নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একবার যখন দেহ থেকে বা’র হ’য়ে যাব আবার কি ফিরে আসবো না আমি পৃথিবীতে? আবার যেন ফিরে আসি কোনো এক শীতের রাতে একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে। কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে”

দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সোহেল

স্পন্দিত রক্ত

দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সোহেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলদস্যু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৫৬

জলদস্যু
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
আলোচনায়ঃ সোহেল রানা, এম এ , ইংরেজি বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ ।

ঘটনা পরম্পরাঃ
বিশ্বেশ্বর ঠাকুর একজন ব্রাহ্মণ গোত্রীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী।ঐতিহাসিক আঙ্গিক নির্ভর এই উপন্যাসটি মূলত তার জীবনের প্রবল সাহসিকতার কুড়ানী চরিত্রের পারস্পারিকতা ভিন্ন ব্যাঞ্জনা দিয়েছে। তিনি যখন কুড়ানিকে কুড়িয়ে পান, তখন কুড়ানি কোন কথা বলতে পারতো না । মূলত সেই কুড়ানিকে ন্দীর ধার থেকে কুড়িয়ে এনে তার জীবন বাঁচান । কুড়ানি যখন কোন বাড়িতে থাকতে অস্বীকৃতি জানায় তখন তিনিই মন্দিরে তার থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এভাবে কিছু দিন চলার পর হটাত একদিন কুড়ানিকে তিনি পাশের কাঁটাবনের মধ্য পড়ে থাকতে দেখেন । যখন তিনি কুড়ানির সাপে কাঁটা পা বাধার জন্য উদ্যত হলেন তখনই ঘটলো মুল বিপত্তি। কুড়ি পঁচিশ জন ফিরিঙ্গি জলদস্যু তাদের ঘরবাড়ি লুটকরে অনেককেই ধরে নিয়ে যায়। উল্লেখ্য যে , বিশু ঠাকুর চাইলে কুড়ানিকে ফেলে পালাতে পারতেন, কিন্তু সেটা না করে স্বেচ্ছায় ধরা দিলেন।
ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা সাধারনত এভাবে গ্রামকে গ্রাম লুট করে সকল লোক জনকে ধরে নিয়ে যায় দাস হিসেবে বিক্রি করার জন্য। বিশু ঠাকুর বারবার পালানোর পরিকল্পনা করলেও একমাত্র কড়ানির জন্যই তার সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যায় এবং ৩/৪ বার ধরা খেয়ে প্রচুর নির্যাতনের শিকার হন। কিন্তু তাতে তার কোন কষ্ট বা দুঃখ নেই তার শুধু এক্টাই আফসোস, যে কুড়ানির জন্য ধরা দিলাম সেই কুড়ানিকে আমি মুক্ত করতে পারলাম না । তারপরও অনেকবার সে বৃথা চেষ্টা করেছেন বের হয়ে আসার জন্য প্রতিবারই ধরা খেয়ে মর্মান্তিক পীড়নের শিকার হয়েছেন। একবার কুড়ানি তার বাধা ঝুলন্ত দড়ি কেটে দিয়ে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন কিন্তু ফলাফল শূন্যই থেকে যায় ।
এভাবে এক্সময় যখন তাদেরকে মগ সেনাপতি আনাপুরামের কাছে কৃতদাস হিসেবে বিক্রি করার জন্য আনা হয় ঠিক তখন একমাত্র বিশু ঠাকুরকেই ১০০শত স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে কেনার প্রস্তাব দেন আনাপুরাম, সেই সময় বাধন খুল্লেই সময় বুঝে নদীতে ঝাঁপ দেন এবং ভাসতে ভাসতে সুন্দরবনের কোন এক তীরে যেখানে বাঘ ও সাপের উপদ্রব থেকে তাকে রক্ষা করেন মাধব দাস নামের আরেকজন নির্যাতিত যিনি এই ফিরিঙ্গি জলদস্যুদের কবলে পড়ে পরিবার হারিয়েছেন। সেখানে তিনি একমাস কাটানোর পর ফিরিঙ্গি বোম্বেটেদের জাহাজ দেখতে পান যখন তারা আনাপুরামকে কতল করে অনেক সম্পদ লুট করে নিয়ে আসছিলো। ঠিক তখন বিশু ঠাকুরের পুরনো প্রতিশোধের আগুন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সে স্থির করে যে, যে করেই হোক কুড়ানি এবং তার প্রতিবেশীদের রক্ষা করবেই।
এরই মধ্য মোগল সেনাপতি শায়েস্তা খাঁর তত্ত্বাবধানে এবং তকী খাঁর পরিচালনায় একটি মিশন বের হয় ফিরিঙ্গি বোম্বেটেদের দমন করার জন্য। কিন্তু জলদস্যু ডিয়েগোর চতুর ব্যবস্থাপনায় তকীর মিশন ব্যর্থতাই পর্যবসিত হয়। তকী খাঁ মারা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শায়েস্তা খাঁ অনেক পর্যালোচনা করে একটি বিশাল সৈন্য দলের মিশন পাঠান। এ খবর ফিরিঙ্গিদের মধ্য ছড়িয়ে পড়লে তারা আতংকিত হয় তাদের পরিবারের জন্য। ফলে দস্যুদের মধ্য দুটো দল দেখা দিল। কাপ্তানের মত যে তারা গোয়ায় যাবে আর আন্তনিও এর মত যে তারা চট্টগ্রামে যাবে । এ নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে সাহসিকতা ও চতুরতার সাথে বিশু ঠাকুর ও মাধব দাস সকল বন্দীদের উদ্ধার করেন এবং ফিরিঙ্গিদের অনেককে হত্যা করেন । সেবাস্টিয়ান গঞ্জালেসকে ধরে শায়েস্তা খাঁর নিকট নিয়ে এসে বিশু ঠাকুর সব কিছু খুলে বলেন । পরবর্তীতে শায়েস্তা খাঁ বলেন “তোমার কি লাগবে, তুমি কি চাও” কিন্তু সবাই কে অবাক করে দিয়ে বিশু ঠাকুর সেবাস্টিয়ানের গালে দুটো থাপ্পড় এবং সেই সাথে কয়েক ঘা চাবুক মারেন। বলেন, “প্রতিশোধ বলতে আমি এই টুকুই চেয়েছিলাম”।
ইতিমদ্ধ্য মাধবদাস কুড়ানিকে চিনতে পেরে কাছে আসতে বলেন । কুড়ানিও বাবা হিসেবে মাধবদাস কে চিনতে পেরে দুজনেই কাঁদতে থাকেন। এ কান্না কিন্তু আনন্দের!


