নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের ক্যানভাসে কিছু দৃশ্যপট আঁকাআঁকি করি ।কীবোর্ডে চাপাচাপি করে তা দৃশ্যমান করার একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস।এই নামটা আমার প্রিয়,তাই দেয়া।আমার স্বনামেও লিখাগুলো ফেসবুকে প্রকাশ করি ।

স্বপ্নিল অণুকাব্য

মানুষ প্রকৃতির একজন মানুষ।

স্বপ্নিল অণুকাব্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক গল্পঃ তুমি তোমার মত- তৃতীয় পর্ব

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:২৭



রিকশা থেকে ফেরার দিন রাতে অনেক কথা হয়েছে মিহরিমার সাথে।তার বেশিরভাগই ছিল প্রেমিক সুলভ।তখনও সে আমার প্রেমিকা নয়।আমি তাকে আরো পটানোর চেষ্টা করতে থাকি। কারণ রিকশায় চলতে চলতে আমি ভয়ংকর ভাবে তার প্রেমে পড়ে গিয়েছি।ভয়ংকর ভাবে প্রেমে পড়ে যাওয়া অনেকটা পানিতে ডুবে যাওয়ার মত।যদিও ডুবতে ডুবতে তখন একজন মানুষের মৃত্যু হয়ে জন্ম নেয় একজন প্রেমিকের।আগেই একটা প্রশ্ন করেছিলাম প্রেমিকরা কি মানুষ? আসলে কি? কেউ কেউ বলে বসেন প্রেমে আর যুদ্ধে সবকিছু বৈধ। তাই না? যুদ্ধের ময়দান বানিয়ে পৃথিবীর যেসব জায়গায় যুদ্ধের নামে প্রতিদিন নিরীহ মানব হত্যা হচ্ছে এভাবেই কি সেগুলো বৈধতা পেয়েছে?তারাও কি এই সূত্র মানে? আমি আসলে ঠিক জানি না।জানতে চাই না এমন না ।আমি জানি।জেনে নিজে নিজে কষ্ট পাই। আর ভাবি ,আহ মানুষ!

আমাদের প্রায় প্রতিদিনই দেখা হওয়া শুরু হলো।আমার আর মিহরিমার প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শুরু হলো ক্যাম্পাসে।লোকজন নানান কথা বলছে।বলাটা স্বাভাবিক। ভার্সিটির জুনিয়র একজনকে নিয়ে এভাবে ঘুরে বেড়ানো স্বাভাবিক কিছু না।তবুও আমরা ঘুরছি এক সাথে।আমাদের এক সাথে দেখা যায় ক্যাফেটেরিয়ায়। এক সাথে দেখা যায় পার্কে । কে কি বলছে আমার এসবে মাথা ব্যথা নাই যদিও।আমি ডুবে আছি তার মধ্যে।আমি জানি না এর শেষ কোথায়। আমি ওকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছি না।

একদিন মিহরিমাকে বললাম গত কয়দিন আমি লক্ষ্য করেছি তোমার বাবা আমাদের ফলো করছেন।
মিহরিমা বলল,আমাদের নয়।তিনি তার কন্যার সাথে দেখা করতে চাইছেন।তার সাথে কথা বলতে চাইছেন।মেয়েকে ফলো করছেন।
আমি বললাম, তাহলে দেখা করছো না কেন? নিজের বাবাই তো!
মিহরিমা বলল,ব্যক্তিগত সমস্যা আছে কিছু।সব বলা যাবে না।
আমি বললাম, আচ্ছা।
মিহরিমা বলল,তোমার কি জানার কোন আগ্রহ নাই?
আমি বললাম,তুমি না করে দিলে তাই আর বিরক্ত করছি না।
মিহরিমা বলল,তুমি আমার কি?
আমি বললাম, জানি না।
মিহরিমা বলল, খুঁজে বের করে আমাকে কালকে জানাবে।আজকে আর কথা নাই।এটা না জানলে কিসের কথা ?
আমি বললাম ,আচ্ছা।

আমি তাকে বলতে চাইলাম কিন্তু বলতে পারলাম না।কিছু জিনিস প্রকাশ করা খুব সহজ না। দেখা গেছে আমাদের ডিবেট ক্লাবের সেরা বক্তাও এমন সময় চুপ থাকত।যুক্তি তো দূরে থাক তাঁর মুখ দিয়ে তখন স্বাভাবিক বুলিও আসত না।তার মুখে তখন আসত অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ, উম উম এমন কিছু ।কিন্তু মিহরিমার সামনে আমি এমন করি নি। এটা কি ভালোবাসার কমতি নাকি !

