নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

web design and development, Graphics Designer, Digital marketer.। whatsapp +8801929766847। https://www.kulauranews.com/ , https://www.webbespace.com/

ওবায়দুল হক

আমি ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি না, আমি শুধু সৎ থাকতে চেষ্টা করি। মোবাইল: ০১৭১৮০২৩৭৫৯

ওবায়দুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনভিপ্রেত একটি ট্রেন বিড়ম্বনা

১৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:১১

সিলেট রেলওয়ে স্টেশন...

ট্রেন মাত্রই হুইসেল বাজিয়ে ছুটতে শুরু করল। এমন সময় মাঝ বয়সী একটা আপু হাতে বিশাল এক ব্যাগ নিয়ে ছুটে আসছেন। এই গতিতে প্রতিদিন উনি যদি ১০ মিনিট দৌড়াতেন তাহলে বিশ্ব দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারতেন মাত্র ১০ দিনেই। জানালা দিয়ে একটু দেখার চেষ্টা করছিলাম যে, উনি ট্রেনটিতে উঠতে পারছেন কি না! ট্রেনে উৎসুক মানুষের আগ্রহ দেখে আমি সেদিক থেকে নজর ফিরিয়ে নিলাম। একটি কাজে যখন অনেক মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায় তখন সেই কাজ করার আগ্রহ আমার আর থাকে না।

একজন ট্রেন ধরার জন্য দৌড়াচ্ছে আর সবাই তাই দেখছে বিষ্ময় হয়ে। এখানে ট্রেনে দৌড়ে উঠা যাত্রীর তুলনায় যারা এতো কৌতহল নিয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করছেন তাদের মুখের এবং কপালের দৃশ্যগুলো বরং আরো বেশী উপভোগ্য। কেউ কেউ কপাল এতো বেশী কুচলানে যে দেখে মনে হচ্ছে কেউ বুঝি তার পাছায় লাথি দিয়ে তাকে দৌড়াচ্ছে। কেউ কেউ মুখখানায় এতো কষ্টের রেখা ফুঠিয়ে তুললেন যে, দেখে মনে হচ্ছে তিনি নিজেই দৌড়াচ্ছেন। অথবা তিনি তার সর্বশক্তি দৌড়ে আসা রমনীর শক্তির সাথে এক করে দিয়েছেন যেন তিনি দৌড়ার আরো শক্তি পান।

যাইহোক, এই সম্ভাবনাময় রমনী শেষমেষ দৌড়ে আমার বগিতেই উঠলেন। আমি অনেক আগেই আমার হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনা শুরু করেছি আর মানুষের কার্যসমূহ উপভোগ করছি। কিছুক্ষণ পর দেখি তিনি আমার সামনে দাড়িয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছেন। আমার সিটের ভেতরের সিটটিও ফাকা ছিল। সারাটা বগিতে কেবল এই একটাই সিট দেখলাম ফাকা। আমি ভেতরের ফাকা সিটটিতে চেপে বসলাম যেন উনি চাইলে বসতে পারেন। কিন্তু আমি উনাকে বসার জন্য কোন অনুরোধ করলাম না। উনার নিজের টিকেট হয়ত আছে। উনার সিট খুজে বের করে উনি বসুক। কিংবা দাড়িয়ে যেতে চাইলে যাবে। এটা তো আর আমার বাসার ড্রয়িংরুমের সিট না যে, আমি বসতে অনুরোধ করব! ট্রেনের অন্য যাত্রীদের সাথে কথোপকতনে বুঝলাম, সামনের কোন একটি বগিতে উনার সঙ্গে কেউ রয়েছেন। দুএকজনকে মোবাইল নাম্বার দিলেন যাতে তারা যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন। উনার বাবা এবং মেয়ে এই সংক্রান্ত কিছু কথা আমার কানে আসছিল। যদিও আমার কানে হেডফোন তবুও কথাগুলো আবছা আবছা শুনা যাচ্ছিল। কারণ তিনি খুবই জোরে কথা বলছিলেন।

এরই মধ্যে শুনলাম তিনি কুলাউড়া নামবেন। এই কথা শুনার আমি উনাকে একটু ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করলাম। কারণ আমি নিজেই কুলাউড়া নামব। আর আমার এলাকার একজন মানুষ বিপদগ্রস্থ। তাকে সাহায্য না করলে কি হয়? উনাকে একটু ভালোভাবে দেখে মনে হল, ঠিকই আছে। কোন বাটপার নয়। ভদ্র ঘরের মহিলা মনে হল। এবার আমি উনাকে আমার পাশের সিটটিতে বসতে বললাম। অভয় দিয়ে বললাম, চিন্তা করবেন না। আমিও কুলাউড়ায় নামব। আর মাত্র ১ ঘন্টা। একটু বসুন। কুলাউড়ায় নেমে আপনার সঙ্গের যাত্রীকে খুজে নিতে পারবেন।

