নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্তব্ধ বাউল

স্তব্ধ বাউল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতার পথে......

০২ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ২:২৩

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তরুন পেসার বল নিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন, আমরা সবাই টিভির পর্দার সামনে টান টান উত্তেজনায় বসে আছি শুধু একটি জয়ের অপেক্ষায়,বল করলেন- প্রতিপক্ষের শেষ উইকেটের পতন—সাথে সাথে পুরো বাংলাদেশ যেন গর্জে উঠলো মহা-আনন্দে,কারন- বাংলাদেশ জয় লাভ করেছে,জয়ী হয়েছে আমাদের ছেলেরা।

উপরের কথাগুলো লেখার সময় গায়ে কেমন যেন শিহরন হচ্ছিল-আসলেই তো দেখতে কত না ভাল লাগে আমাদের ছেলেদের খেলায় জয়লাভ করতে!  কিন্তু একবার চোখ বুঝে যদি ১৯৭১ এর যুদ্ধের ৯টি মাসের কথা চিন্তা করি-থাক, ৯ টি মাস অনেক বড় সময়- চিন্তা করে দেখা যাক শুধু একদিন স্টেনগান দিয়ে শত্রুবাহিনীকে পরাজিত করে দেয়ার কথা অথবা স্বাধীনতার দাবিতে একদিনের সেই বজ্রদীপ্ত শ্লোগানগুলো। আজো পতাকার দিকে তাকালে বাংলাদেশ নামটি গর্ব করে চিৎকার দিয়ে বলতে খুব ইচ্ছা করে।এই স্বাধীনতার নেপথ্যে কারা ছিল??? প্রশ্নটি খুব সাধারন কিন্তু এর উত্তর ব্যাপক এবং খুব মাহাত্নপুর্ন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তখন উত্তাল, ২৫শে মার্চ কাল রাতের ভয়াবহ নৃশংসতার সাক্ষী পুরো দেশ। ২৬শে মার্চ জুবেরী হাউসে এক লোক ঘুমাচ্ছিলেন-হয়তো শঙ্কার আড়ালেই কিছুটা বিশ্রাম নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা তার। হটাৎ দরজায় খট খট শব্দ। দরজা খুলে দেখলেন বেয়নেট উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী । নিয়ে যাওয়া হল উপাচার্যের বাসভবনে।  উপাচার্য কেন যেন তাকে ছেড়ে দিতে বললেন। হয়তো ভাগ্য তার সহায় ছিল তখন , ছাড়া পেয়ে গিয়ে উঠলেন ডক্টর মজুমদার এর ফ্ল্যাটে।  মজুমদার সাহেব তাকে অনুরোধ করেছিলেন দেশ ছেড়ে তাদের সাথে ভারতে চলে যেতে কিন্তু দেশকে যিনি অনেক ভালবাসেন তিনি কি আর দেশের মায়া ত্যাগ করতে পারেন???

এরপর সইতে হয়েছে অনেক অত্যাচার,অনেক নৃশংসতা- কারন একটি চিঠি যার মধ্যে তিনি কেটেছিলেন তার সাহসিকতার আঁচর। কিন্তু চিঠিটি যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে পরে ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় অত্যাচারের বুল্ডোজার।  সবশেষে ১৯৭১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

এতক্ষন যার কথা লিখছিলাম উনি আসলে আমাদের সমাজে এখন আর তেমন কেউ নন, এখন ঠিকমত দাঁড়াতেও পারেন না।  উনার নাম অধ্যাপক (অবঃ) মজিবর রহমান-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন গণিতের অধ্যাপক। তার আর একটি নাম আছে যা হিসেবে তিনি ব্যপক পরিচিত বলে তা কি জানেন???- দেবদাস,হয়তো বাংলার বুকে আক্ষেপ নিয়ে বেঁচে থাকা এক দেশপ্রেমিক। চলতি বছরের ১৯শে ফেব্রুয়ারী তিনি একুশে পদক পান। এখন আমার প্রশ্ন পাঠক সমাজের কাছে যদিও আমিও একজন পাঠক- আমাদের তো তারা অনেক দিয়েছেন, আমরা কি তাদের যোগ্য সম্মানটুকু দিতে পারি না???

যেভাবে উত্তেজনা নিয়ে খেলা দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ি,সেভাবে একটু সময় বের করে এদের কি আমরা খোঁজ-খবর নিতে পারি না ? আজ লোকটি সম্পুর্নভাবে ভারসাম্যহীন-কিন্তু আমি বিশ্বাস করি তার বুকে আজও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে যাবার অদম্য শক্তি রয়েছে। চলুন না তার নিকট থেকে একটু শক্তি নিয়ে এসে আমাদের বুকে ধারন করে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই? এরকম আরও কত দেবদাস ছড়িয়ে রয়েছেন আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে- ক্ষতি কি তাদের আদর্শ বুকে নিয়ে অন্যায়কে রুখে দাড়াতে???

আমি বিশ্বাস করি আমরা পারব, আমি বিশ্বাস করি তারা আমাদের উজ্জীবিত করবেন সারাজীবন।  মজিবর রহমান এখনো হাসতে পারেন,দেবদাস এখনো হেসে উঠেন- আমরা তাকে হাসাবোই, আমরা তাদের মুখে হাসি নিয়ে আসবই। এই প্রতিজ্ঞা রইল তাদের প্রতি, দেশের প্রতি,নিজের প্রতি………

  অধ্যাপক মজিবর রহমান ও সকল মুক্তিযোধ্যাদের প্রতি শ্রদ্ধ্যা জানিয়ে………

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.