নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একবার যখন দেহ থেকে বা’র হ’য়ে যাব আবার কি ফিরে আসবো না আমি পৃথিবীতে? আবার যেন ফিরে আসি কোনো এক শীতের রাতে একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে। কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে”

দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সোহেল

স্পন্দিত রক্ত

দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সোহেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিনুয়া আচেবে লাইট অব \'ডার্কনেস\'

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১১


চিনুয়া আচেবে
লাইট অব 'ডার্কনেস'
রাজু আলাউদ্দিন
চিনুয়া আচেবে ছিলেন সেই জাতের লেখক, যাঁরা সাহিত্যকে কেবল বিনোদনের সামগ্রী হিসেবে বিবেচনা করতেন না, মনে করতেন তার চেয়েও বেশি কিছু। যেমনটা এক সময় জাঁ পল সার্ত্রে বিশ্বাস করতেন। সাহিত্য হবে সমাজ বদলের হাতিয়ার। ইউরোপে এবং ইউরোপের বাইরেও সার্ত্রের এই আদর্শ দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে সাহিত্যকে সমাজ বদলের জন্য ব্যবহার করতে চেয়েছেন অনেকেই। সাহিত্য কি আসলেই সমাজকে বদলাতে পারে? এর উত্তর সব সময়ই 'হ্যাঁ'। কিন্তু বদলটা এত নিঃশব্দে এবং ধীরগতিতে ঘটে যে আমরা তা লক্ষ করি না। চিনুয়া আচেবে যে সংস্কৃতি থেকে এসেছিলেন, সেখানে শিল্প বা সাহিত্য ওরাল ফর্মের ওপর ভিত্তি করে গোত্রদের বিনোদনের উপায় হিসেবে বিরাজ করে আসছে বহুদিন থেকে এবং এখনো পর্যন্ত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রধান বিনোদন মাধ্যম হিসেবে তা বর্তমান। কিন্তু আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই বিনোদন একই সঙ্গে শিক্ষারও এক মাধ্যম। ঔপনিবেশিক শাসন আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যকে মুছে দিতে পেরেছে খুব কমই। আচেবে তাঁর সংস্কৃতির এই ধর্ম ও মর্মকে তিনি বর্ণমালাভিত্তিক সংস্কৃতির মধ্যে এনেছিলেন এবং নিজ দেশে যেমন, তেমনি বহির্বিশ্বেও তার জানান দিয়েছিলেন। ইউরোপীয় অন্য সব লেখকের মতো নিজেকে তিনি সমাজের কাছে দায়দায়িত্বহীন লেখক বলে মনে করতেন না। তাঁর দেশের বা গোটা আফ্রিকার সমস্যাগুলো যেহেতু ইউরোপের চেয়ে ভিন্ন, তাই লেখকের দায়দায়িত্বও সেখানে ভিন্ন। আফ্রিকা বা নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলোতে সরকারগুলো জনসেবার পরিবর্তে জনগণকে শোষণের নির্দয় হাতিয়ার হয়ে ওঠে বলে চিনুয়া আচেবের মতো লেখকদের সেখানে বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা পালন করা জরুরি হয়ে ওঠে। আচেবে আমৃত্যু লেখক হওয়ার পাশাপাশি এই অতিরিক্ত দায়িত্বটি পালন করে গেছেন।
রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি এমনকি সাহিত্যবিষয়ক বহু প্রবন্ধে তিনি নিজের জাতির বা আরো বৃহত্তর পরিসরে গোটা আফ্রিকি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য ও গৌরব সম্পর্কে সজাগ করে তুলেছেন আমাদের। সাহিত্যের নন্দনতাত্তি্বক বিশ্বাসকেও তিনি সামাজিক গুরুত্বের বাইরে বিবেচনা করতেন না। প্রায় অসহিষ্ণু ভঙ্গিতে এবং তীব্র ভাষায় কলাকৈবল্যবাদকে তিনি ঘৃণাভরে আখ্যা দিয়েছিলেন 'ডিওডোরান্ট ডগশিট' বলে। নিজের জাতির অপমানে ও জাতিবিদ্বেষের দায়ে অভিযুক্ত করে তিনি ইউরোপীয় সাহিত্যের প্রবল ব্যক্তিত্ব জোসেফ কনরাড এবং জয়েস ক্যারিকে তুলোধুনো করে ছেড়েছেন। 'হার্ট অব ডার্কনেস' উপন্যাসের পাতায় পাতায় কনরাডের জাতিবিদ্বেষের নমুনাকে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর অসামান্য প্রবন্ধ "অ্যান ইমেজ অব আফ্রিকা : রেসিজম ইন কনরাডস 'হার্ট অব ডার্কনেস' "-এ।
