নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যা প্রদীপ

আমার সমস্ত চেতনা যদি শব্দে তুলে ধরতে পারতাম

সন্ধ্যা প্রদীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ষণ যখন শুধু লালসা নয় বরং নারীর প্রতি প্রতিশোধের অস্ত্র

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:২৯




ধর্ষণ নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছা করেনা আমার।এ যেন এক সীমাহীন কষ্টের আখ্যান।কলমের আঁচড়গুলো বুকের মধ্যে তলোয়ারের মত কেটে কেটে বসে।তাই আজকাল হেডলাইন দেখেই এড়িয়ে যাই খবরগুলো।জানি দু একজন অপরাধী হয়ত কিঞ্চিৎ সাজা পায় তবে আসল সাজা হয় মেয়েটির।অপরাধীর বিচার হোক বা না হোক ভিক্টিম মেয়েটির বিচার এবং দণ্ডাদেশ কার্যকর করতে সমাজ এক মুহূর্তের বিলম্ব করে না।রাষ্ট্র চাইলে অনেক কিছুই পারে।এই ভয়ানক সমস্যা সমাধানের পথ আছে কিন্ত ইচ্ছা নেই, নেই আন্তরিকতা। মেয়ে যদি আধুনিকা, স্টাইলিশ বা চঞ্চল হয়( অনেকের ভাষায় বেপর্দা) তখন তাকে রেপ করা যেন বৈধ হয়ে যায় কিছু কিছু মানুষের চোখে।এসংক্রান্ত যেকোনো পাবলিক পোস্ট এ গিয়ে কমেন্টগুলো পরে দেখুন।দেখবেন কিছু কিছু মানুষের কি উল্লাস!!তাদের কথাগুলো ঘুরেফিরে কয়েকটি বিষয়ে ঘুরপাক খাবে---
*চরিত্র
*পোশাক
*পর্দা
*নারী স্বাধীনতা
*ধর্মের দোহাই


তাদের দেখলে মনেহয় পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষের কাছে নতজানু হয়ে যে নারী চলেনা তাকে সাজা দিয়ে সঠিক অবস্থান (পুরুষের পায়ের তলা) দেখিয়ে দেয়া খুব জরুরি। এক্ষেত্রে ধর্ষণের চেয়ে বড় অস্ত্র আর কি হতে পারে?একটি ধর্ষণ যে সেই মেয়ে এবং তার পরিবারকে চিরকালের জন্য পঙ্গু করে দেয় সেটা কে না জানে?

মানুষ সেক্সুয়াল প্লেজারের জন্য ধর্ষণ করে কম।কিছু বিকৃত মস্তিষ্ক সাইকোপ্যাথ ধরনের লোক আছে যারা হয়ত এভাবে অধিক আনন্দ পায় কিন্ত তাদের সংখ্যা কম।আর বাকিরা?তারা কিন্ত প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধের সর্বোচ্চ অস্ত্র হিসাবে ধর্ষণকে ব্যবহার করে।প্রেমে সাড়া দেয়নি-ধর্ষণ,কু প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে- ধর্ষণ,জমি নিয়ে বিবাদ- স্ত্রী বা কন্যাকে ধর্ষণ,আদালতে অপরাধের সাক্ষী দিয়েছে- সেই একই অস্ত্র ধর্ষণ।

ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে শতশত বছর ধরে এটাই হয়ে আসছে।যুদ্ধ শুরু হলে একটা ভুখণ্ডে গজব নেমে আসে।কিন্ত সবচেয়ে বড় গজব নাজিল হয় নারীদের উপর।যেকোনো যুদ্ধেই নারী ও শিশু ধর্ষণ একটা প্রধান হাতিয়ার হিসাবে বেছে নেয়া হয়।বেশি দূরে যাচ্ছি না সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর অত্যাচারের খবরটা আমরা জানি,জানি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারেও। চীনে উইঘুর জনগোষ্ঠীর কথা জানি, জানি মধ্যেপ্রাচ্যের কথা।সবখানেই কিন্ত ধর্ষণকে অন্যতম অস্ত্র হিসাবে নেয়া হয়েছে।

