নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন হলো এক কাপ গরম চা আর একটি জ্বলন্ত সিগারেটের মতো। গরম চা এক সময় জুড়িয়ে যাবে, সিগারেটের তামাকও পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।

পয়গম্বর

The woods are lovely, dark and deep, But I have promises to keep, And miles to go before I sleep, And miles to go before I sleep.---Robert Frost

পয়গম্বর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ট্রিপ টু লাস ভেগাস - পৃথিবীর আশ্চর্য গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন দর্শন

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫১



ট্রিপ টু লাস ভেগাস - যাত্রা হলো শুরু
ট্রিপ টু লাস ভেগাস - হুভার ড্যাম ভ্রমণ

১৩ নভেম্বর, ২০১৬, রবিবার
গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়নের উদ্দেশ্যে যাত্রা:

বারো নভেম্বর সকালে এসে পৌঁছেছি যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস শহরে। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ ঘন্টার প্লেন জার্নি আর সারাদিনের ঘোরাঘুরি শেষে আমরা সবাই খুব ক্লান্ত। তাই রাতের খাবার খেয়ে একটু তাড়াতাড়ি-ই ঘুমিয়ে পড়লাম। কেননা পরদিন ১৩ নভেম্বর খুব ভোর বেলায় দেখতে যাবো পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন।

লাস ভেগাস থেকে গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন সাউথ রিম, ওয়েস্ট রিম, নর্থ রিম, হুভার ড্যাম ট্যুর ইত্যাদির জন্যে বেশ ক’টি কোম্পানীর মধ্যে বেশ প্রতিযোগীতা। অন্তত: তাদের ওয়েবসাইটগুলো ঘাঁটলে এরকমটাই আভাস মেলে। যেহেতু ভেগাস যাবার মাস খানেক আগেই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম যে, প্রথমে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সাউথ রিম ন্যাশনাল পার্ক ঘুরতে যাবো, তাই বাসের টিকিট আগে ভাগেই কেটে রেখেছিলাম। সেক্ষেত্রে আমরা প্যারাডাইস ফাউণ্ড ট্যুরস কোম্পানীকেই বেছে নিয়েছিলাম। কারণ অবশ্য তাদের চটকদার বিজ্ঞাপন নয় বরং বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তাদের সম্পর্কে কাস্টমার রিভিউ পড়েই অন্যান্য কোম্পানীর থেকে একটু বেশি দাম দিয়েই প্যারাডাইস ফাউণ্ড ট্যুরস থেকে টিকেট কাটলাম।

গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আপনাদের একটু জানিয়ে দিচ্ছি এই বেলা:
নর্থ আমেরিকা তথা পৃথিবীর বুকে অন্যতম ভূ-আশ্চর্য হলো এই গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন যেখানে রয়েছে নেটিভ আমেরিকানদের আবাসস্থল। মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর বুকে কিছু ভূ-চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়, গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন তার মাঝে অন্যতম। বিশাল বিস্তৃত গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়নের বুক চিড়ে বয়ে চলেছে কলোরাডো নদী। এই নদীটির উৎপত্তি কিন্তু আমেরিকার উটাহ রাজ্যে এবং এর বিস্তৃতি অ্যারিজোনা এবং নেভাদা পর্যন্ত। শেষ হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার সীমারেখায়। এই দীর্ঘ পথে কলোরাডো নদী কখনো বা ১৫ মাইল প্রস্থ এবং এর গভীরতা ক্ষেত্র বিশেষে প্রায় এক মাইল! ভাবা যায়? সত্যিই পৃথিবীর ভূ-রূপ বৈচিত্র্য বোঝা বড়ই কঠিন! মহাশূন্য থেকে গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন এবং কলোরাডো নদীর গ্রহণ করা কিছু ছবি দেখে নেই খুব দ্রুত। 'নাসা' কে ধন্যবাদ জানাই, গুগলের মাধ্যমে এই ছবিগুলো আমাদেরকে দেখানোর জন্যে।