আচেবে আজকে যে বিশ্বখ্যাত নাইজেরীয় লেখক হয়ে উঠেছেন তার পেছনেও কনরাডের এই উপন্যাস একটি বড় কারণ হয়ে আছে। এই উপন্যাস তাঁকে বাধ্য করেছিল 'থিংস ফল এপার্ট' নামের উপন্যাসটি লিখতে। কনরাডের ব্যর্থতার জবাবে এই উপন্যাসটি লেখা হলেও জাতিবিদ্বেষের অপমানকে তিনি সৃষ্টির মুহূর্তে এক পাশে সরিয়ে রেখেছেন শিল্পীর স্বভাবসুলভ সান্ত্বনা ও শৈল্পিক শর্তকে মান্য করে। এ কারণে উপন্যাসটি ক্রোধের ফসল হলেও শিল্পকর্ম হিসেবে উচ্চতর নজির হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত এ উপন্যাসটি খোদ আমেরিকায়ই বিক্রি হয়েছে ২০ লাখেরও বেশি কপি। অনূদিত হয়েছে ৫০টি ভাষায়। উপন্যাসটিতে বয়ান করা হয়েছে ১৮ শতকের শেষ দশকে ওকুনকো নামের এক প্রবল ক্ষমতাধর ব্যক্তির পতনের কাহিনী। এই পতনের পেছনে কারণ হিসেবে আমরা ইংরেজ মিশনারি এবং ঔপনিবেশিক কর্মকর্তাদের আগমনকে লক্ষ করি। আচেবে যদিও বলেছেন যে ইগবোদের ঐতিহ্যবাহী জীবনাচরণের মধ্যেই এমন এক দুর্বলতা নিহিত ছিল, যা ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ফলে ত্বরান্বিত হয়েছে মাত্র। উপন্যাসটি প্রকাশের কয়েক বছর পর ওকুনকোর সংকট সম্পর্কে আচেবে বলেছিলেন যে "আমার সহানুভূতি পুরোপুরি ওকুনকোর প্রতি ছিল না...জীবন তো প্রবহমান, আপনি যদি পরিবর্তন মেনে নিতে অস্বীকার করেন, তা যত বেদনাদায়কই হোক না কেন, আপনি এক পাশে পড়ে থাকবেন।"
এ উপন্যাসটি প্রকাশের দুই বছর পর বের হয় তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস নো লংগার এট ইজ। এ উপন্যাসে তিনি কিছুটা লাফ দিয়ে চলে আসেন ১৯ শতকের পাঁচের দশকে। তবে এখানে কাহিনীর নায়ক ওকুনকোর নাতি ওবি যিনি স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে স্বদেশের সমসাময়িক বিষয়গুলোর মোকাবিলা করেন। দ্বিতীয় উপন্যাস প্রকাশের বছর চারেক পর বের হয় অ্যারো অব গড। বাংলা ভাষায় এ গ্রন্থের অনুবাদক খালিকুজ্জামান ইলিয়াসের ভাষায়, "অ্যারো অব গড-এ যেসব সম্পর্ক নিয়ে আচেবে কাজ করেছেন, তাদের অন্যতম হলো শাসিত ইগবো জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিতে ঔপনিবেশিক ইংরেজ এবং শাসক ইংরেজদের চোখে ইগবো সম্প্রদায় ও তাদের সনাতম জীবনযাত্রা ও ধর্মাচার। স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাপন নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর উন্নাসিকতার চিত্র পৃথিবীর অন্যান্য উপনিবেশে শাসকদের আচরণ থেকে স্বতন্ত্র কিছু নয়। এ ছাড়া আচেবে ইংরেজ কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পেশাগত রেষারেষি, চাকরিতে অগ্রজ-অনুজ সম্পর্কের টানাপড়েন, ব্যক্তিগত জীবনের ব্যর্থতা, প্রেম, প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব..."।
