নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন বীথি

স্বপ্ন বীথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অর্কিড - কৃষি বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা

০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৩

উদ্যমী মানুষের নিরলস প্রচেষ্টায় তার ব্যক্তি জীবন সমৃদ্ধ হয়, পাশাপাশি তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয় আশেপাশের মানুষ, কর্মপ্রচেষ্টার প্রসারে উন্নত হয় আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় রাখে ইতিবাচক অবদান। ঠিক এমনই একটি ব্যতিক্রমী ব্যক্তি উদ্যোগ আমাদের দেশে কৃষিভিত্তিক উৎপাদনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী নবতর সম্ভবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ময়মনসিংহ শহরের প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে নগরের কোলাহলমুক্ত ফুলবাড়িয়া উপজেলায় গাছগাছালির সবুজে বিস্তীর্ণ একটি প্রত্যন্ত গ্রাম দুলমা। কিন্তু সবুজের মাঝে বিশাল এলাকাজুড়ে চোখে পড়বে লাল, হলুদ, বেগুনি অর্কিডের সমাহার। এখানে ইত্তেমাদ উদ দৌলা নামের এক কৃষি উক্ত্যোতার দীপ্ত অর্কিড লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান ১২ একর জমিতে ব্যতিক্রমী কৃষিপণ্য অর্কিডের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। এই বাগানে অর্কিডের টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চারা উৎপাদনের জন্য একটি গবেষণাগারও আছে, সেখানে প্রতিবছর এক লাখ চারা উৎপাদন করা হয়। দুলমা গ্রামে প্রতিবছর ৪০-৫০ লাখ টাকার অর্কিডের চারা ও ফুল বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। এ বাগানের অর্কিডের ক্রেতা মূলত রাজধানীর শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজারেও নিয়মিত ফুল ও চারার চালান যায়।প্রতি সপ্তাহে দুবার রাজধানীতে অর্কিডের চালান আসে।প্রতি চালানে গড়ে ৫ হাজার ফুল এবং ৫০টির মতো চারাগাছ কেনেন পাইকারেরা। প্রতিটি ফুলের দাম বাগান পর্যায়ে ২০ টাকা এবং গাছের দাম জাতভেদে ৩০০-৫০০ টাকা।রাজধানী ঢাকাতেই
আসে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪০-৫০ হাজার টাকার অর্কিড চারাগাছ ও ফুল। দেশে এখন দুটি বাগানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অর্কিডের উৎপাদন হয়। দীপ্ত অর্কিড ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডানকান চা-বাগানে সীমিত পরিসরে অর্কিড উৎপাদন করা হয়। তবে সবজি-ফলমূলের বেশি চাহিদার কারণে বর্তমানে বিদেশে অর্কিড রপ্তানির ক্ষেত্রে কার্গো উড়োজাহাজে পর্যাপ্ত স্থান পাওয়া কঠিন হওয়ায় এর রপ্তানি সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজেলাগানো যাচ্ছে না, ফলে এর চাষও তেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে না।বর্তমানে দীপ্ত অর্কিডের বাগানে ২৫ প্রজাতির অর্কিডের চাষ হয়। এর মধ্যে জনপ্রিয় হলো ডেনড্রোবিয়াম হোয়াইট, ডেনড্রোবিয়াম সোনিয়া, ডেনড্রোবিয়াম সাকুলা পিংক ও ডেনড্রোবিয়াম সাতু পিংক। এ ছাড়া মোকারা নুরা ব্লু প্রজাতির অর্কিডেরও বেশ চাহিদা রয়েছে। এক বিঘায় সাড়ে ১৮ হাজার চারাগাছ লাগানো যায়। তবে পাঁচ বছরের পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। দীপ্ত অর্কিডের হিসেবে শেড ও মাচা তৈরি, বীজ বপন, মজুরিসহ প্রতি বিঘায় খরচ হয় ১৫ লাখ টাকা, প্রতিবছরের পরিচালনা ব্যয় ৫ লাখ হিসেবে পাঁচ বছরে মোট খরচ ২৫ লাখ টাকা। ১০ শতাংশ হারে ব্যাংক সুদ ধরে যুক্ত হবে আরও ৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এক বিঘায় খরচ ৪৪ লাখ টাকা। উৎপাদনের হিসেবে, প্রথম বছরে একটি চারায় দুটি করে ফুল ফোটে।দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম বছরে ফুটবে চারটি করে ফুল। সব মিলিয়ে পাঁচ বছরে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ফুল ফোটানো সম্ভব হবে। প্রতিটি ফুলের মূল্য ২০ টাকা ধরলে পাঁচ বছরে মোট আয় হবে ৬৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পাঁচ বছরে নিট মুনাফা ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বিঘা প্রতি বছরে মুনাফা ৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্থানীয়ভাবে দক্ষ জনবল সৃষ্টি করা গেলে এদেশে এই অপ্রচলিত কৃষিপণ্যটির ব্যাপক বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে।এদেশের তরুণ উদ্যোক্তা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্কিডের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কৃষি পণ্যের বহুমুখিকরণের মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত দৃঢ়তর হয়ে উঠবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.