নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন হলো এক কাপ গরম চা আর একটি জ্বলন্ত সিগারেটের মতো। গরম চা এক সময় জুড়িয়ে যাবে, সিগারেটের তামাকও পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।

পয়গম্বর

The woods are lovely, dark and deep, But I have promises to keep, And miles to go before I sleep, And miles to go before I sleep.---Robert Frost

পয়গম্বর › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি লঞ্চডুবি এবং একজন মতি'র গল্প

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৫:৫১

এক.



মন্ত্রীমহোদয়ের বাসায় জরুরী মিটিং বসেছে। মিটিং-এর আজকের এজেণ্ডা ’পদ্মায় লঞ্চ ডুবি’। এত বড় একটা দুর্ঘটনায় মন্ত্রী মহোদয় কিঞ্চিত বিব্রত। আর এই লঞ্চডুবির কথা মিডিয়া যেভাবে ফলাও করে প্রচার করছে, তাতে সারা দেশের মানুষের সবগুলো চোখ এখন এই দিকে। তাই মিটিং না ডেকে উপায়-ও ছিলনা। মন্ত্রীমহোদয় মালয়শিয়ায় নিজের ব্যাক্তিগত ব্যাবসায়িক কারণজনিত ভ্রমণটা তাই বাধ্য হয়েই বাদ দিয়ে মিটিং-এ বসেছেন। তা না হলে আবার মিডিয়ার এইসব উঠতি সাংবাদিকগুলো ফলাও করে এই দুর্যোগ সময়ে তার বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে নতুন করে নিউজ করবে। আর এই মিডিয়ার কল্যাণেই এখন এই দেশ পৃথিবীবাসীর কাছে বিখ্যাত। যত্তোসব। আরও একটা কারণে আসলে আজকে বসতেই হচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। সরকারের ভাবমূর্তী রক্ষার্থে এই লঞ্চডুবির কারণ খুঁজে বের করা সহ আরও হাজারটা ঝামেলা আছে।



তবে এই লঞ্চডুবি বিষয়টা মন্ত্রীমহোদয়ের কাছে আর নতুন কিছু নয়। সাংবাদিকগুলো কিছুদিন এইটা নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি করবে। সারাদেশে এই ইস্যুটা নিয়ে তোলপাড় হবে। তারপর যাক না একটা সপ্তাহ। খবরের কাগজের পেছনের পাতাতেও যথারীতি আর এই খবরটা থাকবেনা। এই প্রথম সপ্তাহটাই আসলে ক্রিটিকাল। রুটিন কিছু কাজ করে এই সময়টা কাটাতে পারলেই আবার আরাম। আর এই ফাঁকে নতুন কোন বড় খবর চলে আসলেতো আলহামদুলিল্লাহ। জনগণের চোখ তখন ওই দিকে ফিরে যাবে। লঞ্চডুবি-টুবি কে মনে রাখে?



আজকের মিটিংটা আসলে দলীয় আস্থাভাজন হাতে গোণা লোকজনদের নিয়ে। সবার সাথেতো আর মন খুলে কথা বলা যায়না। বলতে হয় নিজের লোকদের সাথে। যদিও এই ’নিজের লোকদের’ মাঝে কিছু উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাও আছেন। ভালোই হলো। এক ঢিলে দুই পাখি। দলীয় সভাও হলো আবার ওই দুর্ঘটনা নিয়ে দু’চারটা কথাও হবে। পরে সাংবাদিকদের প্রেস-ব্রিফিং দিয়ে বলা যাবে, দুর্ঘটনার জন্যে জরুরী মিটিং-এর সিদ্ধান্তগুলো কি কি, সরকার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে, জনগণের জন্যে কাজ করে চলেছে ইত্যাদি গৎবাঁধা বুলিগুলো।



দুর্ঘটনা নিয়ে কথার অবশ্য তেমন কিছু নেই। এই দেশে প্রতিবছর দুই চারটা লঞ্চ ডুবি না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। আর দু-চারশো মানুষ মরবে, এটা আর নতুন কি? তবে ইদানিং এই সাংবাদিকগুলো বড় ত্যাক্ত করছে। এরা তিল কে তাল করে যা ইচ্ছা তাই লিখে চলেছে। এবার এদেরকে একটু শায়েস্তা না করলেই নয়।



এইসব ভাবতে ভাবতেই সদ্য ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের কাপে মন্ত্রীমহোদয় আরাম করে একটা চুমুক দিলেন। তারপর উপস্থিত জনগণের উদ্দ্যেশ্যে গলা খাকরানি দিয়ে বললেন, ’সবাই চুপ করেন।” এরপর একটু বিরতি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ”ভুলু কই’?



