নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাচ্ছেতাই

সিদ্দিকী শিপলু

সিদ্দিকী শিপলু

সিদ্দিকী শিপলু › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতির অপালাপ-২ (রিক্সাভ্রমন-১)

২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:১৪

স্মৃতির অপালাপ-২ (রিক্সাভ্রমন-১)
সনটা 1997
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে সিলেটে গিয়েছিলাম। আসলে গিয়েছিলাম প্রথমবারের মতো সিলেটে ঘুরতে সঙ্গে ছিলো বন্ধু সায়েম।
একটা পরীক্ষা ছিলো বিকেলে, শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়েছিলো। মজার কিছু বিষয় শিখেছিলাম, যেমন- রিক্সা ড্রাইভারদেরকে ওখানে পাইলট বলে না ডাকলে না-কি ফিরেও তাকায় না। যাই হোক এক রিক্সায় উঠলাম রুমে ফিরবো বলে। পরীক্ষা কেমন হয়েছে সে বিষয় নিয়ে সায়েমের সাথে আলোচনার মাঝখানে রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞাসা করলো ভার্সিটিতে এক্সাম দিতে এসছি কি-না।এক্সাম কেমন হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। থতমত খেয়ে উত্তর দিচ্ছিলাম। কারণ তার ইংরেজী উচ্চারণ ছিলো উচ্চশিক্ষিতদের ধাঁচের আর বাংলা উচ্চারণও ছিলো খুবই শুদ্ধ। একজন রিক্সা শ্রমিকের মুখে এধরণের উচ্চারণ অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় আমরা ধাঁধাঁয় পড়ে গিয়েছিলাম। জিজ্ঞাসাও করলাম এ বিষয়ে।
যা জানলাম, লোকটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলো। পড়ালেখা শেষ করে একটা পাটকলে চাকুরী নিয়েছিলো। শ্রমিক হিসেবে চাকুরী না নিলেও শ্রমিকদের দাবী দাওয়া নিয়ে মালিকপক্ষ বা উচ্চমহরে দেন-দরবার করে সাফল্য না পেয়ে শ্রমিকদের সাথে মিলে আন্দোলন করেছিলো। ফলশ্রুতিতে চাকরীটা যায়। এরপর একটা ব্যাভারেজ কোম্পানীতে চাকরী নেয়। কোম্পানীগুলো নাম বলেছিলো, কিন্তু এতদিন পর নাম মনে নাই। এখানেও কোন একটা বিষয়ে হাইয়ার অথরিটি এর সাথে মনোমালিন্য হয়, তার ভাষায় অন্যায় না মেনে প্রতিবাদ করার দরুন তাকে তিন মাস বা ছয় মাসের (সময়টা মনে নাই) জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার কোম্পানীর নিয়মানুসারে সাময়িক বরখাস্ত ছাকাকালীন বেতনের অর্ধেক দেয়া হতো।
যাই হোক, তিনি তার এই বরখাস্তের বিষয়টা পরিবারকে জানাতে ইচ্ছুক ছিলেন না। তাই ওয়াইফকে বলেছেন তাকে ওই সময়ের জন্য সিলেটে ট্রান্সফার করা হয়েছে। এ বলে সিলেটে এসে হিসাব নিকাশ করে রিক্সা চালানো শুরু করেন। অফিস থেকে যে বেতন পান, সেটা, আর রিক্সা চালানো থেকে উপার্জিত বাকি টাকা বেতনের সমান করে প্রতি মাসে স্ত্রীর কাছে পাঠাতেন, যেন স্ত্রী কোনভাবেই টের না পান। বহিস্কারের মেয়াদ শেষ হলে তিনি আবার কর্মস্থলে ফিরে যাবেন।
কথাগুলো শুনে পুলকিত হলেও মনে মনে দুইজনই বিষয়টার সত্যতা নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। ভাবলাম, লোকটা হয়তো আমাদেরকে নামিয়ে কিছু সাহায্য চাইবেন। এই ধরনের মানুষগুলো নিজের দুর্দশার কথা বললেও উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করে না। কিন্তু রিক্সায় থাকাকালীন সময়ে তিনি সিনিয়র সিটিজেনদের মতো উপদেশ বাক্যও বললেন কিছু। এবং অবশ্যই অতিরিক্ত কোন টাকা চাইলেন না। বরং যতটুকু মনে পড়ে উনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসা হিসেবে ভাড়া নিতে চাননি। শেষের এই ঘটনা, হ্যান্ডশেক করা এবং বয়স অনুসারে যতটুকু বুঝার জ্ঞান আমার হয়েছিলো তা থেকে স্পষ্ট বুঝেছিলাম যে, লোকটা একবর্ণও মিথ্যা বলছিলো না।
কথার মাঝখানে পাটকলে থাকাকালীন সময়ে শ্রমিকদের দাবী দাওয়ার সময়ে আন্দোলনের কথা বলতে যেয়ে তাকে স্মৃতির অতলে হারিয়ে ইমোশনাল হয়ে যাওয়ার কথাও মনে আছে আমার।
একটা জিনিস বুঝেছিলাম যে, সে শ্রমিকদের দাবী দাওয়ার বিষয়ে খুবই ঘাড়ত্যাড়া টাইপের লোক ছিলো। কেন যে তখন জড়িয়ে ধরিনি এখন দুঃখ হয়।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৩৩

আবু তালেব শেখ বলেছেন: আজব সততার মানব।

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৫০

মাইনুল ইসলাম আলিফ বলেছেন: লোকটা প্রতিবাদী।সুন্দর স্মৃতিচারন।


শুভ কামনা রইলো।

৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১২

ওয়াসি বলেছেন: এরকম অজস্র মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে আমাদের আশেপাশেই। কিন্তু তাদের গল্প শোনার লোক থাকে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.