নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা . . .

পলক শাহরিয়ার

Life is too short to be wasted in finding Answers. Enjoy the Questions!

পলক শাহরিয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ফুটবলবেলা

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬


১. নস্টালজিক বিশ্বকাপ

১৯৮৬ সাল। ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে। ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা ফাইনালে। ক্লাসের বন্ধুদের কাছে ম্যারাডোনার জাদুকরী পায়ের গল্প(এবং হাত!) শুনতে শুনতে কান নষ্ট হবার যোগাড়। আমাদের বাসায় তখনও টিভি আসেনি। তবু যেভাবেই হোক, যত রাতই হোক, খেলাটা দেখতেই হবে। বড় ভাইয়া পাশের বাসায় বন্ধুর বাড়ি চলে যেত গুরুত্বপূর্ণ খেলা থাকলেই। তার কাছে আবদার জানিয়ে রাখলাম। ভাইয়ার হাত ধরে মাঝরাতে গেলাম খেলা দেখতে। ফাইনাল ম্যাচ। সম্ভবত সেটিই আমার টিভিতে প্রথম খেলা দেখার অভিজ্ঞতা। ঘরভর্তি দর্শক। তুমুল উত্তেজনা। অনেক ছোট ছিলাম। ৬/৭ বছর হবে। এখনও মনে আছে ধারাভাষ্যকারের উত্তেজক গলায় বারবার শোনা যাচ্ছিল রুগেরি,বুরুচাগা,রুমেনিগে,ম্যারাডোনা এইসব নাম। ফুটবল আর বিশ্বকাপের ক্রেজ ভালমত বুঝলাম '৯০ তে এসে। ততদিনে ঘরে ঘরে টিভিও চলে এসেছে। ক্যামেরুনের রজার মিলা,আর্জেন্টিনার গোলকিপার গয়কোচিয়া ব্রাজিল,ম্যারাডোনার ভিউকার্ড আর তাদের ছবি আর লেখা নিয়ে পত্রপত্রিকায় বাজার সয়লাব। বিশেষ করে ম্যারাডোনার 'ওরা আমাকে এত মারে কেন?' লেখা ভিউকার্ড টা বোধহয় বাংলাদেশের সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিউকার্ড ছিল। পরে বিটিভিতে ৮২ বা ৮৬ র ব্রাজিলের খেলা দেখে তাদের খেলার প্রেমে পড়লাম। মনে আছে কোন এক পত্রিকায় এক সাংবাদিক লিখেছিলেন ব্রাজিলের সেই 'জোগো বনিতো' বা সুন্দর ফুটবল নিয়ে -"জ্যামিতির মত বিচরণ, ফুলের মত পাস,নাচের মত ড্রিবল,কবিতার মত সমাপ্তি"। এখনকার ফুটবল খেলা অনেক কৌশলের, গতিময়তায় আর যান্ত্রিকতায় ভরা। সেই ফুটবলের ঝলক উত্তরাধিকার সূত্রে এখনও অবশ্য ব্রাজিল টীমে মাঝে মধ্যে দেখা যায়।
এই ফুটবল প্রেমিক ছেলের জন্য আমার বাবা একবার একটা ৩ নম্বরী ফুটবল কিনে আনলেন। একটু বেশি পাম্প দিলেই এটা ডিমের মত হয়ে যেত। সমবয়সীরা ততদিনে যেখানে ৪ নম্বর ফুটবল দিয়ে খেলছে তখন একসাইজ ছোট ডিম্ব-ফুটবল লইয়া আমি কি করিব সেই চিন্তায় অস্থির। ওটা দিয়েই ফুটবলের নতুন অধ্যায় শুরু করলাম। দিনে খেলতাম আর রাতে স্বপ্ন দেখতাম। বিশ্বকাপে সাব্বির,কায়সার হামিদ,আসলামদের সাথে নিয়ে পেলে ম্যারাডোনার মত ৪/৫ জনকে কাটিয়ে গোল দিয়ে দিচ্ছি। স্টেডিয়াম ভর্তি লাল সবুজের পতাকা!

