নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধকার রাত

সাধারণ মানুষ, কিন্তু এই দেশে সাধারণের দাম নেই

রাতুল রেজা

আলো কে ঢাকতে পারে শুধুমাত্র অন্ধকার

রাতুল রেজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

চৈনিক দের দেশে (চীন ভ্রমন- পর্ব ৩ ক্যান্টন ফেয়ার)

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩০



পূর্বের পর্ব

সকালে উঠব বলে মনস্থির করেছিলাম রাতে। সেইমত ঘুমও ভাংলো। কিন্তু অলসতা বিছানা ছারতে চাইল না। তাই ৭ টায় ঘুম ভাংলেও উঠলাম ৯ টায়। উঠেই মনে হল দেরি হয়ে গেল। ক্যান্টন ফেয়ার শুরু হয় সকাল ৯ টা থেকে। আমি শুনে এসেছি সকাল সকাল ঢুকতে হবে নাহলে বিশাল লাইনে পড়ে যাব। ফ্রেশ হয়ে নিলাম। রেডি হয়ে বের হতে হতে ১০ টা বেজে গেল। লিফট দিয়ে নেমে বের হতেই রিসেপশনিস্ট হৃদয় ভোলানো হাসি দিয়ে চাইনিজ গুড মর্নিং জানালো। আমি কি আর ফিরতি গুড মর্নিং না বলে পারি, যে হাসি দিছে, আনম্যারিড থাকলে নির্ঘাত :D

আমি আজকে যাচ্ছি ক্যান্টন ফেয়ারে। গুয়াংজুর এই ক্যান্টন ফেয়ার দুনিয়ার অন্যতম বড় ব্যাবসায়ীক মেলা। চায়নার বড় বড় কোম্পানীগুলো তাদের পন্য পরিচিত করার জন্য এই মেলায় আসে। তাই, মেলায় অংশগ্রহনকারী থাকে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের ব্যাবসায়ীরা। আমি অবশ্য অতবড় ব্যাবসায়ী না, খুব ই ছোটখাট মানুষ আমি। কিন্তু মনের ইচ্ছে আছে একদিন অনেক বড় ব্যাবসায়ী হব, তাই চায়নায় কি কি পাওয়া যায় সেইগুলো জানতে এই মেলায় আসা। ক্যান্টন ফেয়ার ৩ টা ফেজ এ অনুষ্ঠিত হয় । ফেজ ১, ফেজ ২, ফেজ ৩। ৩ টা ফেজে ৩ রকমের ইন্ডাস্ট্রির পন্যের প্রদশনি হয়। কোন ফেজে আপনার কাঙ্খিত পন্যের প্রদশনী হবে সে সম্পর্কে জানতে হলে গুগল এ সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন।



মেট্রোতে একটা স্টেশন চেঞ্জ করে পৌছে গেলাম ফেয়ারে। আমি পাজু স্টেশনে নেমেছিলাম। এখানে ঢুকতে হলে ২ টা স্টেশন রয়েছে তার মধ্যে পাজু একটি। ট্রেন থেকে নেমে ফেয়ারে ঢোকার বিশাল লাইনে পড়ে গেলাম। তবে খুব বেশি দেরি হয়নি আমার কারন আমার সব কিছু আগেই করা ছিল। সব কিছু বলতে নতুন যারা ফেয়ারে অংশগ্রহন করবে তাদের রেজিষ্ট্রেশন করতে হয় আইডি কার্ডের জন্য। আমি আগে থেকেই অনলাইনে রেজিস্টার করে এসেছিলাম যাতে এখানে এসে লাইন ধরতে না হয়। তাই আমার একটা লাইন কম ধরতে হয়েছে। আমি সরাসরি রেজিষ্ট্রেশনের প্রিন্ট আউট নিয়ে চলে গেলাম আইডি কার্ডের লাইনে। সেখানে আমাকে দিতে হল ছবি এবং বিজনেস কার্ড। একটা জিনিস অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ক্যান্টন ফেয়ারে এলে অনেকগুলো বিজনেস কার্ড সাথে করে নিয়ে আসতে হবে, তা না হলে অনেকেই তাদের ব্রশিয়ার দিবেনা।