উপস্থিত সবাই এবার গুনগুন বন্ধ করলো। পিছন থেকে এক লোক কাচুমাচু মুখে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিল। মন্ত্রীমহোদয় তাকে সামনে আসতে বললেন। শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ’কিরে ভুলু, তোর লঞ্চটা ডুবলো কেমনে?” ভুলু অপরাধীর ভঙ্গিতে চোখ নামিয়ে নিলো। বললো, ”ভাই, এই লঞ্চটা কিনছিলাম বছর খানেক আগে। হালকা একটু মেরামত কইরা লাইনে দিছি। ভাবছিলাম এই ঈদের পর ভালো কইরা মেরামত করুম। কিন্তু তার আগেই...। এখন ভাই আমি কি করুম?”



”হুম।” একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মন্ত্রীমহোদয় বললেন, ”তোরা আমাকে আর শান্তিতে থাকতে দিবিনা ভুলু। ওই লঞ্চে মানুষ ধরে আশি নব্বইটা। আর পত্রিকায় দেখি সেইখানে ছিল তিনশো মানুষ?! কি তাজ্জবের ব্যাপার! এইটার কারণ কি ভুলু?” মন্ত্রীমহোদয়ের তীক্ষ্ম দৃষ্টি ভুলুর দিকে। মানুষকে ধমকানোর মাঝেও একটা আনন্দ আছে। ক্ষমতার স্বাদের এই লোভটা মন্ত্রীমহোদয় ছাড়তে পারলেননা।



”আমার কি দোষ ভাই? আমি কি কাউরে বাইন্ধা আমার লঞ্চে উঠাইছিলাম? পাবলিকে ঈদ কইরা বাড়ি ফিরবো। লঞ্চে উঠার লাইগা পাগলা কুত্তা হইয়া গেছিল সব। আর তার উপরে এই লঞ্চ-এর কাগজ বাইর করতে আমার খরচা গেছেনা? জায়গায় জায়গায় টেকা ঢালছি। এই খরচাতো উঠান লাগবো ভাই। তাই মানুষ তুলছি। তখনতো বুঝি নাই এই রকম একটা বিপদে পড়ুম।” ভুলু চোখের কোণটা একটু মুছলো।



”বিপদ-টিপদ কিছুনা। শোন্ ভুলু, তুই একটা কাজ কর। মাসখানেকের জন্যে দেশের বাইরে ঘুরতে যা। পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হইলে তারপর আয়। কান্নাকাটি করিসনা। তোরা হইলি দলের খাস ছেলেপেলে। তোদের জন্যেতো কম করি নাই। আগেও আমি পাশে ছিলাম, এখনও আছি। চিন্তা করিসনা। তোর এইটা বড় একটা ঘটনা, কিন্তু মনে পড়ে? সাভারের রানা প্লাজার ঘটনাটা ছিল আরও বড়? পুরা দেশ তোলপাড় হইছে। কিন্তু এখন কি পত্রিকায় কোন নিউজ করে? হে: হে:, করেনা। করবেওনা। নাহ, একটু ভুল বললাম। করবে। যখন বর্ষপূর্তি হবে, তখন একটু লেখালেখি হবে আবার। সব কিছু সিস্টেম। আরে বোকা ছেলে, কান্দস কেন? তোরতো ডাইরেক্ট কোন দোষ নাইরে, লঞ্চের ড্রাইভার ব্যাটা লঞ্চে এত লোক তুললো ক্যান?” এই পর্যন্ত বলে মন্ত্রীমহোদয় ব্যক্তিগত সহকারীর দিকে তাকালেন।



”আফজাল সাহেব, আপনি একটা কাজ করেন। এইখানে যারা আছে, তাদেরকে নিয়ে দুই-তিনটা কমিটি করেন। এই ধরেন, তদন্ত কমিটি, সাহায্য কমিটি এইসব আরকি। তদন্ত কমিটি ধরেন গিয়ে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিবে। তদন্তের আগেই পারলে বিগত সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত, এমন পাঁচ-সাতজনকে দোষী দেখিয়ে দ্রুত সাসপেণ্ড করেন। তিনশ মানুষ মারা গেছে, আর দুই-চারজনরে সাসপেণ্ড না করলে চলে?”