অন্তর্নিহিত অভিব্যক্তিঃ
লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় খুব চতুরতার সাথে গল্পের ছলে ইতিহাস বুঝিয়েছেন। ইতিহাস খুজলে পাওয়া যাবে শায়েস্তা খাঁর সময়ে ফিরিঙ্গি জলদস্যু দের ব্যপক প্রভাব। ইতিহাস সফল ও প্রভাবশালী মানুষের কথা বলে । কিন্তু বিশু ঠাকুরের মতন অনেক সাহসী মানুষেরা যে অনেক ত্যগী হয়ে মিত্তুর মুখে জীবনকে সঁপে দিয়ে ইতিহাস রচনা করে । তাদের কথা ইতিহাসে স্থান পায় না । এখানে লেখকের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। বিশু ঠাকুর নাকে এক ব্যাক্তি ছিল যিনি কৌশলে জিবনবাজী রেখে ফিরিঙ্গি বোম্বেটেদের ধরিয়ে দেন। কিন্তু এই কর্মের সমস্ত সফলতা শায়েস্তা খাঁ এর থাকলেও ইতিহাসে বিশু ঠাকুরের কোন স্থান হয় নি। উদাহারন স্বরূপ বলা যায় আগ্রার তাজ মহল তৈরির জন্য যে হাজার হাজার কারিগর তার শিল্প নিপুণতায় এবং মনের মাধুরী মিশিয়ে তিলতিল করে গড়ে তুলেছিলেন ; পরবর্তীতে দেখা যায় তাদের নাম ইতিহাসে ওঠা তো দুরের কথা তাদের প্রত্যেকের ভাগ্যে জুটলো আঙুল কেটে ফেলার পৈশাচিকতা।
মাধবদাসের কথার মাধ্যমে লেখক বলেছেন, “কোন বাঘ কোন বাঘকে হত্যা করে না , কোন হরিন কোন হরিন কে হত্যা করে না কিন্তু একটি মানুষ একটি মানুষকে হত্যা করে।” তার কথার মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতার তথাকথিত সভ্য জগতটাকে স্যাটারাইজ করেছেন। যে মানুষ একটি মানুষকে পশুরমত মুল্য দেয় সেই প্রথিবির সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেয়। প্রাচীনকালে যে সব দাসপ্রথা ছিল তার ভয়াবহতার অনেকটায় উঠে এসেছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই উপন্যাসে। এখানে তিনি জীবন ও যৌবনের রূপকে চরম পাশবিকতার সাথে সমান্তরাল করেছেন। সেখানে জীবন মৃত্যুর রূপ বিচিত্র।