ফেয়ারে ঢুকে পড়লাম। বিশাল বড় অবস্থা। মেলায় ঢুকেই একটা ম্যাপ নিয়ে নিলাম। এতো বড় মেলা আমি জীবনে দেখিনি। তারা মেলা প্রাংগনকে বেশ কয়েকটি সেগমেন্টে ভাগ করেছে বোঝার সুবিধার জন্য A, B ,C , D এরকম। কোন সেগমেন্টে কি ধরনের পন্য আছে তা ম্যাপে দেয়া আছে। তাই খুব সহজেই ম্যাপ দেখে কাংখিত পন্যের স্টলে যাওয়া যায়।

তবে এর আগে আমাকে সকালের নাস্তা করতে হবে। মেলায় অনেক ফুড স্টল আছে। আমি ভাবলাম সকালের নাস্তা এই ফুড স্টল থেকে করে নেব, দুপুরে ম্যাকডোনাল্ডস থেকে। সেই মোতাবেক একটা হালাল রেস্টুরেন্টে বসলাম। কিন্তু মেন্যু দেখে খাবার আর পছন্দ হয়না। সব কিছুর মধ্যেই মড়ার নুডুলস যা আমি মোটেই পছন্দ করিনা X(( । কিন্তু আশেপাশের সব ফুড স্টলের ই একই টাইপের খাবার। তাই বিফ সহ একটা খাবার অর্ডার করলাম। নাম মনে নাই, কারন চাইনিজ পড়তে পারিনা। ৫ মিনিট পরে গরম গরম সার্ভ করলো। এখন হল মূল বিপত্তিটা। আমি তো হাত অথবা চামচ দিয়ে খেয়ে অভ্যস্ত, চপস্টিক দিয়ে কোনোদিন খাইনি। কিভাবে খাই এখন? প্রায় ৬ মিনিট মত চেষ্টা করলাম চপস্টিক দিয়ে নুডলস তোলার এবং প্রতিবার ই সফলতার সাথে ব্যার্থ হলাম :( । দিলাম ফেলে ডাস্টবিনে চপস্টিক X(( । কিন্তু চামচ দিয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারলাম না। যাই হোক, মুখে দিতেই পেট গুলিয়ে উঠলো। কি খাবার রে বাবা X(( । কোনো ভাবেই আর মুখে দিতে পারলাম না। অগত্যা ২০ আরএমবি দিয়ে কেনা খাবার ওই রকম ই ফেলে ম্যাকডোনাল্ডের দিকে রওনা দিলাম :#




ম্যাকডোনাল্ড থেকে মুরগি ভাজা এবং আইস্ক্রীম খেয়ে মেলা দেখতে বের হলাম । ক্যান্টন ফেয়ারে মূলত চীনের বড় বড় কোম্পানীগুলো অংশগ্রহন করে তাদের পন্য গুলো প্রদশনি করতে। এখানে কেউ বিক্রি করেনা। এখানে মূলত যারা বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, তারা এখানে সুবিধা মত ম্যানুফ্যাকচারার খুজে নিতে পারবে। তাই, যারা ছোট ব্যাবসায়ী, তাদের জন্য এই মেলা নয়। এখানে অর্ডার দিলে মিনিমাম ২০০০ পিস অর্ডার করতে হয় যেকোনো পন্য। আমিতো মূলত প্রথমবার ঘুরতে আসছি, তাই মেলায় ঢুকেছি। আমার মত ছোট ব্যাবসায়ীর জন্য এই মেলা নয়। তবে কোম্পানীগুলোর ব্রশিয়ার, কার্ড সংগ্রহে রাখা ভাল, পরে কাজে দেয়। আমিও ওই ভাবেই খালি ব্রশিওর এবং কার্ড সংগ্রহ করেছি। তবে হ্যা, অবশ্যই নিজের ব্যাবসায়ের কার্ড নিয়ে যেতে হবে অনেকগুল, কারন কোম্পানীগুল আপনার কার্ড না নিয়ে ওদের টা দিবেনা।





