নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘাসের সমান্তরালে অযত্নে বেড়ে ওঠা বুনোফুল আর গভীর রাতে তীর হতে শুনতে পাওয়া ঢেউয়ের শব্দের সংমিশ্রণ।

সোলারিস

স্বপ্নের ঘুমে তুমি বুঝবে সাদা চাঁদের আলোর নীচে হতাশার মাস্তুল। দিন দিন এভাবেই দূরে সরে গেছে যত কুয়াশার কথোপকথন।ফিসফিস, হুশহাশ আমি শুধু থেকেছি নীরব, কৈশোর পেরিয়ে আসা হাঁসেরাও এভাবেই খুঁজে নেয় জল ।সব পাবে আমার সংবিধানে।

সোলারিস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভেজা ভালোবাসা

২২ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৩৯

জানালা ধরে হুইলচেয়ারে বসে আছে অরিন্দ্র। স্বৈরিণী আসার সময় হয়ে গেছে।শ্রাবণ মাসের আকাশ।বৃষ্টি হচ্ছে খুব। বারান্দা ভিজে যাচ্ছে। ওপাশ থেকে মা চিৎকার করে যাচ্ছে।
-অরি ঘরে চলে আয় বাবা। ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো।
মায়ের চোখে এই ঊনত্রিশ বছরের অরিন্দ্রও অনেক ছোট। বাইরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। মেঘের আজ খুব মন খারাপ।ঠিক অরিন্দ্রর মতো। দু বছর আগে উনিশে শ্রাবণের এই দিনটায় চলে যায় সে। বাংলা সন তারিখ তার মনে থাকত না। স্বৈরিণী তার জীবনে আসার পর থেকে মনে থাকে। স্বৈরিণী ঠিক তার নামের মত বাংলা ভাষাটার সবকিছুতে তাকে অভ্যস্ত করে দিয়েছে।বাংলা দিন তারিখ মনে না থাকলে স্বৈরি খুব মন খারাপ করে।
উনিশে শ্রাবণের সে দিনটাও এমন বৃষ্টিভেজা ছিল। রোকেয়া হলের সামনে খুব লাজুকভাবে দারিয়ে ছিল অরি। হাতে কিছু অর্কিড আর ছাতা।বেমানান লাগছিল তাকে।সে জানে অর্কিড খুব পছন্দ করে স্বৈরি।বুয়েট থেকে তখন মাত্র পাশ করেছে অরি।একটা প্রাইভেট কোম্পানীর এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার পোস্টে জয়েন করেছে।কানাডা চলে যাবে ছয়মাস পর। হাতে কিছুদিন সময়। স্বৈরি তখন সেকেন্ড ইয়ারে ফিলোসফির ছাত্রি।বড় ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছে সে
- এতক্ষণ সময় লাগলো তোমার। আমি কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি?
অরিকে দেখে হেসে ফেলল স্বৈরি। নীল পাঞ্জাবীতে তাকে অপূর্ব লাগছে।
- দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে পারছনা। কানাডা গেলে কিভাবে থাকবে?
- ওসব তোমাকে ভাবতে হবেনা। গাড়িতে ওঠো।
- আজ রিকশাতে গেলে কেমন হয়?
- বৃষ্টিতে ভিজে যাব তো। এই নাও তোমার ফুল।
- মনে আছে তোমার।
লাল টুকটুকে একটা শাড়ী পড়েছে স্বৈরিণী। চোখে কাজল। একটা টিপ। এম্নিতেই তাকে অনেক সুন্দর লাগে। আজ লাগছে অপ্সরীর মত।
হাত ধরে পাশাপাশি বসল দুজন। গন্তব্য ঢাকেশ্বরী মন্দির। বিয়ে করবে আজ দুজন।দ্রুতই গাড়ি মন্দিরের দিকে চলে গেল। নামল দুজন। আগেই বলা ছিল পুরোহিত মশাইকে।বিয়ে সারতে ঘন্টাখানেক লেগে গেল।
এমনভাবে বিয়ে করার ইচ্ছে কারোরই ছিল না। অরিন্দ্র কায়স্থ কিন্তু স্বৈরি ব্রাহ্মণ। স্বৈরির বাবা কিছুতেই মেনে নেবে না। অগত্যা মন্দির ই ভরসা। স্বৈরিকে সিঁদুর পড়িয়ে দিয়েছে অরি। লাজুক মুখটা ঘোমটার আড়াল থেকে বের করছে না সে।গাড়িতে উঠে ঘোমটা ফেলে দিল অরি দুষ্টুমি করে। গাড়ি চলছে গাজীপুরের দিকে। একটা বিশাল বাংলো আছে অরির বন্ধুর বাবার। সেখানে উঠবে ওরা।দুজনের ব্যাগ ই গাড়িতে তোলা।

