নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা স্যার

সুব্রত বৈরাগী

সুব্রত বৈরাগী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সহযাত্রী

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:১৩


গোপালগঞ্জ থেকে আধা ঘণ্টা হলো গাড়ি ছেড়েছে। গাড়ি প্রায় টেকেরহাটের কাছা-কাছি। প্রান্ত ব্যাগটা টেনে নামাল। পাশের লােকটি তা মােটেও পছন্দ করল না। প্রান্ত ব্যাগটা কােলের উপর নিল।
টেকেরহাট হতে চন্দ্রা গাড়ির টিকিট কিনল। বাসে উঠে গেল। জানালার পাশে সীট। ব্যাগটা গাড়ির সানসেটে রাখল। একটু আরাম করে বসল। এখন আর তাড়া-তাড়ি গাড়ি বদলাতে হবে না। সময় মতো একটু ঘুমনোও যাবে।
সময় সাড়ে এগারোটা। গাড়ি ছাড়বে। তড়ি-ঘড়ি করে উঠলো এক ভদ্রমহিলা। উঠেই গাড়ির সীট খুঁজতে লাগল। প্রান্তকে বলল, “উঠুন। এটা আমার সীট।”
“মামা বাড়ির আব্দার?”
“ক্যানো? টিকিট দেখান?”
“আপনাকে দেখাবো ক্যানো? আপনি কি সুপারভাইজার? তাহলে সীট খুঁজছেন ক্যান? দাঁড়িয়ে থাকুন।”
“মেজাজ গরম করবেন না।”
“আপনিতো সেটাই চেষ্টা করছেন।”
“আমার টিকিট দেখবেন?”
“আমিতো সুপারভাইজার নই।”
সুপারভাইজার এলো। সমাধানের চেষ্টা করল। কিন্তু কেউই তার কথা শুনছে না। টিকিট কাউণ্টার থেকে লােক এসে টিকিট দেখল। মহিলাকে বলল, “আপনার গাড়ি এর পরের টা। যদি এ গাড়িতে যেতে চান তবে পাশের সীটেই বসতে হবে। আর কােন সীট খালি নেই।”
মহিলা ধপাস করে বসল। ব্যাগটা কাছে-কাছে টানল। প্রান্ত বলল, “ব্যাগটা টেনে দেবো?”
মহিলাটি চােখ গােল করে তাকাল।
“আমার কি দােষ বলুন? আপনি মিছা-মিছি আমার উপর রাগ করছেন।”
গাড়ি ছাড়ল। প্রান্ত একটু ঘুমতে চেষ্টা করল। ঘুমের ভাব এলো। মেয়েটি প্রান্তকে ধাক্কা দিয়ে, “শুনুন। আমার ব্যাগটা একটু সীটের নিচে ঢুকে দিন।”
“তখনইতো বলেছিলাম।”
প্রান্ত উঠে ব্যাগটা ধরে দেখল ভারী ওজন। বলল, “একি! দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন নাকি?”
“তাতে আপনার কি?”
“না। অনেক ভারীতো তাই বলছি।”
ব্যাগটা সীটের নিচে রাখল। এখন পা রাখা একটু সমস্যা। ব্যাগের উপর ভর দিতে হবে। প্রান্ত এবার মেয়েটির দিকে সমান্য তাকাল। মেয়েটি বেশ সেজেছে। মনে হলো তার প্রেমিককে দেখানোর জন্য বেরিয়েছে। মেয়েটি এবার একটু হাসল। প্রান্ত বলল, “রাগ পড়লে সীট বদল করতে পারেন।”
মেয়েটি বসতে বসতে বলল, “আমি পশলা।”
“মেজাজের সাথে নামের গড়মিল আছে।”
“আপনার সুচালো কথা গায়ে খোঁচা দিয়েছে। তাই গাটা একটু গরম হয়ে উঠছে।”