১৯১৯ সালে গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক অফিশিয়ালি প্রতিষ্ঠিত হয় যার আয়তন ১৯০৪ স্কয়ার মাইল। আমেরিকার ডিলাওয়ার স্টেটের থেকে মাত্র ৫০ স্কয়ার মাইল কম। নৃ-তাত্ত্বিক প্রমাণাদি বলে, প্রায় ৪০০০ বছর আগে মানুষ এই এলাকায় বসতি স্থাপন করেছিল। গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়নের বয়স কত? এর উত্তরে কোন কোন ভূ-তত্ত্ববিদ বলবেন ৬ মিলিয়ন বছর। আবার কেউ বা বলবেন ডাইনোসরদের সময়কাল থেকে অর্থাৎ প্রায় ৭০ মিলিয়ন বছর আগে থেকে পৃথিবীর বুকে গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মূলত অ্যারিজোনা স্টেটের উত্তরে বিস্তৃত গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন ২৭০ মাইলেরও বেশি দীর্ঘ এবং ১৮ মাইল চওড়া আর প্রায় মাইলখানেক গভীর। গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন-এর দেয়ালে যে পাথরগুলো রয়েছে, সেগুলো নি:শব্দে পৃথিবীর সৃষ্টি এবং আদিম পৃথিবীর ইতিহাস বর্ণনা করে চলেছে।

সাউথ রিমে কি কি দেখলাম:
ঘড়ির কাটায় যখন সকাল সাড়ে ছয়টা, আমাদের হোটেল সারকাস সারকাসের সামনে এসে থামলো ট্যুর বাস। আমরা ভাবলাম, এই বাসই বুঝি সবাইকে নিয়ে গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন সাউথ রিমে যাবে। কিন্তু ধারণা ভুল। শহর থেকে একটু বাইরে বাস ডিপোতে বাস এসে থামলো। আমরা বাস যাত্রীরা এই জায়গাটিতে চেক-ইন করলাম। আমাদের মতো আরও অনেকগুলো বাস এসে থামলো, কেউ যাবে ওয়েস্ট রিম, কেউ যাবে হলিউডে।

এই ফাঁকে জানিয়ে রাখি যে, সাউথ রিমে অনেক অনেক অ্যাটিভিটিজ রয়েছে। যেমন, হেলিকপ্টার রাইড, বাইকিং, রেঞ্চার প্রোগ্রাম, হাইকিং প্রোগ্রা, ক্যাম্পিং, মুল রাইড সহ আরও কত কি! যত বেশি টাকা আর সময় খরচ করবেন, তত বেশি আনন্দ। আমরা অবশ্য শুধু গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়নকে সামনা সামনি দেখা ছাড়া আর অন্য কোন কিছু করিনি।

বাস টার্মিনালে আমাদের চেক-ইন এর জায়গায়

চেক ইনের সময় হলুদ রঙের স্টীকার গুলো জামার ওপরে পড়ে থাকতে হয়েছিল

ছবির বাম দিকের বাসটাতে আমরা উঠেছিলাম

অ্যাপেল ড্যানিশ আর কফি হাতে নিয়ে আমাদের নির্ধারিত বাসে এসে উঠে পড়লাম। বাসের ড্রাইভারের নাম টমি। বেশ রসিক মানুষ। শুরুতেই তিনি যে কথাটি সবার উদ্দেশ্যে বললেন, "ভাই ও বোনেরা, আপনারা বাসের একদম পিছনে একটি কক্ষ দেখতে পাবেন, যার ওপরের দিকে ভালো করে তাকালে কখনো একটা লাল আলো আবার কখনো একটা নীল আলো দেখতে পাবেন। সেই রহস্যময় কক্ষে যদি ঢোকেন, তাহলে আপনারা আপনাদের প্যান্ট কোমর থেকে নিচে নামাতে পারবেন এবং কেবলমাত্র তখনই সেটা পারবেন যখন কক্ষের বাইরে নীল আলো জ্বলবে, লাল আলোর অর্থ হলো আপনি সেই কক্ষে ঢুকতে পারবেননা এবং ভেবে নিবেন যে, অন্য কেউ তখন সেই কক্ষের ভেতরে ঢুকে প্যান্ট খুলে বসে আছে।"

টমি মিঞার কথা শুনে কি বুঝলেন? তিনি আসলে টয়লেটের কথা বলছেন। এবং এভাবেই পুরো জার্নিতে টমি ভাই আমাদের কখনো হাসিয়ে কখনোবা বিভিন্ন স্থানের ইতিহাস শুনিয়ে আমাদেরকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন।

লাস ভেগাস থেকে গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন যাবার পথের ছোট্ট একটি ভিডিও দেখে নেই এই ফাঁকে:


যাবার পথে প্রাচীন বোল্ডার সিটির কিছু ছবি বাস থেকে তুলে নিলাম:







যাত্রা পথে সকাল সাড়ে দশটায় অ্যারিজোনার কিংম্যানে বাস থামলো পনের মিনিট ব্রেকের জন্যে। এর পরের ব্রেকটি পেলাম সাড়ে বারোটায় যেটি লাঞ্চ ব্রেক। পেট ভরে খেয়ে আশেপাশে দুই একটা ছবি তুলে আবার রওনা দিলাম।