আমি সারাদিন মেলায় ঘুরে বিভিন্ন কোম্পানীর কার্ড এবং ব্রশিয়র সংগ্রহ করলাম। আমার ক্যাটাগরি মূলত ইলেক্ট্রনিক্স। তাই ইলেক্ট্রনিক্স সেগমেন্টে ঘুরেছি। বিকাল ৪ টার দিকে বের হয়ে গেলাম মেলা থেকে। সারা দিন হেটে আমার পায়ের ত্রাহি অবস্থা। কোনভাবেই দারাতে পারছিনা। মেট্রোতে উঠে সোজা হোটেলে চলে এলাম। হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে চিন্তা করলাম আজকে কনো ভাবেই কেক খেয়ে থাকা যাবেনা। গুগলে খোজ লাগালাম আশেপাশে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের। পেয়েও গেলাম, কিন্তু এখান থেকে অনেক দূরে। তবে মেট্রোতে যাওয়া যাবে। আমাকে যেতেই হবে আজকে, নাহলে খুধায় মারা পরবো।



আমাকে যেতে হবে গ্যাংডিং স্টেশনে। সেখান থেকে আবার ট্রেন চেঞ্জ করে আরেকটা স্টেশনে। রেস্টুরেন্টটার নাম দিল্লী রেস্টুরেন্ট। সেই মত বের হয়ে পড়লাম। জিয়াংন্যাংশি থেকে গ্যাংডিং তার পর চলে এলাম দিল্লী রেস্টুরেন্টের সামনে। তবে বের হয়ে রেস্টুরেন্ট আর খুজে পাই না :| । গুগলে দেখাচ্ছে আমি রেস্টুরেন্টের বিল্ডিং এর সামনে, কিন্তু আমি রেস্টুরেন্ট আর খুজে পাইনা। কি বিপদ :( । এর পরে পুয়া বিল্ডিং চক্কর দিয়ে এসে দেখলাম চিপায় এক রাস্তা দিয়ে দোতালা যেতে হবে। উঠে দেখি সেই দিল্লী রেস্টুরেন্ট। বাপরে বাপ, খাওয়া নিয়ে এতো যুদ্ধ কোনোদিন করতে হয়নি




হোটেলে বসেই দেখতে পেলাম প্রচুর ভারতীয় এসেছে খেতে। মজার বিষয় হল মালিক ইন্ডিয়ান হলেও হোটেলের বয় গুলা সব চাইনিজ। আমাকে এক চাইনিজ এসে জিজ্ঞাসা করল কি খাবো। মেন্যু দেখে ভেরার মাংশের বিরিয়ানি অর্ডার করলাম। এদের সব খাবার ই হালাল (হোটেলের ভাষ্য অনুযায়ী) । টেস্ট ভালই ছিল। মানে পেটে খুধা অবস্থায় কড়লার জুস ও অমৃতের মত লাগে :|



পেটপুরে খেয়ে হোটেলে চলে এলাম। এবার বিশ্রামের পালা। আগামীকাল শেনজেন যাওয়ার ইচ্ছে আছে। চায়নার ইলেক্ট্রনিক পন্যের রাজধানি হল শেনজেন। তাই সকাল সকাল উঠতে হবে। সেই মত মোবাইল টিপতে টিপতে ঘুমিয়ে পরলাম।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: চীন দেশে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩০

রাতুল রেজা বলেছেন: অবশ্যই ঘুরে আসবেন সুযোগ পেলে, ধন্যবাদ পড়ার জন্য

২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫৩

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: আমি পার্ল নদী থেকে ক্যান্টন ফেয়ারের জন্য নির্ধারিত ভবনটা দেখেছিলাম। আমার সহকারী চায়নি মেয়েটা দেখিয়ে বলেছিল। এখানেই ক্যান্টন ফেয়ার অনুষ্ঠিত হয়। তার ভাষ্যমতে ১৯৫৭ সাল থেকে এ মেলা চলে আসছে। ক্যান্ট টাওয়ারে উঠবেন। আশা করি পুরো গুয়ানজু শহরটা দেখতে পাবেন। ভালো লাগবে।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৪১

রাতুল রেজা বলেছেন: হ্যা, ১৯৫৭ সাল থেকে এখানে ক্যান্টন ফেয়ার হয়। তখন গুয়াংজুর নাম ক্যান্টন ছিল। পরের বার গেলে অবশ্যই ক্যান্টন টাওয়ারে উঠব । ধন্যবাদ আপনাকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.