নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাবুই পাখির নীড়

লাকমিনা জেসমিন সোমা

নিজেকে জানার চেষ্টা করিছ। প্রতিনিয়ত, প্রতিক্ষণ।

লাকমিনা জেসমিন সোমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার ইবলিস চত্বর!!!

২৩ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:২৫

সারি সারি তাল গাছ। তারই পাশে শান বাধানো বিশাল পুকুরঘাট। স্বচ্ছ পানিতে গাছের ছায়ার দিন-ভর লুকোচুরি খেলে পানকৌড়ী। এক্কোনে শামীম মামার চায়ের দোকান। সেখানে সকাল থেকেই জ্বলতে থাকে মাটির চুলা, শোনা যায় চায়ের কাপের টুংটাং শব্দ। এসব দেখতে দেখতেই আড্ডামুখর হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। ব্যস্ত হয়ে পড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি পরিচিত ইবলিস চত্বর। বিশাল মাঠ নিয়ে গঠিত এই চত্বর কেবল দিনের জন্য নয়। সন্ধ্যায়ও খোলা আকাশে নরম ঘাসে এখানে বসে থাকতে দেখা যায় বহু শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে।



বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইবলিস চত্বরের নাম নতুন কেউ শুনলেই প্রথমে বেশ অবাক হন। অনেকে নেতিবাচক ধারনাও করে বসেন। কিন্তু আসলে লোকমুখে প্রচলিত এই নামের ইতিহাস তেমন ভয়ানক কিছুই ইঙ্গিত করেনা। বলা হয় একসময় এটি ছেলে মেয়েদের অবাধ আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় কোন এক ভালোবাসা দিবসে দুষ্টু প্রকৃতির কিছু মানুষ এর নাম দিয়েছিল ইবলিস চত্বর।



তবে যে কারনে হোক আর যে নামেরই হোক, এই চত্বরেই কত শত স্বপ্নের জাল বুনেছেন তরুণ-তরুণীরা। ‘প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার প্রিয় মুহুর্তের সাক্ষী হয়ে আছে এই চত্বর’ বলছিলেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী উৎকলিকা দিসা। অন্যদিকে সমাজকর্ম বিভাগের এক শিক্ষার্থী বললেন, যাকে তার জীবন সঙ্গী করবেন বলে ভেবেছিলেন তাকে সেদিন এ মাঠে দাড়িয়েই বিদায় দিতে হলো। তাদের পাশে বসে থাকা মোটা ফ্রেমের চশমা খুলে নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ইফফাত চ্যাম্প বললেন, ক্যাম্পাসে তার প্রিয় জায়গা ইবলিস চত্বর। কেননা এখানে খোলা হওয়ায় আড্ডা এবং পড়াশুনা দুই’ই বেশ জমে ওঠে।



শুধু ইবলিস চত্বর নয় সবুজে ঘেরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আরো কত চত্বর। প্রতিটি চত্বরেরই রয়েছে মজার মজার নাম ও ঐতিহাসিকতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকেই বাঁ-পাশে ঐতিহাসিক ‘সাবাশ বাংলা’ মাঠ। সামনেই ড. শামসুজ্জোহা স্যারের কবর। সেখান থেকে বাঁয়ে গগণচুম্বী সারি সারি বহু পুরাতন গাছ নিয়ে গঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অপার সৌন্দার্য ‘প্যারিস রোড’। অনেকের মতে দেশের আর কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে এই সুউচ্চ গাছের বিন্যাস নেই।



ক্যাম্পাসের আরেক বহুল আলোচিত জায়গা পশ্চিম পাড়া। ছাত্রীদের পাঁচটি হলের মধ্যবর্তী এই জায়গাটি বিকাল হতে না হতেই পরিনত হয় তারুণ্যের মেলায়। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামে, তবু শেষ হয়েও শেষ হয়না মেলা। তবে ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রদের সংখ্যা’ই বেশি। এ নিয়েও রয়েছে অনেক হাস্য-রসাত্মক গল্প।



ক্যাম্পাসের সবচেয়ে ব্যস্ততম চত্বর ‘টুকিটাকি চত্বর’। এখানে রয়েছে সারি সারি চা-নাস্তার দোকান, রাজনৈতিক দলের টেন্ড। গল্পে মেতে কেউ গরম চায়ে গাল পোড়াচ্ছেন আবার কেইবা গিটারে সুর তুলছেন। সবসময়ই চোখে পড়ে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেয়ার চিত্র। ফটোকপির দোকান থেকে শুরু করে বই, খাতা, কলম, সাজ-সরঞ্চাম ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত টুকিটাকি সব ধরনের জিনিস এখানে পাওয়া যাওয়ায় এই চত্বরকে বলা হয় টুকিটাকি চত্বর।



গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মিডিয়া চত্বর, নৃবিজ্ঞান বিভাগের এ্যানথ্রো পয়েন্ট, লালন চর্চা কেন্দ্র, আমতলা চত্বর, লাইব্রেরী চত্বর, বৌ বাজারসহ আরো বেশ কিছু চত্বরই এভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে । জায়গা করে নিয়েছে বাবু মামার চা, মানিক ভাইয়ের পরোটা, সাজ্জাদের ঝালমুড়ি।



এসব চত্বরে গল্প গান আর আড্ডার সাথে সাথেই ছেলে মেয়েরা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে। এই তরুণ প্রজন্মই জাতীর স্বপ্ন হয়ে ওঠে। তারপর এরা’ই একদিন জাতীর হাল ধরে, দেশকে নিয়ে যায় বহুদূর- এমনটিই মনে করেন বিম্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক উপমহাদেশের বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।



লাকমিনা জেসমিন সোমা

রাজশাহী, ২১ মার্চ ২০১৩





মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০২

ক্ষ্যাপাপাগলা বলেছেন: নষ্টালজিক করে দিলেন আপনি। আমি রা বি এর পাক্তন ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা ইন্চি মিস করি।

২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৪

ক্ষ্যাপাপাগলা বলেছেন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিকের গল্প।

আমি রাজু আর দিপু খুব আড্ডা দিতাম। একদিন রাতে শাহ্ মখদুম হলের ডায়নিং এ খাবার পর হাটতে হাটতে জোহা হলের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভুমিতে গেলাম ৩ জন। জোহা হল ছিল ৭১ এ পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প। তখনকার ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী দের ধরে এখানে অমানবিক অত্যাচার করা হত আর এর পেছনের বধ্যভূমিতে অমানবিক ভাবে তাদের মারা হত। অনেকক্ষন গল্প করার পর আমরা ৩ জনেই চুপ। শুয়ে আছি বধ্যভূমিটার ঠিক মাঝখানে। কারও মূখে কোন কথা নেই। অথচ আমরা একসাথে থাকলে এমনটি কখনই হয়না। যেন সবাই নিশ্চুপ হয়ে কান পেতে কিছু একটা শোনার চেষ্টা করছে। হ্যাঁ আমরা তখন কিছু শুনতে পায়নি তবে ঠিকই অনুভব করতে পেরেছিলাম লাখো শহীদের আর্তনাদ। সেদিন আকাশে অনেক তারা ছিল। খোলা আকাশপানে শুয়ে নিশ্চুপ প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য দেখছিলাম, একটুও ক্লান্তি বা ঘুম আসেনি সেরাতে। ঝিরিঝিরি বাতাসে হালকা ঠান্ডায় অবূর্ব শিহরন জাগছিল মনে। মধ্যরাতে ঝটিকা গতিতে ঠিক পাশের রেললাইন দিয়ে ছুটে গেল কোন এক ট্রেন তীব্র আলোয় রাস্তা চিরে। ট্রেনের ঝিকঝিক শব্দ অনেকক্ষন ধরে প্রতিফলিত হল দূরের বিল্ডিংগুলোয়। একভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আমরা.....আস্তে আস্তে ভোর হচ্ছিল, স্পষ্ট দেখছিলাম...একটা একটা করে আকাশের তারা গুলি নিভে যাচ্ছিল। হঠাত রাজু বলল দেখদেখ আমাদের জীবন থেকেও সোনালী দিনগুলি ঠিক এইভাবে তারার মতই চলে যাচ্ছে। খুব খারাপ লাগছিল সেদিন।

হ্যাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিনগুলিকে খুবই মিস করি। দিনগুলি ছিল আসলেই সোনালী।

I miss u my dear campus, I'll always miss you.

৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৪৫

শান্তশিষ্ট বলেছেন: ক্ষ্যাপাপাগলা বলেছেন: নষ্টালজিক করে দিলেন আপনি।
আপনার প্রতিটা বর্ণনা পড়ার সাথে সাথে মনের পর্দায় ভেসে উঠল ছবি। কয়েক মুহূর্তে ঘুরে এলাম পুরো ভার্সিটি থেকে!

সাজ্জাদের নিমকি মাখা খেয়েছেন? সেইরকম জিনিস! :)
বেচারা একবার মুড়ি-নিমকি বিক্রি বাদ দিয়ে পেটের দায়ে অটোর ড্রাইভার হয়ে গেছিল। চার বন্ধু সেই অটো নিয়ে গেছিলাম ঘুরতে, বধ্যভূমিতে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আপনার জন্য অনেক অনেক স্মৃতিময় হোক- এই কামনা করছি।
ভাল থাকবেন।

৪| ২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:০৯

খেয়া ঘাট বলেছেন: নামটা ভালো না হলেও চত্বরটাতো দেখি খুবই সুন্দর।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৪

লাকমিনা জেসমিন সোমা বলেছেন: হুম...।

৫| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৬

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: কতদিন যাওয়া হয়না ! পা গুলো বড় বেশি স্বার্থপর আজকাল !

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৪

লাকমিনা জেসমিন সোমা বলেছেন: চলে আসেন,,,,,,ঘুরে যান..।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.