নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শূণ্যতা জীবনে পূর্ণতা পাওয়ার আশা

সোহেল চৌধুরী

মুহাম্মদ সোহেল চৌধুরী, সত্যকে আকড়ে ধরে, জীবনকে রঙ্গিন করে, আজীবন মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান।

সোহেল চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাতলা গ্রামের এক নারী মুক্তিযোদ্ধার গল্প "মিসেস আয়শা খাতুন"

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:৪৬



মিসেস আয়শা খাতুন, তিনি একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায় সাতলা ইউনিয়নে জন্মগ্রহন করেন। পিতা- মাতা-। পরিবারে ৭ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অতি সাহসী। ছোট বেলায় তার চলাফেরা ছিল দুরন্ত এবং বিভিন্ন কাজে কর্মে সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছেন। আয়শা খাতুন তার মাকে যেমন ভালবাসেন ঠিক তেমনি তার দেশকে ভালবাসেন। মা ও মাটিকে ভালবেসে তার জীবন যুদ্ধের পথ চলা শুরু করেছেন।

বর্তমান সমাজের ছেলেমেয়ে মুক্তিযোদ্ধের কথা হয়তো ভুলতে বসেছে। তারা জানে না কি ভাবে দেশ স্বাধীন হলো। দেশ স্বাধীন করার জন্য কত মা লাঞ্চিত হতে হয়েছে। কত মা তার স্বামীকে হারিয়েছে আবার কত ভাই তার বোনকে হারিয়েছে। হারিয়েছে লাখো মায়ের সম্মান। আমরা সাতলার ইতিহাস ভিত্তিক গ্রন্থ লিখতে গিয়ে ঘুরতে হয়েছে সাতলার পথে প্রান্তে। সাতলা জানা অজানা তথ্য নিয়ে ফিরে আসি বারে বারে মা ও মাটির টানে গ্রন্থ লেখা হয়। আমরা দীর্ঘ কয়েক মাস যাবত সাতলার মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে গবেষনা করেছি। তালিকা ভুক্ত সাতলা অনেক মুক্তি যোদ্ধা রয়েছেন্। কিন্তু তালিকার বাইরে ও অনেক নারী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন তার নাম হয়তো আমরা কোন দিনই জানতে পারি নাই। আমাদের সমাজে নারীরা সব সময় অবহেলিত ভাবে জীবন যাপন করে। ধর্মীয় ভাবে তারা ইচ্ছা করলেই বাইরে চলা ফেরা করতে পারে না। আমাদের সমাজে অজানা রয়েছে অনেক নারীর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক লোম হর্ষক জীবন কাহিনী। আজ আমরা সাতলায় একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে পেয়েছি। সালাম মা তোমায়, স্বশ্রদ্ধা সালাম। আমরা ধন্য হয়েছি মাগো তোমায় পেয়ে।

১৯৭১ সাল! দিন খন ওতটা মনে নেই,তবে যতোটু মনে হয় আয়শা খাতুনের বয়স কেবল মাত্র ১৫বছর। কেবল মাত্র কিশোর থেকে কৈশরের পর্দাপণ করেছে। আয়শা খাতুন চেহার ছিল খুবই সুন্দর। যেমন লম্ব তেমনি তার চুলের ঝলকানি। এবয়সের মেয়েরা স্কুল কেবল নবম শ্রেণী কিংবা দশম শ্রেনীতে পড়া শুনার কথা। অতচ তার জীবনে তার আর হলো না। এদেশের মানুষের উপর যখন পশ্চিম পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী ঝাপিয়ে পড়ল। দেশকে অচল করে দিল তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাধারণ মানুষ নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পশ্চিম পাকিস্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করল। শুরু হল দেশ স্বাধীনতার জন্য মহা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন সাধারণ মানুষ হতে কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, গীতিকার, প্রকৌশলী, ডাক্তার, জেলে, মজুর, ছাত্র জনতা সহ নারীরা। হয়তো কেউ পাকহানাদার বাহিনীর সামনে যুদ্ধে করেছে আবার তাদের তাদের বুদ্ধি দিয়ে যুদ্ধ করেছে আবার নিজের জীবন কে বিলিয়ে দিয়ে যুদ্ধ করেছে। সবার একটা উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ চাই। মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহন করেছে আমাদের সাতলা গ্রামের আয়শা খাতুন।
দেশে অরাজকতার সময় আয়শা খাতুন পালিয়ে যান মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহন করার জন্য। মেয়ে মানুষ বলে তাকে কেউ নিতে চায় না সঙ্গে। তারপর তিনি বুদ্ধি করে রাজাকারের সাথে হাত মিলিয়ে চলে যান পাক হানাদারের ক্যাম্পে। আয়শা খাতুনের চেহারা সুন্দর বলে তাকে পাক হানাদার বাহিনী তাদের ক্যাম্পে রেখে দেয়। প্রতিদিন আয়শা খাতুন ঝিয়ের কাজ করতেন। বিভিন্ন ভাবে পাক হানাদার সেবা যত্ন করতেন। অল্পদিনের মধ্যে পাক হানাদারের মন জয় করেন।

