নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বোধহয় সেই ক্ষণজন্মা জন্ম যার প্রভাতে,যার আবেদনে মেঘ ঝরেছিলো আসমান হতে।।

সকাল রয়

কিছুটা প্রকাশিত বাকীটা অপ্রকাশিত

সকাল রয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: বর্ণমালার মতো উড়ে গেল সে

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৪









রাষ্ট্র ভাষা বাঙলা চাই!

শব্দ গুলো দেয়ালের পোস্টার ঝুলে আছে। আশে-পাশের দেয়াল গুলোতেও বিভিন্ন রঙের পোস্টারে ঢাকা। পোস্টার গুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় শব্দ গুলো অনেক গর্জন, অপমান, অভিমান আর কষ্ট নিয়ে ঝুলে আছে। প্রতিদিনকার আগুন জ্বলা রোদ, অপ্রতিরুদ্ধ শব্দগুলোকে স্পর্শ বুলিয়ে গেলেও তার আবেদন এতটুকু ম্লান হয়ে যায় না। শব্দগুলো ক্যামন যেন চেয়ে থাকে!

ফরিদ বেশ ক’দিন ধরেই দেখছে অলি-গলি মোড়ে, রাস্তায়, কলেজের দেয়ালে ভাষার দাবী নিয়ে লেখা এসব রঙিন পোস্টার ঝুলে থাকে আর ভর দুপুরে একদল ছেলে-মেয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে-“মাতৃ ভাষা বাংলা চাই” “তোমার-আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা” সহ আরও অনেক স্লোগানে মুখরিত সব ব্যানার, ফেস্টুন।

ফরিদ বাদাম বিক্রি করে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের আশে-পাশে মিটিং-মিছিল হলে পরে ওর বাদাম বিক্রি বেড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে, ক্যান্টিনের পাশে, ইডেন কলেজের সামনে ঘুরে বাদামের ঝুড়ি নিয়ে। বাড়িতে আছে ওর মা আর ছোট বোন। বাবা নিরুদ্দেশ। শেষ কবে যে বাবাকে দেখেছে মনে করতে পারে না। দশ বছর বয়েস পার হবার পর-পরই স্কুলের বই পত্তর গুটিয়ে রেখেছিল। অভাবের সংসারে লেখাপড়া হয়না। ওর মা হাত পাখা বানায়, ফেরি করে ফেরে রেলস্টেশনে। আছে ছোট বোন- টুনি। বয়েস সাতের ঘরে। সাত বছর বয়স আবদার করার বয়স, বোনের আবদার তাকেই মেটাতে হয়।



বেশ কদিন ধরেই রাস্তার রঙিন পোস্টার পড়তে পড়তে কলোনিতে ফিরে সে। পড়তে পড়তে অস্পস্ট করে বলে, মাতৃ ভাষা বাঙলা চাই! “এহন তো আমরা বাংলাতেই কথা কই, তাইলে আবার কোন বাঙলা চায় এরা?” হেইদিন যে জিন্না সাব, নাজিমুদ্দি সাব কইলো উর্দু ভাষায় কথা কইতে হইবো? হেইডাই মনে হয় বদলাইবার লাইগ্য পুস্টার আর মিছিল হয়তাছে। কিছুক্ষণ থেমে আবার খানিকটা থেমে বলে,কি জানি! “উর্দু কওন অত সোজা না, আর লেহাও ম্যালা কসরতের ব্যাপার” আরবীর লাহান। মক্তবে পড়ার সময় হুজুর একটু শিখাইছিল। রাতে বাড়ি ফিরে মাকে জিজ্ঞেস করে ফরিদ, আম্মা বাঙলা ভাষা যদি না দেয়, তাইলে কি উর্দু দিয়া কথা কমু আমরা? মা বলে আরে ধুর; কি, যে কস না? জন্মের পর থেইক্কা কথা কইতাছি বাঙলা দিয়া আর এহন উর্দু কওন লাগবো। য্যান মামুর বাড়ির আবদার!



খাজা নাজিম উদ্দিন সাহেবের সমাবেশে বাদাম বিক্রি করে সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরে ফরিদ। মাথায় ঘুরপাক খায়- ভাষা নাকি উর্দু হয়া যাইব তাহলে তো কইতে হইব, এ বাবু বাদাম লিবেন? বাদাম!

