নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন হলো এক কাপ গরম চা আর একটি জ্বলন্ত সিগারেটের মতো। গরম চা এক সময় জুড়িয়ে যাবে, সিগারেটের তামাকও পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।

পয়গম্বর

The woods are lovely, dark and deep, But I have promises to keep, And miles to go before I sleep, And miles to go before I sleep.---Robert Frost

পয়গম্বর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোদেলার সাথে প্রেমালাপ

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৫:২৯



উত্তেজনা, ভয়, লজ্জা, আনন্দ - এরকম বেশ কিছু ইমোশনের ককটেল মেশানো মনে রোদেলার হাতে চিঠিটা তুলে দিলাম। 'চিঠি' বলতে গুরুগম্ভীর কোন বিষয় নয়। বরং সোজা বাংলায় বলতে গেলে একটা প্রেমপত্র দিলাম।

রোদেলারতো পুরাই টাস্কিত! মানে অবাকের চূড়ান্ত। লাভ লেটার? তা-ও আমার থেকে?

ভাবগতিকে বুঝলাম, ম্যাডাম খুশীতে বাকবাকুম! কিন্তু ওই যে, মেয়েদের মন বোঝা বড় দায়। তিনি তার ডাগড় চোখ দু'টো বড় বড় করে আমার দিকে তাকালেন। তারপর মুখ টিপে বললেন, "এই বুড়া বয়সে ভীমরতি ধরেছে নাকি? আমিতো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা। আচ্ছা, দাও দেখি। কী লিখেছ!"

আমি ক্ষীণ গলায় বলার চেষ্টা করলাম, "ইয়ে, মানে, সারাদিনতো চিৎকার করে বলো যে, একটা লাভ লেটার দাও দাও দাও! তাই ..."

"এ্যাই! বেইমান! তোমাকে আমি এ পর্যন্ত হাজার খানেক লাভ লেটার দিয়েছি"। ভুলে যাও?! আর তুমি? এই ফার্স্ট দিলে আমাকে! আবার বলে আমি চিৎকার করি?"

আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে চিঠিটা নিয়ে এক নি:শ্বাসে রোদেলা সেটা বিড়বিড় করে পড়ে ফেললো। আড়োচোখে তাকিয়ে দেখি, ওর চোখের কোণটায় পানি। বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, "তুমি জানো জান্? অনেক সুন্দর করে তুমি ভালোবাসার কথাগুলো বলতে পারো?" এরপর স্বভাবসুলভভাবে আমার নিচের ঠোঁটে হাত রেখে বললো, "লাইফে তুমি এই একটি কাজ অন্তত সিরিয়াসলি করলে। তোমাকে কমপ্লিমেন্ট দিচ্ছি কিন্তু!"

আমি মৃদু একটু হাসলাম।

লাইফে আমি মানুষের থেকে এরকম বেশ কিছু কম্প্লিমেন্ট কিন্তু পেয়েছি রোদেলা। যদিও সেগুলোকে ঠিক পজিটিভ প্রশংসাবাক্য বলা ঠিক হবে কিনা জানিনা। শুনবে দুই একটা এক্সামপল?

উমমম.... যেমন একবার তিন্নি বলেছিল "আপনি লাইফে একদম সিরিয়াস না কেন?" আবার আরেকবার সূচী বলেছিল, "আচ্ছা, আপনি সব কাজে এত উদাসীন কেন?"

প্লিজ ভেবোনা যে, তিন্নি কিংবা সূচীর প্রতি আমার ক্র্যাশ ছিল কিনা আবার। ওদের থাকলে থাকতেও পারে। মেয়েরা সাধারণত এই ধরণের ন্যাকা ন্যাকা কথা বলে যখন তারা কাউকে অসম্ভব পছন্দ করে।

"কী? আমি ন্যাকামি করি?" রোদেলার চোখে খানিকটা দুষ্টুমি ভরা অভিমান।

"আরে, রাগ হয়োনা লক্ষ্মী মেয়ে। সব কথা নিজের দিকে টেনে নিচ্ছো কেন? তোমাকে এই চিঠিটা লেখার পেছনে কিন্তু ছোট একটা ঘটনা আছে। শুনবেতো?"