”আর শুনেন, যারা মারা গেছে, সাহায্য কমিটি তাদের পরিবার পরিজনকে মাথাপিছু কিছু টাকা দিবে। ছাগল দেবার দরকার নাই। বিরোধীদল সরকারে থাকতে লঞ্চডুবির পরিবারকে ছাগল দিয়ে সমালোচিত হয়েছিল। আমি সমালোচিত হতে চাইনা। কাজেই এত ডিটেইল আশাকরি বলতে হবেনা আপনাকে। আপনি এইসব ব্যাপার আগেও হ্যাণ্ডেল করে অভ্যস্থ, তাইনা? আর হ্যাঁ, ভালো কথা, আমি কবে পরিবারগুলোকে সাহায্য দিতে যাবো, সেটার সময়টা ঠিক করেন এবং মিডিয়াকে রেডি রাখেন।” মন্ত্রীমহোদয় তার পুরু গোঁফে হালকা তা দিতে লাগলেন।



”ইয়ে মানে স্যার, বিরোধী দলতো আপনার পদত্যাগ দাবী করতেছে।” আফজাল সাহেব আমতা আমতা করে বললেন।



”পদত্যাগ? পদ কি বিরোধীদলের বাবা আমাকে দিয়েছেন যে, তাদের কথায় পদত্যাগ করতে হবে?” মন্ত্রীমহোদয়ে চোখ-মুখ লাল হয়ে গেল রাগে। অনেকটা ভাষণ দেবার ভঙ্গিতে উদ্ধত কণ্ঠে টেবিল চাপড়িয়ে তিনি উপস্থিত মানুষগুলোকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন, ”কারা এইসব কথা বলতেছে তাদের নামের লিস্ট করেন, তারপর মামলা দিয়ে গুষ্টিশুদ্ধা জেলের ভাত খাওয়াব। রাজনীতির প্যাঁচতো এখনো বুঝে নাই। শুনেন আফজাল সাহেব। ফালতু কথা বলে সময় নষ্ট করবেননা। ’জনগণের ম্যাণ্ডেট নিয়ে জনগণের কাজ করার জন্যে ক্ষমতায় এসেছি’- এইসব ’রাবিশ’ কথাবার্তা শুধু জনগণের সামনেই বলতে হয়। ক্ষমতায় একবার গেলে ওই গণতন্ত্রই হয়ে যায় একনায়কতন্ত্র। কাজেই কোন ইঁদুর-বিড়াল কি বললো না বললো তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। এখন যান, নিজের নিজের কাজ করেন সবাই। লঞ্চের এই ব্যাপারটা যেন ঠিক মতো সমাধান হয়। প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ আছে এ ব্যাপারে। আর পরে আপনারা নিজেরা মিটিং করে ভবিষ্যতে যেন এইসব দুর্ঘটনা কমে যায়, সেটার জন্যে একটা নীতিমালার খসড়া করেন। আমি সেটা দেখে দেব।” এই পর্যন্ত বলেই মন্ত্রীমহোদয় উঠে পড়লেন।



দুই.



