নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটা নির্দিষ্ট গন্ডীর মাঝেইথাকতে চাই।।

সচেতনহ্যাপী

সচেতনহ্যাপী › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধ বা ক্ষমতার লড়াই যাই বলি না কেন,বলী নারী এবং শিশুরাই

০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ৩:০২

পৃথিবীতে কত নামেই না সশস্ত্র সংগাম চলছে। স্বাধীনতা,স্বৈরাচার থেকে মুক্তি,ক্ষমতা দখলের লড়াই, দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্তি ইত্যাদি বিভিন্ন নামে আসলে যুদ্ধই চলছে। ঘটছে অর্থ ও নৈতিক মূল্যবোধেরও অবনতি। আর অর্থ ও সরাসরি অংশগ্রহনকারীদের প্রাননাশ তো বলাই বাহুল্য। সাথে সবচেয়ে বেশী যাদের ক্ষতি ও প্রান যাচ্ছে, তারা হলো সাধারন জনসাধারন তথা নারী ও শিশু।

আমার আজকের লেখাটা এমনই এক অসহায় শিশুর বিষয় নিয়ে যা সেদিন পত্রিকা পড়তে যেয়ে পড়তে পড়তে মনকে যুদ্ধের বিভিষীকাময় অন্ধকার দিকটা তুলে ধরেছে। মনটা ছুয়ে গেছিল বলে ভেবে রেখেছিলাম ঘটনাটা আরো অনেককে জানাবো। আর কিছু না হোক যুদ্ধ যে কি বিষফল প্রসব করে তা অন্ততঃ যেন আমরা অনুধাবন করতে পারি।

বরাবরই অরাজকতায় ভরা এই দেশটিতে খুব সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গার কথা শোনা গেছে। শত অরাজকতার মাঝেও সব ধর্মের লোকরাই একসাথে বসবাস করতো। এটা চরমে পৌছুলো যখন উত্তরের মুসলিম বিদ্রোহীরা প্রেসিডেন্টকে তাড়িয়ে রাজধানী দখল করে ক্ষমতায় বসলো। তারপর শুরু করলো খৃষ্টান সম্প্রদায়ের উপর হামলা-লুট আর হত্যা। শুরু হলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আর যুদ্ধ। একসময় এই বিদ্রোহীগ্রুপ যা সেলেকা নামে অভিহিত বিতারিত হলো রাজধানী থেকে তখন থেকেই শুরু প্রতিশোধের পালা।

ঘটনাটা মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিকের কারনট নামক স্থান থেকে APর এক সাংবাদিকের লেখায় প্রকাশ পেয়েছে। সাংবাদিকটি একটি আশ্রয়কেন্দ্রের ভিতর বসে সাক্ষাৎকার,প্র্যক্ষদর্শীদের সাথে আলাপ করে টুকরো টুকরো ঘটনাকে একসুত্রে তুলে ধরেছে।( আমি সেটাই এখানে মেলে দিলাম)। সন্ধ্যের পর গ্রামের বাহিরে গুলির আওয়াজ হতেই গ্রামবাসীরা তাদের খাবার-নিদ্রা ফেলে পলায়ন করলো পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে। এমনকি হতভাগীনী ১০ বছর বয়সি হাম্মামাতু হারুনার মাও কোলের সাথে ছোট দুটি ভাইবোন নিয়ে পালিয়ে গেল হারুনাকে ফেলে। মা ফেলে গেল বোঝার ভয়ে আর শিশুমেয়েটা ইচ্ছে থাকা সত্বেও নিজের অথর্বতার জন্য। কারন মেয়েটি ছিল পোলিও রোগী। হাটতে পারতো না। চলতে হতো হামাগুড়ি দিয়ে। সুতারাং সে শুধু অপেক্ষা করতে লাগলো রাষ্ট্রের এই খৃষ্টান-মুসলিম ক্ষমতা দখলের নৃশংস বলী হবার।