২. দাগ থেকেই দারুণ কিছু

আমার ফুটবলের পায়ে খড়ি হয়েছিল গ্রামের আট-দশটা শিশুর মত। শহরে থাকলেও খেলাটার সাথে প্রথম পরিচয় গ্রামেই। গ্রামের দুরন্ত শিশু-কিশোরদের কাদা মা্খানো গোলাকার বস্তু নিয়ে ছোটাছুটি দেখে ভীষণ ইচ্ছে করত সেইটায় একটু পা লাগাতে । এতে লাথি না মারতে পারলে জীবনটাই বৃথা! তীব্র উত্তেজনা আর আনন্দের কাছে হার মেনেছিল শহুরে পোশাকে দাড়িয়ে থাকা ইতস্ততঃ শৈশব। খেলবা?-অচেনা এক কিশোরের শরীরে কাদা মাখানোর সেই ডাক ছিল আসলে জীবন রাঙানোর ডাক। সত্যিই! দাগ থেকে দারুন কিছুই হয়।

৩. আট ইঞ্চি শীল্ড

রুয়েটের বিশাল মাঠটা ফুটবলের দখলেই থাকত বিশ্বকাপ এর সময়। মাঝে মাঝে এ পাড়া বনাম ও পাড়ার মধ্যে খেলা চলত। খেলার পূর্বশর্ত ছিল কমপক্ষে একটা ৬/৮ ইঞ্চির শীল্ড। খেলার আগে কত ইঞ্চি বা কয়টা শীলের (তখন শাপলার ছাপ বসানো কালো 'শীল্ড'-কে আমরা ছোটরা শীল বলতাম) খেলা হবে বা খেলায় ফাউল থাকবে কিনা ইত্যাদি বিষয় ঠিক করে রাখা হতো, যেন পরে ঝামেলা না হয়। একেকটা ম্যাচের জন্য চাঁদা তুলে কেনা হতো সেই শীল্ড। কোন টীম আমাদের মত গরীব হলে শীল্ডের দাম ভাগাভাগি করে নেয়া হত। হলুদ , আকাশী জার্সি এখনকার মত এত সহজলভ্য ছিলনা। এমনকি সেগুলো কেনার সামর্থও আমাদের ছিল না। তখন বাড়ি বাড়ি লেইস ফিতাওয়ালা আসত। একবার এক এরকম ফেরিওয়ালার কাছ থেকে কয়েক গজ হলুদ ফিতা কিনলাম। আমাদের জার্সি নাইতো কি হয়েছে? গায়ে হলুদ জার্সির বদলে মাথায় হলুদ ব্যান্ড । আমার অভিনব এই আইডিয়াতে সঙ্গিরা চমৎকৃত হয়ে গেল। পরে একজন বুদ্ধি দিল, খেলার সময় পায়ের দিকে বেশি চোখ থাকে সবার। তাই এই ফিতা হাফপ্যান্টের নীচে হাটুর কাছে বাঁধাই যুক্তিযুক্ত হবে। দলের সেরা গোল দাতার জন্য থাকত পিতলের/তামার মেডেল। সারা শরীর কাদায়-ধুলোয় ডুবিয়ে কখনও সেই শীল হাতে আবার কখনও শুন্যহাতে বিফল মনোরথে বাড়ি ফিরতাম। শীলগুলো হারিয়ে গেছে। দু'একটা মেডেল এখনও আছে। কখনো কখনো মনে হয় এই শীল বা মেডেলই আমার বিশ্বকাপ। আর এ অর্জন ম্যারাডোনা,রোমারিও বা লোথার ম্যাথিয়াসের হাতের সেই ফিফা বিশ্বকাপের চেয়ে কোন অংশেই কি কম!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:০১

