল রাখা হয়েছে সেদিকে আর ভেবে সময় নষ্ট করলাম না। দামাদামি করে দাম পড়ল ১৫০ টাকা পিস।

এরকম টুকটাক স্যুভেনির কিনতে কিনতে প্রায় বাসের সময় হয়ে এলো। আমরা মল রোডের বাস স্ট্যান্ডে ক্লক রুমের দিকে ছুটলাম। সকালে এখানে লাগেজ রেখে গিয়েছিলাম। লাগেজ নিয়ে আমরা ছুটলাম মানালি প্রাইভেট বাস স্ট্যান্ডের দিকে। মানালিতে সরকারি বাস স্ট্যান্ড টা মল রোডে কিন্তু প্রাইভেট বাস স্ট্যান্ড মল রোড থেকে প্রায় ১ কিলো দূরে। ভারা নিল ১০০ রুপি, পুরাই ডাকাতি। যাই হোক, এখন বাস নাম্বার দেখে বাস খোজার পালা। খুজেও পেলাম। বাস খুজে লাগেজ বক্সে রাখতে গিয়ে এক অদ্ভূত অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হলাম। এখানে প্রাইভেট বাসের বক্সে লাগেজ রাখতে হলে টাকা দিতে হবে নাহলে রাখা যাবেনা। এধরনের ছোটলোকিতে অভ্যাস্ত না বিধায় কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। এটা নিয়ে অনেক ভারতীয়ও ঝগড়া করছে। আমরা যেহেতু বিদেশী তাই বিনা বাক্যব্যায়ে ৫০টাকা প্রদান পূর্বক লাগেজ রাখার অনুমতি পেলাম।

বাস যথা সময়ে ছাড়ল। আমরাও বিয়াস নদীর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে যেতে লাগলাম। পথে রাতে এক হোটেলে থামলো গাড়ি। খেয়ে দেয়ে বাস ছেরে দিল। একটু পরেই বাসে একটা মুভি চালু হলো, অক্ষয় কুমারের রুস্তম। ভাবলাম যাক সময় টা ভাল যাবে। দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে গেলাম টের পেলাম না।

দিল্লী

সকাল ৮টায় ঘুম ভাংলো। চোখ মেলে দেখি প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। দেখতে ভালই লাগছিল। আমরা মোটামুটি দিল্লীর কাছে পৌছে গেছি। তবে এটা জানতাম না যে প্রাইভেট বাস গুলা দিল্লী শহর পর্যন্ত যায়না। ব্যাটারা আমাদের দিল্লীর বহু আগে নামিয়ে দিল। এদিকে বাসের লোকজোন রেগে অস্থির। তারা এখন কি করবে। আমিও চিন্তায় পিরে গেলাম। বাস থেকে নেমে দেখলাম অনেকগুলো মাইক্রো দাঁড়িয়ে আছে। এরাই ডাক ছিল মেট্রো মেট্রো বলে। কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়লাম। তারা আমাদের নিয়ে গেলো জাহাংিরপুরি মেট্রো স্টেশনে। ভালই হল। ভারা পড়লো ২ জনের ১০০ রুপি। জাহাংিরপুরি স্টেশন থেকে সরাসরি নিউ দিল্লী রেল স্টেশন যাওয়া যায়। আমরা মেট্রো তে ৩০ মিনিটে পৌছে গেলাম নিউ দিল্লী রেল স্টেশন।

আমাদের ট্রেন বিকাল ৪.১৫ মিনিটে রাজধানী এক্সপ্রেস। হাতে অনেকটা সময়। স্টেশনে হাল্কা নাস্তা করে ক্লক রুমের খোজে বের হলাম। পেয়েও গেলাম। লাগেজ রেখে ভাবলাম করোলবাগটা ঘুরে আসি, যদি কিছু কিনতে পারি। একটা সি এন জি নিলাম স্টেশন থেকে। হিমাচলের ঠান্ডা থেকে হুট করে দিল্লীর গরমে আসার পর অবস্থা খুব একটা ভাল ছিলনা। করোলবাগে তেমন কিছু কিনতে পারলাম না। যা পাওয়া যাচ্ছে তা পছন্দ হলো না। এদিকে চিন্তা করে রেখেছি ২জনেই দিল্লীর বিক্ষ্যাত করিমের বিরিয়ানি খাব। তাই কিছুক্ষন পর চলে এলাম করোলবাগ মেট্রো স্টেশনে। করোলবাগ মার্কেটের সাথেই মেট্রো স্টেশন। করোলবাগ থেকে আমাদের যেতে হবে জামা মসজিদ। করোলবাগ থেকে সরাসরি জামা মসজিদ যাওয়া যায়না, মান্ডি হাউজ নেমে ট্রেন পরিবর্তন করতে হয়। আমরা সেভাবেই টিকেট কেটে পৌছে গেলাম জামা মসজিদ।

করিমস বিরিয়ানি জামা মসজিদের ১ নং গেটের রাস্তায় পরে। সামান্য ভেতরে এক চিপা গলির মধ্যে খুজে পেলাম করিমস হোটেল। বেশ বরসর হোটেল। ৩ টা একসাথে। আমরা একটা ফুল বিরিয়ানি অর্ডার করলাম। ৩৮০ টাকা সাথে কাবাব ৯০ টাকা। খেতে গিয়ে আমার মনে হল ঢাকার বিরিয়ানির সাদের কথা। এতো নাম এই বিরানির কিন্তু আমার মোটেই পছন্দ হল না। কিন্তু কাবাবটার সাদ এখোনো ভুলতে পারিনি।



বিল মিটিয়ে আমরা একটা রিক্সা নিলাম নিউ দিল্লী রেল স্টেশন পর্যন্ত, ভাড়া ঠিক হল ৪০ রুপি। পুরোনো দিল্লিতে এই রিক্সা রাইড মনে করিয়ে দিল আমাদের পুরান ঢাকার কথা। ঠিক আমাদের মতই পুরান দিল্লির রাস্তা ঘাট চিপা চাপা। এই চিপা রাস্তা দিয়েই পৌছে গেলাম রেল স্টেশনে।



এখন শুধু অপেক্ষা ট্রেনের জন্যে। টিভিতে প্ল্যাটফর্ম নাম্বার দেখে আমরা আমাদের কাংখিত ট্রেন রাজধানী এক্সপ্রেসে উঠে পড়লাম। ট্রেনে পেয়ে গেলাম ২ জন বাংলাদেশি কে। একজন ছেলে একজন মেয়ে। তারা সম্পর্কে কলিগ। গল্প করতে করতে ট্রেন রওনা হল কলকাতার শিয়ালদাহর দিকে।

আমি এই পর্যন্ত শেষ করে দিয়েছি কারন কলকাতায় লেখার কিছু নেই। সেখানে ২ দিন থেকেছিলাম শুধু শপিং এর জন্যে যদিও জি এস টি ধর্মঘটের কারনে আমরা কোনো বাজার খোলা পাইনি তার পরেও যতটুকু পেয়েছিলাম করেছিলাম। কলকাতা থেকে বাই এয়ার ফিরে এসেছিলাম প্রিয় ঢাকায়।

পড়ার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ :)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.