পশলার মােবাইলে ফােন এলো। সে ফােন রিসিভ করল। প্রান্ত এবার তার দিকে পরিপূর্ণ তাকানোর সুযোগ পেল। মেয়েটা মাঝারি গরনের, ফর্সা এবং সুশ্রী। যথেষ্ট মেকাপ নিয়েছে। এটা মনে হয় তার জন্য সর্বোচ্চ সাজ। পােশাকটা একটু গড়মিল আছে। এ গড়মিল তাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলছে। স্বাস্থ্যটা ভরাট। একেবারেই মেয়েলি গঠন। খানিক তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। মন গােপনে নিয়ে যায় ওর লুকিয়ে থাকা অঙ্গের দিকে।
মেয়েটির কথা শেষ হচ্ছে না। প্রান্ত ঘুমিয়ে পড়ল। কাওরাকাঁন্দি এলে মেয়েটি ডাকল, “শুনুন। চলেন, গাড়ির রাস্তা শেষ লঞ্চে উঠতে হবে।”
প্রান্ত চােখ মুছতে মুছতে মেয়েটির ব্যাগটা বের করে দিল।
লঞ্চের এক কােণে দুজনে বসল। দুজনের ব্যাগও এক জায়গায় রাখল।
পশলা বলল, “আপনার নামটা জানা হলো না কিন্তু।”
“আমি প্রান্ত।”
“ঢাকা যাবেন?”
“না। সিলেট।”
“তাই নাকি?”
“ক্যানো?”
“আমিও যাচ্ছি। ভালোই হলো। ভ্রমণটা ভালোই হবে।”
“যেমন?”
“আপনার সাথে পরিচিত হয়ে গেলাম। আসলে দূর পাল্লার ভ্রমণে একজন সঙ্গী হলে ভ্রমণটা উপভোগ্য হয়। পথে কােন ক্লান্তি আসে না। একটা অজানা ইমেজ গন্তব্য পর্যন্ত শান্তির সহায়ক হয়।”
“আপনি বুঝি ভ্রমণে অভিজ্ঞ?”
“না না। আপনার সাথে পরিচিত হতে হতে বিষয়টা টের পাচ্ছি। কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। আপনার ফেসবুক একাউণ্ট আছে?”
“না।”
“কন কি? খােলেন।”
“পারিনা।”
“মোবাইলটা দেন।”
প্রান্ত মােবাইলটা দিল।
লঞ্চ থেকে নামল। গাড়িতে উঠল। আবার গাড়ি পরিবর্তন করতে হবে।