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আমার ফুটবল ও আর্জেন্টিনার সাথে প্রেম শুরু '৯০ সালে। তখন থেকেই পত্রিকায় খেলোয়াড়দের রঙীন ছবি সংগ্রহ করতাম। দুঙ্গা, ক্যারেকা, ম্যারাডোনা, ক্যানেজিয়া সবার নাম মুখে মুখে ছিল।
স্কুলে থাকাকালীন আমরাও শীল্ড(১৫ ইঞ্চি/ ৭ ইঞ্চি) আর 'ছোট কাঁচের ভেতরে ছোট কাপ' দিয়ে পাড়ায় পাড়ায় খেলতাম। পরবর্তীতে অবশ্য ক্রিকেট ক্রেজ চলে আসাতে ফুটবল উন্মাদনা কমতে থাকে...

১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৩৯

পলক শাহরিয়ার বলেছেন: আমাদের জেনারেশনের অনেকেরই ফুটবল প্রেম শুরু '৯০ সালে। বাহ! সেই সময়ের মফস্বল বা গ্রামের বাচ্চাদের এরকম অসাধারন ফুটবল স্মৃতি আছে মনের মণিকোঠায়।
ছোট কাঁচের কাপগুলো দিয়ে অবশ্য খেলিনি আমরা। দাম বোধহয় একটু বেশিই ছিল।
হ্যাঁ, পরবর্তীতে ক্রিকেট ক্রেজ চলে আসাতে ফুটবল উন্মাদনা কমতে থাকে-এটা ঠিক বলেছেন।

২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ ভোর ৫:২৪

জগতারন বলেছেন:
আমার ফুটবল বেলা ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ বাংলাদেশে থাকতে।
ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আগ পরযন্ত।
তার পর ১৯৮২ তে বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা , একই বিশ্ববিদ্যালয় আমরা ৩৪ জন ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশের টিম বানায়ে নাজেরি, কলম্বিয়া, ম্যাক্সিকো, ভিয়েতনাম ইত্যাতি দেশের সাথে প্রীতি ম্যাচ খেলেছি ১৯৮৫ সাল পরযন্ত।
তার পর ফুটবল প্রাইয় ভুলেই গিয়েছি বিদেশে কঠিন সংগ্রামি জীবনের কাছে।
তবে অ্যামেরিকান ফুটবল খেলা দেখি প্রতি বছরই
বিশ্বকাপ ফুটবলকে চিনা আরম্ভ ১৯৯৪ সাল থেকে।
সে বছরই মাদকতা ব্যাবহার অভিযোগে ম্যারাডনা বহিস্কৃত খেলার মাঠ থেকে। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তখন।
তার পর থেকে সকল প্রতিটি বিশ্বকাপ খেলাই দেখেছি। তবে এ বছর ৩২ দেশের প্রায় সকল খেলাই দেখেছি।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে ফ্রান্সের খেলা দেখে কিন্তু সাপোর্ট ক্রেছলাম ক্রোয়েশিয়া দলকে কেনে জানি না, মনে হয় তারা নবাগত এ-ই মনে করে।

১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৫১

পলক শাহরিয়ার বলেছেন: ধন্যবাদ। আমিও ক্রোয়েশিয়া সাপোর্ট করেছিলাম। হেরে গেল তারা।
আমেরিকায় থাকার কারনেই বোধ হয় দেরিতে ফুটবল চিনেছেন। দেশে থাকলে এমনটা হতো না। '৯৪ এর বিশ্বকাপ কি মাঠে গিয়ে দেখেছেন দু'একটা ম্যাচ।


এরকম প্রীতি ম্যাচ নিয়ে আমারও অভিজ্ঞতা আছে। নীচের লিংকটা দেখতে পারেন।
বিশ্বকাপ রম্যকাহিনিঃ আমাদের বিশ্বকাপ