আমি ভাবলাম, ভাগ্যক্রমে দৌড়ে উনি ট্রেনে উঠেছেন এবং আমার পাশেই এসে দাড়িয়েছেন। শুধু তাই নয়, উনি কুলাউড়া নামবেন। তাই একটু ভদ্রতার খাতিরেই বললাম। আপনার সঙ্গের যাত্রীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ হয়েছে? উনি বললেন, না। আমি বললাম, নাম্বারটা আমাকে দিন। আমি একটু ট্রাই করে দেখি। প্রথমে দুতিনবার নাম্বার ব্যস্ত দেখাচ্ছিল। তারপর একজন ফোন রিসিভ করলেন এবং সুরলা মেয়ে কণ্ঠে অপর প্রান্ত থেকেও রিপ্লাই এলো। বিনীত সুরেই বললাম, আপনার সঙ্গের যাত্রী আমার বগিতে উঠেছন। উনার সাথে বড় একটি ব্যাগও রয়েছে। তাই আপনার সাথে কোন পুরুষ মানুষ থাকলে প্লিজ একেবারে পেছনের বগিতে পাঠান। উনি বললেন, "ভাইয়া, কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আমাদের সাথে কোন পুরুষ মানুষ নাই। আপনি যদি একটু পৌছে দিতেন তাহলে খুব উপকার হয়।"

এভাবে কেউ অনুরোধ করবে আর আমি না করব? তা কি করে হয়? আমি যে সহজে না বলতে পারি না। তাই বললাম আচ্ছা ঠিক আছে। ফোন রেখে দিয়ে আপুটিকে বললাম, চলেন আপনাকে পৌছে দেই। ট্রেনে প্রচুর যাত্রী। অনেকেই দাড়িয়ে যাচ্ছে। এক বগিতে অন্য বগিতে যাওয়া মুটোমুটি ছোটখাটো একটা যুদ্ধজয়ের ব্যাপার। ভদ্রতার খাতিরেই বললাম, আপু ব্যাগটা আমার হাতে দিয়ে দিন। উনি নিসংকোচে দিয়ে দিলেন। আরে... ভদ্রতা করেছি বলে সত্যি সত্যি দিয়ে দিবেন? আল্লাহ রক্ষা কর। ব্যাগ হাতে নিয়েই বুঝলাম, কতবড় ভুল করে ফেলেছি। আপুটিকে বলতে ইচ্ছে হল, আচ্ছা আপু ব্যাগের মধ্যে কি আছে? এতো ভারী কেন? তখনই মনে হল, একটু আগেই তো এই ব্যাগ হাতে নিয়ে দৌড়ে এই মহিলা ট্রেনে উঠলেন। আর আমি এখন এই কথা বললে, নিজেকে পুরুষ মানুষ ভাবতে কষ্ট হবে। তাই বাধ্য ছেলের মতো ব্যাগ নিয়ে পিছু পিছু ছুটলাম। উনি পেছনে একবারও না তাকিয়ে সামনে যেতে থাকলেন ভীড় ঠেলে। অন্য কেউ হলে ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যেত কিংবা ট্রেনের বাইরে ব্যাগ ফেলে দিত। এই মহিলার দেখলাম কোন দ্বিধা নেই। আচ্ছা আমি চোর হতেও তো পারতাম। এভাবে অপরিচিত কারো কাছে ব্যাগ দিয়ে কেউ কি সামনে সামনে এভাবে যায়। তাও ট্রেনে যদি যাত্রীতে ঠাসা থাকে?

কিছুদূর গিয়ে টিটি সাহেবকে যখন উনার বগি কতটা বগি সামনে জানতে চাইলাম, তখন বুঝলাম কত বড় ভুল করে ফেলেছি। টিটি সাহেব বললেন, ঐ বগি তো ট্রেনের একদম সামনে। আমি মনে মনে বললাম, লও ঠেলা। এই ব্যাগ হাতে আর এককদম যাওয়াও আমার পক্ষে সম্ভব না। আর আমি কি না যাব ট্রেনের একদম সামনের বগিতে। কোন উপায় নাই। পুরুষ মানুষ মাঝপথে থামে না। তাই নতুন শক্তিতে সামনে এগুতে শুরু করলাম। এই পথ যেন শেষ না হয়......

