নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নতুনভাবে নিজের চিন্তার শক্তি আর ভাবনার বিশ্লেষণ করার সামর্থ অর্জনের জায়গা হল ব্লগ। বিচিত্র ভাবনারাশির আলোয় নিজেকে আলোড়িত আর আলোকিত করার উদ্দেশেই আমরা ব্লগে আসি। অবসর সময়টাকে ভালোভাবে কাটানোর জন্য এর চেয়ে মোক্ষম উপায় আর নেই। তদুপরি বিনোদন এখানে উপরি পাওনা

এস এম ইসমাঈল

মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।

এস এম ইসমাঈল › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রামের নাম সিরিকোট

২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৪৬



ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়াঃ হরিপুর জেলার ৪৪ টি ইউনিয়ন এর একটি হচ্ছে সিরিকোট। এটি খাইবার পাখতুন খাওয়া (সাবেক উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ) প্রদেশের অন্তর্গত। এটার সংসদীয় এলাকা নং- ৫২। দুর্গম পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত বিধায় এখানকার গণমানুষের জীবন যাত্রায় মিশে আছে বৈরী প্রকৃতির সাথে নিরন্তর সংগ্রাম করে টিকে থাকার প্রানান্ত প্রয়াস। আশেপাশের এলাকা সমূহে চরম ভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করলেও, সিরিকোট গ্রামটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২০০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত হবার কারনে এখানকার আবহাওয়া বেশ শীতল, আরামপ্রদ ও স্বাস্থ্যকর।

সিরিকোট অঞ্চলের প্রচীন ইতিহাসঃ সিরিকোট গ্রামের আদি নাম সেতালু,এটি কোহে গংগর অর্থাৎ গংগর উপত্যকায় অবস্থিত। সিরিকোট শব্দের অর্থ - পর্বত শীর্ষ। সিরিকোট গ্রামটি আক্ষরিক অর্থেই পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত। সমতলভূমি থেকে এটার উচ্চতা প্রায় ২০০০ মিটার। বর্তমানে এটি সৈয়্যদবাদ শরীফ নামে বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। মাশওয়ানী সৈয়্যদগণ এখানকার প্রধান বাসিন্দা। মাশওয়ানীরা হলেন ফাতিমী সৈয়্যদ বংশের একটা পবিত্র ধারা। এঁরা ইমাম হোসায়ন রাদিঃ ও ইমাম জয়নুল আবিদিন’র রহঃ পবিত্র বংশধারার উত্তরাধিকারী। ইরাক থেকে ইরান ও আফগানিস্তান হয়ে এঁদের পূর্বপুরুষেরা বর্তমান সিরিকোট এলাকায় অবস্থান নেন। মূর্তিপুজক আদিবাসী পশতুনদের মাঝে ইসলাম প্রচারের মহান ব্রত নিয়ে সর্বপ্রথম দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন মারুফ কাপুর শাহ্‌, যিনি নবী বংশের ২৪ তম ধারার বাহক ছিলেন। তাঁকে “ফতেহ সিরিকোট” নামে ইতিহাসে অভিহিত করা হয়েছে।

জনসংখ্যা, বসবাসকারী বিভিন্ন নৃগোষ্টির পরিচিতি ঃ গাযী তহসীলের অন্তর্গত প্রধান জনবসতি এই সিরিকোটের জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ হাযার (২০০৫ এর গণনানুযায়ী)। এতে বসতি স্থাপনকারী জনগণের মধ্যে প্রায় ৫০ হাযার হচ্ছেন মাশওয়ানী সৈয়্যদ।ইরাক থেকে ইরান ও আফগানিস্তান হয়ে এঁদের পূর্বপুরুষেরা বর্তমান পাকিস্তানের ডেরা ইসমাইল খান এলাকার দমন উপত্যকায় বসতি স্থাপন করেন।পরে এরা কুহে সোলায়মানী ও মারদান এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েন। মাশওয়ানীদেরকে প্রধানতঃ সিরিকোট ও এর পার্শ্ববর্তী গ্রাম গুদওয়ালীয়া, হরিপুর জেলার গাযী তহসীলভূক্ত কুন্ডী, এবং সোয়াবী জেলার তোর ডেহরী অঞ্চলে বেশী দেখা যায়। পেশওয়ার ও কোয়েটায় ও বেশ কিছু সংখ্যক মাশওয়ানী পরিবার বসবাস করেন।