আমিও মাঝেমধ্যে চিন্তা করি সে আমার কে?আমার প্রেমিকা নাকি আমার সিনিয়র আপু।কথায় কথায় আমাকে তো সে এক প্রকার শাসনই করে। তবে এসব শাসন আমার ভালোই লাগে। তাঁর ছোটখাটো শাসন বারণ আমার মজাই লাগে।মাঝে মধ্যে তাকে বড় আপু মনে হয়।মাঝে মধ্যে মনে হয় আমার কোন স্কুল টিচার। কিন্তু প্রেমিকা সুলভ আচরণ এর ছিটেফোঁটা ওই প্রথমদিন রিকশায়ই পেয়েছি ।এরপর আর কখনো না।

আমি বাসায় এসে সারারাত চিন্তা করলাম আমার আর মিহরিমার সম্পর্ক টা কিসের? আমি জানি এটা প্রেম।তাহলে আমি সেটা বলতে পারছি না কেন? কোন ভয়?নাকি অন্য কিছু ।অনেক চিন্তা করে বের করলাম যা ই হোক আমি তাকে চাই। একটা গান আছে-" যদি সত্যি জানতে চাও তোমাকে চাই , যদি মিথ্যে মানতে চাও তোমাকেই চাই। " অনেকটা এই অবস্থা।

পরদিন আমি আমি শাহবাগ থেকে একটা গোলাপের কলি কিনে নিলাম।গোলাপের কলি নেয়ার পিছনে আমার একটা লজিক আছে।ফুটে যাওয়া গোলাপ অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে যায়।গোলাপের কলি বেশিদিন টিকে।এমনকি পানিতে রেখে দিলে এটা আস্তে আস্তে ফুটতে থাকে। গোলাপ ফোঁটার দৃশ্যটা অসম্ভব সুন্দর ।আমি চাই না আমার দেওয়া প্রথম গিফট টার সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যটা থেকে সে বঞ্চিত হোক। কারণ গোলাপ ফোঁটার দিনটাই সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা হয়।