অন্যদের কথা বাদ দিয়ে যদি নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দেখি তাহলে শিউরে উঠতে হয়।ধর্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারীর গর্ভে সাচ্চা মুসলমান তৈরির আদেশ দিয়ে একদল নরপশুকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল এ ভূখন্ডটিতে।যুদ্ধ শেষ হয়েছিল একসময় কিন্ত সেসব হতভাগা নারীদের যুদ্ধ চলমান থেকেছে মৃত্যু পর্যন্ত। তাদের সাথে আমরা কি আচরণ করেছি তার সামান্য কিছু নমুনা রয়েছে নীলিমা ইব্রাহীমের লেখা 'আমি বীরাঙ্গনা বলছি' বইটিতে।


একজন নারীকে শায়েস্তা করার এর চেয়ে ভালো অস্ত্র আর হয়না।খুন করলে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে কিন্ত ধর্ষণের সাজা আর কতটুকু?আর সাজা দেবেই বা কে? প্রমাণ করবে কে?আর প্রমাণ যদি হয়েই যায় মেয়েটি যদি অভিযোগ করেই বসে তাহলে কিছুদিন জেল খেটে দিব্বি ঘুরে বেড়ানো যাবে বুক ফুলিয়ে।কিছু সেই মেয়েটির আজীবনের সাজা নিশ্চিত করে দেবে সমাজের লোকেরা।মজা করাও হলো প্রতিশোধ নেয়াও হলো চমৎকার ব্যবস্থা না?


তাই যে সকল মানুষ মেয়েদের সৌন্দর্য বা পোশাকের সাথে ধর্ষণকে মিলিয়ে ফেলেন তারা আরো গভীর ভাবে ভেবে দেখুন।তনু, নুসরাত আরো ভুলে যাওয়া কত মেয়ে হারিয়ে গেছে এই নরপশুদের থাবায়।সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনা প্রমাণ করেছে স্বামীর সাথেও মেয়েরা নিরাপদ নয়।আপনি যদি মনে করেন মেয়েরা রাস্তায় না বেরোলেই এর সমাধান হবে তবে ভুল ভাবছেন।তখন আপনার ঘর ভেঙে ঢুকবে এই পশুগুলো। যেখানে মেয়ে নেই সেখানে আপনার ছেলেও রেহাই পাবেনা এদের হাত থেকে(সাম্প্রতিক কুষ্টিয়ায় মাদ্রাসার ঘটনা)।

লালসা হোক বা প্রতিশোধ কারন যাই থাক অপরাধের সাজা অবশ্যই হতে হবে।খারাপ লোক থাকবেই কিন্ত অপরাধ ঘটানোর মত সাহস যাতে তাদের না থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।এখানে রাস্ট্রের ভূমিকার চেয়ে আমাদের ভূমিকা আরো গুরুত্বপূর্ণ। আজ থেকে ভিক্টিমের পোশাকের সমালোচনা ছেড়ে দিয়ে যদি অপরাধীর শাস্তির পক্ষে কথা বলেন বুঝবেন একটি বড় সামাজিক সমস্যা সমাধানে আপনি এক পা অগ্রসর হয়েছেন।


রেইপ ভিক্টিমকে আমরা যদি সামাজিক টর্চার না করি তাহলে প্রতিশোধের কারনে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না দুষ্কৃতকারীরা।বরং এই সামাজিক চাপ যদি অপরাধীর দিকে দেয়া হয় তখন অন্যারা এই কাজ করার আগে শতবার ভাববে।আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে অপরাধের এই ক্যান্সারাস হার কমে আসবে।একসময় এসিড সন্ত্রাস মহামারী আকার ধারণ করেছিল।আইনের কঠোর প্রয়োগ সেই অভিশাপ থেকে আমাদের জাতিকে বের করে এনেছে।তাহলে তা ধর্ষণের ক্ষেত্রে কেন কার্যকর হবে না?

