নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরবে নির্জনে যন্ত্র-অরণ্যে

আপাতত রেস্টে আছি! :)

স্নিগ

আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান সৃষ্ট হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে।কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না।এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

স্নিগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেমবিহীন পাগলামী

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫৯

২০০৬ সালের ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রেম প্রেম পাগলামী (madly in love) নিয়ে একটা আর্টিকেল ছাপা হয়েছিলো। সেই আর্টিকেলের মূল বক্তব্য ছিলো এমন, ভালোবাসা মাত্রা ছাড়ালে আর প্রেম থাকে না, পাগলামী হয়ে যায়। সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি, “প্রেম প্রেম পাগলামী” এর ক্ষেত্রেও এই কথাটি খাটে। কাকতালীয়ভাবে বাপ্পী-আঁচল জুটিরও দ্বিতীয় ছবি এটি। পরিচালকের ব্যর্থতায় এটি প্রেমের ছবি নয়, পরিণত হয়েছিলো সম্পূর্ণ পাগলামীতে।

রোমিও (বাপ্পী) সত্যিকারের এক চ্যালেঞ্জার। বিভিন্ন কারণে বাজি ধরা ও সেই বাজি জিতে সময় কাটে তার (নামে রোমিও হলেও, তার এন্ট্রির সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে ডন এর থিম বাজছিলো)। রোমিওর এহেন কর্মকাণ্ডে অতীষ্ঠ তার বাবা কাজী হায়াত। এই বাপ্পী একদিন বাজি ধরলো কলেজের সবচে অহংকারী মেয়ে সিমিকে (আঁচলকে) চুমু খাবে। বাজিতে সে জিতেও গেলো। আঁচল তার মামা আফজাল শরীফের বাসায় থেকে পড়াশোনা করতো। এই ঘটনার পর আঁচল লজ্জায় কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দিলো। অনুশোচনায় পড়ে বাপ্পী আঁচলকে খুঁজতে শুরু করলো। একদিন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে আবিষ্কার করলো কনে আর কেউ নয়- আঁচল। কিন্তু সেই বিয়ে হলো না। বিয়ের আগেই, বর রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেলো। মনের দুঃখে আঁচল ঢাকায় তার ভাই ড্যানি সিডাকের বাসায় চলে গেলো। আফজাল শরীফের সহায়তায় ঢাকার সেই বাসায় এসে উঠলো বাপ্পী। একসময় সুযোগ বুঝে ড্যানি সিডাকের কাছে আঁচলকে বিয়ে করার প্রস্তাবও দিলো। কিন্তু ড্যানি জানালেন এই বিয়ে সম্ভব না। কারণ আঁচল যাকেই বিয়ে করতে যায়, অমিত হাসান তাকেই মেরে ফেলে।

অমিত হাসানরা তিন ভাই- ভাইরাস, পিসি আর মনিটর (পুরাই ডিজিটাল পরিবার)। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ড্যানি অমিতের ছোট ভাই মনিটরকে গুলি করেন। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অমিত সিদ্ধান্ত নেয় আঁচলকে বিয়ে করবে। কারণ এই যন্ত্রণার চিহ্ন সারাজীবন ড্যানিকে কষ্ট দিবে। পরিকল্পনামাফিক আঁচলকে কিডন্যাপ করতে গিয়ে গ্রেফতার হয় অমিত হাসান, জেল হয়ে যায় তার। কিন্তু জেল থেকেই ভাই পিসিকে (শানু সিবা) দিয়ে আঁচলের সব বিয়ে ভেঙে দিচ্ছিলো সে। জেল থেকে বের হয়েই আঁচলকে আবারও কিডন্যাপ করার চেষ্টা করে অমিত হাসান। এক পর্যায়ে ড্যানি সিডাক গুলি খান, বাপ্পী আঁচলকে নিয়ে পালিয়ে নিজের বাড়ি চলে আসে। কিন্তু অমিত হাসানের লোকেরা বাপ্পীর পরিবারের সবাইকে লালবাগ কেল্লায় জিম্মি করে রাখে আর বদলে আঁচলকে তার হাতে তুলে দিতে বলে। লালবাগে আরেক দফা তুমুল লড়াই হয়। বাপ্পী মার খেয়ে সঙ্গাহীন হয়ে পড়লেও, বাবা কাজী হায়াতের সংলাপের চোটে জ্ঞান ফিরে পায়। আবারও শুরু হয় লড়াই। এক পর্যায়ে শানু আঁচলের মাথায় বন্দুক ধরে বাপ্পীকে বলে নিজেকে গুলি করতে। বাপ্পী নিজের পেটে গুলি করে পড়ে যায়। ড্যানি সিডাক শুন্য থেকে আবির্ভূত হয়ে অমিত হাসানকে গুলি করলেন (ড্যানি সিডাক এক সময় সুপারম্যানের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। হাওয়া থেকে উদয় হওয়া তার জন্য অসম্ভব কিছু না)। পুলিশ পাশেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো, অমিত হাসান গুলি খাওয়ার পর পরই তারা ফ্রেমে ঢুকে ড্যানি সিডাককে পাকড়াও করে নিয়ে গেলো। আরও চমক বাকি ছিলো। এবার কাঁধে ও পেটে দুটো গুলি খাওয়া বাপ্পী উঠে বসলো। হাসি মুখে ফোর্থ ওয়াল ভেঙে দর্শকদের জানালো তার কিছুই হয়নি। এটা ছিলো তার আর আঁচলের প্রেম প্রেম পাগলামী।

