নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন বীথি

স্বপ্ন বীথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

খাঁচার মাঝেই সমৃদ্ধ আগামী

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৯



সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দাতিনাখালীতে গ্রামীণ রাস্তার দু’পাশেই বেশ কয়েকটি বিশালাকৃতির পুকুর আছে, সেগুলোতে এখন ভাসছে প্লাস্টিকের ছোট ছোট অসংখ্য খাঁচা (বক্স)। পুকুরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত আছে বাঁশ আর কাঠ দিয়ে বানানো টিনের ছাউনি দেয়া টংঘর। কাঠের পাটাতনের উপর বসেই শ্রমিকেরা প্লাস্টিকের খাঁচাগুলোর দেখ-ভাল করে - প্রতিটি খাঁচাতেই আছে বড় বড় সাইজের কাঁকড়া। মাত্র একটি পুকুরেই আছে প্রায়ে এক লাখ ৩০ হাজার খাঁচাবন্দি কাঁকড়া। এই চিত্র 'ফরিদ নাইন স্টারস অ্যাগ্রো বিডি লিমিটেড' নামের একটি কাঁকড়ার খামারের। এই প্রকল্পে ৭৫ বিঘা জমির ৯টি পুকুরে প্লাস্টিকের খাঁচায় চাষ হয় ছয় লাখ কাঁকড়া। বছরে উৎপাদন প্রায় দেড়শ' টন, যার সবই রফতানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আসছে বৈদেশিক মুদ্রা, কর্মসংস্থান হয়েছে ৩০০ নারী-পুরুষের। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অপার সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে এই পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ। ফরিদ নাইন স্টারস প্রকল্পের মালিক মো. বেলাল হোসেন একবার থাইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে এই পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষের খামার দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে ২০১৪ সালে ৯ বিঘা জমিতে একটি পুকুর কেটে সেখানে প্লাস্টিকের বক্সে মাত্র ১০ হাজার কাঁকড়া দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে খামার শুরু করেন। সাফল্য পাওয়ায় পরবর্তীতে তিনি বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনে নামেন। এই পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষের জন্য পুকুর বা ঘের প্রায় ৭-৮ ফুট গভীর করে খনন করা হয়, পানি থাকে ৫-৬ ফুট। পানি বের করে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ঘের শুকানো হয়। পরে পুকুরের আয়তন অনুযায়ী চুন, খৈল, ইউরিয়া ও টিএসপি সার দিয়ে পুকুর বা ঘেরে লবণ পানি ঢোকানো হয়। এরপর প্লাস্টিকের প্রতিটি খাঁচায় বাজার থেকে কিনে আনা ছোট সাইজের একটি করে কাঁকড়া দেয়া হয়। কাঁকড়াদের খাবার হিসেবে প্রতি তিন দিন পরপর প্রতিটি বক্সে ৭-৮ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া মাছ দেয়া হয়। দড়ির সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে বাঁধা খাঁচাগুলো পানির উপর ভেসে থাকে। পুকুরের একটি অংশ খালি রাখা হয় যাতে পরীক্ষার সময় দড়ি টেনে খাঁচাগুলো পুকুরের একপাশ থেকে অন্য পাশে নেয়া যায়। খাঁচাগুলো প্রতিদিন সকাল ৭টা, বেলা ১১টা ও বিকেল ৩টায় তিনবার পরীক্ষা করা হয়। কোন বক্স বা খাঁচায় মৃত কাঁকড়া পেলে সেটি উঠিয়ে মাটির নিচে পুঁতে ফেলা হয়। পুকুরের খাঁচায় কাঁকড়া দেয়া হয় ১০০ গ্রাম ওজনের। এক থেকে দুই মাস পর কাঁকড়াগুলো বড় হলে কিংবা খোলস ছাড়লে উঠিয়ে নিয়ে পরিষ্কার পানিতে ধোয়া হয়। এরপর প্রক্রিয়াকরণ কক্ষে নিয়ে হিমায়িত করে প্যাকিং করার পরে কনটেইনার ভর্তি করে জাহাজে মংলা বন্দরের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। প্রতি টন কাঁকড়া বিদেশে ৭ হাজার ডলারে বিক্রি করা হয়। দেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় মোট ২৬ হাজার ৮১৩ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ করা হয়। বছরে উৎপাদন হয় ১০ হাজার ১৯৪ টন কাঁকড়া। তবে বেশিরভাগই সাধারণ ঘেরে চিংড়ি চাষের মতো পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। এভাবে উৎপাদিত কাঁকড়ার ৭০ ভাগ পায়ে দড়ি বেঁধে জীবন্ত অবস্থায় ঢাকা থেকে কার্গো বিমানে বিদেশে রফতানি করা হয়, ৩০ ভাগ বিক্রি করা হয় স্থানীয় বাজারে। তবে খাঁচায় চাষ করা কাঁকড়া হিমায়িত করে বিদেশে রফতানি হয় বলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা এবং বাগেরহাটের মংলা ও খুলনার দাকোপে গড়ে উঠা খাঁচা খামারীদের সমৃদ্ধ আগামী এখন পুকুরের বুকে ভেসে থাকে খাঁচার মাঝেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:


বিশাল দরকারী পদক্ষেপ

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৫৩

ইয়াসিরআরাফাত বলেছেন: কাকড়া চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.