মতি বসে আছে একটা ছাপড়ার নিচে। তার পরনে কেবলমাত্র একটা লুঙ্গি। উদাম শরীরের হাড়গুলো গোণা যায়। মাথার চুলগুলো উশকো-খুশকো। উদভ্রান্তের মতো চেহারা। সে তাকিয়ে আছে তার কয়েকশো গজ দূরের বিশাল পদ্মার দিকে। কিন্তু সেই চাহনি নিষ্প্রাণ। তার স্মৃতিতে এখনও ভাসছে দিন সাতেক আগের কথা। ঈদ করতে দেশের বাড়ি গিয়েছিল মতি তার বউ আর দুইটা ছোট ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। ঢাকায় সে রিক্সা চালায়। কমলাপুরের সাততলা বস্তিতে পরিবার নিয়ে থাকে। অনেকবছর বাদে এবার ঈদে বউ-বাচ্চা নিয়ে দেশেরবাড়িতে আপনজনদের সাথে ঈদ করলো মতি। তারপর তারা ফিরছিল এই লঞ্চটিতে। মতির চোখে স্পষ্ট ভাসে লঞ্চটা ডুবে যাওয়ার আগের মূহুর্তগুলো। ঈদে অনেক খরচাপাতি হয়েছে। তাই মতি চেয়েছিল ফিরেই রিক্সা নিয়ে বের হবে কাজে। কিন্তু বউ অভিমানের সুরে আর একটা দিন পর মতিকে কাজে যেতে বলেছিল। ছেলেটা বলছিল স্কুলে যাবার জন্যে তার ভালো দেখে একজোড়া জুতা লাগবে। আর তার আদরের ছোট মেয়েটা আবদার করেছিল, ”বাবা, ঢাকা গিয়া আমারে একটা পুতুল কিনা দিবাতো?” মতি এইসব কথা মনে করে, আর তার শুকিয়ে যাওয়া চোখ থেকে আবার টপটপ করে পানি পড়ে। বিড় বিড় করে বলে, ”হ রে মা, দিমু, তুই ফিরা আয়, ফিরা আয় মা।”



লঞ্চটা যখন ডুবছিল, তখনও মতি বুঝতে পারে নাই কি ঘটতে চলেছে। শুধু চারিদিকে মানুষজনের ছোটাছুটি। মৃত্যু খুব কাছে চলে আসলে মনে হয় মানুষের চিন্তা শক্তি লোপ পায়, অনুভূতিগুলোও কেমন যেন ভোঁতা হয়ে যায়। তখনও সে তার ছোট্ট মেয়েটাকে বুকের ভেতর আগলে ধরে ছিল। আর তার বউয়ের হাত শক্ত করে ধরে বলছিল, ”চিন্তা নিওনা মর্জিনা, আল্লাহরে ডাকো, সব ঠিক হইয়া যাইবো।” কিন্তু কিছুই ঠিক হয়নি। আচমকা একদিকে কাত হয়ে পুরো লঞ্চটা উত্তাল পদ্মার গভীর জলে মুহূর্তেই তলিয়ে গেল। ঢেউয়ের তোড়ে বুকের ভেতর থেকে মেয়েটা ছিটকে চলে গেল পানির গভীরে। ছেলে আর বউ যে কোথায় গেল, মতি ভেবে উঠার আগেই দেখে সে নিজেও গভীর জলে ডুবে যাচ্ছে।



যখন জ্ঞান ফিরলো, নিজেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় দেখলো মতি। পরে জানতে পারলো একটা মাছ ধরার ট্রলার তাকে মাঝ নদী থেকে তুলেছে। পরক্ষণেই তার খেয়ার হলো বউ আর বাচ্চাগুলো কোথায়?



সেই থেকে মতি নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে নদীর পাড়ে বসে আছে দিনের পর দিন। নদীর পাড়ে একটা ঘরে সরকারী কিছু লোক উদ্ধারকাজের তদারকি করছে। যাদের আত্মীয়-স্বজন পদ্মার লঞ্চ ডুবিতে নিখোঁজ, কোন নতুন লাশ আসলেই তাদেরকে খবর জানানো হচ্ছে। ওই ঘরটার চারদিকে মানুষ আর মানুষ। সবাই অপেক্ষা করছে কখন নিজের প্রিয় মানুষটার লাশ আসবে।



সেই ঘরে মতি নিজের নাম লিখিয়ে এসেছে। প্রথম দু’দিন আশা ছিল, তার পরিবারটা ফিরে আসবে। কিন্তু যতই দিন যেতে লাগলো, এখন মনে হয়, শুধু লাশগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেই শান্তি। চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ। নদী থেকে লাশ আসে, মতি দৌড় দিয়ে যায়, লাশটা তার বউ অথবা বাচ্চাগুলোর কিনা। তারপর হতাশ হয়ে ফিরে আসে, বসে থাকে ওই ছাপড়াটার নিচে। মনে মনে ভাবে, ”এই পদ্মাই তার বউ আর বাচ্চাগুলারে গিলা খাইল”।



তিন.