প্রেম প্রেম পাগালামী ছবির পরিচালক সাফি উদ্দিন সাফি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই ছেলে আগে তারই জেলার এইচ এম ইকবালের সাথে যৌথভাবে সিনেমা বানাতেন। সাফি ইকবাল নামে তারা ডজনখানেক ছবি পরিচালনা করেছেন। এখন সাফি একলাই ছবি বানাচ্ছেন। কিন্তু কি বানাচ্ছেন তা হয়তো খেয়াল করছেন না। নির্মাণশৈলী অত্যন্ত দুর্বল ছিলো। ছবির বিভিন্ন অংশে আমরা দেখি বাপ্পী হাতিরঝিলে সাইক্লিং করছেন, কাজী হায়াৎ বাসায় ফেরার পথে বি.জি.এম.ই.এ ভবনের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন, আফজাল শরীফের স্ত্রী গাউসিয়াতে শপিং করতে যাচ্ছেন, বাপ্পী তার বন্ধুদের সাথে লালবাগ কেল্লাতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। এরপর বিরতির কিছুটা আগে জানা যায় বাপ্পী মফঃস্বলে থাকতেন আর আঁচলকে খুঁজতে ঢাকায় যাবেন। আঁচলের বিয়েতে ভাই ড্যানি সিডাক কেন আসলেন না, বোঝা গেলো না। একই মানুষকে একবার কালা জাহাঙ্গীর আরেকবার পিসির সাগরেদ হিসেবে দেখা গেলো। অমিত হাসান আঁচলের পাঁচজন বডিগার্ডকে গুলি করে মেরে ফেললো। অথচ তার মাত্র ৬ বছরের জেল হল। তাও আবার আঁচলকে অপহরণ করার জন্য! ড্যানি সিডাক ছবির দ্বিতীয়াংশে গুলি খেলেন। সেখান থেকে কিভাবে বেঁচে ফিরলেন বোঝা গেলো না। আঁচলকে বিয়ে করার মূল উদ্দেশ্য ছিলো ড্যানি সিডাককে কষ্ট দেওয়া। ড্যানি মারা যাবার পর আঁচলকে বিয়ে করার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। তারপরও তাকে নিয়ে অমিত হাসানের এত ব্যস্ততার কারণ বোঝা গেলো না। অমিত হাসান ফোনে জানালো, বাপ্পীর বাবা, মা, ভাইকে লালবাগ কেল্লায় জিম্মি করে রেখেছে। বাবা-মাকে দেখালেও বাপ্পীর ভাই বিল্টুকে পরে আর একবারও দেখা গেলো না। তার কি হলো? রোম্যান্টিক ছবিতে রোম্যান্স খুব কম ছিলো। অর্ধেকেরও বেশি সময় জুড়ে ছিলো বাপ্পীর একতরফা ভালোবাসা। তবে বিয়ের আগেই নায়ক-নায়িকার “বাসর” দেখানোটা বাংলাদেশী ছবির জন্য বেশ সাহসী পদক্ষেপই বলতে হবে। ছবির রানিংটাইম খুব বেশি ছিলো। এখন অনেক ছবি দুই ঘন্টার মাঝেই শেষ হয়ে যায়। সেখানে প্রেম প্রেম পাগলামীর বিরতি হলো ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মাথায়। এছাড়া ক্লাইম্যাক্সটাও খুব দীর্ঘ ছিলো। কেল্লার কিছু দৃশ্যে ওভারএক্সপোজারের ব্যবহার ঠিক বোধগম্য হলো না। লালবাগ কেল্লায় এতো গোলাগুলি হচ্ছে, অথচ চরিত্রগুলোর ঠিক পেছনেই অনেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। বার কয়েক ফল্‌স লুকও দিলেন।

কাহিনী লিখেছেন আব্দুল্লাহ জহির বাবু। বাবু সাহেব মনে হয় হায়দ্রাবাদের মহেশ বাবু থেকে শুরু করে কলকাতার খোকাবাবু সবার ছবি খুব মন দিয়ে দেখেন। তার প্রতিটা গল্প বড্ড বেশী ভিনদেশী। সংলাপ লিখেছেন ছটকু আহমেদ। এই গুণী পরিচালক বাক্যগঠনের প্রতি একটু মনোযোগ দিলে ভালো করবেন। প্রশংসায় “মুখরিত” না হয়ে, “পঞ্চমুখ” হলে ভালো শোনায়। তপন আহমেদের ক্যামেরাওয়ার্ক গতানুগতিক ছিলো।



