নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘাসের সমান্তরালে অযত্নে বেড়ে ওঠা বুনোফুল আর গভীর রাতে তীর হতে শুনতে পাওয়া ঢেউয়ের শব্দের সংমিশ্রণ।

সোলারিস

স্বপ্নের ঘুমে তুমি বুঝবে সাদা চাঁদের আলোর নীচে হতাশার মাস্তুল। দিন দিন এভাবেই দূরে সরে গেছে যত কুয়াশার কথোপকথন।ফিসফিস, হুশহাশ আমি শুধু থেকেছি নীরব, কৈশোর পেরিয়ে আসা হাঁসেরাও এভাবেই খুঁজে নেয় জল ।সব পাবে আমার সংবিধানে।

সোলারিস › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসম্পূর্ণতা

২১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:০০

দ্রুত হাঁটতে যেয়ে হোঁচট খেল অভ্র।আজ তার পরীক্ষা।ডিস্ক্রিট ম্যাথমেটিক্স।খুব কঠিন বিষয়।ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হয়ে গেসে।হলের সামনে থেকে কোন রিক্সাও আসছে না ডিপার্টমেন্টে। সামনে তাকিয়ে সে খুব অবাক।উপমা দাঁড়িয়ে আছে।তারা একি ক্লাসে পড়ে।তার দিকে তাকিয়েও আছে কড়া চোখে।
- এই ছাগল এই তোর আসার সময়।
অভ্র অবাক।ঘড়ি দেখল।আর মাত্র ৫ মিনিট আছে। জারুলতলা থেকে ডিপার্টমেন্টের তিনতলায় যেতে হলে দৌড়ে যেতে হবে। ফালতু প্যাচাল পাড়ার সময় নেই।
- কিরে পথ আগলে দাঁড়ালি কেন? জানের কি মায়াদয়া নাই? আর তুই এক্সাম হলে নাই কেন?
- আজ পরীক্ষা দিব না আমি।আমার সাথে তুইও দিবি না।
- কেন আমি দিব না কেন,আমার কি বিয়া লাগছে?
- না আমি তোকে এক্সাম দিতে দিবনা।
- এবার এক্সাম না দিলে সাপ্লি খেতে হবে। বলদের মত কথা বলস কেন?
- সাপ্লি খাইলে দুইজনে একলগে খামু।
- তোর কি মাথাটাথা খারাপ হইসে নাকি?
কোন কথার জবাব দিচ্ছে না উপমা।অভ্রকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে স্টেশনের দিকে। পরীক্ষা শুরু হয়ে গেসে আবার এদিকে উপমা হাত ছাড়ছে না। আজকেই শেষ এক্সাম এই সেমিস্টারের। আর আজকেই এই কুফা এসে জুটছে কপালে।
- আরে ছাড় আমারে।কি হইতাসে কি?
-তোর হাত দেহি মাইয়াগো মতন নরম।
গা জ্বলে যাচ্ছে অভ্রর।বেহায়ার মত টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে।
- আমার সাথে তোকে যেতে হবে একটা যায়গায়।
রাগে অভ্রের গা জ্বলে যাচ্ছে।মাথায় শুধু পরীক্ষা খেলা করছে। স্টেশনে পৌঁছে গেছে তারা। ফিরতি ট্রেন শহর যাবে। তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দ্বিতীয় বগির দিকে। মাঝামাঝি একটা সীটে তাকে নিয়ে বসাল উপমা।
- কি শুরু করলি? কই যাবো? পাগল হয়ে গেছিস নাকি?
-কথা বলতে হবে না।কি করি দেখ।
বিস্ময় আর ক্ষোভের চোটে কথা বেড়োচ্ছে না অভ্রের মুখ দিয়ে। চল্লিশ মিনিট পর ট্রেন ষোলশহরে থামল।দুজনে নামল ট্রেন থেকে।
- এই ছাগল কিছু খাবি? আমি কিছু খাইনি সকালে।
অভ্র কিছু বলছে না।সকাল থেকে তারো খাওয়া হয়নি। গরম গরম পরোটা ভাজছে স্টেশনের পাশে।দুজন গিয়ে বসল।
- এই মামা তিনটা পরোটা,একটা ভাজি আর একটা ডিম দিও।
পরীক্ষা তো লাটে উঠেছেই। ক্ষুধা মিটিয়ে নেই।ভাবল অভ্র। নীরবে খেয়ে নিলো। হাত ধরে টান দিচ্ছে উপমা।অভ্রের আর কিছু বলার শক্তি নাই। দুজনে একটা সি এন জির সামনে দাঁড়ালো।
- এই মামা সী বিচ যাবা।
- যামু।
- কত?
- তিনশো টাকা ভাড়া।
- চল।
ফার্স্ট সেমিস্টার চলছে। অভ্র যশোর এর ছেলে। চট্টগ্রামের কোন কিছু তেমন জানেও না।উপমা চট্টগ্রামের মেয়ে। পুরো সি এন জি কোন কথা বলল না কেউ। আগ্রাবাদ জুড়ে জ্যাম।হর্ন,ধোয়া,পরীক্ষা না দেয়া সব মিলিয়ে মনে মনে ফুঁসছে অভ্র।তারা সি বীচ পৌঁছুল বেলা ১১ টায়। বীচের পাশে পাশাপাশি রাখা দুটা ব্লক এ বসল দুজন।
- কিরে ভোম্বল এর মত বসে আছিস কেন? এদিকে তাকা।
অভ্র তাকালো।উপমার গায়ের রঙ ফর্সা। কালো টপ্সের সাথে নীল জিন্স পরেছে। চোখে কাজল দেয়া।অদ্ভূত সুন্দর লাগছে ওকে।
- তুই কি কিছুই বুঝিস না। উপমা বলল।
- কি বুঝব?
মেরুন রঙ এর একটা শার্ট পরেছে অভ্র।চোখে অল্প পাওয়ারের চশমা।
- তোকে কি আমার এখন লেকচার দিতে হবে?
- কি বলছিস তুই?
- আমি তোকে ভালোবাসি।
-কি?
-আমি তোকে ভালোবাসি।
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল অভ্র।তার মাথা ঘুরছে।কোনদিন কারো মুখে এই কথা শোনেনি সে।ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার এ থাকতে একটা মেয়েকে মনে ধরেছিল কিন্তু ওই পর্যন্তই।
উপমার মুখের দিকে তাকালো সে। অদ্ভুত সুন্দর একটা মায়াময় মুখ।বুকের ভিতরটা কেমন ধকধক করছে।উপমার চোখে জল কেন?
- তুই কাঁদছিস কেন?
- তুই আগে বল আমাকে ভালোবাসিস কিনা?
এমন আবেগমাখা স্বরে উপমা বলছে মনে হচ্ছে তার ভেতরটা ভেঙে চূড়ে যাচ্ছে। এই আবেগ উপেক্ষা করা কঠিন।
উপমার হাত ধরল অভ্র।হাত কঁাপছে তার।এই প্রথম কোন মেয়ের হাত ধরল সে। মৃদু স্বরে বলল
- বাসি।
- সত্যি? কোনদিন আমাকে ছেড়ে যাবিনা তো।
- না যাবনা।
- চল তাহলে বালিতে হাঁটি।
দুজনে জিন্স হাটু পর্যন্ত গুটিয়ে পাশাপাশি হাত ধরে হাটছে দুজন। অভ্রের মনে হচ্ছে তার জীবনের সবচে সুখের দিন এটা।একটু পরপর উপমার চোখের দিকে তাকাচ্ছে সে। হঠাৎ মাথাটা ঝিম ঝিম করে উঠলো। সবকিছু যেন অন্ধকার হয়ে গেলো।

