নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাচ্ছেতাই

সিদ্দিকী শিপলু

সিদ্দিকী শিপলু

সিদ্দিকী শিপলু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি শ্রমিকের কান্নার ঢেউ- সুরতহাল

২৭ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:১৯

ইংল্যান্ড এর স্বনামধন্য পোষাক বিক্রেতা প্রাইমার্ক এর বিক্রীত কাপড়ে ফোর্সড টু ওয়ার্ক এক্সসটিং আওয়ারস এবং ডিগ্রেডিং সুইটশপ কন্ডিশনস ট্যাগ নিয়ে বাংলানিউজ২৪ ডট কম এর দুটি লেখা ছাপা হয়। ১ম লেখা এবং ২য় লেখার লিংক । , বাংলানিউজ লিখেছে যে, ২০১৩ সালের এপ্রিল বাংলাদেশের রানা প্লাজা ধসে নিহত ১১শ’র বেশি মানুষের কান্না যেন বাসা বেঁধেছে ওই লেবেলগুলোতে। রানা প্লাজা ধসের সময় ভবনটিতে যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পোশাক তৈরি হচ্ছিল তাদের মধ্যে একটি ছিল প্রাইমার্ক। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের নামও।



আসলে কি ঘটছে এবং এর সাথে বাংলাদেশের নাম কেন জড়ানো হলো?



১ম ঘটনা - একজন মহিলা প্রথম দাবী করলো যে প্রাইমার্ক থেকে কেনা এক জোড়া ট্রাউজারের পকেটের ভিতরে চাইনিজ ভাষায় লেখা একটা চিরকুট উদ্ধার করে । সে পোষাকটা কিনেছিলো 2011 সনে কিন্তু কখনোও পড়েননি। একবার ব্যাগ গোছাতে যেয়ে সে চিরকুট টা পায় কিন্তু প্রথমে ইংরেজীতে লেখা এসওএস বুঝলেও চাইনীজ ভাষায় লেখা অংশুটুকু বুঝতে পারেন নি। তিনি চিরকুট টার একটা ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দেন। পরে অর্থ জানতে পেরে অসুস্থ হয়ে যান এবং প্রাইমার্কের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু সন্তুষ্ট না হতে পেরে তিনি তা সাংবাদিকদের জানান। বিবিসি এই বিষয়ে পোষ্ট করে 25/06/2014 তারিখে ।বিবিসির পোষ্টের লিংক ।, নীচে সেই চিরকুটের ছবি দেয়া হলো।





কি লেখা ছিল ওই চিরকুটে? অনলাইন পত্রিকা মাইডেইলী করা অনুবাদ অনুসারে তাতে লেখা আছে

” জেলখানার ভিতরে রপ্তানীর জন্য পোষাক প্রস্তুত করা আমাদের কাজ। আমরা প্রতিদিন ১৫ ঘন্টা কাজ করি এবং আমাদেরকে যে খাবার দেয়া হয় কুকুর বা শুয়োড়েরও খাওয়ার উপযোগী নয। আমরা বলদের মত কঠোর পরিশ্রম করি।”



কিন্তু প্রাইমার্কের কাপড় বিক্রেতা বিবিসি কে জানান যে এই পোষাক সর্বশেষ ২০০৯ সনে বিক্রি হয়েছে। এতদিন পরে কেন প্রসঙ্গটা সামনে এলো এ নিয়ে তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করেন।



২য় ঘটনা- রেবেকা জোনস (Rebecca Jones) প্রাইমার্ক থেকে কেনা তার গ্রীষ্মের কাপড়ের ভিতরে একটা হাতে তৈরি লেভেল পান যাতে লেখা ছিল “Degrading sweatshop conditions “ । পোষাকটা তিনি কিনেছিলেন গতবছরের গ্রীষ্মে।



৩য় ঘটনা- অন্য আরেকজন রেবেকা গল্লাঘের ( Rebecca Gallagher) প্রাইমার্ক থেকে কেনা পোষাক ওয়াশ করার জন্য দিতে যেয়ে তাতে একটা লেভেল পান যাতে লেখা ছিল “ forced to work exhausting Hours “ ।



তিনটি ঘটনাই এক ধরণের ম্যাসেজ যেটাকে Cry for Help বা এসওএস(SOS- Save Our Souls) নামে অবিহিত করা হয়। এই তিনটা ঘটনার মধ্যে একমাত্র প্রথম ঘটনা স্বমন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সেটা চীনের কোন জেল হাজতে ঘটেছে।

আসুন এখন কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করিঃ



১) ঘটনা তিনটি কি একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে হচ্ছে না? মনে হচ্ছে না যে ঘটনা তিনটির সাথে চীনের কোন পক্ষ জড়িত?