মতির ঝিমুনি কাটলো পুলিশের লাঠির গুতা খেয়ে। নির্জীব অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে কখন যে তার তন্দ্রার মতো লেগেছিল বুঝতেই পারেনি। তার পাশে শুয়ে থাকা নেড়ি কুকুরটাও পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়ে খেঁকিয়ে দূরে সরে গেল। ভালো করে তাকিয়ে দেখে চারিদিকে অনেক পুলিশ। মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে লুঙ্গিটায় ভালো করে কোঁচা মারতে মারতে পুরো ব্যাপারটা সে বোঝার চেষ্টা করলো।



আশেপাশের দুইএকজনকে জিজ্ঞেস করলো ঘটনাটা কি? একজন জানালো, ”মন্ত্রী আসছেন। তিনি নাকি লঞ্চডুবির বাঁইচা যাওয়া মানুষগো সাহায্য দিব।”



মতি দূর থেকে দেখলো, বিশাল এক কালো গাড়ি থেকে সাদা পাঞ্জাবীর উপরে কালো কোট পড়া মন্ত্রী সাহেব নামছেন। তার সামনে পিছে পুলিশ আর টেলিভিশন ক্যামেরা।



পুলিশগুলো জনতাকে দুই দিকে সরিয়ে দিয়ে মাঝ খান দিয়ে রাস্তা করে দিল। এরপর মন্ত্রীসাহেব নদীর পাড়ের সরকারী ঘরটার সামনে এসে দাঁড়ালেন। দলীয় কর্মীদের থেকে থেকে স্লোগান উঠলো, ”মন্ত্রীসাহেবের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম।”



মতি তার ছাপড়ার লাগোয়া বাঁশটা ধরে দুর্বল শরীরে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাটা দেখছিল। চোখেমুখে তার সীমাহীন ক্লান্তি। তারপরেও তার কৌতুহলী মন দেখতে চায় ঘটনাটা কি ঘটছে।



মন্ত্রীসাহেবের হাতে একটা হ্যাণ্ড মাইক। তিনি ছোটখাট একটা ভাষণ শুরু করলেন। যার সারমর্ম হলো, যাদের পরিবার পদ্মায় নিখোঁজ, তাদের জন্যে তিনি ব্যাথিত এবং এখন তিনি তাদেরকে আর্থিক সাহায্য দিবেন।



এই কথাটা শোনার পর উপস্থিত জনতার মাঝে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হলো যেন। পুলিশের নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্থদের লাইনে দাঁড় করানো হলো। একে একে নাম ডাকা হচ্ছে, আর মন্ত্রীমহোদয় তাদের হাতে নগদ টাকা তুলে দিচ্ছেন। টিভি আর সাংবাদিকদের ক্যামেরার ঝলকানি দেখে মনে হচ্ছে যেন এক প্রতিযোগীতা চলছে।



হঠাৎ নিজের নাম মাইকে শুনে মতি সম্বিত ফিরে পেল। নিজের কান কে ভুল শুনছেনাতো সে? নাহ্, কোন সন্দেহ নাই, তার নাম-ই ডাকা হচ্ছে ক্ষতিপূরণের টাকা মন্ত্রীমহোদয়ের হাত থেকে নেবার জন্যে। বেশ কয়েকবার ডাকা হলো নামটা। তারপর অন্য নামে চলে গেল।



মতি ধীর পায়ে ছাপড়া থেকে বের হয়ে এলো। কয়েক কদম হেঁটে নদীর পাড়ের একটু নির্জন একটা জায়গায় বসলো। তার দৃষ্টি এখন উত্তাল পদ্মার দিকে। শূন্য দৃষ্টিতে বিড়বিড় করে সে বললো, ”ভালো থাইকো তোমরা, যেখানেই থাকো, ভালো থাইকো।”



গল্পটি কানাডার টরন্টো থেকে প্রকাশিত 'সাপ্তাহিক আজকাল' পত্রিকার ১৫ আগস্ট, ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: কী আর বলবো...

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫৫

পয়গম্বর বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ হাসান ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.