নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরবে নির্জনে যন্ত্র-অরণ্যে

আপাতত রেস্টে আছি! :)

স্নিগ

আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান সৃষ্ট হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে।কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না।এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

স্নিগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:০১

নিঃসন্দেহে এ বছরের অন্যতম আলোচিত ছবি হল “পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী”। শাকিব-জয়া জুটির প্রথম ছবি, জয়া আহসানের প্রথম ফুল স্কেল কমার্শিয়াল ছবি, শাকিব-শুভ মুখোমুখি, আরেফিন শুভ’র প্রথম নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় আরও কত কি! হিসেব করলে লিস্টিটা শুধু বড়ই হবে।

ছবির গল্প শুরু হয়েছে রাজ্জাক আর আনোয়ারার বাসা থেকে। সামাদ শিকদার (রাজ্জাক) এর কাছেই বড় হয়েছে জয় (শাকিব খান) আর মিতু (মিমো)। সামাদ শিকদার সম্পর্কে জয়ের দাদা আর মিতুর নানা। তিনি ঠিক করলেন জয় আর মিতুর বিয়ে দিবেন। কিন্তু বাগদানের আগেই রাজ্জাক অসুস্থ হয়ে পড়লেন। জানা গেল, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মনে এক কষ্ট লুকিয়ে রেখেছেন। তার মেয়ে নিশাত (দিতি) ২০ বছর আগে গৃহশিক্ষকের (সুব্রত) হাত ধরে বাড়ি ছেড়েছে। দুজনের অর্থনৈতিক ব্যবধানের কারণে রাজ্জাক প্রথমে এ সম্পর্ক মেনে না নিলেও, পরে অনেক চেষ্টা করেও মেয়ের সন্ধান পাননি। জয় কথা দেয় তার ফুপুকে খুঁজে বের করবে। জয় ফেসবুকে ফুপুর একটি ছবি খুঁজে পায়। ছবিটায় নিশাত মালয়েশিয়ার ঈগল স্কয়ারের সামনে বসে ছিল। ফুপুকে খুঁজতে জয় মালয়েশিয়ায় যায়। সেখানে গিয়ে পরিচয় হয় জারার (জয়া আহসান) সাথে। জারাকে ভাল লেগে যায় জয়ের। জারাকে আগে থেকেই ভালবাসতও মালয়েশিয়ার অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী শাকিব (আরেফিন শুভ)। কিন্তু জারা কাউকেই ভালবাসে না। কারণ ব্রেইন টিউমারের জন্য জারা একসময় চিরতরে অন্ধ হয়ে যাবে। ঘটনাচক্রে জয় এক সময় জারার বাসায় এসে আশ্রয় নেয়। আবিষ্কার করে জারার মা হল তার ফুপু নিশাত। পরিচয় লুকিয়ে জারার বাসায় থাকতে শুরু করে জয়।

পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’র গল্প লিখেছেন রুম্মান রশিদ খান। ৫০-এরও অধিক নাটকের গল্প লিখে তিনি এখন হাত দিয়েছেন চলচ্চিত্রে। তার মনে হয় হিন্দি ছবি খুব পছন্দ। পুরো ছবিতেই হিন্দি ছবির টুকিটাকি অনেক গন্ধ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল। শুরুতে রাজ্জাকের দুই নাতি-নাতনীকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আর তাদের রিঅ্যাকশন কোরিয়ান চলচ্চিত্র মাই লিটল ব্রাইডকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল। জয়ার বন্ধুরা জয়াকে রেখে চলে যাওয়ার পর, শাকিব-জয়ার সংলাপ হাম তুমকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল। জয়া “সাদমা” পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারালেন, শাকিব তাকে “কমল” হাতে যত্ন করলেন। এসবই না হয় ইগ্নোর করা গেল। ধরে নিলাম এসব কাকতাল। কিন্তু বাবা প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় সন্তানের গৃহত্যাগ, অতঃপর বিদেশে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, তাকে ফিরিয়ে আনতে বিদেশ গিয়ে তারই বাসায় পরিচয় লুকিয়ে থাকার অংশটুকু খুব স্পষ্টভাবে কারান জোহারের ব্লকবাস্টার Kabhi Khushi Kabhie Gham-এর সাথে মিলে যাচ্ছিল। আর আরেফিন শুভর চরিত্রটা তো পুরাই আনজামের শাহরুখ খানকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল। বড়লোকের ছেলে এক মেয়ের প্রেমে সাইকোর মত আচরণ করছে। একসময় সেই ছেলের হাতে মারা পড়লো মেয়ের পরিবারের দুইজন, এমন আরও দুটো ঘটনা সবই আনজাম থেকেই নেওয়া। স্পয়লার হয়ে যাবে দেখে ঘটনা দুটো এড়িয়ে গেলাম। যারা দুটো মুভিই দেখেছেন, তারা এটা ধরতে পারবেন। আরেক জায়গায়, জয়া স্বপ্নে দেখেন সকালে তার জামায় চা পড়ে যায়, অফিসের কলিগ তার পোশাকের প্রশংসা করে, অফিসের নীচে শাকিবের সাথে তার দেখা হয় আর এর কিছুক্ষণ পরেই শাকিবের গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করে। ঘুম থেকে ওঠার পর স্বপ্নের মত জয়ার জামায় চা পড়ে যায়, অফিসের কলিগ তার পোশাকের প্রশংসা করে, অফিসের নীচে শাকিবের সাথে তার দেখা হয়। সব মিলে যাচ্ছে দেখে জয়া শাকিবকে গাড়িতে উঠতে বাধা দেন। কিন্তু শাকিব বারণ শুনেন না আর তার পর শাকিবের গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করে। জয়া বেচারী অনেক চেষ্টা করেছিলেন “Final Destination” এড়াতে, কিন্তু পারেননি। আর হ্যাঁ, সূচনার কথাটা তো বাদ পরে গেল। একদম শুরুতে নায়ক সোহেল রানা নায়িকা ববিতাকে এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে বসে এই ছবির গল্প শোনানো শুরু করেন। কয়েকবছর আগের “Hello” ছবিতেও ক্যাটরিনা কাইফ এভাবেই সালমান খানকে এয়ারপোর্টে বসে একটা গল্প শোনানো শুরু করেন। এমন এক প্রলগের মাধ্যমে হ্যালো সিনেমাটি মূল গল্পে প্রবেশ করে।

ফ্রেন্ডস মুভিজ ইন্টারন্যাশনাল প্রযোজিত ছবিটি পরিচালনা করেছেন সাফিউদ্দিন সাফি। চিত্রনাট্যও তারই করা। ফোঁড়াকাটা নাপিতকে অ্যাপোলো হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলে সে প্রথমে খাবি খাবে, তারপর তার চিরচেনা ক্ষুর খুঁজবে। সাফি সাহেবও এত বিগ বাজেট মুভি, স্টার কাস্ট নিয়ে কিছুক্ষণ খাবি খেয়েছেন আর বাকি সময় ক্ষুর খুঁজেছেন। চরিত্রগুলো যে যার মত অভিনয় করেছে। তাদের পরিচালনা করবার জন্য কেউ ছিল বলে মনে হল না। সাফি সাহেব ক্ষুর খুঁজে না পেলেও, তার এডিটর তৌহিদ সাহেব ঠিকই ক্ষুর খুঁজে পেয়েছেন। কাঁচির বদলে ক্ষুর চালানো সম্পাদনায় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে ছবির ছন্দ। অনেকগুলো ফ্রেমে দেখলাম ক্যামেরাম্যান চরিত্রগুলোকে কোমর থেকে দেখিয়ে, মাথার উপরে কয়েকফুট জায়গা ফাকা রেখেছেন। মালয়েশিয়ার নীল আকাশ দেখতে ভালোই লাগলো।

পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ছবিটি আক্ষরিক অর্থেই পূর্ণদৈর্ঘ্য। ছবির রানিংটাইম ১৩৮ মিনিট। শাকিব খান অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ এম.এস করছেন। কিছুদিনের পরে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ যাবেন। বাংলাদেশের হাতে গোণা কিছু প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়টি থাকলেও, তাদের কেউ মাস্টার্স কোর্স শুরু করেনি। শাকিব খান কোথায় পড়ছেন কে জানে! ফেসবুকে দিতির যে ছবিটি দেখা গেল সেটা দুর্বলভাবে ফটোশপড। বড়পর্দায় এই ছোট বিষয়গুলোও খুব দৃষ্টিকটু লাগে। এলোপাথাড়িভাবে পুরো মালয়েশিয়া জুড়ে দিতিকে না খুঁজে, শাকিব ফেসবুকে তাকে মেসেজ পাঠালেন না কেন বুঝলাম না। আর দিতির ফেসবুক প্রোফাইলে স্বাভাবিকভাবেই জয়া আর সুব্রতর ছবি, কমেন্ট থাকার কথা। দিতির টাইমলাইনটায় একটু নজর বুলালেই শাকিবের কষ্ট অনেকখানি কমে যেত। শাকিব বেশ কয়েকবার এস.হক-এর অ্যাব্রিভিয়েশন জানতে চাইলেন। শব্দটা Abbreviation না, Augmentation হবে। গল্পের হিসেব অনুযায়ী জয়ার বয়স সর্বোচ্চ ১৯। যদিও জয়ার মেক-আপ, পেশা দেখে এতটা কম বয়েসী মনে হল না। বরং ২০ বছর আগের দিতির চেয়ে বর্তমানের দিতিকে কম বয়েসী লেগেছে। মেক-আপের লোকজন মনে হয় অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন । তাই এসব দিকে মনোযোগ দেবার সময় পাননি। সম্ভবত শাকিব খানকে লিপস্টিক লাগাতে তারা পুরোটা সময় ব্যয় করেছেন। বেশ কয়েকটা দৃশ্যে দেখলাম শাকিব জয়ার চে বেশি লিপস্টিক ব্যবহার করেছেন। ভালো লাগলো আরেফিন শুভ মালয়েশিয়াতে বসেও জুম এর ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করেন। তার ল্যাপটপের ডেস্কটপের এক কোনায় জুমের আইকন দেখলাম। ভাল লাগলো মালয়েশিয়ার কিছু রাস্তা আর বাড়ি হুবহু ঢাকার হাতিরঝিল এলাকার মত দেখতে। আরও ভাল লাগলো দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি দেখে। জয়ার যে ব্রেইন টিউমারের অপারেশন মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর অন্য কোথাও করা গেল না, সেটা বাংলাদেশে সাক্সেসফুললি হয়ে গেল। বুঝলাম না, ফেরারী আসামী শাকিব কিভাবে ক্রাইম সিন থেকে তার আর জয়ার পাসপোর্ট নিয়ে এলেন, ভিসা ছাড়া এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি সব পাশ কাটিয়ে দেশে এলেন। ঢাকায় জয়াকে ধরতে আসা বাংলাদেশী পুলিশকে দিতি জানালেন, মালয়েশিয়ায় সুব্রতকে শাকিব খুন করেননি, শুভ করেছেন। পুলিশ সন্তুষ্ট মনে “ঠিক আছে” বলে চলে গেল। একজনকে গ্রেফতার করতে এসে, মালয়েশিয়ায় ঘটিত আরেক অপরাধের বিচার বাংলাদেশের কোন পুলিশ করতে পারে বলে জানা ছিল না। হতেও পারে, আইনের হাত আবার অনেক লম্বা তো।