মাশওয়ানী সৈয়্যদগণ ও তাঁদের গৌরবময় অতীত ইতিহাসঃ সিরিকোট গ্রামের আশেপাশে অর্থাৎ গংগর উপত্যকায় প্রায় শতাধিক মাশওয়ানী সৈয়্যদ পরিবার যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। অত্র এলাকায় মাশওয়ানী সৈয়্যদগন খুবই সম্মানিত। এছাড়া সিরিকোট এলাকায় অতি অল্প সংখ্যক আওয়ান ও গুজ্জার বংশীয় লোকগনও বসবাস করে থাকেন। মাশওয়ানী সৈয়্যদের মাতৃভাষা পশতু। প্রবল প্রতাপান্বিত মোগল সম্রাটেরা এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য “উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি” নামে একটা পৃথক ব্যবস্থা নিয়েছিল। বেনিয়া বৃটিশরাও এদের দমনের জন্য এখানে একটা সুশিক্ষিত ঘোরসওয়ার বাহিনী নিয়োগ করেছিল। মাশওয়ানী সৈয়্যদদের রয়েছে গৌরবময় অতীত ইতিহাস। শিখ ও বৃটিশদের অগ্রাভিযানের বিরুদ্ধে এরা অন্যান্য পশতুন গোত্রগুলির সাথে মিলে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। শিখদের সাথে বীরদর্পে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়া সলীম শাহ মাসওয়ানী আজো পশতুনদের কাছে জতীয় বীরের মর্যাদায় অভিসিক্ত।

উপজীবিকাঃ পশতুনদের শারীরীক গঠন মজবুত ও পেশীবহুল হওয়ায় এরা খুবই সাহসী, পরিশ্রমী। দুনিয়ার যে কোন উন্নত জাতির সাথে প্রতিযোগিতার সামর্থ্য রাখে পশতুন জনগণ। সামরিক বাহিনীতে এরা শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা হিসেবে বৃটিশ সেনাবাহিনীর গৌরব বৃদ্ধি করেছিল। এমনকি বর্তমান পাকিস্তানী পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর এরা বিশেষ সম্পদ হিসেবে সততা ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিচ্ছে। কৃষিকাজ ও পশুপালন পাহাড়ী পশতুনদের প্রধান পেশা। এরা মহিষ ও ভেড়া পালন করে থাকে। এককালে এদের প্রধান যানবাহন ছিল ঘোড়া ও খচ্চর। ঘোড়ার চালিত তিন চাকার টাঙ্গা আজো অনেক গরীব পশতুনদের প্রধান বাহন ও জীবিকার ঊৎস। শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার ও উন্নত যোগাযোগ সুবিধার ফলে আজকাল অনেকেই ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করার চেষ্টায় নিয়োজিত হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

প্রধান শস্য = গম, ভূট্টা, তামাক, চাল, ইক্ষু ও বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু রসালো ফল।

প্রধান খাদ্য = রুটি পশতুনদের প্রধান খাদ্য হলেও উৎসবে এরা পোলাও ও বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করে।