দু'হাত দিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রোদেলা বললো "হ্যাঁ, তোমার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুনবো। তুমি বলো প্লিজ।"

এবার তোমরা সাথে দেখা করতে আসলাম যখন। ক্যালগ্যারী থেকে এডমন্টনগামী বিমানে দৌড়াতে দৌড়াতে উঠেছি। আমিতো একজন লেট লতিফ, জানোই সেটা। ফ্লাইট মিস করা আমার সারাজীবনের অভ্যাস। কোন মতে এয়ার কানাডা'র এই ফ্লাইটটা ধরলাম।

ঢাকায় থাকতে লোকাল বাসে উঠেই কন্ডাকটরকে প্রশ্ন করতাম, " মামা, আজিমপুর যাইবেনতো? নাকি রাস্তায় নামায়া দিবেন?" জ্ঞানী মানুষেরা বলে, "কয়লা ধুইলে ময়লা যায়না"। আমিও আর বদলাই নাই। তাই তাড়াহুড়ো করে ফ্লাইটে উঠেই এয়ারহোস্টেজকে অ্যাজ ইউজুয়াল বেকুবের মতো প্রশ্ন করে বসলাম, "ভাই, তোমরা এডমন্টন যাচ্ছোতো?"

বদমহিলা আমাকে দেখে গলার স্বর সপ্তমে চড়িয়ে বললো, " না, না, আমরা হনলুলু যাচ্ছি। তোমাকেও নিয়ে যাবো। পালাবে কোথায়?"

সঙ্গে সঙ্গে প্লেনে বসা যাত্রীদের হাসির রোল পড়ে গেল। ইজ্জতের ফালুদা।

নিজের সীট খুঁজে নিয়ে বসতে গিয়েই দেখি জানালার পাশের আর মাঝের সিট দুইটা দখল করে এক বয়স্ক মহিলা বসে রয়েছেন। মনে মনে তাকে থ্যাংকস দিলাম। কারণ আইল সিটটাই আমি সবসময় প্রেফার করি।

পঞ্চাশ মিনিটের একটা ফ্লাইট। কাজেই হাতে সময় কম। তোমাকে ভালোবাসার কথাগুলো লিখে ফেলতে হবে এর মধ্যেই। কাজেই সীটে বসেই কাগজ কলম হাতে নিয়ে নিলাম। এরপর লেখার কাজ শুরু করলাম।

আনমনা হয়ে লিখছি। এমন সময় খেয়াল করলাম, কে যেন ঝুঁকে পড়েছে আমার ওপরে। চমকে উঠে দেখি সেই সাদা মহিলা। এক গাল হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, "ইয়ে মানে, তুমি কোন ভাষায় লিখছো জানতে পারি?"

আমি বিরক্তমুখে মেকি একটা হাসি দিয়ে বললাম, "বাংলা"।

মহিলা আনন্দে আটখানা হয়ে বললো, "ওহ মাই গড! বাংলা লেখা আমি লাইফে প্রথম দেখলাম। আর তুমি তাহলে নিশ্চই বাংলাদেশী!"

"বাংলা লেখা মানেই বাংলাদেশী হবে এমনটা নয়। কিন্তু হ্যাঁ, আমি বাই বর্ন বাংলাদেশী"।

ভদ্রমহিলা বললেন, "তুমি কী লিখছো, সেটা আমি জানতে পারি কী?"

আমি চিঠির প্রথম কয়েকটি লাইন তাকে ইংরেজি অনুবাদ করে শোনালাম:

"আমার চড়ুই পাখি,

এই মুহূর্তে তোমার দিকে আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। যেন এক অপ্সরা পরী আমার সামনে বসে আছে। 'পরী'র সাথে তুলনা করলাম। কারণ তোমার সৌন্দর্য্যের সাথে তুলনা করার আর কোন ভাষা আমি খুঁজে পাচ্ছিনা। এই একজীবনে সারাটা ক্ষণ যদি তোমাকে সামনে বসিয়ে দেখি, তারপরেও আমার চোখের পিপাসা যেন মিটবেনা।"

