নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শূণ্যতা জীবনে পূর্ণতা পাওয়ার আশা

সোহেল চৌধুরী

মুহাম্মদ সোহেল চৌধুরী, সত্যকে আকড়ে ধরে, জীবনকে রঙ্গিন করে, আজীবন মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান।

সোহেল চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাতলা গ্রামের রুপ ও বৈচিত্র

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:০০

এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার?
ওথায় এমন ধুম্র পাহাড়?
কোথায় এমন হড়িৎ ক্ষেত্র
আকাশ তলে মেশে?
এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায়
বাতাস কাহার দেশে
প্রকৃতির লীলাক্ষেত্র আমাদের এ রূপসী বাংলাদেশ। সাগর,নদ নদী,পাহাড়, জলপ্রপাত, বনভূমি ও সোনালী ধান ক্ষেত এদেশকে করে তুলেছে অপূর্ব রূপময়। এছাড়াও বাংলাদেশের কিছু পাহাড়-পর্বত ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশ এক বিশাল বদ্বীপ। বাংলাদেশে ৮৮ হাজার গ্রামের মধ্যে সাতলা একটি সবুজ লীলা ভূমি এলাকা। রুপ বৈচিত্র্যময় কোনটাই কমতি নেই আমাদের প্রিয় গ্রাম সাতলায়।

আয়তনঃ বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র।এশিয়া মহাদেশের বাংলাদেশের মধ্যে সাতলার ভৌগোলিক অবস্থান ২২ ° ৫৫ '0 "উত্তর, ৯০ ° ৫' ০" পূর্ব। সাতলার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে কচা নদী ও মহিষ হাটা নদী বয়ে গেছে। সাতলার আয়তন ৮০বর্গ কিলোমিটার। দক্ষিণে বানানীপাড়া থানা,পশ্চিমে কোটালীপাড়া থানা,উত্তরে বাগধা গ্রাম্ আগৈলঝাড়া থানা। এছাড়া সারা গ্রামটি জুড়ে রছেছে সবুজ শ্যামল বিভিন্ন গাছপালা।
মানচিত্র…


সাতলার নদনদীঃ নদী মাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আর নদী মাতৃক বাংলাদেশ হওয়া সাতলা গ্রামের মাঝ দিয়ে রয়েছে দুটি নদী ও একটি ছোট্ট আয়তনের সবুজ শ্যামলে ঘেরা একটি সাতলা গ্রাম। যার সর্বোত্র ছোট-বড় অসংখ্য জলাশয় জালের মত ছড়িয়ে আছে।পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১১ সালের তথ্য অনুসারে দেখা যায়, সাতলার নদী অঞ্চলের আয়তন ৮০ বর্গ কিলোমিটার। সাতলার নদীর সংখ্যা ২টি। আর নদীবহুল ও জলাশয় সাতলা গ্রাম বলে স্বাভাবিকভাবেই সাতলার ইউনিয়নের এক সময় মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নদী ও জলাশয় উপর প্রভাব রয়েছে।কচা নদী ও মহিষহাটা নদী প্রধান নদী। এ সকল নদী এর সমভূমি অঞ্চলকে করেছে শস্য শ্যামলা ও অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারী। প্রকৃতি যে কি আশ্চর্য সুন্দর তা বাংলাদেশের প্রতিটি ঋতুকে দৃষ্টিতে লক্ষ না করলে বুঝা যায় না। তাই সাতলার সবুজ শ্যামল ও শাপলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সাতলা এসেছেন বহু পর্যটক, লিখেছেন অনেক কবিতা। লেখক সোহেল চৌধুরী’র ভাষায়—


” কচা নদী আর মহিষহাটা নদী
জোসনার রাতের পানির কলতান শুনি
দাঁড়ায়ে রয়েছে সুজলা যে সাতলা,
সেই গ্রামে বসবাস আমরা করি”।