২) হ্যাঁ এটা সত্য যে প্রাইমার্ক বাংলাদেশ থেকে পোষাক কিনে এবং রানা প্লাজায় যে কয়টা গার্মেন্ট ছিল তার মধ্যে একটা প্রাইমার্ক এর পোষাক প্রস্তুতকারী। কিন্তু এটা কি প্রমান করে যে লেখা গুলো বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে ? প্রাইমার্ক চীন থেকেও পোষাক কিনে। এখন রানা প্লাজার সাথে প্রাইমার্ক এর নাম জড়িয়ে থাকলেও এটা প্রমান হয় না যে এসব লেখা বাংলাদেশের কোন শ্রমিক লিখেছে।



৪) ২য় ঘটনাটা আবার দেখুন। যাতে লেখা ছিল ”Degrading sweatshop conditions “ পড়লেই বুঝা যাচ্ছে এটা এমন একজন লিখেছে যে খুব ভালো ইংরেজী জানে। এবং ইংরেজীতে বিশেষ্য আকারে লেখা হয়েছে। ইংরেজী ভালো জানা একজন ব্যক্তিকে গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো হবে না। বরং তাকে দিয়ে বিদেশী বায়ার ধরার কাজ করানো হবে। সুতরাং এটা কোন ভাবেই একজন গার্মেন্ট শ্রমিকের কাজ হতে পারে না। sweatshop শব্দটার প্রচুর ব্যবহারও সাধারণে দেখা যায় না। তবে শ্রমিক সংগঠনগুলো এই শব্দগুলো ব্যবহার করতে পারে। আচ্ছা ধরুন একজন গার্মেন্টস কর্মী বেতন পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে কিছু লিখবে। তাহলে সে প্রথমে তার সুনির্দিষ্ট চাহিদার কথাই লিখবে। যেমন হয়তো একজন লিখতে পারে যে, ”আমাদের বেতন কম” বা ”আমরা খুব ঝুকির মধ্যে কাজ করছি” এই জাতীয় লাইন গুলো। কিন্তু এতো জটিল ভাবে প্রকাশ করবে না।



৫) ৩য় ঘটনাটা দেখুন। এখানে ব্যবহার করা হয়েছে “exhausting hours ” শব্দটি। ক্লান্তকর শ্রমঘন্টা বুঝাতে একজন শ্রমিক আরো সহজ কোন শব্দ ব্যবহার করবে। হয়তো সে বলবে "forced to work extra Hours" । তাই আমি এটা বিশ্বাস করিনা যে কোন গার্মেন্ট শ্রমিক এটা লিখেছে।



৬) বিশ্বে গার্মেন্টস রপ্তানীতে যে দেশগুলো এগিয়ে আছে সেগুলো হলো বাংলাদেশ, চীন এবং ভারত। তিনটা দেশেই শ্রমিক শোষন চলে । তিনটা দেশেই জোরপূর্বক অতিরিক্ত সময় কাজ করানো হয়, বেতন সন্তোষজনক নয় এবং কাজের পরিবেশও সন্তোষজনক নয় বরং ঝুকিপূর্ণ। প্রথম ঘটনার দিকে দৃষ্টি দেন। এতে চীনের ঘাড়ে দোষ পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু রানা প্লাজায় প্রাইমার্কের সহযোগী প্রতিষ্ঠান থাকায় ২য় এবং ৩য় ঘটনা বাংলাদেশের দিকে আঙ্গুল তাক করানো হয়েছে। আসুন এবার দেখে নেই এতে কার কার লাভ হলো। প্রথমত শুধু প্রথম ঘটনাটা ঘটলে সবাই চীনে প্রস্তুতকৃত পোষাক কেনা বন্ধ করে দিত। কিন্তু ২য় এবং ৩য় ঘটনা ঘটার ফলে চীনের প্রতি নজরটা কমে যেয়ে বাংলাদেশের দিকে নজর দেয়ানো হয়েছে। ফলে চীনের লাভ হলো। আবার প্রত্যেকটা ঘটনার সাথে হয় চীন বা বাংলাদেশের নাম এসে যাওয়ায় ক্রেতারা চীন এবং বাংলাদেশে প্রস্তুকৃত পোষাক পরিহার করা শুরু করলে তাতে ইন্ডিয়ার লাভ। যেমন - উপরের ২য় এবং ৩য় ঘটনার ব্যক্তিদ্বয় বলেছে যে তারা প্রাইমার্কের পোষাক ক্রয় করা বন্ধ করে দিবে। এতে অবশ্যই প্রাইমার্কও বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। একে তো রানা প্লাজার ঘটনার পর তাদের অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। অনেক জরিমানাও দেয়া লেগেছে। সম্পূর্ণ রুপেই ভারতের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য সুখবর হবে যদি বিশ্ব বিখ্যাত প্রাইমার্ক ইন্ডিয়া থেকে পণ্য ক্রয় করা শুরু করে।



৭) ধরে নিলাম বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশী শ্রমিকদের কান্নার ঢেউ পৌছে গেছে বা কোন আন্তর্জাতিক ব্যবসা সংক্রান্ত চক্রান্তের মধ্যে পড়েছে কিন্তু আমরা বাংলাদেশীরা কেন এটাকে সতর্কতামূলক বার্তা হিসেবে দেখবো না? কেন সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবে না যে আসলেই ঘটনাটা বাংলাদেশ থেকে করা হয়েছে কি-না। আর আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলো বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এটার সঠিক গুরুত্ব তুলে ধরতে ব্যার্থ হয়েছে । এই সংবাদের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে অর্ডার কমে যেতে পারে এটা তাদের মনেই হচ্ছে না।



চাই দেশপ্রেমিক সংবাদ মাধ্যম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.