হঠাৎ করেই তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে এলো তার দুই বছরের বড় ভাইটি,সুলায়মানে। কষ্ট হলেও পঙ্গু বোনটাকে পিঠে করে কোনভাবে ভাইটি জঙ্গলের গভীরে পৌছে গেল। এরই মাঝে খৃষ্টান যোদ্ধারা গ্রামে পৌছে প্রতিটি ঘরে খুজে খুজে হত্যাকান্ড চালাতে শুরু করে দিয়েছে। বন্দী করার কোন ব্যাপার নেই। একমাত্র ফয়সালা গুলি বা ম্যাচেটে কুপিয়ে খুন। গত কয়েক বৎসরে মধ্য আফ্রিকার ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত ৪৬ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই দেশটাতে খৃষ্টান-মুসলিম সংঘর্ষে উভয় পক্ষে কয়েক হাজার লোকের প্রানহানী ঘটেছে।

ইউনিসেফের এক হিসাবে শুধুমাত্র ৫লক্ষ শিশু গৃহহারা হয়ছে। যার মাঝে অনেকেই আছে গহীন জঙ্গলে লুকিয়ে। কয়েক হাজার হাজার হরিয়েছে তাদের পিতা-মাতা,ভাই-বোন। কেউ কেউ পরিবারের সবাইকে।। ঠিক এটাই ঘটলো হারুনা এবং তার ভাইএর বেলায়। গ্রামের দখল বিরোধীদের হাতে চলে যাওয়ায় ঘরে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে সামনে লাল মাটির পথ আর গাছের ছায়ায় বসে যা পাওয়া তাই খাওয়ার মধ্যেই তাদের দিন কাটতে লাগলো।হারুনাদের গ্রামটি ছিল ২৫০০ অধিবাসী অধ্যুষিত। এমনই প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে বর্ষাকালে সেখানে যতেও খুব কষ্ট হতো। অধিবাসীরা বেশীর ভাগই মাইনার হিসাবে কাজ করতো। আজ মাত্র তিনটি ঘরের অধিবাসীরা আছে,তাও খৃষ্টান বলে।

জীবনটা এমনিতেও হারুনার প্রতি সদয় ছিল না। ৭বছর বয়সে পিতৃহারা এই মেয়েটি আক্রান্ত হয় পোলিও রোগে। যা তার পাকে আক্রমন করে। ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাওয়া পায়ের সব শক্তি হারিয়ে যায়।। কিন্তু এতকিছুর পরও পরিবারের খাবার যোগানে সে তার মাকে সাহায্য করেছে ছোট ছোট প্লাস্টিক ব্যাগে লবন এবং ওকরা বিক্রয় করে। স্বাভাবিক ভাবেই স্কুলের চৌহদ্দিতে যাবার ভাগ্য হারুনার হয় নি।।