রাত হলেই তিনি ক্যাম্পের বাইরের চলে যেতেন খুঁজে বেড়াতেন কোথায় আছে আমার বাংলা মায়ের ছেলেরা। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে গ্রামের ধান ও পাটক্ষেতের মধ্য দিয়ে আকাঁবাঁকা খাল-নালা বিল পেরিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক ভাবে নিয়ে যেতেন রাজাকার ও পাকিস্থানীরদের ক্যাম্পে আক্রমণ করার জন্য। ভোর হতে না হতে আবার ক্যাম্পে চলে আসতেন। মাঝে মাঝে পাক হানাদার বাহিনী আয়শা খাতুনের উপর চালাত শারীক, মানষিক ও পার্শবিক নির্যাতন, যে নির্যাতনে কথা আজ ও মনে পড়লে আয়শা খাতুন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারপর তিনি হাল ছেড়ে দেননি। সব কষ্ট সহ্য করে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়ে অস্ত্র চালানো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন। বরিশাল জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের খবর যোগাড় করে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছেন। তার হাত ধরে অনেক সফল অপারেশন করতে মুক্তিযোদ্ধারা সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন- আমি একজন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা, অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই যুদ্ধ করলাম, নিজের শরীরের রক্ত টুকু বিলিয়ে দিলাম, দেশ স্বাধীন হলো। লাল সবুজের একখন্ড ভূ-খন্ড পেলাম, অতচ দেশ স্বাধীনতার ৪৬ বছরে আমি কি পেলাম? পেলাম শুধু একজন খারাপ মেয়ে, ধর্ষিতা নারী, লাঞ্চিত অবহেলিত মহিলা উপাধি। এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সনদ পত্রটি পেলাম না।

আমরা এই নারী মুক্তিযোদ্ধার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ আয়ু কামনা করি।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:২৯

নির্ঝরের_স্বপ্ন বলেছেন:
সাতলা নয়, এটা শাপলা হবে। শাপলার বিলের একটা ছবি নিচে দিয়ে দিলাম

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬

অপরািজতােবস্ট বলেছেন: গ্রামের নাম সাতলা।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:২০

সোহেল চৌধুরী বলেছেন: সাতলা একটি ইউনিয়নের নাম।

৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৫৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: সোহেল চৌধুরী ,



আরও তথ্য নির্ভর হওয়া উচিৎ ছিলো যখন বলেছেন, ইতিহাস ভিত্তিক গ্রন্থ লিখতে গিয়ে ঘুরতে হয়েছে আপনাকে এবং আপনাদের ।
তবুও সশ্রদ্ধ সালাম "আয়শা খাতুন"কে ।
তবে আবারও এ প্রজন্মকে স্মরন করিয়ে দিয়ে এটুকু ভালো লিখেছেন ----
বর্তমান সমাজের ছেলেমেয়ে মুক্তিযোদ্ধের কথা হয়তো ভুলতে বসেছে। তারা জানে না কি ভাবে দেশ স্বাধীন হলো। দেশ স্বাধীন করার জন্য কত মা লাঞ্চিত হতে হয়েছে। কত মা তার স্বামীকে হারিয়েছে আবার কত ভাই তার বোনকে হারিয়েছে। হারিয়েছে লাখো মায়ের সম্মান।

৪| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫৮

সোহেল চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ আহমেদ জিএস ভাই, আপনার সদা পরামর্শ জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.