এখানেই buffet লাঞ্চ খেলাম

buffet লাঞ্চ

আই লাভ মেক্সিকান ফুড, প্লেট ভর্তি করে নাচো খাচ্ছি

আরও নাচো

লাঞ্চ শেষে বের হয়ে দেখি পুরনো আমলের আস্ত এক ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে

অ্যারিজেনা সময় দুপুর দুইটা বেজে পঁচিশ মিনিটে এসে পৌঁছালাম গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের ভেতরে। বাস পার্ক করতে করতে টমি ভাই আমাদের সবার উদ্দেশ্যে জানালেন যে, অ্যারিজোনা সময় সাড়ে তিনটায় এই বাসটা ছেড়ে যাবে ব্রাইট অ্যানজেল পয়েন্টের উদ্দেশ্যে। কাজেই কেউ যেন দেরী না করি। ক্যামেরা আগেই রেডি করা ছিলো। কাজেই কথা না বাড়িয়ে দ্রুত নেমে পড়লাম আর ক্যামেরায় বন্দি করতে থাকলাম পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়নের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি।

চলুন তাহলে দেখে নেই ম্যাদার পয়েন্ট আর ইয়াভাপাই পয়েন্টে আমার কাঁচা হাতের তোলা কিছু ছবি এবং ভিডিও:



















এবার ম্যাদার পয়েন্টের ভিডিও:


অ্যারিজোনা সময় সাড়ে তিনটায় আবার বাসে উঠলাম। এবারের গন্তব্য কাছেই, ব্রাইট অ্যানজেল পয়েন্ট। এখানে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ঘুরলাম।

ব্রাইট অ্যানজেল পয়েন্টের কিছু ছবি:


















আইসক্রিম আমাদের সবারই সব সময়য়ের প্রিয়। কাজেই ব্রাইট অ্যাঞ্জেল পয়েন্টে আইসক্রিমের দোকান দেখে কেউ আর লোভ সামলাতে পারলামনা।



এর আগের পর্বে আপনারা জেনেছিলেন যে, আমাদের সাথে রোদেলাও গিয়েছিল। সে আমার এই পোস্ট দেখে জানালো যে, গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়নের সাথে তার ছবি আমি ব্লগে না দিলে সে খুবই মর্মাহত হবে। কাজেই ...


ব্রাইট অ্যানজেল পয়েন্টের একটি ছোট্ট ভিডিও আপনাদের জন্যে:


এরপর লাসভেগাস ফিরে যাবার পালা। রাত দশটা নাগাদ ভেগাসে আমাদের হোটেলের সামনে ট্যুর বাস আমাদের নামিয়ে দিল।

চলবে...

সূত্র:
https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_the_Grand_Canyon_area
http://grandcanyonhistory.clas.asu.edu/
http://www.history.com/topics/grand-canyon
http://www.npr.org/2014/01/27/265437261/grand-canyon-may-be-older-and-younger-than-you-think

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৫৯

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
অপুর্ব! সবকিছুই সুন্দর।
টুর অপারেটর কতটাকা নিল?

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:২৯

পয়গম্বর বলেছেন: ১৭১.৯৮ ডলার/ ২জন - ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, বাস ভাড়া সব কিছু অন্তর্ভূক্ত। অনেকদিন পর আপনাকে দেখলাম হাসান ভাই :)

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:২৩

ইমরান আশফাক বলেছেন: সুন্দর।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:১৬

পয়গম্বর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:০৭

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: এসব পড়ে দেখে রোমাঞ্চিত হই, দুঃখও লাগে.......শুভ কামনা আপনার জন্য।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩১

পয়গম্বর বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।

৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২০

মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: আপনার সাথে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ঘুরে আসলাম। চমৎকার উপস্থাপনা এবং বর্ণনা। তাই আমেরিকা গিয়ে গ্রান্ড ক্যানিয়ন দেখার ইচ্ছা শেষ। তবে মহাকাশ থেকে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন দেখার আগ্রহ জেগেছে।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪২

পয়গম্বর বলেছেন: মহাকাশ থেকে আসলেই কিন্তু গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন চমৎকার দেখায় : )

৫| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: প্রকৃতিমাতার এক অনন্য মাস্টারপিস!

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:২৬

পয়গম্বর বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই।

৬| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:১৫

কেএসরথি বলেছেন: যাওয়ার ইচ্ছা আছে। ক্রস কান্ট্রি ড্রাইভ দিতে পারলে খারাপ হতো না। কিন্তু এত সময় কার আছে? হুমম।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২২

পয়গম্বর বলেছেন: একবার ঘুরে আসুন। ভালো লাগবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.