নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরবে নির্জনে যন্ত্র-অরণ্যে

আপাতত রেস্টে আছি! :)

স্নিগ

আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান সৃষ্ট হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে।কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না।এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

স্নিগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ শর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট “আন্ডারস্ট্যান্ডিং” লাভ

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৪৯

Tomek : I love you. I really do.

Magda : And what do you want? Do you want to kiss me?

Tomek : No.

Magda : Perhaps you want to make love to me?

Tomek : No.

Magda : Want to go away with me? To the lakes or to Budapest?

Tomek : No.

Magda : So what do you want?

Tomek : Nothing.

Magda : Nothing?

Tomek : Yes.



ভালবাসা আসলে কি? অথবা কোন উপকরণটি থাকলে তাকে “ভালবাসা” বলা চলে? উত্তর খুঁজেছেন পোলিশ পরিচালক ক্রিস্তফ কিস্লোওস্কি তার ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত A Short Film About Love ছবিতে।

তোমেক ১৯ বছরের এক লাজুক ছেলে। কাজ করে স্থানীয় পোস্ট অফিসে, থাকে বন্ধুর মায়ের অ্যাপার্টমেন্টে। তার বন্ধু চাকরিসূত্রে সিরিয়াতে। তোমেকের সামনের ফ্ল্যাটে থাকে সুন্দরী এক বয়স্ক মহিলা – মাগদা। একাকী তোমেকের সময় কাটে মাগদাকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখে। শুরুতে ব্যাপারটা শুধু নিছক মজা ছিল। নিয়ত পরিবর্তনশীল সঙ্গীদের সাথে মাগদার “একান্ত সময়” কাটানো দেখে বিমলানন্দ পেত তোমেক। কিন্তু সেখান থেকেই তোমেকের মনে এক সময় ভালবাসার জন্ম নেয়। তাই তো মাগদাকে এক ঝলক দেখার জন্য ছল করে তাকে বারংবার পোস্ট অফিসে নিয়ে আসতো তোমেক। মাগদার গলার স্বর শোনার জন্য ফোন করে চুপ করে বসে থাকত। মাগদার প্রেমিকদের বিভিন্ন কৌশলে তার থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতো। মাগদার কষ্ট বোঝার জন্য নিজেই নিজেকে আঘাত করতো। শুধুমাত্র একবার মাগদার দেখা পাবার জন্য সারা এলাকায় দুধ ডেলেভারির চাকরি নেয়।



তোমেকের এই দূর থেকে লালন করে যাওয়া ভালোবাসা বাঁধ ভাঙে যেদিন সে মাগদাকে কাঁদতে দেখে। ঘটনাক্রমে মাগদার সাথে তার পরিচয় হয়। মাগদাকে নিজের ভালোবাসার কথাও জানায় তোমেক। কিন্তু মাগদার পৃথিবীতে ভালবাসা শব্দটার কোন অস্তিত্ব নেই (“There’s no such thing”)। মাগদার ধারণা নারী-পুরুষের একান্ত সুখ সময় কাটানোটাই সব। তাই সেক্সুয়ালি অনভিজ্ঞ তোমেককে এক প্রকার অপমানই করে মাগদা। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করে তোমেক। এখান থেকে পাল্টে যায় গল্প। এবার তোমেকের অপেক্ষায় সারাদিন নজরদারিতে নামে মাগদা। বাইনোকুলার (অপেরা গ্লাস) দিয়ে লক্ষ্য করতে থাকে তোমেকের ফ্ল্যাটের দিকে, তোমেকের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায়।