সমাজ-সাহিত্য ও সংস্কৃতিঃ পশতুনরা সাহসী, পরিশ্রমী, স্বাধীনচেতা ও ধর্মভীরু প্রকৃতির। অতিথি পরায়ণতা এদের বিশেষ গুন। শতাব্দী প্রাচীন গোত্রীয় শাসন ব্যবস্থা আজো এখানে প্রচলিত। প্রাচীন আফগান সমাজ ব্যবস্থার সাথে পশতুনদের যথেষ্ঠ মিল রয়েছে। গোত্রীয় সংহতি ও গোত্রীয় মানবতাবোধ এদের প্রধান সামাজিক বৈশিষ্ট্য। স্থানীয় ভাষায় পঞ্চায়েতকে ‘জিরগা’ বলা হয়ে থাকে। গোত্রীয় সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে বাধ্য সকল পশতুন সদস্য।এরা নারীদেরকে সবিশেষ সম্মানের চোখে দেখে থাকে। এদের মধ্যে আন্তঃ গোত্রীয় বিবাহ প্রথা বহুল প্রচলিত। বিখ্যাত পশতু কবি খোশহাল খান খটক ফার্সী ভাষায়ও কাব্য রচনা করে যশস্বী হয়েছেন। এ অঞ্চলের আরেকজন বিখ্যাত প্রাচীন সূফী কবি হলেন হযরত সৈয়্যদ আহমদ গিছুদরাজ (রহঃ)। যিনি মাশওয়ানী সৈয়্যদদের পূর্ব পুরুষরূপে বিবেচিত।

সিরিকোট গ্রামের নাগরিক সুযোগ সুবিধাসমূহঃ

দুর্গম পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত হলেও সিরিকোট গ্রামটিতে আধুনিক জীবনযাত্রার সকল সুযোগ সুবিধাদি বিদ্যমান। এখানে রয়েছে সরকারী কম্যুনিটি হাসপাতাল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয়-কলেজ, বাজার, ডাকঘর। বিদ্যুত ও পানীয় জলের সুব্যবস্থা ছাড়াও এখানে রয়েছে উন্নত ডাক-টেলিযোগাযোগ, যাতায়াত ব্যবস্থা ও অন্যান্য প্রশাসনিক স্থাপনাসমুহ। নিকটবর্তী জেলা শহর হরিপুর, এবোটাবাদ ও প্রাদেশিক রাজধানী পেশওয়ার ছাড়াও লাহোর, রাওয়ালপিণ্ডী ও কেন্দ্রীয় রাজধানী ইসলামাবাদের সাথে হরিপুরের মাধ্যমে সিরিকোটের রয়েছে সুবিধাজনক বাস সংযোগ। এর সবচাইতে নিকটতম রেলওয়ে ষ্টেশন হচ্ছে হাসান আবদাল।





দরবারের ব্যবস্থাপনাঃ

ঐতিহ্যবাহী সিরিকোট দরবার শরীফের সার্বিক ব্যবস্থাপনার গুরু দায়ীত্ব এখানকার সাহেবজাদা হুযুরগণ অত্যন্ত সুচারুভাবে আঞ্জাম দিয়ে আসছেন। আগত মুরীদান, ভক্ত-মেহমানদের আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া, নানা রকম সু্যোগ সুবিধার দিকে সদা সজাগ দৃষ্টি রয়েছে বর্তমান সাহেবজাদা হুযুরদের। দরবার শরীফের ব্যবস্থাপনায় এখানে পরিচালিত হচ্ছে একটা জামে মসজিদ, লঙ্গর খানা ও তৈয়্যবিয়া মাদ্রাসা।





জাতীয় অর্থনীতিতে পশতুনদের অবদানঃ

৭৪৫২১ বর্গ কিমিঃ আয়তনের পশতুনভাষীদের এ প্রদেশটির জনসংখ্যা ২০০৮ এর শুমারী অনুযায়ী ২ কোটির কিছু বেশী। এতে আছে ২৫ টি জেলা ও ৯৮৬টি ইউনিয়ন কাউন্সিল। খাইবার পশতুনখাওয়া প্রাদেশিক পরিষদের আসন সংখ্যা ১২৪ টি। জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের বিবেচনায় পাকিস্তানের ৪টা প্রদেশের মধ্যে এর স্থান ৩য়। জিডিপিতে এ প্রদেশের সার্বিক অবদান ২০% এর উপরে। অর্থনীতির চালিকা শক্তি – বনায়ন= ৩৪.৫% - ৮১%, খনিজ দ্রব্য = ২০%, মার্বেল পাথর উৎপাদন = ৭৮%। দেশের প্রধান ও প্রথম মার্বেল খনি এখানেই অবস্থিত।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.