সাদা মহিলা হাসতে হাসতে বললেন, "থাক, আর বলোনা। তাহলে তোমার লেখার প্রেমে আমিও পড়ে যেতে পারি। বাই দ্য ওয়ে আমি মেরিয়েম।"

ভদ্রতা করে আমিও হাত মিলিয়ে নিজের নামটা বললাম। ভদ্রমহিলা বললেন, "তোমার দেখি লিখতে প্রবলেম হচ্ছে! আমার কাছে একটা ল্যাপটপ আছে। ওটার ওপরে কাগজ রেখে লিখতে পারো কিন্তু! আমি সুন্দর করে 'না' সূচক মাথা নাড়ালাম।

আমার লেখার ফাঁকে ফাঁকেই ভদ্রমহিলার সাথে গল্প হচ্ছিল। প্রথমে কিছুটা বিরক্ত লাগলেও পরে বুঝলাম যে, ভদ্রমহিলা বেশ রসিক আর আমুদে। তিনি জানালেন যে, তার বিয়েটাও ছিল লা ম্যারেজ আর এক সময় তিনিও তার স্বামীকে প্রচুর লাভ লেটার লিখতেন। ছোটবেলায় তার বেড়ে ওঠা ছিল নিউজিল্যাণ্ডে। আর তার স্বামী ছিলেন এডমন্টনের স্থায়ী বাসিন্দা। এরপর লাভ লেটার লিখতে লিখতে মাত্র বাইশ বছর বয়সে প্রেমের টানে তিনি চলে এলেন এডমন্টন সিটিতে। এবং তার হাজব্যাণ্ড তাকে বিয়ের হাতকড়া পড়িয়ে অ্যালবার্টাতেই রেখে দিলেন। তার স্বামী বেঁচে নেই। কিন্তু সেই লাভলেটারগুলো তিনি স্বযত্নে রেখে দিয়েছেন আজও। এই পঁচাত্তুর বছর বয়সেও তিনি লাভলেটারগুলো মাঝে মাঝেই পড়েন। বার বার ফিরে যান তার সেই বাইশ বছরের যৌবনে। বলতে বলতে ভদ্রমহিলা কেঁদে দিলেন।

আমি কিছুটা বিব্রত হলাম। প্লেনের ঝাঁকুনির মাঝেও চিঠিটা শেষ করলাম।

প্লেন থেকে নামার আগে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, "তোমার ভালোবাসার মানুষটা অনেক সৌভাগ্যবান। তবে তুমিও মনে হচ্ছে আমার মতো এডমন্টনে হাতকড়া পড়তে যাচ্ছো?!"

উত্তরে আমি হেসে বিদায় নিলাম তার কাছ থেকে। আরও অনেক যাত্রীর মতো মেরিয়েমও হারিয়ে যাবে আমার জীবন থেকে। কিন্তু মেরিয়েমের বলা কিছু দাগ কেটে যাবার মতো কথা থেকে গিয়েছে আমার হৃদয়ে।

রোদেলা আমার চোখে চোখ রাখলো। তারপর মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করলো, "তুমিও কী মেরিয়েমের মতো করে কিছু চাও?"

রোদেলার দু'হাতের আঙ্গুলগুলোকে আমার আঙ্গুলের ভাঁজে মিলিয়ে কাছে টেনে নিয়ে বললাম, "ঠিক কি চাই আমি জানতে চাও?"

"মেরিয়েম তার পঁচাত্তুর বছর বয়সেও যে স্মৃতিগুলোকে আগলে রেখেছে, আমি সেভাবে কিছুই চাইনা। আমার ভালোবাসাকে ছাড়া এই পৃথিবীতে একটি দিনও আমি বেশি থাকতে চাইনা। তোমার আগেই বরং আমি এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে চাই।

"সত্যি বলছো?" আমার মুখের কাছে ঝুঁকে পড়ে রোম্যান্টিকভাবে জিজ্ঞেস করলো রোদেলা।

ওকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললাম, "হ্যাঁ রোদেলা। তোমাকে ছাড়া তোমার স্মৃতিকে আগলে রাখার মতো শক্তি আমার নেই, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, সেই ক্ষমতা যেন তিনি আমাকে না দেন কখনোই।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.