A Short Film About Love (Krótki film o milosci) মূলত কিস্লোওস্কির বিখ্যাত সিরিজ ডেকালগের ষষ্ঠ পর্বের (Thou shalt not covet) পরিবর্ধিতরূপ। ক্রিস্তফ পিসিউইকজকে সাথে নিয়ে গল্পটা লিখেছেন পরিচালক কিস্লোওস্কি নিজেই। ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন Grażyna Szapołowska, Olaf Lubaszenko, Stefania Iwinska। ডেকালগ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হবার পর চুক্তিনুযায়ী পোলিশ টিভি চ্যানেল “TV Poland” ডেকালগের দুটো গল্পকে চলচ্চিত্ররূপ দিতে কিস্লোওস্কিকে প্রস্তাব দেয়। ডেকালগ সিক্সকে তারাই বেছে নেয়। কিস্লোওস্কি ডেকালগের বাকি নয়টি পর্ব থেকে একটি বেছে নিতে বলা হয়। কিস্লোওস্কি ডেকালগ ফাইভ বেছে নেন। নির্মাণ করে নাম দেন A Short Film About Killing। ডেকালগের সিক্সের চেয়ে ভিন্ন এক সমাপ্তি টানে A Short Film About Love ছবিটি। ছবির অভিনেত্রী মাগদার পরামর্শে কিস্লোওস্কি এই কাজটি করেন।



কিস্লোওস্কির চলচ্চিত্রের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দুটো দিক হল সংগীত আর রঙের ব্যবহার। এই ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর খুব মৃদু আর ধীরলয়ের। একই নোটে থেকে অথবা আস্তে করে অন্য নোটে মুভ করেছে মিউজিক্যাল পীস। এটা শুধুমাত্র প্রশান্তি দেওয়ার জন্য নয়, সেই সাথে তোমেকের (পরবর্তীতে মাগদার) ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা আবেগের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। রঙের বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ ব্যবহারকে এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। কিস্লোওস্কির ছবিতে রঙের শক্তিশালী উপস্থিতি থাকে। তোমেক যখন মাগদাকে তার মনের কথা জানায়, ব্যাকগ্রাউন্ডে উজ্জ্বল লালের উপস্থিতি লক্ষণীয়। লাল এখানে এসেছে ভালোবাসার রং হিসেবে (উল্লেখ্য যে, কিস্লোওস্কির Red নামে আলাদা একটি ছবিই আছে)। দুজনের মনে অনুভূতির জন্ম হয়েছে দূর থেকে। ভালবাসা এখানে যতটা না ম্যাটেরিয়াল তার চে বেশি ইল্যুশন, তার চেয়েও অনেক বেশি প্লেটোনিক। তোমেকের ক্যারেক্টার ডিজাইনটাও তাই অতি যত্নে করা। আড়াল থেকে নজর রাখতে থাকা তোমেক সম্পর্কে দর্শকদের মনে ডিজগাস্টের বদলে সহানুভূতি জন্ম নেয়।ক্যারেক্টার ডিজাইনে আরেকটা বিষয় উল্লেখযোগ্য। আলফ্রেড হিচককের ক্ল্যাসিক “Rear Window”-তে শুরুতে জেমস স্টুয়ার্ট যাদেরকে ক্যামেরার লেন্স দিয়ে দূর থেকে দেখতেন, প্রতিটি চরিত্রের পরিণতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। এখানেও কিন্তু একইরকম বৈপরীত্য দেখা যায়। ছবিতে আরেকটি রিকারিং ইভেন্ট লক্ষণীয়- ভয়ারিজম। ছবির প্রধান তিন চরিত্রই কোন না কোন সময় আড়াল থেকে অন্যের উপর নজর রাখে। এটা সমগ্র জাতির স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী প্যারানয়াকেই নির্দেশ করে।



ছবির শেষাংশে মাগদা তোমেকের টেলিস্কোপ দিয়ে নিজের ঘরের দিকে তাকায়। মাগদা ভেবেছিল তার জীবন একাকী, ভালাবাসাহীন। তোমেকের চোখ দিয়ে তাকিয়ে সে বুঝতে পারে, এতটা সময় তোমেক তার পাশেই ছিল। আর তাই প্রথমবারের মত মাগদা (আর সেই সাথে আমরা দর্শকরাও) ভালবাসার স্বরূপ আবিষ্কার করে। ভালবাসা কাম নয়, তৃষ্ণা নয়, সঙ্গ নয় এমনকি স্পর্শও নয়, ভালবাসা হল অনুভব।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.