২বছরের বড় ভাইটি অর্থাৎ পরিবারের বড় সন্তানটি কাধে তুলে নেয় পিতার ভার। সংসারে অর্থ যোগানোর পাশাপাশি কিনে আনতো বোনের জন্য বিভিন্ন সময় সখের জিনিসও। গ্রামে আক্রমনের দিনটিতেও সুলায়মানে তার অচল বোনটাকে ছেড়ে যেতে পারে নি। তাকে কাধে নিয়ে জঙ্গলের গভীর থেকে গভীরে যেতে থাকে, মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে। একটাই লক্ষ্য পরবর্তি গ্রাম।একসময় তাও দুরঅস্ত হয়ে উঠলো। পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠলো এভাবে কোনদিনও তারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারবে না। একসময় বোনটিকে মাটিতে নামিয়ে সুলায়মানে বললো যে সে সাহায্যের জন্য যাচ্ছে। যদি না ফিরে আসে তাহলে হারুনা যেন কারো নজরে আসার জন্য চিৎকার করতে থাকে। পরিস্থিতি বুঝে হারুনাও বলে সে তার জন্য ঘাসের মাঝে লুকিয়ে অপেক্ষা করবে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যে হয়ে এলো। সাথে নিয়ে এলো ক্ষুধাও। কিন্তু কিছুই করার ছিল না তার। শুধু নীরবে কষ্টকে মেনে নেওয়া ছাড়া। রাত গভীর থেকে গভরতর হতে লাগলো। একদিকে শত্রুর ভয়,অন্যদিকে বন্যপশুর। সাথেই ক্ষুধার আক্রমন। এসব থেকে রক্ষা পেতে মেয়েটি উচ্চস্বরে ভাই-বোন আর মার সাথে কথা বলতে লাগলো। যেন তারা পাশেই বসে আছে।শেষপর্যন্ত সে আমি পরিত্যাক্ত বলে হতাশায় কেদে ঊঠলো। রাতের বৃষ্টি তবু তাকে একটু প্রশান্তি দিল। একে একে দুটো দিন পার হয়ে তৃতীয়দিনে সে কিছু মানুষের সাড়া পেল। যারা তাকে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখলো। কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতায় দিল কোন সাড়া অথবা সাহায্য। এবার হারুনা জীবনের আশা ছেড়ে মৃত্যুর প্রতিক্ষায় রইলো। কিন্তু সেটাও আসে না। ১০ম দিনে একজন লোককে রাইফেল কাধে,হাতে ম্যাচেট দেখে হারুনা বুঝলো তার মৃত্যুর সময় চলে এসেছে। চোখ বন্ধ করে সে গুলি বা ম্যাচেটের আঘাতের আশা করতে লাগলো প্রতিনিয়ত। দেরী দেখে চোখ মেলে দেখলো লোকটি তাকে জরীপ করছে জীবিত না মৃত বলে। চাইতে দেখে জানতে চাইলো তুমি এখানে কি করছো? হারুনা তাকে ধীরে ধীরে সব খুলে বললো। সব শুনে লোকটি তাকে তুলে নিয়ে নিজ স্ত্রীর হাতে তুলে দিল। মহিলাটি তাকে গোসল করিয়ে ময়লা কাপড় ধুয়ে খাবার দিয়ে সুস্থ করে তোলার পর লোকটি তাকে এক শহরের শেষ মুসলিম পরিবারের হাতে তুলে দিল। হারুনা তার নাম এবং তাকে দেখেও নি আর কোনদিন।

হারুনাকে পরবর্তিতে একটি চার্চের আশ্রয়কেন্দ্রে দেওয়া হয় সেখান থেকে পরে স্থানান্তর করা হয় ১৩০ কিঃমিঃ দুরের আরেকটি চার্চে। যেখানে সে প্রায় আরো ৮০০ মুসলিম গৃহহীন,অনাথ শিশুদের সাথে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর পরিচালনায় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে।। এতকিছুর পর মেয়েটি বেচে গেলেও যে ঝড় বা ক্ষতি তার জীবনে ঘটে গেছে তা কি কোন শক্তি তাকে ফেরত দিতে পারবে?? এই প্রশ্নই রইলো আমার সভ্য আর অত্যাধুনিক পৃথিবীর কাছে??

বিঃদ্রঃ পৃথিবীর যুদ্ধ-বিগ্রহ দেশগুলির দিকে একটু চেয়ে দেখুন। সেই আফগানিস্তান থেকে যতদুর পর্যন্ত আপনার দৃষ্টি যায়। মূল ভুক্তভোগী কিন্তু নারী-শিশুরাই।। পুরুষরা তাদের সামর্থের কারনের ক্ষয়ক্ষতির ভুক্তভোগী কম হয়।।



মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুন, ২০১৪ ভোর ৪:৫৮

সায়েদা সোহেলী বলেছেন: এমন লেখায় মন্তব্য দেওয়ার মত ভাষা আমি খুঁজে পাইনা ..।.।.।

এতকিছুর পর মেয়েটি বেচে গেলেও যে ঝড় বা ক্ষতি তার জীবনে ঘটে গেছে তা কি কোন শক্তি তাকে ফেরত দিতে পারবে?? এই প্রশ্নই রইলো আমার সভ্য আর অত্যাধুনিক পৃথিবীর কাছে??

হয়ত অনেক আধুনিক হয়েছে কিন্তু ,আমরা কি সত্যি আজ কোন সভ্য পৃথিবী তে আছি ????