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, কত মানুষের ঠেলা সয়ে, স্যরি বলতে বলতে শেষে..... উনি উনার বগিতে পৌছালেন। সুরেলা কণ্ঠের সেই মেয়েটি হাত বাড়িয়ে আমার হাত থেকে ব্যাগটি নিলেন। ব্যাগটা কোন রকমে হাতে দিয়ে আমি ফিরে আসার পথ ধরলাম। পেছন থেকে শুধু শুনছিলাম, উনি ধন্যবাদ দেয়ার চেষ্টা করছেন। আমি ধন্যবাদ নেয়ার অপেক্ষা না করেই ফিরতি পথ ধরলাম। এবার পৌছাতে হবে আমার সিটে।

অনেক পথ পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত দেহে যখন ফিরে এলাম। তখন মনে হল, আহা রে.. মেয়েটি তো সুন্দর ছিল। ইস্ নামটা জিজ্ঞেস করা হলো না। আহা ব্যাগটা নেয়ার সময় কি যেন একটা মধুর স্পর্শ হাতে লাগছিল। ঐটা কি মেয়েটির হাত ছিল? আহা রে... পকেট থেকে মোবাইল বের করে স্ক্রীন অন করে দেখি ২ টা মিস কল। ফিরে আসার পথে কল এসেছে। আমি সেটা আর খেয়াল করি নি। আচ্ছা এখন কি কল ব্যাক করব?

ভেতরের মানুষটা বলে উঠল, দেখ মেয়েটি এবার বলবে, ভাইয়া ব্যাগটা ট্রেন থেকে নামিয়ে দিলে খুব উপকার হয়। প্লিজ ভাইয়া। তাই আর ভয়ে কল ব্যাক করলাম না। কিছুক্ষণ পর আবার মনে হল কল ব্যাক করি-- ভেতর থেকে কেউ একজন বলল, ছি সিপন!!! মেয়েটা ধন্যবাদ দিতে কল দিয়েছে। কেউ কি ধন্যবাদ পেতে কল ব্যাক করে? আজো তাই কল ব্যাক করা আর হয় নি। নাম্বারটা আছে যদিও।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:১৮

ভুয়া মফিজ বলেছেন: একটা কল করেই দেখেন না, ঘটনা একটা ঘটেও যেতে পারে। ;)

১৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:১৯

ওবায়দুল হক বলেছেন: 8-| সত্যি বলছেন? দেখি একটু চিন্তা করে।

২| ১৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বড়ই অনিভপ্রেত ঘটনা বটে!!

শংকা দ্বিধা ভয় - এই তিন থাকতে নয় ;)

ঐ তিন না থাকলে হয়তো অন্যরকম একটা গল্প পেতাম:)

+++

১৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:২০

ওবায়দুল হক বলেছেন: হে হে :-B :-B :-B :-B

৩| ১৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫২

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: একটি অসমাপ্ত গল্পের কাহিনী।

১৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:২১

ওবায়দুল হক বলেছেন: একটি অর্ধেক প্রেমের গল্প 8-|

৪| ১৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৯

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: বাহ চমৎকার উপস্থাপনা শিপন ভাই, একবার কল করেই দেখেন। এইযুগে এত ভাবাভাবির সময় নেই। পোষ্ট লাইক।

১৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:২২

ওবায়দুল হক বলেছেন: আমি একটু সেকালের ভাই। বয়স তো আর কম হলো না। তবুও কিছু ঘটছে না। :>

৫| ১৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:৫৮

কামরুননাহার কলি বলেছেন: একবার কল ব্যাক করেই দেখেন না ভাইয়া। দেখেন না কি বলে :P :P :P :P :P

১৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪

ওবায়দুল হক বলেছেন: ঘটনাটি ১০ই মে ঘটেছে। আজ ১৬ই মে। এতোদিন পর কল ব্যাক করা কেমন দেখায় না?? B:-/ :-& :-&

৬| ১৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:৫৮

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: লেখা ভাল লেগেছে। :)

১৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:১৮

ওবায়দুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ #:-S

৭| ১৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:৪৪

কামরুননাহার কলি বলেছেন: কেমন দেখাবে আর ভাইয়া। দিয়ে দেন না তারপর যা হওয়ার হবে। ওসব নিয়ে মাথা ঘামাবেন না আপনি, ভাইয়া।

১৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:২২

ওবায়দুল হক বলেছেন: একটা সৃজনশীল আইডিয়া দেন তো! =p~

৮| ১৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:২৪

আকিব হাসান জাভেদ বলেছেন: আপনাকে যেহেতু আর কল দেয় নি সেহেতু সামনে বিপদ । কল না করাই ভালো। এরা কাজের সময় কাজি কাজ ফুরালে .......সুন্দর গল্প। কষ্ট করেছেন বলে কোন না কোন ভাবে কেষ্ট মিলবে। ধৈর্য ধরেন লেখক।

৯| ১৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: আমি বলব ভুলে যান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.