নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন হলো এক কাপ গরম চা আর একটি জ্বলন্ত সিগারেটের মতো। গরম চা এক সময় জুড়িয়ে যাবে, সিগারেটের তামাকও পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।

পয়গম্বর

The woods are lovely, dark and deep, But I have promises to keep, And miles to go before I sleep, And miles to go before I sleep.---Robert Frost

পয়গম্বর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: ভূতুম

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:২১

এক.

সকাল ১০ টা।

বাসার সামনের ব্যাস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমি। মাথার উপরে কড়া সূর্যের উত্তাপ। দাঁড়িয়ে আছি একটা রিক্সার আশায়। গন্তব্য টি.এস.সি। কোন রিক্সাই যেতে রাজী নয়। একজন যাও বা রাজী হলো, কিন্তু যা ভাড়া হাঁকলো, তাতে মনে হলো কষে একটা চড় লাগিয়ে দেই ব্যাটার গালে।



দেরী হয়ে যাচ্ছে। রোদেলা দাঁড়িয়ে আছে সকাল ৯ টা থেকে। আজ ওর জন্মদিন। সকাল থেকে এ পর্যন্ত শ'খানেক বার ফোন করছে এবং এখনও করেই যাচ্ছে। আজকে নাকি ওর সাথে সারাদিন থাকতে হবে। আমারতো খেয়ে দেয়ে আর কাজ নাই। পেইন। গার্লফ্রেণ্ড মানেই পেইন। মনে মনে চিন্তা করছি দেখা করে কোন একটা ছুতা বার করে কেটে পড়বো। বার বার ফোন করছে মোবাইলে। কতবার আর মিথ্যা বলবো যে আমি জ্যাম-এ আছি! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিক্সাওয়ালাদের গুষ্টি উদ্ধার করছি। ঠিক এমন সময় একটা অবাক করা ঘটনা ঘটলো।



ঘটনাটা আসলেই অপ্রত্যাশিত আমার কাছে। পায়ের কাছে নরম কিছু একটা অনুভব করলাম। বিরক্তিভরে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি তুলতুলে নরম ছোট্ট একটা বিড়ালের বাচ্চা। আমার প্যান্টের নিচের অংশে মাথা ঘষছে। আমার দৃষ্টি ওর দিকে যেতেই তার মায়াভরা চোখদুটি যেন আমার কাছে আকুল নিবেদন করলো তাকে কোলে তুলে নেবার জন্যে।





এমনিতেই মেজাজ খারাপ। তাই এইটাকে খুব একটা পাত্তা দিলামনা। কুকুর বিড়াল এ জাতীয় প্রাণিগুলো আমার কাছে খুবই বিরক্তিকর মনে হয়। যেখানে সেখানে টয়লেট করবে। কোন কারণ ছাড়াই চিৎকার চেঁচামেচি করে ডাকবে। যতসব যন্ত্রণা। এসব কার ভালো লাগে? কাজেই পা টা আস্তে করে সরিয়ে নিলাম। যা বাবা, তুই নিজের মতো থাক, নিজের মতো চল। এমনিতেই ঝামেলাতে আছি। আমাকে ডিস্টার্ব দিসনা প্লিজ। আকাশের দিকে তাকিয়ে বেনসনের ধোঁয়াটা আরাম করে ছাড়তে যাচ্ছি এমন সময় দেখি সেই উৎপাতটা আবার পায়ের কাছে ঘষাঘষি করছে। এইবার কিন্তু দিলাম একটা লাথি!