অভিনয়ের দিক থেকে সবচে বেশি নাম্বার পাবেন শাকিব খান। পুরা ছবিটাই তার ওয়ান ম্যান শো ছিল। তবে শাকিবের স্পাইক করা চুল, কানে দুল, ঠোটে লিপস্টিক তার চরিত্র আর ছবির মেজাজ দুটোর সাথেই বেমানান। আর “অপরূপা সুন্দরী” গানে তার পারফর্মেন্স ভাল হলেও, আঁটো পোশাকে মেদ দেখতে বেশ বাজে লেগেছে। ছবির ট্রেইলার আর গানে জয়াকে যতটা নিষ্প্রভ, নিষ্প্রাণ লেগেছে, বডি ল্যাঙ্গুয়েজের যে মাপা বিজ্ঞাপনী ছাপ ছিল বাকি ছবিতে সেটা একদম দেখা যায়নি। শতভাগ নায়িকাসুলভ অ্যাটিচুড নিয়ে বিদ্যমান ছিলেন জয়া। মনে হল অন্য চরিত্রগুলোর সাথে তাল মিলাতে ইচ্ছে করেই কিছুটা অতি অভিনয়-ও করেছেন। আরেফিন শুভর আসলে অভিনয়ের সুযোগ কমই ছিল। চিৎকার করেই সময় কাটিয়েছেন তিনি। তবে তার শেষ দৃশ্যটা দেখে মনে হল শুভ অভিনয় জানেন। ছোট চরিত্রে সোহেল রানা আর মিমোকে বেশ সাবলীল লেগেছে। যদিও মিমোর চরিত্রটা কোন প্রকার সমাপ্তি ছাড়াই হারিয়ে গিয়েছে। এর আগে আরও দুটো ছবিতে অভিনয় করা মিমোকে বেশ সম্ভাবনাময় লাগলো। তাকে কাজে লাগালে আশা করি আরও ভালো করবেন। দুই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ববিতা আর আনোয়ারার অতি অভিনয় নিয়ে কোন মন্তব্য না করাই ভাল। ছবির সব চে বড় অর্জন সাজু খাদেম। কমেডি চরিত্রে তার অভিনয় ছিল নজরকাড়া।

ছবিতে গান ছিল পাঁচটি। গানগুলো শ্রুতিমধুর। বিশেষ করে, চন্দন সিনহার “আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো” আর তাসিফ-মুন্নীর “আমি তোমার হতে চাই” গান দুটোর কথা আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়। প্রেমের তাজমহল গানটা খুবই অপ্রাসঙ্গিক ছিল। যে জোকটা দু লাইনের বেশি বাড়তে দেওয়া অনুচিৎ, সেটাকে টেনে একটা গান বানানোর কোন দরকার ছিল না। পরিমিতিবোধ কাজে লাগাতে হবে। গানগুলোর দৃশ্যায়ন সুন্দর ছিল। পরিচালক লোকেশনকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। ছবিতে সাজু খাদেমে অন্ধের ভান করে থাকতেন। সাউন্ড মিক্সিং-ও তার করা কিনা বুঝলাম না। ছবির প্রথম অ্যাকশন দৃশ্যে একটি লাথি মারলে দুটির আওয়াজ, দুটি ঘুষি মারলে তিনটি ঘুষির আওয়াজ শুনলাম। একবার তো দেখলাম শুভর মুঠোবদ্ধ হাত সাকিবের শরীরে সেঁটে আছে। অথচ ব্যাকগ্রাউন্ডে তুমুল ঘুষির আওয়াজ চলছে।

পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী চলচ্চিত্রের মূল শক্তি এর পরিচ্ছন্নতা। ছবিটি বাংলা ছবির নিয়মিত মশলা ব্যবহার করেও, স্বাদে ভিন্নতা অর্জন করতে পেরেছে। অনেক দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী উৎসবের আদর্শ ছবি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপভোগ করার মত ছবি।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.