নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন বীথি

স্বপ্ন বীথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘২৫ বছর পর’ লেখাটি পড়ে ভাল লাগলো

২১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:১৪


দীর্ঘ ২৫ বছরের বেশী সময় পরে গত সপ্তাহে ঝড়-জল পেরিয়ে গিয়েছলাম নিঝুম দ্বীপে। চাকরিসূত্রে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে যোগদান করেছিলাম ১৯৮৮ সালে। ছিলাম প্রায় ৫ বছর। নানা কাজের পাশাপাশি নিঝুম দ্বীপের খাস জমি বিতরণ করা ছিল অন্যতম কতর্ব্য। হাতিয়ার অধিকাংশ জমিই ছিল জোতদারদের দখলে। অনেক সংগ্রাম আর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ভূমিহীনদের মাঝে জমি বিতরণ সম্ভব হয়েছিলা সে আরেক ইতিহাস। নিঝুম দ্বীপে জমি বিতরণের কাজে অসংখ্যবার গিয়েছি, থেকেছি দিনের পর দিন। সে সময় নদীভাঙ্গা অসহায় মানুষগুলোকে সত্যিই নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করতে হতো। জমি চাষ করে ফসল দিতে হতো জোতদারদের। দীর্ঘদিনের অবস্থানের কারণে স্থানীয় লোকজনের সাথে গড়ে উঠেছিল হৃদয়ের বন্ধন। যা এখনও রয়েছে অটুট। ভূমিহীন বাছাই কাজে সরকারি কর্মীদের পাশাপাশি এনজিওদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। বিশেষ করে দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার রফিক ভাই এর অশেষ অবদান ছিল। ৬২৩টি ভূমিহীন পরিবারকে ১.৯৮ একর করে কৃষি জমি ও থাকার জন্য ৮ শতাংশের মধ্যে ঘর তৈরী করে দেয়া হয়েছিল। প্রথম দুটি গুচ্ছগ্রাম ছায়াবীথি ও ধানসিড়ি সুইস রেডক্রস এর সহায়তায় তৈরী করা হয়। সুইস রেড ক্রসের কর্মকর্তা মার্টিন হোডেল এ কাজে অগ্রণী পালন করেছে। অবশিষ্ট ৭টি গুচ্ছগ্রাম আনন্দ, বাতায়ন, সূর্যোদয়, যুগান্তর, বসুন্ধরা, পূর্বাচল, আগমনী সরকারি সহায়তায় নির্মিত হয়। এসকল গুচ্ছগ্রামের টিন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় গুদাম থেকে আমি ও সর্বক্ষণের সাথী রেড ক্রিসেনটের এর কর্মকর্তা ফরিদ ১২টি ট্রাকে করে সারারাত জেগে নোয়াখালী নিয়ে আসি। গুচ্ছগ্রাম বাস্তবায়নে তৎকালীন ইউএনও জনাব বকশী জাহাজমারা ইউনিয়নের কালাম চেয়ারম্যান দারুণ ভূমিকা পালন করেন। নিঝুম দ্বীপের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠা করা হয় "নিঝুম দ্বীপ ফাউন্ডেশন" ও "শতফুল প্রাথমিক বিদ্যালয়"। নোয়াখালীর অতিঃ জেলা প্রশাসক জনাব আনিস উদ্দীন মিয়া বিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন। ফাউন্ডেশনের সাথে আরো যারা জড়িত ছিলেন তারা হলেন তৎকালীন এম পি জনাব ওয়ালী উল্লাহ, মাসাকি ওহাশি, শামছুত তিব্রিজ, কামরুল লায়লা, নবির হোসেন সাফদার, মোয়াজেজম হোসেন ভূঁঞা, আলতাফ হোসেন মোল্লা, প্রশান্ত বড়ুয়া, লায়লা