সন্দেহ নেই যে আচেবে যখন কোনো উপন্যাস লেখেন, তখন সেখানে খুঁটিনাটিসহ গোটা সমাজের চিত্রটাকে তিনি তুলে ধরেন। শিল্পীর নিষ্ঠায় তিনি চরিত্রগুলোতে সঞ্চার করেন প্রাণ। তাঁর উপন্যাসের সমাজতাত্তি্বক ও নৃতাত্তি্বক মূল্যের পাশাপাশি শৈল্পিক মূল্যও যে কোনো অংশে কম নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যাবে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত তাঁর উপন্যাসগুলো সম্পর্কে পশ্চিমা লেখকদের আলোচনাগুলোয়। শিল্পী হিসেবে তাঁর মিতব্যয়িতার প্রশংসা করেছেন মার্কিন লেখক জন আপডাইক।
ইংরেজ না হয়েও তিনি যে দক্ষতায় ইংরেজিকে সৃষ্টিশীলতার মাধ্যম করে নিয়েছিলেন, তা ছিল বিস্ময়কর।
আফ্রিকার লেখকরা কোন ভাষায় লিখবেন তা নিয়ে একটা তর্ক চলছিল দীর্ঘদিন থেকেই। ঔপনিবেশিক প্রভুদের ভাষা ইংরেজি বা ফরাসি তাঁরা ব্যবহার করবেন কি না এ প্রশ্নে আচেবে ইংরেজিকে কেন বেছে নিলেন তার পক্ষে যুক্তি হিসেবে 'আফ্রিকান ইংলিশ' শীর্ষক এক প্রবন্ধে বলেছিলেন, "সৃষ্টিশীল লেখায় কার্যকরভাবে ব্যবহারে সক্ষম হওয়ার জন্য একজন আফ্রিকান কি ইংরেজি ভাষাটি যথেষ্ট ভালোভাবে শিখতে পারে? নিশ্চিতভাবেই হ্যাঁ। যদি অন্যভাবে জানতে চান : একজন ইংরেজিভাষীর মতোই কি সে তা ব্যবহার করতে পারে? আমি বলব, মনে হয় না, ...। ইংরেজি ভাষাটা আফ্রিকান লেখকরা এমনভাবে ব্যবহার করবেন, যাতে ভাষার পরিবর্তন না ঘটিয়েই তার বক্তব্যকে সবচেয়ে স্পষ্ট করে তুলতে পারেন।"
আচেবে যদিও মূলত ঔপন্যাসিক ছিলেন কিন্তু সমাজে তাঁর দায়বদ্ধতা ছিল পুরোপুরি। এই দায়বোধের কারণেই তিনি আফ্রিকার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে শীর্ষ ভূমিকায় ওঠে আসেন। তিনি যেমন তাঁর জনগোষ্ঠীর সমালোচক ছিলেন, তেমনি তাদের সুরক্ষাও করেছেন বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে। 'দ্য নভেলিস্ট অ্যাজ টিচার' প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন যে 'আমি যে ধরনের লেখা লিখি, তা আমাদের অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত নতুন এবং পাঠক ও আমাদের মধ্যকার জটিলতাগুলো বর্ণনা এবং তা চেষ্টা করার সময় আসেনি... জনগণকে সচল ও শিক্ষিত করার আবশ্যিক কর্তব্য থেকে নিস্তার পাওয়ার আশা একজন লেখক করতে পারেন না। আসলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ...শিল্প গুরুত্বপূর্ণ, তবে যে ধরনের শিক্ষার কথা আমি ভাবি, তাও গুরুত্বপূর্ণ এবং আমি এ দুটিকে পারস্পরিক বিচ্ছিন্নভাবে দেখি না।' তাঁর সব লেখালেখির মধ্য দিয়ে নিজের জাতির প্রতি যেমন, তেমনি বহির্বিশ্বের প্রতিও এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন যে নাইজেরিয়া বা গোটা আফ্রিকা তার গৌরব ও মূল্যবোধের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠুক। তাঁর মৃত্যুতে গোটা আফ্রিকার বঞ্চিত ও শোষিত মানুষ এমন একজন মুখপত্রকে হারালো, যিনি তাদের আকাঙ্ক্ষার ভাষ্যকার ছিলেন

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: অসাধারন সুন্দর লেখা।চিনুয়া আচেবে সম্পর্কে অনেককিছুই পড়তে পারলাম।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৪৫

দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সোহেল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ , অনেক সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.