সত্যি সত্যি লাথি দিতে যাবো, এমন সময় বিড়ালের বাচ্চাটার দিকে ভালো করে একটু তাকালাম। ওমা! এইটাতো একেবারেই ছোট একটা বাচ্চা! বেশ খানিকটা অবাক-ই হলাম। এ্যাত ছোট একটা বাচ্চা এইখানে কিভাবে?! আশেপাশে তাকালাম। নাহ্! এর মা-বাবা জাতীয় কোন প্রজাতিতো চোখে পড়ছেনা। এইটা আসলো কই থেকে? - এ জাতীয় প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে ঘুরতেই বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলাম। বাচ্চাটা অবশ্য আমার কোলে উঠেই ভদ্র সন্তানের মতো আরাম করে ঘুমিয়ে পড়লো।



এতো মহা সমস্যা! একদিকে রোদেলার ফোন বেজে চলেছে, আরেকদিকে বিড়ালের বাচ্চাটা কোলের মধ্যে। কি করি এই নিয়ে চিন্তা করতে করতেই আবার বাসায় ঢুকলাম। উদ্দেশ্য বিড়ালটাকে আপাতত কোথাও একটা রেখে বেরিয়ে যাবো।



আমার নোংরা ব্যাচেলর ঘরের একটা কোণায় ন্যাকরা কিছু কাপড় বিছিয়ে ঘুমন্ত বিড়ালের বাচ্চাটাকে রাখলাম। তারপর ফ্রিজ থেকে অল্প একটু দুধ বের করে একটা বাটিতে ওর সামনে রাখলাম। তারপর খুব আস্তে আস্তে বললাম, "ঘুম থেকে জেগে উঠে খিদা লাগলে নিজ দায়িত্বে দুধ খাবি। বুঝলি? আমি গেলাম...।"





রোদেলাকে বিড়ালটার কথা বলাতেই সে লাফালাফি শুরু করলো। এখুনি বিড়ালের বাচ্চাটা নাকি তার চাই। কেন আমি ওটা আনলামনা, এটা অন্তত: শ'দুয়েকবার শুনতে হলো। পেইন। গার্লফ্রেণ্ড মানেই পেইন।

যাইহোক, কোনমতে ওকে এদিক-ওদিক বুঝিয়ে, ভেরি ভেরি টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি ইম্পর্টেন্ট কাজের অজুহাত দিয়ে কোনমতে ওর হাত থেকে রক্ষা পেলাম। মাসের শেষ এখন। এমনিতেই পকেট ফাঁকা। রোদেলা বেগম সাথে থাকলে বিপদ।



রাহাতদের বাসায় সন্ধ্যার আড্ডাটা শেষ করে বাসায় ফিরে দেখি লোড শেডিং। কারেন্টের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে ঘরে ঢুকলাম। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে হঠাৎ চমকে উঠলাম পায়ের কাছে নরম কিছু একটার স্পর্শ পেয়ে। মোমের টিমটিমে আলোয় তাকিয়ে দেখি সেই পিচ্চি বিড়ালের বাচ্চাটা। আহা! এইটার কথাতো ভুলেই গিয়েছিলাম। বাটির দিকে তাকিয়ে দেখি সুন্দর দুধগুলো চেটেপুটে খেয়ে শেষ।



এইটাকে নিয়ে এখন কি করা যায়, সেটাই চিন্তা করছি। একবার ভাবলাম, 'মা-বিড়াল' টাইপের কোন একটা বিড়ালের কাছে রেখে আসি। আবার ভাবলাম, এত রাতে মা বিড়াল কই পাই?! আর এইটা এ্যাতই ছোট যে, রাস্তায় ছেড়ে আসলে কনফার্ম গাড়ি চাপা পড়বে। অতএব, থাক। আমার কাছেই আপাতত থাক। পিচ্চিটার একটা নাম দিলে কেমন হয়? উম... কি নাম? কি নাম? ইয়াহ! ভুতুম! মনে মনে বিড়াল-শিশুকে বললাম, "নামটা খারাপ না, কি বলিস?!"



দুই.