তবে শুধু আইন প্রয়োগই নয় মন মানসিকতার পরিবর্তন ও আনতে হবে ধীরে ধীরে।কারন
ছেলে সন্তানকে মানুষের বদলে পশুর আদলে গড়ে তোলার শুরুটা কিন্ত নিজ পরিবারেই হয়।রাষ্ট্রের বিচারহীনতা আর সমাজের নিশ্চুপ ভূমিকা সেই পশু প্রবৃত্তিকে জল হাওয়া দিয়ে বড় করে তোলে।এক একটা ঘটনা হয়ত আমাদের চেতনা জগতে জোর ধাক্কা দেয়। তারপর দুদিন গেলেই সব ভুলে যাই আমরা।ভান করি সবকিছু ঠিক আছে।

নোয়াখালীর ঘটনায় সবাই সোচ্চার হওয়ার কারন কি এটাই যে চাক্ষুষ প্রমান দেখা গেছে? এছাড়া এবারতো নারীটির পোশাকের সমালোচনা করে দায় পরোক্ষভাবে নারীর উপর চাপানো যাবেনা কারন পোশাকতো ছিলই না!

অথচ সোচ্চার হওয়া দরকার ছিল আগেই।সোচ্চার হওয়া দরকার প্রতিটি ঘটনার জন্যেই।ভাবুনতো একটা শিশুর সাথে যখন এধরনের অত্যাচার হয় তখন দৃশ্যটা কতটা ভয়াবহ থাকে।প্রতিটা ধর্ষণের দৃশ্যই কি ভয়াবহ নয়?কখনো কি কল্পনা করে দেখেছি?দৃশ্যমান হওয়া জিনিসগুলোকেই যখন আমরা গুরুত্ব দেই আর অন্যগুলোকে অবহেলা করি তখন বলতেই হয় জাতি হিসাবে আমাদের চেয়ে বড় হিপোক্রিট আর কেউ নেই।

অনেকেই বলে থাকেন ধর্ষণ নির্মূল করা সম্ভব নয়।কিন্ত এর বিচার নিশ্চিত করাতো সম্ভব! ভবিষ্যৎ ধর্ষক উৎপাদন কমিয়ে আনা তো সম্ভব!অপরাধ অপরাধই।এর বিচার এবং উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিৎ।

যেদিন একজন দেহপসারিনীর উপর এধরণের অত্যাচার হলেও তার চরিত্র বা পোশাকের উপর প্রশ্ন তোলা ব্যাতিত অপরাধটির সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত হবে সেদিন মনে করব আমরা সভ্য হতে পেরেছি।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৪৩

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে খুব সুন্দর বিশ্লেষণ।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৫৭

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: ধন্যবাদ।
সময় এসেছে নতুন করে ভাবার--

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: সবারই সোচ্চার হওয়া উচিত। যার যার অবস্থান থেকে সবাইবে সোচ্চার হতে হবে। আমজনতা ছাড়া কেউ রুখে দাঁড়াবেনা কারণ তারা সুবিধাভোগী। অসম্মানী মানুষদের প্রতি সম্মান দেখালে ওরা বেপরোয়া হয়ে উঠবে। সুতরাং না দেখানোই ভালো।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৪১

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: আপনার সাথে একমত।
সমস্যা আমাদের তাই সমাধানের উদ্যোগ আমাদেরই নিতে হবে।

৩| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:১১

কামরুননাহার কলি বলেছেন: মানুষ সত্যিকথার দারে কাছে যায় না। ওরা বড়ই পাপিষ্ঠা।

০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৯:০৮

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: হ্যাঁ অনেকেই।

৪| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:১১

অপু তানভীর বলেছেন: এটাও খুব চমৎকার এবং যুক্তিসংযগত ব্যাখ্যা । কিন্তু খেয়াল করে দেখা যায় সমাজের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ধর্ষণের জন্য ভিক্টিম নারীকেই কখনও সরাসরি আবার কখনও পরোক্ষ ভাবে দায়ী করতে থাকে । কী আজব আর কুলষিত এদের মানসিকতা !

০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৯:১৭

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: ৯০ ভাগ মানুষই হয় প্রকাশ্যে নয়ত মনে মনে নারীর ত্রুটি খোঁজে। অনেকেই ভুলে যায় ধর্ষণ ফোর্সড সেক্স নয় এটা তারচেয়েও বড় কিছু।অনেকেই ধর্ষণের কথা শুনলে মুখটিপে হাসে ভাবে নারী নিজেও জিনিসটা এঞ্জয় করেছে।তাকে কি আর করা হয়েছে জোর করে আদর করা ছাড়া।এরাও সমান পশু।কারন ধর্ষণ যে আদর জাতীয় কোনো জিনিস না এটা তাদের মাথায় ঢুকে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.