নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘাসের সমান্তরালে অযত্নে বেড়ে ওঠা বুনোফুল আর গভীর রাতে তীর হতে শুনতে পাওয়া ঢেউয়ের শব্দের সংমিশ্রণ।

সোলারিস

স্বপ্নের ঘুমে তুমি বুঝবে সাদা চাঁদের আলোর নীচে হতাশার মাস্তুল। দিন দিন এভাবেই দূরে সরে গেছে যত কুয়াশার কথোপকথন।ফিসফিস, হুশহাশ আমি শুধু থেকেছি নীরব, কৈশোর পেরিয়ে আসা হাঁসেরাও এভাবেই খুঁজে নেয় জল ।সব পাবে আমার সংবিধানে।

সোলারিস › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রহণ

২১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৪৩

হাতের বিড়িতে বিরক্তিভরে টান দিল সাঈদুল। খালি পেটে বিড়ির উটকো গন্ধে বমি পেল তার। নৌকার ছইয়ের ভিতর বসে আছে সে আর তার ছেলে মানিক। আষাঢ় মাসের আকাশ। বৃষ্টি হচ্ছে অনবরত। বাপ বেটায় মিলে মাছ ধরতে বেরিয়েছে তারা।মাঠের চারপাশে কানায় কানায় ভর্তি। একসময় অনেক মাছ পাওয়া যেত।গজার,কালবাউশ, বড় তেলাপিয়া, বোয়াল। আর এখন সামান্য খলশে, পুটি,কই ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। চারটা মুখ সাঈদুলের পরিবারে। ছোট বাচ্চাটাকে ভালো খাবার খাওয়ানো হয়নি অনেকদিন। পুষ্টির অভাবে হাড় জিরজিরে হয়ে যাচ্ছে ছেলেটা।
- ও বাজান।আইজ তো কিছুই পাইলাম না।আম্মারে কি কমু?
ছেলের কথায় হুশ ফিরে আসলো সাঈদুলের। কোন কথা না বলে কোঁচ হাতে ছই থেকে বের হলো।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।টর্চ নিয়ে বের হয়েছিল সে। পানিতে হাল্কা নাড়াচাড়ার শব্দ। আলো মারল সেখানে। মাঝারি একটা মাছের মত মনে হলো।আন্দাজ করে কোঁচটা ছুড়ে মারলো।
-মনে হয় লাগছে রে!
-হ বাজান আমারো মনে হয় লাগছে।
-চল দেহি।
ঠিকই আন্দাজ বাপ বেটার। একটা শোল মাছ। ইঞ্চি দশেক হবে।
- বাজান আজকা মাছের সালুন খামু।আম্মারে কমু রসুন দিয়া রানতে।
-খাইস খাইস এতো অস্থির হইস না।নাদান বান্দারে আল্লাহ্‌ পছন্দ করে না।
বাজারে যেতে হবে সাঈদুলের। ঘরে চাল বাড়ন্ত। নৌকাটা ঘুরিয়ে বাজারের দিকে মুখ করল সাঈদুল।ছেলের আনন্দ উপভোগ করছে সে।
-আইজকা রহম করছে আল্লায়। অনেক দিন বড় মাছের সালুন খাইনা।
-তোর আম্মারে কমুনে বড় টুকড়াডা তোর পাতে দিতে।
-হাছা বাজান?
-হ হাছাই। আগে এই সময় ম্যালা মাছ পাইতাম আমরা। তোর লাহান ছোড থাকতে কত্ত বড় বড় মাছ দেখতাম আব্বায় ধইর‍্যা আনতো।
সাঈদুলের বিশ্বাস তার বাবা জাদু জানতো। খালি হাতে নামলেও ডুলা ভরা মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরতো।ভাবতে ভাবতে বাজারে পৌঁছে গেল তারা। নৌকাটা তালা দিয়ে দুজনে নেমে পড়ল। মুদি দোকানের সামনে আসলো।
-দুই কেজি চাউল দ্যান তো রহিম ভাই।আর এক পোয়া রসুন দিয়েন।
-কই থেইক্যা আইলেন ভাই এই হাইঞ্জা বেলায়।
-গেছিলাম মাছ ধরতে ভাই।
-আব্বা জিলাপী খামু। মানিক বলল।
-জিলাপী পরে খাইস বাজান,ট্যাহা নাই।
ঘরে ফিরল বাপ ব্যাটা।দুজনের মনেই আজ খুব খুশি।
-আম্মা ও আম্মা।দরজাডা খুলো।
-খুলতাসি।
আলুথালু কাপড়ে দরজা খুলল করিমন।