ভূতুম এখন আমার সাথেই থাকে। বেশ স্মার্ট বিড়াল! শার্প ব্রেইন। যা অর্ডার করি, সব ঠিকঠাক মতোই পালন করে। প্রথমে একদিন আমার বিছানার উপরে আরাম করে টয়লেট করেছিল। সেদিন কানটা ধরে বারান্দার এক কোনার বালির টবটা দেখিয়ে দিলাম। পরদিন থেকে জায়গা মতো কাজ। শুরুতে খাবার টেবিলে খেতে বসলেই পায়ের কাছে শুনতাম মিউ মিউ কান্না। সে আমার সাথে টেবিলে বসে খেতে চায়। মামা বাড়ির আবদার আর কি! ওর জন্যে আলাদা বাটিতে এরপর থেকে রেগুলার খাবার দেয়া হলো। প্রথম প্রথম একটু আপত্তি জিনিয়েছিল। কিন্তু কান ধরে আবার বুঝিয়ে দিলাম, "যেমনে বলছি বাবু, তেমনে চলো।"



নিয়মিত দুধ-মাছ-মাংস পাতে পড়ায় ভূতুম বাবাজি বেশ অল্পদিনের মধ্যেই বেশ নাদুস-নুদুস হয়ে উঠলেন। চেহারাটাও বেশ খোলতাই হলো। মাঝে মাঝে হালকা মেজাজে আমার সাথে বসে সে ইংরেজি মুভি দেখে। তবে এর মাঝে বেশ বড় একটা দু:খজনক ঘটনা ঘটলো। আমার ছোট ব্যাচেলর রুমের রান্নাঘরে একটা ইঁদুর দম্পতি সংসার পেতেছিল। একদিন দেখি ভূতুম ভাইজান ইঁদুর দম্পতিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে তাদের মরদেহ নিয়ে ফুটবল খেলছে। আরেকদিন বাসায় ফিরে দেখি ভূতুমের সারা শরীরে জখমের চিহ্ন। কড়া ভাবে জিজ্ঞেস করার পর তার মৌন ভাব দেখে বুঝে নিলাম পাশের বাড়ির হুলোর সাথে কারাতে ফাইট করে তার অবস্থা কাহিল।



আমি থাকি চার তলার উপরে। ছোট্ট এক ফালি বারান্দা আমার। এই বারান্দায় চড়ুইয়ের উৎপাত। আর ভূতুমের একটা নেশা হলো চড়ুই দেখলেই লাফ দিয়ে চড়ুই ধরা। অনেকবার তাকে কড়া ধমক লাগিয়েছি। চড়ুই ধরতে গিয়ে বারান্দার রেলিং-এর উপরে যেন লাফ না দেয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমার সামনে সে ভদ্রলোক সেজে থাকে। যেই আমি সামনে থাকিনা, ওমনি সে চড়ুইয়ের গন্ধ পেলেই বারান্দার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।





তিন.

সেদিন বাসায় ফিরলাম একটু দেরী করেই। বিরক্তিকর লোডশেডিং চলছে। প্রতিদিন ঘরে ফিরলে আমার পায়ের আওয়াজ শুনেই ভূতুম ছুটে আসে। আজ এলোনা। একটু অবাক-ই হলাম। মনে হয় কোন কাজে ব্যস্ত। ঘরে ঢুকে মোমটা জ্বালিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানির বোতল বের করতে করতে এদিক ওদিক তাকালাম। নাম ধরে দু'বার ডাক দিলাম। কোন সাড়া শব্দ নেই। কি ব্যাপার, গেল কই? এরকমতো হবার কথা নয়!



এবার ড্রয়ার থেকে আমার শক্তিশালী টর্চটা বের করলাম। খাটের তলায় আর রান্নাঘরে খোঁজা শেষ করে এবার এলাম বারান্দায়। নাহ! এখানেও ভূতুম নেই। কি মনে করে টর্চের আলোটা বারান্দার উপর থেকে নিচের কাঁটাতার দেওয়া দেওয়ালের উপর ফেললাম। আলোটা এদিক-ওদিক করতেই কাঁটাতারের দেওয়ালের উপরে বেশ বড়সড় একটা জিনিস দেখতে পেলাম। টর্চের আলোটা বাড়িয়ে নিয়ে সেটি বরাবর তাক করতেই দেখলাম....