নুর, Prince কামাল প্রমুখ। '৯১ সালেই অনেক তথ্যসম্বলিত "প্রেক্ষাপটঃ নিঝুম দ্বীপ" নামে একটি সংকলন বের করা হয়েছিল। কোন এক সময়ে তা সবার সাথে শেয়ার করার ইচ্ছে রইল। বিদ্যালয়ের অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন কালাম (প্র. শি.), নব দম্পতি জান্নাত ও মোতাহার এবং রতন। ফাউন্ডেশন থেকে তাদেরকে সামান্য সম্নানী ভাতা দেয়া হতো। তাদের আত্মত্যাগেই প্রতিষ্ঠানটি আজ সরকারি হয়েছে। শত শত ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করছে। হাতিয়া থেকে বদলী হয়ে আসার পর আর যাওয়া হয়নি নিঝুম দ্বীপে। দীর্ঘ ২৫ বছর পরে আবার গিয়েছিলাম গত৬ মার্চ তারিখে। যাতায়াত ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হলেও ওছখালী থেকে মোক্তারিয়া ঘাট পর্যন্ত সাংঘাতিক রকমের বেহাল অবস্থা। ব্যয়ও সাধারণ মানুষের জন্য খুব বেশী। তবে নিঝুম দ্বীপের ভেতরে চমৎকার পাকা রাস্তা। বহুতল ভবন আছে বেশ কিছু। পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থার উন্নতি ঘটছে। আগের তুলনায় পরিবর্তন অভাবনীয়। মানুষের আয় বেড়েছে, অনেক পরিবারেরই কেউ না কেউ বিদেশে। বিশেষ করে ওমান, বাহরাইন। মোটর সাইকেল প্রায় সবার বাহন। ইজি বাইক, ট্রাক্টরও দেখলাম। অথচ '৯১ সালে প্রথম মোটর সাইকেল এনেছিলাম এখানে। আগে পাকা ভবন বলতে জেলা পরিষদের একমাত্র ডাক বাংলো ছিল। সেখানে আরো একটি সুপরিসর সরকারি বাংলো উঠেছে যা অবকাশ পর্যটন সংস্থা লিজ নিয়ে পরিচালনা করছে। অবকাশের কোরেশী ও রফিক ভাইয়ের এবারের আতিথেয়তা ভুলবার নয়। এত বছর পরে গিয়েও দেখলাম পুরনোরা একটুও ভুলেনি আমাকে। নতুন প্রজন্ম নামে চিনে। যেখানেই গিয়েছি- সবাই এসে জড়িয়ে ধরেছে যেন পরমাত্মীয়। গভীর রাত পর্যন্ত তাদের সাথে আলাপ। ২ টাকার ২ একর জমি ও বাড়ি, মুক্তিযাদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত জায়গায় জমি বন্দোবস্ত, ইত্যাদি কত না কথা। আরো ছিল বর্তমান সময়ের বঞ্চনা, আশা-নিরাশার কথা। রফিক ভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যা নিকেতনের ভবন আগেই পাকা হয়েছে, এবার শতফুল ভবন হবে সাড়ে তিন তলা- হাতিয়ার সর্বোচচ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। পুরোদমে নির্মাণ কাজ চলছে। সেকি সমারহ। পুরনো সেইটিনের ঘরেই আমরা হলাম সংবর্ধিত। কোন সুদূর থেকে সাগরের আনা ফুল আর মালা (একই মালা নামাচ্ছি আবার আরেকজন সেটাই পরাচ্ছে), কী সহজ সরল অভিব্যক্তি। ছোটমণিদের সেকি উৎসাহ। কেউ গান, কেউ কবিতা, সৈকতের আবার ইংরেজি ছড়া। কত দ্রুত সব শেষ হচ্ছে। আমি ও আমার সাথী যতন সাহা, ফারুক সোহেল, আহসান ভাবছিলাম সময় কেন আরো দীর্ঘ হচ্ছে না কেন? স্কুলের গুণগত শিক্ষা নিয়ে কথা হলো। ভবনের কাজ শেষ হলে সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে অনলাইন শিক্ষা চালুর ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা সেটাই ভাবা দরকার এখন থেকেই। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ "মার্টিন সফিক বৃত্তি কর্মসূচী" চালু করেছে। সেখানে দুই লক্ষ টাকার এফডিআর করা হয়েছে। দশ লক্ষ টাকার তহবিল করে তার মুনাফা দিয়ে গরীব ও মেধাবীদের সহায়তা করা হবে। স্কুল থেকে বদলে যাওয়া পাকা পথ ধরে জান্নাত-মোজাহারের বাড়িতে দুপুরের খাবার। কী সুন্দর বাড়ি। সামনে পেছনে পুকুর। শান্ত স্নিগ্ধ, পাখির কুজন। বিকেলে গুচ্ছগ্রামে গেলাম দেখা কতজনের সাথে। পুরনো দোচালার বদলে সুপরিসরটিনের বাড়ি, উঠেন ভর্তি গাছ, সুমিষ্ট ডাবের জলে আপ্যায়ন। বন বিভাগের নৌকায় গেলাম সর্বদক্ষিণের খালি মাঠের কোণে হরিণ দেখতে। সত্যিই আমরা ভাগ্যবান। দূরে কেওড়া বনে চরে বেড়াচেছ একদল হরিণ। মাথা উঁচু করে বারে বারে আমাদের দেখছে। এগিয়ে যেতেই ওরা মিলিয়ে গেলো বনের ভেতরে। ফেরার পথে আবার এক জোড়া নামার খালের ধারে। নামার বাজার ছাড়াও গড়ে উঠেছে অনেক ছোট বাজার। সন্ধ্যায় সেগুলো গমগম করছিল। জীবন ধারনের সব উপকরণ বিদ্যমান। পরিবর্তন চতুর্দিকে পরিবর্তন। জমির মালিকানা অতীতের সেই অসহায় নদী ভাঙ্গা জীর্ণ শীর্ণ মানুষগুলোকে বদলে দিয়েছে। এটাই কী ক্ষমতায়ন? রাতের বেলাটা আরো সুন্দর। জোছনা রাতে হাটলাম সৈকতে, তেমন লম্বা নয়। ৪/৫ কিমি হতে পারে। অনেকে মোটর সাইকেলে ঘুরে। পরদিন ভোরে কিছুতেই মন চাইছিল না ফিরে যেতে। সহকর্মীদের তাগিদে বের হতেই হলো। যাবার পথে মুক্তিযাদ্ধা বোখারি পথ আটকিয়ে তার ৭ বিঘার বিশাল বাড়িতে নাস্তার পরিবেশনা। নলচিরা থেকে সি ট্রাকে নদী পার হওয়ার তাগিদে বের হতেই হলো। পার হচ্ছিলাম মোক্তারিয়া নদী। নৌকার ইিঞ্জন এর আওয়াজে ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ এর ছলাৎ ছলাৎ শব্দের সুখের পরশ কিছুতেই অনুভব করতে পারছিলাম না। তবে আমার মনে 'ফিরিয়া ফল কি' এ তত্বের উদয় হয়নি। কারণ আমাকে তো ফিরতেই হবে। আবার আসবো তবে ২৫ বছর পরে নয়। ২৫ মাসও নয়। বার বার আসবো। আরো ভাল কিছু করবো বলে। আবার আসবো আমার চেয়েও কিছু ভাল মানুষ নিয়ে।নিঝুম দ্বীপ চিরজীবি হও!!!সুখে শান্তিতে থাকো দ্বীপবাসী !!!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:০৬

ফারিয়া আলম বলেছেন: ভালো লাগলো পড়ে।

২| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:২৭

নাহিদ হাকিম বলেছেন: নিজের এলাকার সাবলীল বর্ণনা , সুন্দর প্রশংসা মন ছুঁয়ে গেলো। ধন্যবাদ প্রিয়...

৩| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৪৩

উত্তরের উপাখ্যান বলেছেন: ভালো লাগলো অনেক। এরকম লেখা বেশি বেশি চাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.