৩| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৬

সানজিদা দিয়া বলেছেন: নোটিস করবার মতন আমার মেয়েবেলার তেমন কোন ফুটবল স্মৃতি নেই। তবে স্কুলের বড় ভাইয়াদের খেলা দেখা বাধ্যতামূলক ছিলো। সেই থেকে খেলার কিছুটা কলকব্জা চিনতে শেখা। খুব ভালো বুঝতাম না বলে যে দলই গোল দিত ,আমি আনন্দে দাড়িয়ে যেতাম।পড়ে আমার অবস্থা যা হতো, বাকিটা ইতিহাস। যাই হোক দুই দলের সাপোর্টার হয়ে আমি বেশ ফর্মে থাকতাম। তবে কোন ম্যাচে যখন আমার বিশেষ কেউ খেলতো, তখন খুব সতর্ক থাকতাম লাফালাফি নিয়ে। পরে এমন হতো যে ,ভুল হবে ভেবে আমার মহা নায়ক গোল দিলেও আমি নিরবতা অবলম্বন করতাম। সেটা নিয়েও বিড়ম্বনা কম পোহাতে নয়নি ।

তারপর,,২০১০ সাল,গ্রামে আমরা রাত নয়টার সময় ঘুমিয়ে পড়তাম। আব্বা আরো একটু আগে। ঘুম পাগল আমার সেই বাবা দেখি প্রায়ই মধ্য রাতে টিভি দেখে। কিউরিসিটি থেকে একদিন আমিও উঠলাম।বাবা ব্রাজিলের খেলা দেখছে । বিরতির পুরো সময়টা বাবা আমায় ফুটবল পড়ালেন। বুঝলাম তিনি ব্রাজিল প্রেমীক। কিছু ভালো খেলোয়ারের নাম মুখস্ত করলাম। মনের মধ্যে ব্রাজিল দলটাকে ধারন করতে লাগলাম। এভাবেই আমি ও বাবার চোখ দিয়ে ফুটবল খেলা দেখা শুরু করলাম। ২০১৪ সালে ও ভালো দলের ম্যাচ গুলোতে বাবা বাড়িতে ডাকতেন। ভালো দল গুলো এবার ছিলো, খেলার প্রতি আমার আগ্রহও ছিলো,,,,শুধু আমায় বাড়িতে ডাকার বাবা নামক জান্নাত টাই ছিলোনা!!!!!!! মিস ইউ বাবা

১৮ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫

পলক শাহরিয়ার বলেছেন: বেশ মজার ব্যাপার। গোল দেয়ার পর আনন্দে দাড়িয়ে যেতেন। ছেলেমেয়েরা নিশ্চয়ই আপনার দিকে অদ্ভূত দৃষ্টি নিয়ে তাকাতো। আপনার মহানায়ক নিশ্চয়ই ভাল খেলতেন।
বাবা-মেয়ের বিশ্বকাপ স্মৃতি ভাল লাগল। একটা বিশ্বকাপ স্মৃতি মানুষের মাঝে চার বছর পর পর আসে। আর হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের স্মৃতি ফিরে আসে বারে বারে...মুহুর্তে মুহুর্তে...সুখে বা দুঃখে।
আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন।

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:১৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: স্টালজিক ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে খুব সুন্দর লিখেছেন। পড়তে পড়তে আমারও অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেলো। আমাদের সময়ও জার্মানীর বেকেন বাউয়ার আমাদের অনেক্র আইডল হয়ে উঠেছিলেন।
আপনার এ পোস্টটা পড়ে যেমন ভাল লাগলো, সানজিদা দিয়া এর মন্তব্যটি পড়েও তেমনি। একেবারে মুগ্ধ ও অভিভুত হয়ে গেলাম। আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন ওনার মরহুম বাবাকে জান্নাত নসীব করুন!

৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৪৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: নৌভ্রমণ নিয়ে আপনার একটা দুর্দান্ত লেখা ছিল। কোথায় সেটা?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.