দেখলাম ভূতুমকে। উপুড় হয়ে পড়ে আছে। কাঁটাতারের উপরে। তার নিথর দেহটা দেখে মনে হচ্ছে যেন উবু হয়ে ঘুমুচ্ছে আমার ভূতুম। আর তার দুই থাবায় শক্ত করে ধরা ...একটা মৃত চড়ুই।



গল্পটি কানাডার টরন্টো থেকে প্রকাশিত 'সাপ্তাহিক আজকাল' পত্রিকার ১১ জুলাই, ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৪২

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন: ভূতুমের বিষাদময় গল্প ভাল লাগল ৷




শুধু শেষে এসে মনটা বেদনায় ভরে গেল ৷

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৪৫

পয়গম্বর বলেছেন: এরপর থেকে আমি আর কোন পশুপাখি পালি না।

ব্লগে সাথে থাকার জন্যে ধন্যবাদ।

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪২

ডেমোনিয়াক ম্যাডম্যান বলেছেন: আমার আদরের একটা মিনু ছিল। CTG থেকে ঢাকায় বাসা শিফট করার সময় আম্মু আর নিয়ে আসতে চায়নি। অনিচ্ছা সত্বেও ওখানে রেখে আসতে হয়েছে। পরে শুনেছিলাম গাড়ি চাপায় মারা গেছে। :(

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:০৯

পয়গম্বর বলেছেন: দীর্ঘ দিন কোন পশু-পাখি সাথে থাকলে তার ওপর মায়া পড়ে যায়।

৩| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৪৮

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আমার একটা কুকুর ছিল ভাই। সেটা যখন মারা তখন আমি ভীষন কষ্ট পেয়েছিলাম। আপনার লেখাটা পড়ে মন খারাপ হলো!

অটঃ আপনার ভ্রমন কাহিনীগুলো মিস করি!! নতুন কিছু ভ্রমন কাহিনী দেন।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:০৬

পয়গম্বর বলেছেন: ব্লগে সাথে থাকার জন্যে কাল্পনিক ভাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ব্যস্ততার জন্যে অনেক ভ্রমণ কাহিনী-ই পোস্ট করা হয়নি। আশা করছি খুব শীঘ্রই পোস্ট করবো।

৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:০৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: পশু পাখি নিয়ে লেখা গল্প পড়তে ভালো লাগে। সমস্যা একটাই, লেখক বেশিরভাগ সময় পশু বা পাখিটিকে মেরে ফেলেন!

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৫২

পয়গম্বর বলেছেন: এই লেখাটির ঘটনাটি সত্য হাসান ভাই। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্যে।

৫| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:১১

বাকপ্রবাস বলেছেন: খুব সুন্দর কিন্তু ভুতুম এর জন্য মন খারাপ হয়ে গেল

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৫৪

পয়গম্বর বলেছেন: ওর মৃত্যু শোকে আমি দীর্ঘ একটা সময় ঠিকমতো কোন কাজ করতে পারিনি। নিজের অজান্তেই বিড়াল শিশুটি আমার একজন অন্তরঙ্গ সঙ্গী হয়ে গিয়েছিল।

৬| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৫

শংখনীল কারাগার বলেছেন: মনটা খারাপ কইরা দিলেন।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৫৫

পয়গম্বর বলেছেন: ঘটনাটি অনেক আগের হলেও এখনও ওর কথা মনে হলে মনটা ভারী হয়ে ওঠে।

৭| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:১৬

আতিক আফজাল বলেছেন: জানতাম, শেষ এমন হবে! ক্যান যে পড়লাম! মনটাই খ্রাপ হয়ে গেল।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:১৪

পয়গম্বর বলেছেন: :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.