ভূ-প্রকৃতিঃ সাতলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও রূপ, লাবণ্যের কথা বলে শেষ করা যায় না। যতই বলি মনে হয় যেন কম বলা হয়েছে। এদেশের অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চিরকাল ধরে মুগ্ধ কবিচিত্তে কাব্যস্রোত বইয়ে দিয়েছে।ভাবুকের হৃদয়ে অনির্বচনীয় ভাবের ঢেউ জাগিয়েছে। সাতলার যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে যে কোন দিকেই দৃষ্টিপাত করি না কেন চোখ দুটো প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে ধন্য হয়, মনপ্রাণ আনন্দে ভরে ওঠে। কি সাতলা বিলের লাল শাপলা, কী গাছপালা ও তৃণমূল শোভিত সবুজ শ্যামল মনোরম দৃশ্য, কী কলনাদিণী নদনদীর অপরূপ সৌন্দর্য, কী শ্যামল শোভাময় ফসলের ক্ষেত সবই এদেশে সুন্দর ও অনুপম । এরূপ সৌন্দর্য দেখেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায় লিখেছেন—

"ধনধান্যে পুষ্পেভরা আমাদের এই বসুন্ধরা,
তাহার মাঝে এছে দেশ এক-সকল দেশের সেরা;
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা;
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমা,
সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।"

সাতলার এমন কোন স্থান নেই যেখানে সৌন্দর্যের এতটুকু ভাটা পড়েছে।সাতলার কচা নদীর পানি জোসনার আলোয় রুপালী ইলিসের মতো শোভা পাচ্ছে, মাঠের শ্যামলিমা তাকে শাড়ির মতো ঘিরে রেখেছে এবং সবুজ বনরাজি তার শিড়ে মুকুট পরিয়ে দিয়ে রানীর সাজে সাজিয়েছে। সাতলা প্রতিটি রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের গাছ পালা,বিভিন্ন সাজে সেজে রূপের জোয়ার উতলে উঠেছে— কোথাও এতটুকু কমতি নেই।

জলবায়ুঃ সাতলার এই যে এত সৌন্দর্য এর পেছনে কাজ করছে অনুকূল জলবায়ু। সাতলার গ্রামের মাঝ দিয়ে দুইটি নদী প্রবাহিত হওয়ায় প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা এখানে অতিমাত্রায় অনুভূত হয় না। জুন মাসের শুরুতে সাতলা কচা নদী থেকে উষ্ণ আদ্র মৌসুমী বায়ু সাতলার ওপর দিয়ে বয়ে যায়। নদ নদ, খাল বিল, ছোট বড় সব জলাশয় কানায় কানায় পানিতে ভরে যায়। মাঠে মাঠে শস্য উৎপাদনের আয়োজন চলতে থাকে। হাঁসেরা দল বেঁধে আনন্দে সাঁতার কাঠতে থাকে। ছোট বড় মাছেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটাছুটি করতে থাকে। শাপলা, কুমুদ প্রভূতি ফুল ফুঁটে অপূর্ব সৌন্দর্য ধারণ করে। গ্রীষ্মের দাবদাহ বর্ষার বর্ষনে অনেকটা কমে যায়। পাট ও আউশ ধানের ক্ষেতগুলো সবুজতায় ভরে যায়।

বর্ষার পরে আসে শরৎকাল। তখন গ্রীষ্মের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে। শরতের চাঁদনী রাতে কি বাড়ির আশ পাশের গাছ-পালা, কী নদী তীরের কাশবন, কী গৃহস্থের কুটির, কী গতিশীল নদীস্রোত নতুন নতুন রূপে আমাদের চোখে ধরা দেয়। নানা রকমের ফুল ফোঁটে। শরতের শেষে কিছুটা শীতের আমেজ শুরু হয়। এর ফঁকে চলে আসে হেমন্তকাল। সোনালি ধানে মাঠ ভরে যায়। ফসলের সওগাত গৃহস্থের ঘরে ঘরে তুলে দিয়ে ধরনী এক সময় রিক্ত হয়। তখন আসে শীতকাল। তীব্র শীত অনুভূত হয় এবং শ্যামল প্রকৃতি যেন বুড়োদের মতো শীর্নমূর্তি ধারন করে। এরপর একটা সময় আসে যখন শীত ও গ্রীষ্মের মিশ্র আমেজ অনুভূত হয়। আসে বসন্তকাল । গাছ-পালা ও তরুলতায় নতুন পাতা গজায় এবং বিচিত্র রঙের ফুল ফুটে। প্রকৃতি যেন নতুন সৌন্দর্যে তার যৌবন ফিরে পায়।

