নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন বীথি

স্বপ্ন বীথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জয় বাংলাদেশেরই

২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৫

জামদানি নামক বস্ত্রটি যে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অনুসঙ্গ, এর সৃষ্টি আর বিকাশ যে এদেশেরই মাটিতে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সাথে স্থায়ীভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে বাংলাদেশের নাম। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ওয়াইপিও) নিয়ম মেনে জামদানিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন—জিআই) পণ্য হিসেবে ঘোষণার ধাপগুলো শেষে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) জামদানির জিআই স্বত্ব দেয়া হয়েছে। কোন একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এবং সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোন একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে সেই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। অর্থাৎ, সেই পণ্য শুধু ওই এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও উৎপাদন করা সম্ভব নয়। তাই সেটা ওই এলাকার জিআই পণ্য। তবে বাংলাদেশ শুধু জামদানি শাড়ির জিআই পায়নি, পেয়েছে জামদানিশিল্পের সুনির্দিষ্ট নকশা যেসব পণ্যের ওপর করা হয়, তার সব কটির স্বত্ব। যেমন জামদানির কাজ করা সালোয়ার-কামিজ, ওড়না, রুমাল, পর্দা, কুর্তা, পাগড়ি থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর সরঞ্জাম। এর মধ্যমে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক ও গৃহসামগ্রীর বিশ্ববাজারে জামদানির নকশা অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশের ঐতিহ্য প্রচার করতে পারবে। জিআই নিবন্ধন পেতে হলে ঐ পণ্য যে সংশ্লিষ্ট দেশের সীমানা বা ভূখণ্ডে উদ্ভব বা তৈরি হয়েছে, তার ঐতিহাসিক ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে হয়। জিআই নিবন্ধন দেয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ওই প্রমাণপত্রসহ একটি প্রবন্ধ তাদের নিজস্ব জার্নালে প্রকাশ করতে হয়। জার্নালে প্রকাশের দুই মাসের মাথায় অন্য কোন দেশের প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে যদি ওই তথ্যের ব্যাপারে আপত্তি তোলা না হয় বা অন্য কোন সংস্থা ওই পণ্যের নিবন্ধনের দাবি না তোলে, তাহলে যে দেশ প্রবন্ধ প্রকাশ করে জিআই নিবন্ধন চেয়েছে, সেই দেশের নামে পণ্যটি নিবন্ধিত হয়ে থাকে। তবে জামদানি যে বাংলাদেশের পণ্য, তা এর আগেও জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো থেকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের ইনট্রানজিবল বা নিজস্ব ও অবিকৃত পণ্য হিসেবে ২০১৩ সালে জামদানিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেসকো। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা ডব্লিউটিওর নিয়ম অনুযায়ী জিআই মেধাস্বত্বের আলাদা স্বীকৃতি নিতে হয়। জামদানির জিআই পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা নিবন্ধে বলা হয়েছে, খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে প্রাচীন ভারতীয় অর্থশাস্ত্রবিদ কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্র বইয়ে ঢাকাই মসলিন ও জামদানির কথা উল্লেখ করেছেন। ১৪ শতকের মুসলিম পরিব্রাজক ইবনে বতুতার লেখায়ও ঢাকার অদূরে সোনারগাঁয়ে জামদানি তৈরির কথা লিপিবদ্ধ আছে। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ, ঢাকার ধামরাই, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর এলাকায় এই বিশেষ ধরনের নকশাসমৃদ্ধ পণ্য ও পোশাকের জন্ম হয়। ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর তীরের কার্পাস তুলা থেকে তৈরি সূক্ষ্ম সুতা এবং এর দুই নদীতীরের মানুষের সূক্ষ্ম শিল্পবোধের মিশ্রণ জামদানি সৃষ্টির বিশেষ উপাদান ভূমিকা রেখেছে। এই এলাকার মাটি, পানি ও মানুষের সৃজনশীল উদ্যোগের যোগফল হিসেবে সৃষ্ট এই পণ্য একসময় ইউরোপ, ইরান, আর্মেনিয়া, মোগল ও পাঠান ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যেতেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.