গোলাপের কলি নিয়ে মিহরিমার হাতে দিলাম।দিয়ে বললাম,আমি তোমাকে ভালোবাসি। মিহরিমা বলল,বাহ! এত দ্রুত?আজকে এত সাহস কোথা থেকে এলো জুনিয়র?একেবারে এসেই সরাসরি প্রপোজ!
আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, কেন আপু, সমস্যা কোথায়?
মিহরিমা বলল,কোন সমস্যা নাই।তুমি যখন জানোই মাঠ প্রস্তুত করা হচ্ছে একটা ফুটবল ম্যাচের জন্য তখন বলতে দোষ কিসের একটা ফুটবল ম্যাচ হবে?ফলাফল যখন পূর্বপরিকল্পিত তখন আর চিন্তা কিসের।
আমি বলল, এতকিছু বুঝি না।
মিহরিমা একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,তুমি আমার সম্পর্কে কতটুকু জানো?
আমি বললাম, প্রেমে পড়তে জানাজানির ব্যাপার আসে না।প্রেম ডেবিট ক্রেডিট হিসাব করে হয় না।
মিহরিমা বলল, হ্যা প্রেমে হয় না মানি।কিন্তু বিয়ে?
আমি বললাম, তাতেও লাগবে না।
মিহরিমা বলল,লাগবে।
আমি বললাম, লাগবে কেন?
মিহরিমা বলল, তুমি যেখানে ডুবে আছো সেটা ছোটখাটো একটা পুকুর। এখান থেকে বাঁচতে পারা সহজ।কিংবা কোনভাবে টিকে থাকা সম্ভব। কিন্তু বিয়েটা সমুদ্র । কাউকে দেখেছো লাইফ জ্যাকেট পরে পুকুরে নামতে? কিন্তু সমুদ্রে এত ভালো ভালো জাহাজে চেপে বসেও মানুষ একটা লাইফ জ্যাকেট পরে নেয় কিংবা আশে পাশে রাখে। কত ঝড় ঝাপটা কত বিপদ আসবে। সেজন্য মরে গেলে তো হবে না।সেসব পার করে যে বেঁচে থাকতে পারে সে-ই আসল।
আমি আচমকা বললাম,আমি তোমাকে বিয়েই করব। এবং সেটা দুইমাসের মধ্যেই।
মিহরিমা মোটেই প্রস্তুত ছিল না ,সে বলল,কি বলো এসব!
আমি বললাম, হ্যা।তোমার ফাইনাল শেষ হতে আর দুইমাস বাকি।তোমার ফাইনাল শেষ হলেই আমরা বিয়ে করব।
মিহরিমা বলল, মানে কি? তুমি মাত্র সেকেন্ড ইয়ার।
আমি বললাম তাতে কোন সমস্যা?আমার বাবার যত টাকা আছে সব আমার জন্যই।আর মা চান আমি তাড়াতাড়িই বিয়ে করি।
মিহরিমা বলল,তুমি জানো আমি বন্ধের সময় হল ছেড়ে কই থাকি?
আমি বললাম,কই থাকবে আর। নিজের বাসায় সবাই যায়।
মিহরিমা বলল, আমি যাই না।বন্ধ পড়লে আমি একবার এক বান্ধবীর বাসায় গিয়ে থাকি।একবার কারো বাসায় গেলে আর তার বাসায় যাই না।তাকে বলে দেই এটা গোপন রাখতে।এভাবে আমি আমার হল বন্ধের দিনগুলা কাটাই।
আমি বললাম, মানে কি? কেন?
মিহরিমা বলল,বাবার কথা জিজ্ঞেস করেছিলে না সেদিন?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
মিহরিমা বলল,তুমি কি তোমার মায়ের খুনির সাথে খোশগল্প করতে পারবে?
আমি বললাম, মানে? তোমার বাবা তোমার মায়ের খুনি?
মিহরিমা বলল,হ্যা ।বাবা মাকে খুনের মামলায় অন্য একজনকে ফাঁসিয়ে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাঝে মধ্যে আমাকে দেখতে আসেন।
আমি বললাম ,তুমি জানো কিভাবে তিনিই খুনি?
সব অন্যায়কারীর মধ্যে একটা সাদৃশ্য থাকে।একটা ভয় থাকে।ধরা পড়ার ভয়।বাবা আমাকে সব সময় বোঝাতো যে আমার মাকে তিনি খুন করেননি, তিনি খুন করতে পারেন না । মাকে খুন করেছে অন্য একজন।আমি প্রথম দিকে বিশ্বাস করতাম কিন্তু পরে আমার কাছে সব ধরা পড়ে যায়।মিহরিমা বিশদভাবে বলা শুরু করল।
আমি বললাম, তারপর?
মিহরিমা বলল,এতকিছু একদিনে জেনে গেলে কিভাবে হবে।শুধু এটুকু জানো কেউ কি তার মায়ের খুনির সাথে দেখা করতে পারে? কথা বলতে পারে? তাকে বাবা বলে ডাকতে পারে ?
আমি বললাম,কি বলছ এসব!
মিহরিমা বলল,সেজন্য আমি আমার নিজের বাসায় যাই না । বাবা এখন আরেকটা বিয়ে করেছে। বাবার এই বিয়ের সাথে আমার মায়ের হত্যার একটা যোগসূত্র আছে।
আমি বললাম,কি যোগসূত্র ?
মিহরিমা বলল,সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। খুব স্বাভাবিক চোখে মানুষ যা ভাববে আমিও তাই ভাবছি।বাকিটা জানি না ।
আমি বললাম,মিহরিমা,আমার খুব মাথা ধরেছে।আমি আজকে আসি।আজকে একটু বাসায় যাব।মানে গ্রামে।
মিহরিমা বলল,কেন?
আমি বললাম,অনেকদিন মাকে দেখি না ।আর বাড়িতে গিয়ে মাকে বলে আসব তোমার কথা ।আমি জানি মা না করবেন না ।মা তোমাকে দেখলে খুশিই হবেন।
মিহরিমা বলল,আমি যে এতিম সেটাও বলে রেখো ।আমাদের বিয়ে হলে কোন অনুষ্ঠান হবে না ।হলেও সেটা শুধু তোমাদের বাড়িতে ।কনে আর বর একই বাড়িতেই থাকবে। তুমি এক রুমে আমি এক রুমে।এরপর বিয়ে হবে ।কোন সমস্যা নাই তো ?
আমি বললাম ,এটাই তো তোমার সমস্যা ছিল তাই না ?
মিহরিমা বলল,হ্যা।
আমি বললাম,আংটি টাঙটি দিয়ে উইল ইউ মেরি মি বলতে হবে এখন ?
মিহরিমা কিছু বলল না ।লাজুক ভঙ্গিতে একটা হাসি দিলো শুধু। প্রথমদিনের রিকশা ভ্রমণের হাসিটার মত করে।আর বলল,সাবধানে যেও।

*চলবে.....

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৫১

আরোগ্য বলেছেন: চমৎকার,, দারুণ, খুব ভাল লাগলো। আগামী পর্বের অপেক্ষায় আছি।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:০২

স্বপ্নিল অণুকাব্য বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: লেখা খুব সুন্দর এগিয়ে চলেছে----

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:০৩

স্বপ্নিল অণুকাব্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:৫২

আরোহী আশা বলেছেন:
ধারুন চমৎকার। ভালো লাগলো। আশাকরি শীগ্রই আগামী পর্ব পাবো।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:০৩

স্বপ্নিল অণুকাব্য বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.