মাথা ভর্তি এসব কথা নিয়ে বাড়ি ফিরতেই ছোট বোন আবদার তুলে তার জন্য কুমার পাড়া থেকে পুতুল এনে দিতে হবে। ফরিদ সারাদিন ঘুরে বাদাম বিক্রি করে যে কয়টা টাকা পায়, তাতে রোজকার সওদা করে কিছুই থাকেনা। তবুও বোনকে আশ্বাস দেয়- টুনি তোর লাইগ্যা আমি পুতুল কিইনা আনুম, লাল পুতুল। আর কয়ডা দিন একটু সবুর কর বইন, ধর্মঘট শেষ হউক হেরপর।



আজ বাড়ি থেকে বেরুবার সময় মা বার বার নিষেধ করে দিয়েছে, মিছিল-হট্টগোলে একদম যাওয়া যাবে না। মা’র কথা ভাবলে তো বাদাম বিক্রি হবেনা, তাকে সবখানেই যেতে হবে। দুপুর বেলার কড়কড়ে রোদ গায়ে মেখে ফরিদ বাদামের ঝুড়ি মাথায় তুলে জটলা পাকানো মিছিলে গিয়ে দাঁড়ায়। বাদাম ও বিক্রি হবে ভাষার জন্য একটু মিছিলও করা যাবে। সবার সাথে সেই হাত উচিয়ে স্লোগান দেয়, রাষ্ট্র ভাষা বাঙলা চাই!

সাধারণ জনতার ভীড় বাড়তে থাকে। মিছিল বড় হয় অজগর সাপের মতো। হাতে ব্যানার নিয়ে মিছিলে যোগ দেয় ছেলে-বুড়ো সব। দুর্দান্ত দাপটে মাটি কাঁপতে থাকে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পেড়িয়ে পরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। একদল পুলিশ গুলি ছোড়ে ভয়ানক ভাবে। ভয়ে ফরিদ মাথার ঝুড়ি ফেলে দৌড়ায় কিন' বেশি দূর যেতে পারে না। আচমকা একটা বুলেট তার গায়ে এসে লাগে। ফিনকি দেয়া রক্তে ভিজে যায় তার ছেঁড়া জামা। খুড়িয়ে খুড়িয়ে রাস্তার পাশ থেকে ডানপাশের সবুজ ঘাসের মাঠে শুয়ে পড়ে সে। মিছিল ভঙ্গ করে সবাই তখন দৌড়াচ্ছে।

যন্ত্রনায় চোখ বন্ধ করতেই মনে পরে মা’ তার জন্য বসে আছে। ছোট বোন টুনি দাড়িয়ে আছে কলোনির রাস্তায়। ফরিদ তার জন্য নিয়ে আসবে মাটির পুতুল। ফরিদ যন্ত্রনা নিয়ে হু-হু করে কেঁদে উঠে, চোখ জুড়ে নেমে আসছে যন্ত্রণার এক ঘুম। কিন্তু তাকে ঘুমিয়ে পড়লে হবে না। সে নিশ্বাস ধরে রাখতে আকাশের দিকে তাকায় কিন্তু ক্রমশই শূন্যতা তাকে ঘিরে ফেলে, তার মনে হয় সে উড়ে যাচ্ছে বর্ণমালার মতো।







======================================

২০১৪ তে লিখেছিলাম...

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেল ।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৭

সকাল রয় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। সেলিম ভাই

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ছোট্ট কিন্তু চমৎকার!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৯

সকাল রয় বলেছেন:

অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রোফেসর
আপনার সাগর সৃষ্টির কাছে আমার শব্দ বিবর্নময়

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৯

আবু শাকিল বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন সকাল দা ।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪২

সকাল রয় বলেছেন:
অনেক অনেক ধন্যবাদ

তবে লেখায় কনভার্ট করার পর বানানে অনেক ভুল রয়ে গেছে।

৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫০

সুরথ সরকার অর্ঘ্য বলেছেন: সত্যি চমৎকার একটি লেখা সকাল দা।

১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৪০

সকাল রয় বলেছেন:
অনেক অনেক ধন্যবাদ
ভাই

৫| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫০

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: অসাধারণ সকাল দা। অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের মাতৃভাষা।

১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৪১

সকাল রয় বলেছেন:
অনেক অনেক ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন ভাই

৬| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৪

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: প্রোফেসরের মতো আমাকেও বলতে হচ্ছে ছোট্ট কিন্তু চমৎকার। অনেক ভালো লাগলো সকাল দা। যথেষ্ট দরদ দিয়ে লিখেছেন বুঝা যাচ্ছে।

৭| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৩৪

বিদ্রহীসূত বলেছেন: চমৎকার লেখা। চিত্তকে স্পর্শ করার মতো।

৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগা রইলো।

৯| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৫১

নাসরিন চৌধুরী বলেছেন: কি বলব !!
যেন চোখের সামনে এমন একটি ঘটনা দেখতে পেলাম
এরকম বর্নমালার মত অনেকেই উড়ে গেছেন।
ভাষা শহীদ'দের প্রতি শ্রদ্ধা রইল।
বেশ ভাল লিখেছেন।

১০| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৮

সুমন কর বলেছেন: চমৎকার লাগল। হৃদয়স্পর্শী !

১১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৪৮

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: দারুণ ছুঁয়ে যাওয়া একটা লেখা। অসংখ্য উড়ে যাওয়া ফরিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই মায়ের ভাষা।



ভালো থাকুন প্রিয় ব্লগার :)

১২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯

শায়মা বলেছেন: ভালো লাগা!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.