-এতহন লাগে আইতে।পোলায় আমার কানতে কানতে ঘুমায়া পরসে খুদার চোটে।
-কি করমু কও। ভালো মাছ পাইনা।
-আজইরা মাছ মারন বাদ দিয়া কাম ধান্দা দেহেন না কিয়েরে?
-কামে তো কেউ লয়না।মাছ আনছি।সালুন রান্ধ।
-কি মাছ?
-শইল মাছ।বেশি কইরা রসুন দিও।
-চাউল আনছ নি?
-আনছি। লগে রসুন ও আনছি।
করিমন দা নিয়ে লেগে গেল মাছ কাঁটতে। বৃষ্টিতে ভিজে গেছে সাঈদুল আর মানিকের শরীর। ন্যাকড়া দিয়ে ভালো করে নিজের শরীর মুছল সে।সাথে ছেলেরটাও মুছে দিল। ভাত তরকারি রাঁধতে রাঁধতে করিমনের এক ঘন্টা লেগে গেল। ততক্ষণে খিদে বেশ চাগিয়ে লেগেছে সবার। দু বছরের ছেলেটাকে ডাক দিল করিমন।
- ও বাজান রতন।ওঠ। তোর বাপে মাছ আনছে। সালুন রানছি। খাইতে ওঠ।
মানিকের চোখে ঘুম। তেল চিটচিটে বিছানা ছেড়ে উঠে আসলো সে।খেতে বসেছে সবাই।
-বড় টুকরাডা মানিকের পাতে দ্যাও বউ।
- সাঈদুল ও সাঈদুল বাড়িত আছস নি?
চেয়ারম্যানের গলা। চেয়ারম্যান মোতালেব এলাকায় নামকরা খারাপ মানুষ। তার জমির দিকে নজর চেয়ারম্যানের।
-চেয়ারম্যান সাব এত রাইতে।
-একটু বাইরে আয়।
-বউ তোমরা খাও আমি একটু আহি।
-এত রাইত কইরা আইসে কেন? খাইয়া লন।
-খামুনে আগে হুইন্যা আই।
-চেয়ারম্যান সাব কি কইতে আইছেন এত রাইতে?
-তুই ত জানস পুব কিনারে তোর জমিডা বেজায়গায় পড়ছে। অইডা আমারে দিয়া দে।নগদ দুই লাখ দিমুনে।
-না চেয়ারম্যান সাব। অই একডা জমিই আব্বার থেইক্যা পাইছি।অইডাই আমার আব্বার চিন্ন। অই জমি আমি বেচুমনা।
-অই বেডা কার লগে কতা কইতাছস হুশ নাই?
চেয়ারম্যানের চামচা রশিদের গলা এতক্ষণে শোনা গেল।
-যা কইছি কইছি। অই জমি আমি দিমুনা।আমার হেশ সম্বল অইডা।
-সাঈদুল ভালা কইরা ভাইবা দেখ দিবি কিনা?নইলে কিন্তু ভালা হইব না।
-আপনে যা পারেন করেন। আমি দিমু না।
- ওই রশিদ।কি কয় হুনছস? ওরে বুঝাইয়া দে ভালো কইরা।ফহিন্নির পুত দুই লাখ সাধছি গায়ে লাগে না।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছুরি বের করে রশিদ। খাপ করে বসিয়ে দেয় সাঈদুলের নিতম্ব বরাবর। চেয়ারম্যান মুখ চেপে ধরে সাঈদুলের। কিছুক্ষণ দাপাদাপি করে নিথর হয়ে যায় সাঈদুলের দেহ। তাড়াতাড়ি সরে যায় দুজন।
-কিরে তর বাপ গেল হেই কহন।এহনো আহে না ক্যান। হারিকেনডা ল ত বাজান।
কাদামাখা পায়ে বাড়ির উঠোনে নামে দুজন।
- ও মানিকের বাপ।মানিকের বাপ।
-আম্মা আম্মা আব্বায় হুইয়া রইছে ক্যান মাডিত?
দ্রুত পায়ে মানিকের কাছে চলে আসে করিমন।
-আল্লাহ্‌ গো।
করিমনের চিৎকার রাতের ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টি ছাপিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায়।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:১৩

কাইকর বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

২২ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:৩০

সোলারিস বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: সারাজীবন মানুষকে ভালবেসে গেলাম
কিন্তু নিজেকে ভালবাসতে শিখলাম না

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.