নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মত আমি

আসুক যত ঝড় বিপতি বাধা.... উননত করি শির ,নোয়াবোনা মাথা

মাহামুদ রোমেল

মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি তোমাদেরি লোক আর কিছু নয় এই হোক শেষ পরিচয়

মাহামুদ রোমেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুম ঘোরে এক দুপুরে

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৩৩

বারান্দায় বসে আয়েশ করে সিগারেট ধরালাম। ঘুম ঘোর কাটেনি তখনো। বারান্দায় ঠান্ডা বাতাশটা ভালো লাগছে বেশ। রাতে সম্ভবত বৃষ্টি হয়েছে। পাশের নাম না জানা বৃক্ষের পাতাগুলো সবুজে চকচক করছে। বেশ ভালো লাগছে দেখতে। দূরের আকাশে মেঘ জমেছে। ভার হয়ে আছে আকাশ। অন্ধকার হয়ে আসছে পৃথিবী। যেকোন সময় বৃষ্টি নামবে মনে হচ্ছে। কেমন জানি উদ্ভট অথচ মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছে কোথাও থেকে। মানুষ পচা ঘ্রাণের সাথে রাতের হাস্নেহেনার গন্ধ মিলেমিশে একাকার হলে যেমন হয়, ঠিক তেমন একটা গন্ধ। কিন্তু রাতের হাস্নেহেনা এই ভর দুপুরে কোথেকে আসবে? আসেপাশে কোন হাস্নেহেনা গাছ তো চোখে পড়েনি কখনো। আর মানুষ পচা গন্ধই বা আসবে কোথা থেকে! তবে কি আশেপাশে কোথাও মৃত মানুষের লাশ পড়ে আছে? হঠাৎ মনে হলো বাসার ভেতরে কেউ একজন পায়চারি করছে। এবার খট খট খট শব্দ। চেয়ার টানার শব্দ হলে যেমন হয়। আমি কান খাড়া করে ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করলাম। শব্দটা থেমে গেছে। চেয়ারটা দুলছে এখন। রিভলবিং চেয়ারে আরাম করে দোল খাওয়ার মত দুলছে। কে হতে পারে? এ অসময়ে বাসায় কেউ থাকে না। থাকার কথা নয়। কেউ নেই। তবে কি.........। নাহ! কি সব হাবিজাবি ভাবছি। উঠে গিয়ে দেখলেই হয়।
হাতের সিগারেটটা শেষ হয়নি। গতকালের বাসি সিগারেট। নিকোটিনগুলো মরে পচে গেছে। ধোঁয়ার মিছিল তেড়ে তেড়ে আসছে আমার দিকে। হাত দিয়ে সরিয়ে নিজের মুখ বাঁচাই, চোখ বাঁচাই। হঠাৎ ধোঁয়ার মিছিলটাকে বেশ আক্রমনাত্বক মনে হলো। মনে হলো ধোঁয়ার গভীর থেকে কিছু একটা তেড়ে আসছে আমার দিকে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমি। যেমন করে হায়না তীক্ষ গতিতে তেড়ে আসে শিকারের পিছে। ঠিক সেভাবেই তেড়ে আসছে। বেশ লোমশ শরীর, চোখ নেই, নাক নেই, ব্রু নেই। দাঁত বড় বড়, রক্ত বর্ণের। লম্বা লম্বা কান যেনো পা ছুঁয়েছে। আমি কিছুটা হকচকিয়ে গেলাম। চোখে ভুল দেখছি না তো! চোখ দুটো বন্ধ করে ভাবলাম। আমি কি ঘুমিয়ে আছি? স্বপ্ন দেখছি না তো? রিভলবিং চেয়ারটা দুলছে তখনো। স্পষ্ট শব্দ শুনতে পাচ্ছি আমি। শব্দটা হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেল। পরিচিত দু-লাইন গানের সুরের মত। আহা! এমন সুন্দর সুর। এমন প্রিয় সুর। আমি গানের চরণ দুটি মনে করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু মনে করতে পারছি না। কার গান! রবীন্দ্রনাথ? শ্রীকান্ত? না! এই সময়ের আধুনিক শিল্পীর কোন গান হবে। এমন পরিচিত গান, কিন্তু মনে করতে পারছি না কেন? সুরটা বেজেই চলছে। মাঝে মাঝে থেমে আবার চলছে অবিরাম। সুরটা ভালো লাগছে এবার। আকাশের অবস্থা খারাপ হচ্ছে দ্রুত। বাতাশ বেড়েছে। ঘ্রানটা কমে এসেছে। তবে মনে হচ্ছে ঘ্রাণটা ভিতর থেকে আসছে এবার। তবে কি ভিতরে......? অসম্ভব। ভিতর থেকে এটা আসতেই পারে না। আবার হয়ত আসছে। আসতেই পারে। ওপাশের জানালাগুলো খোলা আছে। বাতাশের সাথে মিশে থাকা গন্ধটা জানালার ফাঁকে ভিতরে প্রবেশ করে দেয়ালে রিপ্লেক্ট করে বের হয়ে আসছে হয়ত। আমি অংক মিলানোর চেষ্টা করলাম। একবার উঁকি মেরে দেখব কি? হ্যাঁ, দেখা যায়। ভিতরটা একবার ঘুরে আসা যায়। সুরের উৎপত্তিস্থল আবিষ্কার করা যায়। দোল-এর রহস্য উদঘাটন করা যায়। আমি উঠে দাঁড়ালাম। ঘরময় রাজ্যের অন্ধকার। ইলেক্ট্রিসিটি নেই। বাইরে দমকা হাওয়া বইছে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আমি দাঁডিয়ে আছি। হঠাৎ সুরটা থেমে গেলো। তারপর চেয়ার টানার খট খট খট শব্দ। শব্দটা সজোরে এসে দূরে সরে গিয়ে থামল যেন। লাশ পচা গন্ধ আরো তীব্র হয়েছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। বুক ধকধক করছে। হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। নিজের চেনা জগৎটাকে অচেনা মনে হচ্ছে।
আমি বেরিয়ে আসলাম দ্রুত। প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিলাম। ঘুম ঘোর কাটেনি তখনো। আমি চোখ বন্ধ করে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলাম। জানি, সব ভয় কেটে যাবে। দূর হবে সব সংশয়। বৃষ্টি নামুক শহরে। আমি বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.