নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন বীথি

স্বপ্ন বীথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিনিয়র সিটিজেন ও বাংলাদেশ

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৩

মানুষের জীবনচক্রে অমৃত-গরলে মেশানো পথ পরিক্রমার সর্বশেষ, অবশ্যম্ভাবী ও স্বাভাবিক পরিণতি হচ্ছে বার্ধক্য। অসময়ে মৃত্যুর শীতল স্পর্শের ছোঁয়া না পেলে প্রত্যেককেই এ জীবনের স্বাদ গ্রহণ করতে হয়, বার্ধক্য সর্বজনীন। যাপিত জীবনে দক্ষতা আর কৌশলে অনেক সমস্যাকেই পাশ কাটানো সম্ভব। কিন্তু জন্মিলে যেমন মরিতে হয় ঠিক তেমনি বেঁচে থাকলে বার্ধক্য আসবেই, এর ব্যত্যয় ঘটানোর কোন অবকাশ সৃষ্টিকর্তা রাখেননি। বিংশ শতাব্দীতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি, সচেতনতা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে মৃত্যুহার কমার পাশাপাশি বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু, বিশ্বসমাজে বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাবে বিশ্বে ১৯৫০ সালে ৬০ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যা ছিল ২০ কোটি, ১৯৭৫ সালে ৩৫ কোটি এবং ২০০০ ৫৯ কোটি এবং ২০১০ সালে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সদস্য দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৭০ কোটিতে। ২০২৫ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হবে ১১০ কোটির ঊর্ধ্বে। বর্তমানে প্রতি মাসে ১ মিলিয়ন প্রবীণ (৬০ বছর বয়সী) মোট প্রবীণ জনসংখ্যার সাথে যোগ হচ্ছে। ২০০০ সালে ছিল বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রবীণদের হার ছিল ১০ শতাংশ, বর্তমানে এ হার প্রায় ১২.৫ শতাংশ। ২০২৫ সালে এই হার বেড়ে ১৫ শতাংশ এবং ২০৫০ সালে ২১ শতাংশে পরিণত হবে। ২০০০ সালে বিশ্বে প্রবীণদের শতকরা ৬২ ভাগের বাস ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলোয়। ২০২৫ সালে এই হার হবে শতকরা ৭১ জন আর ২০৫০ সালে বিশ্বের প্রবীণদের প্রায় ৮০ শতাংশেরই বাস হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। প্রবীণ জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলাতে জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে উদ্বেগজনক ও বিস্ফোরণোন্মুখ ইস্যু জনসংখ্যার বার্ধক্য। বর্তমানে দেশে প্রবীণের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ যা মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ। এই সংখ্যা ২০২৫ সালে বেড়ে হবে ১৭.৬২ মিলিয়ন (মোট জনসংখ্যার ১১ শতাংশ) এবং ২০৫০ সালে ৪৩.০২ মিলিয়ন, যা হবে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার হিসাবে কোন অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ থেকে ১২ ভাগ প্রবীণ হলে ঐ জনসংখ্যাকে বার্ধক্য জনসংখ্যা ধরা হয়, সে হিসাবে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যেই বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে ‘বার্ধক্য জনসংখ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। তাদের প্রয়োজন মেটানোর মতো পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক সামর্থ্য তখন গভীর সঙ্কট এবং তীব্র চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে পড়বে। দেশে শতকরা আশি ভাগ লোক গ্রামে বসবাস করে বিধায় মোট প্রবীণেরও প্রায় ৮০ শতাংশ (৯ মিলিয়ন) গ্রামে বাস করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের অধিকাংশ প্রবীণই দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করেন। গণদারিদ্র্য, ভূমিহীনতা, পারিবারিক ও সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধের পরিবর্তন, যুব শ্রেণির গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর, শিল্পায়ন ও নগরায়ন, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বস্তুতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ ইত্যাদি কারণে সমাজে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে এখন একক পরিবারে রূপ নিচ্ছে। এ পরিবর্তনের নীরব শিকার হচ্ছেন প্রবীণ জনগোষ্ঠী। দরিদ্র পরিবারভুক্ত প্রবীণেরা নিরুপায় হয়ে ভরণপোষণের তাগিদে কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এমনকি ভিক্ষাবৃত্তির মতো মানবেতর কাজেও জড়িয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় প্রবীণরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে উপেক্ষিত এবং অবহেলা, বঞ্চনা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদির শিকার হয়ে সমাজের বাড়তি বোঝা হয়ে পড়ছেন। একবিংশ শতাব্দীতে প্রবীণদের এ সকল জটিল সমস্যা মোকাবেলায় সময় এসেছে বহুমাত্রিক ও সুদূরপ্রসারী প্রস্তুতির। দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় প্রবীণদের সামাজিক নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার ১৯৯৮ সালে চালু করে বয়স্ক ভাতা। এ ছাড়াও সম্প্রতি প্রবীণবিষয়ক জাতীয় নীতিমালা এবং প্রবীণ পিতা-মাতার ভরণপোষণে সন্তানদের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণে পিতা-মাতা ভরণপোষণ আইন-২০১৩ পাস করা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মক্ষম প্রবীণদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে তাদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। সমাজে আন্তঃপ্রজন্ম যোগাযোগের চর্চা বাড়াতে হবে যাতে নবীন-প্রবীণের সেতুবন্ধন তৈরি হয়। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি ও মানবিকতাবোধে উজ্জীবিত শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে প্রবীণদের জীবনের বিভিন্ন দিক, পরিচর্যা, মর্যাদা ও পারিবারিক বন্ধন সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই দেশের এ সকল সিনিয়র সিটিজেনদেরকে তাদের যৌবনের নিরলস শ্রম আর নিষ্ঠার সম্মানজনক স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করা হবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩০

চাঁদগাজী বলেছেন:




ভালো, আমার অধিকার নিয়ে লিখেছেন; ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.