উক্ত গল্পে বিশু ঠাকুরের চরম সাহসিকতা ও বিরত্তের পরিচয় লক্ষণীয়। তিনি মূলত কোন কাজকে অসমাপ্ত রেখে চলে যাওয়াকে ভীরু কাপুরুষের সাথে তুলনা করেছেন। বিশু ঠাকুর তীব্র মানবীয়তার পরিচয় দিয়েছেন । একটি মানুষ তার শেষ রক্ত বিন্দু দিয়েও যে আরেকটি মানুষের সাহায্য এগিয়ে যাওয়া যায় ! বিশু ঠাকুর তার জ্বলন্ত প্রমাণ। বিশু ঠাকুর বলেছিল, “তাকে আমি বাঁচিয়েছিলাম, সেও ঐ জাহাজে বন্দিনী। তাকে আমি বাচিয়েছিলাম কি ফিরিঙ্গিদের কাছে ক্রীতদাস হবার জন্য?” ।
তীব্র জন্ত্রনা, ক্ষোভ ও জিদ থেকেই যে শারীরিক ও মানসিক শক্তি বহুগুনে বেড়ে যায় তার নমুনা বিশু ঠাকুর। তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে কপালে দুহাত ঠেকিয়ে প্রণাম করে বললেন, “হে ঈশ্বর, তোমার কৃপায় আমি আমার জীবন ফিরে পেয়েছি। ঘৃণা-দাসত্ব আমার মেনে নিতে হয় নি। এখন আমার শরীরে আগেকার শক্তি ফিরিয়ে দাও। এরপর যত দিন বাঁচবো, আমি অন্যায়ের প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা করে যাবো ।”
যুদ্ধই জীবন, যুদ্ধই সার্বজনীন । বিশু ঠাকুর জীবনকে প্রবল চ্যলেঞ্জের মুখে পতিত থাকা অবস্থায়ও মনোবল হারাননি । তিনি কালুকে বলেন, “কুকুর-বেড়ালের মত বেঁচে থেকে লাভ কি ? লড়ায় করে বাঁচবার চেষ্টা করবে না ?” । এখানে জীবনের রঙ, স্বাদ, বর্ণ ভিন্ন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, এমন হাসি বিধাতা যাহাকে দিয়াছেন, তাহার কথা বলার প্রয়োজন কি!” ।
যেখানে মানুষ মানুষকে দ্যাখে পণ্যর মত সেখানে জীবনবোধ ও জীবন ঘনিস্ট নান্দনিকতার কোন স্থান নেয় । গল্পের প্রত্যেক দৃশ্যপটের এক একটি খণ্ড নিখুঁত পাঠক প্রিয়তাকে নির্দেশ করে । যেখানে ধারাবাহিকতা সত্ত্বেও এখানে আগাম ধারনা করার কোন স্থান নেই। যা গল্পকে করেছে স্বাতন্ত্র্য ।
চরিত্র সমুহঃ
১/ বিশু ঠাকুর, ২/ কুড়ানী, ৩/ কাপ্তান সিবাস্টিয়ান, ৪/ শায়েস্তা খাঁ(মোগল সেনাপতি), ৫/ তকী খা(সহকারী), ৬/ সম্রাট আওরঙ্গজেব(দিল্লীর সুবাদার), ৭/ আনাপুরাম(মগ সেনাপতি), ৮/ সুবনা( তার বোন), ৯/ ডিয়েগো(গঞ্জালেসের ব্যাক্তিগত সহকারী), ১০/ ডোমিনিক, ১১/ মাধব দাস, ১২/ আন্তনিও


মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.