নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুহাম্মদ সোহেল চৌধুরী, সত্যকে আকড়ে ধরে, জীবনকে রঙ্গিন করে, আজীবন মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান।
এক পলক
সোহেল চৌধুরী
আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন কল্পনার রঙ্গিন ফানুসে ভেসে বেড়াতাম অসীম আকাশে। মুক্ত পাখির মত উড়তাম দেশ থেকে দেশান্তরে। সবুজ বনানী পাথুরে পাহাড়, নীল প্রমত্তা নদী, ধু-ধু মরুভূমি সব কিছু দূর থেকে দেখতাম আর দু'চোখ তৃপ্তিতে জুড়িয়ে যেত। মনে হত কাঠ বিড়ালীর মত মসৃন মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছি। হন হন করে প্রচন্ড লম্বা গাছের মাথায় উঠে বসে আছি। কিছুই হলো না। ভাবনার বর্নিল ফানুস যেন আচমকা তীক্ষন সুইয়ের হুলে ধপ করে ফেটে বাস্তবের পৃথিবীতে আছড়ে পড়ল ভগ্নদশা। দিলের হাল-চিত্র তাই বড় রুঢ়। কঠিন আঘাতে চূর্ন-বিচূর্ন তার পারও আমার আশা ছাড়ি নাই। ছোট কাল থেকে আশা ছিল এক জন ভাল নামকরা ব্যবসায়ী হবো। তবুও সেই আমার সঙ্গ দেওয়া ভাবনারা আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সোনালী শৈশবে। দেখতে পাই মায়ের অকৃত্রিম আদর ও ভালবাসার মাঝে আমাকে । চাঁদ মামার গল্প বলে ঘুম পড়ানো,মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে ক্লান্ত শরীরে অবসর খুজতো। তবু মায়ের এক বিন্দু সুখ ছিল ছেলেকে কাছে পাওয়া। পরম আদরে রাঙ্গিয়ে তুলতো অবুঝ ছেলের অবোধ মনকে। তবু ও মা আমাকে দূরে সরে যেতে দিত না।
মায়ের একটা স্বপন্ন ছিল তার ছেলে একদিন ভাল একজন নাট্যকার, গীতিকার হবে। অনেক ত্যাগতিতীক্ষার পর মায়ের সে আশা পূর্ন হল। কিন্তু মায়ের এখন একটাই স্বপ্ন তার ঘরে একটা ফুটফুটে আলোকিত জোৎস্নার মত বউ দরকার। কোথায় পাবে এমন মেয়ে।
আমি ঢাকাতে পড়াশুনা করেছি। বছরে দুই তিন বার গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যেতাম। এবার যখন বাড়ি গেলাম তখন ছিল আষাঢ় মাস। আষাঢ় মাসে বাড়ি যাবার উদ্দেশ্য হল গ্রামের বাড়িতে বৃষ্টিতে ভিজতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই এই মাসে বেড়াতে যাবো বলে ভেবে রেখে ছিলাম। গ্রামের বাড়ি একটু বৃষ্টি হলে রাস্তা ঘাট যেন বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়।তার পরও গ্রামের বাড়ি আমার ভাল লাগত।
সেদিন ছিল রবিবার। বন্ধুদের নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে রাস্তায় রেব হয়েছিলাম। অনেক সময় বৃষ্টিতে ভিজলাম। অনেক আনন্দ পেলাম। তার পরও মনে হচ্ছে আর একটু ভিজতে পারলে ভাল লাগত। এদিকে প্রায় সন্ধ্যা নেমে আসছে। এখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে আমাদের গায়ে। বিরহ বেদনার করুন রজনীরতে জর্জরিত হয়ে প্রকৃতির কান্নার সময় এটা কাদেঁ অবিশ্রান্ত ভাবে। ক্লান্তির অবসন হয়ে পড়ছে সমস্ত মাঠ-ঘাট, খাল-বিল । সে হচ্ছে বর্ষার প্রকৃতি। রিম ঝিম বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মাঝে হাটতে হাটতে অনেক পথ অতিত্রুম করলাম। যখন আমাদের স্কুলের সামনে পৌছালাম তখন দেখতে পেলাম কয়েক জন তরুনীরা অনেক উচু উচু হিলের জুতা পড়ে ঠক ঠক শব্দ করে হাটছে।
আমি বললাম “প্লিজ একটু সাইড দিবেন কি? প্রথম কথায় মেয়েগুলো কোন পাত্তা দিল না। আবার ও বললাম প্লিজ একটু যেতে দিবেন কি? এই কথা শোনা মাত্র পিছনের দিক ফিরে দেখল বিশ বাইশ বছরের এক তরুন যুবক। গায়ের রং কাচা গলুদের মতো। মাথায় ঘন কালো চুল। মোহনীয় ডগর চোখ দুটি যেন মেয়েদের মন কেড়ে নেবার বিশেষ যন্ত্র। যে কোন তরুনী মেয়ে দেখলে তাকে পেতে চেষ্টা করবে। এতে কোন সন্দেহ নেই।
নওশীন,হাসানের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সোহাগ লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল এমন করে কি দেখছেন? নওশীন বলল তোমাকে। নওশীন সোহাগকে দেখেই তার মোহনীয় দেহের যৌবনের উত্তল তরঙ্গের সাধ ভোগ করে নিচ্ছে। সোহাগ ও নওশীনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দৃষ্টি দিল। সোহাগ মনে মানে হাসছিল, হাসি চেপে রাখা কঠিন তারপরে সোহাগ নওশীন দেখে এক পলক হেসে চলে গেল।
©somewhere in net ltd.