ঋতু প্রকৃতি: বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ছয়টি ঋতুতে প্রকৃতির ছয় রকম অবস্থা দেখা যায়্। ছয়টি ঋতুর প্রভাব পড়ে সাতলা গ্রামেও। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের প্রতিটি শহর ও গ্রাম প্রকৃতি হয়ে ওঠে এক উদাসীন সন্ন্যাসীর মতো। তার রুক্ষ রৌদ্রের দাবদাহে মানবজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময়ে কালবৈশাখি তার উদ্দামতা নিয়ে আসে। গ্রীষ্মের পর আসে বর্ষা। বর্ষায় এ দেশের প্রকৃতিতে যেন নতুন করে প্রানের সঞ্চার হয়। তখন প্রকৃতি হয়ে ওঠে সজীব ও সতেজ। ফসল ভরা ক্ষেতগুলো দেখলে মনে হয় আবহমান। ধানসিঁড়ির সমুদ্র। তখন মনে হয় প্রকৃতি যেন তার সমস্ত গ্লানি মুছে ফেলে। চাঁদনী রাতের শোভা তখন বড়ই মনোলোভা মনে হয়। কবি তাই বলেন-
“চাঁদনীর সাথে প্রতি রাতে রাতে
গোলা সোনা রং ঢালে যে
খুব মনোচোর শরতের ভোর
আলোছায়া ঋতু বড়সে।”

শরতের শেষে, শীতের আগে আসে হেমন্ত ঋতু। এ সময় সোনালী ফসলে ভরা থাকে মাঠ-ঘাট। আর সোনালি ধানের শীষে যখন বাতাসের খেলা চলে তখন সারা বাংলাদেশ সহ সাতলা নিসর্গে স্বর্গের ছোঁয়া লাগে। হেমন্তের পর শুষ্ক শীতল চেহারা নিয়ে আসে শীত। এ সময়ে প্রকৃতি বিবর্ন ও বিষন্ন হয়ে পড়ে। শীতের শেষে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। গাছপালা তখন সজীব হয়ে ওঠে। গাছে গাছে নতুন পাতা গজায় নতুন নতুন ফুল ফোঁটে।

বিভিন্ন দৃশ্য: বাংলাদেশ গ্রাম প্রধান দেশ । তার প্রত্যেকটি গ্রাম যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব রঙ্গশালা। যেদিকে চোখ যায়- অবারিত সবুজ মাঠ, ফুলেফলে ভরা গাছপালা, তৃন গুল্মশোভিত বন-বনানী ও শ্যামল শস্যেক্ষত- এই অনুপম রূপসুধা পান করে সকলের হৃদয়ে এক অভিনব আনন্দের শিহরন জাগে। কোথাও প্রকৃতির সবুজ ঘোমটা ভেদ করে পাকা শস্যের সোনালি সুন্দর মুখখানা বের হয়ে আসছে, আবার কোথাও বিশালদেহ বটবৃক্ষ প্রান্তরের এক স্থানে উধ্বর্বাহু হয়ে মৌন তাপসের মত দাঁড়িয়ে সুশীতল ছায়া দিয়ে পথিকের ক্লান্তি দুর করছে । কোথাও তালগাছ এক পায়ে দাড়িঁয়ে আকাশ থেকে নীলিমা ছিনিয়ে আনার জন্যে ওপর দিকে হাত বাড়িয়েই চলছে, আবার কোথাও দীঘির কাকচক্ষু কালো পানিতে লাল সাদা শাপলা ও কুমুদ ফুঁটে অপরূপ সৌন্দর্য বিস্তার করছে। সাতলার এই সৌন্দর্য বৈচিত্র্য সবার মন আনন্দে ভরে দেয়।
এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার?
ওথায় এমন ধুম্র পাহাড়?
কোথায় এমন হড়িৎ ক্ষেত্র
আকাশ তলে মেশে?
এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায়
বাতাস কাহার দেশে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: সোহেল চৌধুরী ,




সাতলার রুপ ও বৈচিত্রে সাঁতরে এলুম ।

ভালো থাকুন ।

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১৮

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:


অপরুপ দৃশ্য !!

৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৫

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। +++

৪| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৭

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ইচ্ছে রইল, আপনার গ্রামে ঘুরতে যাওয়ার। আর ঘুরে এসে অতি অবশ্যই ব্লগে পোস্ট করব আশা রাখি।

ভাল থাকুন সবসময়, শুভকামনা।

৫| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৪২

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: মনে শিহরণ জাগায়, কোন একদিন ঠিকই সাতলায় গিয়ে উপস্থিত হবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.