বাপ্পীর অভিনয়ে যতটা উন্নতি হয়েছিলো, ঠিক ততটাই অবনতি হয়েছে। চোখের মণিটা বড্ড বেশী নাচছিল। হাত-পা দুটোও যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলো। দেবকে অনুসরণ করতে গিয়ে বাপ্পী চৌধুরীর ডায়লগ থ্রোয়িং-ও তার মতো হয়ে গিয়েছে। অনেকগুলো কথা অস্পষ্ট ছিলো অথবা বাক্যর শেষাংশটুকু খেয়ে যাচ্ছিলো। আঁচলের অভিনয় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো ছিলো। রোম্যান্টিক দৃশ্যে ও গানের দৃশ্যে তার উপস্থিতি খুব সাবলীল। আঁচল এই পারফর্ম্যান্স ধরে রাখতে পারলে নিশ্চিত করেই বলা যায়, ইন্ডাস্ট্রী ভালো একজন নায়িকাকে পাবে। এই ছবির মাধ্যমে অনেক দিন পর ড্যানি সিডাককে গুরুত্বপূর্ণ কোনো চরিত্রে দেখা গেলো। বেশ ভালো করেছেন। আফজাল শরীফকেও ভালো লেগেছে। দর্শক তার অভিনয়ে খুব হেসেছে। কাবিলাতে ক্লান্ত দর্শকদের জন্য এই পরিবর্তনটার দরকার ছিলো। অমিত হাসান, কাজী হায়াতসহ অন্যরা চলনসই অভিনয় করেছেন।

ছবিতে গান আছে ছয়টি। গানগুলো লিখেছেন কবির বকুল। সুর করেছেন ‘অলী আকরাম শুভ’ (টাইটেলে এই বানানটি লেখা ছিলো)। মূল চারটি গানের চিত্রায়ন বেশ ভালো ছিলো। দুটো আইটেম সং ছিলো। আফজাল শরীফ আর নাসরিনের আইটেম সংটি ছিলো অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয়। ওপেনিং ক্রেডিটসে নাসরিনকে আইটেম গার্ল হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। পরিচালকদের বুঝতে হবে নাসরিনকে আর ‘আইটেম গার্ল’ হিসেবে মানায় না। বরঞ্চ ‘আইটেম আন্টি’ বললে যুৎসই হবে। বিপাশার আইটেম সঙে কোনো নতুনত্ব ছিলো না। দর্শকরা বিপাশাকে পছন্দ করে। কিন্তু বিপাশা নিজের হাতে তার সম্ভাবনাকে কবর দিচ্ছেন। যত দিন যাচ্ছে, নাচের দিকে তার আগ্রহ কমছে (বাড়তি আগ্রহটুকু বিপাশা সম্ভবত খাবারের পিছে ব্যয় করছেন। তার বাড়ন্ত শরীর সে কথারই প্রমাণ দেয়)। তার গানটির ইন্ট্রো কলকাতার আওয়ারা ছবির “ফুল কলি” গানের ইন্ট্রোর সাথে মিলে যায়। আসলে ছবির পুরো সাউন্ডট্র্যাক জুড়েই ছিলো ভারতীয় গানের প্রভাব। তাইতো খিলাড়ী-৭৮৬ ছবির “ও বালমা” হয়ে গিয়েছে “ও মামু”, জুলাই ছবির “ও মাধু” হয়ে গিয়েছে “ও যাদু”।

শুধু সুর না, সাউন্ড মিক্সিং এর গুরুদায়িত্বটিও ‘অলী’ আকরাম শুভ-ই সামলিয়েছেন (দুই বারই একই ভুল বানান লেখা ছিলো)। ফলে দর্শকরা নতুন ধরণের কিছু অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু শব্দ শুনতে পেয়েছেন। অ্যাকশন দৃশ্যে ঘুষির সাউন্ড ইফেক্ট হিসেবে যা শোনা গেলো সেটা অবর্ণনীয়রকম অশ্রুতপূর্ব। তারপরও একটু চেষ্টা করি। কোনো দৌড়বিদ শুয়ে থাকা কোনো হাঁসকে মাড়িয়ে গেলেই শুধুমাত্র এমন শব্দ শোনা যেতে পারে, অন্যথায় নয়।

প্রতিটা দেশের শিল্পীরা পেট চালানোর জন্য দায়সারা কাজ করে থাকেন। কিন্তু এর পাশাপাশি ভালো কাজও করে থাকেন। সব ছবিই যদি পট বয়লার হয়, তবে ভালো কাজটি কবে করবেন? সৌভাগ্যের বিষয় হলো এখনো সময় আছে, সাধন শুরু করা দরকার। খুব বেশি কিছু করতে হবে না, শুধু নিজের কাজটা একটু ভালোবেসে করলেই হবে।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.