০৭ ই জুন, ২০১৪ ভোর ৫:০৬

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: না,সত্যি বলতে গেলে আসি নি। আর আসবো বলে মনের সেই আশাবাদও নেই। অন্ততঃ আমি নই।। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন সারাবেলা।।

২| ০৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৩২

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


যুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদ কখনই ভাল কিছু বয়ে আনেনা। সাফারার হয় আমাদের মতো কিছু অসহায় নিরস্ত্র সাধারন মানুষ যাদের বাকিটা জীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়।

৩| ০৭ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: সহমত কান্ডারী।। হয়তো বিজয় অর্জন(ক্ষেত্রবিশেষে) সম্ভব হয়, কিন্তু মূল্য দিতে হয় নারী ও শিশুকে বেশী।।

৪| ০৭ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:১৮

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: চমৎকার একটা লেখা। সহমত পোষন করছি আপনার পয়েন্টে সুতীব্রভাবে...

সায়েদা সোহেলীর কমেন্টটাই রিপিট করছি, এমন লেখায় মন্তব্য দেওয়ার মত ভাষা আমি খুঁজে পাইনা ..।.।.।

এতকিছুর পর মেয়েটি বেচে গেলেও যে ঝড় বা ক্ষতি তার জীবনে ঘটে গেছে তা কি কোন শক্তি তাকে ফেরত দিতে পারবে?? এই প্রশ্নই রইলো আমার সভ্য আর অত্যাধুনিক পৃথিবীর কাছে??

হয়ত অনেক আধুনিক হয়েছে কিন্তু ,আমরা কি সত্যি আজ কোন সভ্য পৃথিবী তে আছি ????


ভালোলাগা রইলো ...

৫| ০৭ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৩২

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ধন্যবাদ নাসিফ। আপনি আমার বাড়ীতে এসে আমাকে ধন্য করেছেন।
বড় কথা একটাই আমরা সভ্যতার বড়াই করি, কিন্তু কতটুকু অগ্রসর হয়েছি?? যেটুকু তা কিন্তু স্বার্থেই কারনেই।।

৬| ০৭ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: সভ্যতার বড়াই করলেও মানুষ আজও তার হিংস্রতা পরিহার করতে পারেনি। আপনার লেখায় চোখে আঙ্গুল দিয়ে তা' দেখিয়ে দিয়েছেন।

ধন্যবাদ, সচেতনহ্যাপী।

০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:২৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আসলে আমাদের রক্তে আদি যুগের কিছু কিছু ব্যাপার এখনো রয়ে গেছে। আর মজার ব্যাপার কি জানেন/ মানবিকতা,গনতন্ত্র আর শান্তির কথা অহরহ চিৎকার করে,তারাই কিন্তু প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভাবে এত যুদ্ধ আর প্রানহানীর মূলহোতা।।
আপনাকেও ধন্যবাদ।।

৭| ০৮ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৬

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: @উড়োজাহাজ তাহলে আপনিও বুঝতে পেরেছেন। হ্যাঁ তাই।।

৮| ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৬

আরজু পনি বলেছেন:

শুধুই দীর্ঘশ্বাস ! :|

০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৩৭

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: হ্যা তাই।।

৯| ১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:১০

পংবাড়ী বলেছেন: মুক্ত হয়েছে ভালো; তবে, জাতি চাইলে ওদিগকে আগেই মুক্ত করা যেতো।

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:২১

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: একমত। জাতি বলতে জনসাধারন+সরকার।। আমরা চাইলে এবং সরকারের পক্ষে সম্ভব না হলেও জন প্রতি ৫টাকা করে দিলেও অনেক আগেই তাদের মুক্তিপন দিয়ে ছাড়িয়ে আনা অসম্ভব ছিল না।(যদিও মুক্তিপনের পরমান আমার সঠিক জানা নেই) কিন্তু বাস্তবতা, কেউই এদিকে নজর দেয় নি। আমরা শুধু ব্যাপারটাকে খবর বলেই নিয়েছি আর সরকার বসে ছিল কোম্পানীর মালিকদের আশায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.