অথৈ আনন্দের সমুদ্রে ভাসছে স্বৈরি। ছেলেটা তাকে এত ভালোবাসে!এই গোবেচারা চেহারার আড়ালে তার জন্য এত ভালোবাসা! অনেক দিন থেকে প্ল্যান করা থাকলেও আজকের দিনটার উত্তেজনায় তার মাথা ঘুরাচ্ছে। বাড়ির কেউ চাইত না সে ঢাকা থাকুক।বাবা বলত মেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। একমাত্র মামার কল্যাণে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে তার।
এখন ইচ্ছে করছে অরিকে জড়িয়ে ধরতে। সবকিছু যেন স্বপ্নের মত চলছে। এখন মন চাইছে অরির খোলা বুকে ঘুমিয়ে থাকতে।খুব লজ্জা লাগছে এটা ভেবে। এখন অরি তার। কেউ কেড়ে নিতে পারবে না তাকে।

অরি গাড়ি চালাচ্ছে। শুক্রবার। ফাঁকা রাস্তা।সত্তুর কিলো ঘন্টায় চলছে গাড়ি।বৃষ্টির কারণে নাহলে নব্বুই কিলো গতিতে চলতে পারত তারা। কত পথ পাড়ি দিয়ে আজ পাশাপাশি দুটি হৃদয়।মাঝের পনেরোটি মাস যেন স্বপ্নের ঘোরে কাটিয়ে দিয়েছে তারা। সেই কবিতা উৎসব এর প্রথম দিন থেকে আজ তারা পাশাপাশি। কত কষ্ট করতে হয়েছে ওর মন পেতে।দিনের পর দিন রোকেয়া হল, ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত সে। তারপর একদিন স্বৈরির দয়া হলো।তারপর একসাথে চা খাওয়া থেকে শুরু। কত ঝগড়া কত অভিমান করত স্বৈরি। সব অভিমান ভাঙ্গাতে অনেক কষ্ট হত অরির। সেই স্বৈরি আজ তার পাশে। অরির বাবা সিলেটে একটা চা বাগানের মালিক। অনেক সচ্ছল ওরা। অরি জানে ওর বাবা মা খুব রাগ করবে। কিন্তু স্বৈরিকে ওর বাসার সবাই পছন্দ করে।

অরি কানাডা গেলে স্বৈরিকেও নিয়ে যাবে সে। এক মুহূর্ত ওকে ছাড়া থাকা মানে নিজের থেকেই নিজে হারিয়ে যাওয়া।কত স্বপ্ন বুনে রেখেছে এতদিন।আজ সব সত্যি হলো। ওর জন্য মরতেও প্রস্তুত অরি।
-কিছু বলছ না কেন?
-ভাবছি।
-কি ভাবছ?
-ভাবছি একটু পরেই তোমাকে একা পাব।
-তো?
-তখন তোমার কিছুই করার থাকবে না।
-খবরদার।কোন ফাজলামি না।একদম ভদ্র মানুষের মত থাকবা।
-ভদ্র মানুষ কিভাবে থাকে?
- পাশাপাশি দুই রুমে থাকবো দুজন। কোন বদ মতলব থাকলে মেরে ফেলব।
-ওখানে নাকি সিঙ্গেল রুম নাই। সব বড় বড় রুম।
-তুই সোফায় ঘুমাবি শয়তান। গায়ে হাত দিবিনা একদম
-আরিব্বাস তুমি থেকে তুই। মাত্র তো বিয়ে হলো শুরু করে দিলা?
-শুরু করব না।তুমি ই তো বদ মতলব করতেছ।
-আচ্ছা বাবা আমার হাতে পায়ে শিকল পড়িয়ে নিও কেমন?
-পড়াবোই তো।
-আগে একটা চুমু দাও।
-এখন এই রাস্তায়?
-হ্যাঁ এখনি।নাহলে আমি স্পীড বাড়াচ্ছি।
হাল্কা করে স্পীড বাড়ায় অরি।
- কি করছ? কি করছ?
-আগে তুমি হাম দাও।
-দিবনা।
আরেকটু স্পীড বাড়ায় অরি।
-আরে কি করছ। ওই ট্রাকটা কিভাবে চলে গেল।লাগবে তো।
-লাগুক আগে দাও।
-আচ্ছা বাবা দিচ্ছি।
অরি সামান্য দৃষ্টি ফেরাল। সামনে একটা সি এন জি চলে আসলো। সাইড দিতে যেয়ে অরির গাড়ি ব্রেক ফেল করল।
তারপর টানা দুমাস ইউনাইটেড হাসপাতালে পড়ে থাকলো অরি। পা দুটো চলাচলের ক্ষমতা হারিয়েছে সারা জীবনের জন্য। স্বৈরির শুধু হাত ভেঙ্গেছে।

-অরি অরি বৃষ্টিতে ভিজছ কেন?
স্বৈরির ঢাকে সম্বিৎ ফিরে পেল অরিন্দ্র। অরিকে জড়িয়ে ধরল স্বৈরি।
-তোমাকে ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভেজাবো বলে। গভীর আবেগে স্বৈরিণীকে চুমু খেল অরি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:০২

কাইকর বলেছেন: কেমন যেন!!!

২| ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:০০

রাজীব নুর বলেছেন: বড্ড অগোছালো।

৩| ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২৫

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: দারুণ রোম্যান্টিক গল্প। ভালো লেগেছে। শুধু কিছু টাইপো আছে ঠিক করে নিয়েন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.