যখন চেতন ফিরল অভ্র পড়ে আছে মাটিতে তার পাশে মানুষের জটলা।একি উপমা কই।পকেটে ফোন ভাইব্রেট করছে। নিঝুম ফোন করেছে।

- কিরে তুই কই? বারোবার ফোন দিলাম তোকে।খবর পেয়েছিস?
-কি খবর?
- উপমা আজ রোড এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে। সকালে ট্রেন মিস করায় বাসে আসছিল। বাস অক্সিজেনে একটা ট্রাকের সাথে মুখোমুখি ধাক্কায় উপমা মারা যায়।এক্সাম শুরু হওয়ার এক ঘন্টা পর সবাই জানতে পারে।এক্সাম ও ক্যান্সেল। হ্যালো!

দ্বিতীয় বার মূর্ছা গেল অভ্র।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: অভ্র'র জন্য মায়া লাগছে।

২১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:০৯

সোলারিস বলেছেন: আমরা সবাই অভ্র।কেউ আগে কেউ পরে।

২| ২১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:০৭

কাইকর বলেছেন: সুন্দর লেখনী

২১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:১০

সোলারিস বলেছেন: ধইন্যা পাতা

৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আমরা সবাই অভ্র।কেউ আগে কেউ পরে।

ঠিকই বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.