দুজনে সায়েদাবাদ এলো। কােম্পানিগঞ্জের গাড়ি রাত সাড়ে এগারোটায়। এখন মাত্র একটা বাজে। এতো সময় এখানে কাটানো যাবে না। এম. আর. গাড়ির টিকিট কিনে ব্যাগ দুটো নিরাপত্তায় রাখল। প্রয়োজনী জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
প্রান্ত বলল, “কোথায় যাবেন?”
“লালবাগ অথবা রমনায়।”
“নবাব বাড়িও যাওয়া যায়।”
“লালবাগ এবং নবাব বাড়ি বন্ধ থাকতে পারে কিন্তু রমনা সব সময়ই †খালা।”
একটা গাড়িতে চেপে বসল। প্রচণ্ড জ্যাম। রমনায় পৌঁছাতে অনেক সময় লাগল। ভেতরে ঢুকে দুজনে বসল। গরমে দুজনই কাহিল।
প্রান্ত বলল, “আপনার এতো সাধের সাজ কিন্তু গলে গেছে।”
“সাজ গলেছে বলেই আমি খাঁটি হয়েছি।”
“আপনারা অতো সাজেন ক্যান?”
“পুরুষের চােখ থামানোর জন্য।”
“সবার চােখ যদি এক জায়গায় থেমে যায় তাতেতো বিপদ।”
“হাজার নরের নজর কাড়াই আমাদের শরীরের †সৌন্দর্য। আমাদের পােশাকের ফাঁকে ফোঁকরে শরীরের যে অংশ তাকিয়ে থাকে তার চাইতে বেশি লােকের চােখ সেদিকে তাকিয়ে থাকে। আবার তাকানোর সুযোগ খোঁজে।”
“একাকী এতো সাজতে নেই। তাতে নজর আরো বেশি পড়ে। কেউ একজন সাথে থাকলে সে নজর একটু ব্যাতিক্রম হয়।”
“এ দেহ কারো জন্য কিন্তু সৌন্দর্য সবার জন্য।”
“আপনাকে আমার ভালো লাগে। এখন যদি আমি একাকার হয়ে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকি আপনার ভালো লাগবে?”
“আমি যদি আপনার দিকে তাকাই আপনি কি আমার দিকে তাকাতে পারবেন? এর নামই লজ্জা।”
“তবে এতো সুন্দর করে সাজার কি মানে?”
“ক্ষণিক আকর্ষণ। আপনি যদি অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন তবে আপনার চােখে সৌন্দর্য মুছে যাবে। আপনার মনে অন্য কিছু জাগবে।”
“ফুল থেকেই ফল। সৌন্দর্যের চােখেই আবেগ। দেহের সৌন্দর্যটা কেবল আবেগ জাগানো। পুরুষের শরীর হলো ম্যাচের কাঠি আর নারীর শরীর হলো ম্যাচের বাক্সের সেই অংশ যেখানে ঘষা দিলে আগুন জ্বলে। খালি কাঠির জ্বলার ক্ষমতা নেই। তাকে আবেগে ঘষে নিতে হবে।”
একজন বাদাম নিয়ে এলো। তারা দশ টাকার বাদাম কিনল। বাদাম খেতে খেতে পশলা জিজ্ঞেস করল, “বিয়ে করছেন?”
“কি মনে হয়?”
“শরীরের সৌন্দর্য যে পুরুষের চােখে সে বিবাহিত হতে পারে না। যথেষ্ট বয়স হয়েছে বিয়ে করেননি ক্যানো? বিয়ে করলে এতো সৌন্দর্য চােখে ধরতো না। দূরের পাল্লার যাত্রী নিশ্চিন্তে ঘুমতেন।”
“বেকারের বউ থাকবে না বলে।”
“সারা জীবনই যদি কারের ব্যবস্থা না হয় তবে কি করবেন?”
“শুধু সৌন্দর্য দেখে দেখে চােখের সাথে মনও ভরবো।”
পশলা একটু নীরবে প্রান্তর চােখের দিকে তাকাল। প্রান্তও ওর দিকে তাকাল।
সময় কমে আসায় দুজনে বেরিয়ে পড়ল। একটু খাওয়ার দরকার। একটা হােটেলে ঢুকল। পশলা বলল, “আপনি বেকার। বিলটা কিন্তু আমি দেবো।”
প্রান্ত এবারো মেয়েটির দিকে তাকাল।
সাড়ে এগারোটায় গাড়ি ছাড়ল। এবার দুজন একটু মিশে বসল। পশলা প্রান্তর দেহের স্পর্শ পেয়ে একটু হাসল।
পশলা বলল, “কি জন্য যাচ্ছেন জানা হলো না কিন্তু?”
“একটা কাজে।”
“নতুন?”
“হ্যাঁ।”
“পরিচিত কেউ আছেন?”
“না। মােবাইলে।”
“বাবা-মা আছেন?”
“আছে।”
“আমারও আছে। আমি ইণ্টার মিডিয়েট পড়ি। বাবা-মা বিয়ে দিচ্ছেন বলে ঘর ছেড়েছি।”
“দারুণ খবর। পালাচ্ছেন ক্যান? হারে, মেয়েদের বিয়ে মানেতো জীবনের দায় মুক্ত। চিনির বস্তার মত একজনের ঘাড়ে চেপে বসবেন। চিনি গলার লােভে সে সারা জীবন আপনাকে বয়ে বেড়াবে।”
“সেই খুশিতে।”
“পরিচিত কেউ আছেন?”
“ফেসবুকের মাধ্যমে।”
ভৌরব এসে গেল। গাড়ি থামল। এখানে এক ঘণ্টা গাড়ি দাঁড়াবে।
প্রান্ত বলল, “নামবেন?”
“চলেন।”
ভরা জােছনা। আকাশ আর মাটি একাকার হয়ে গেছে জােছনার আলোয়। মৃদু মৃদু বাতাস বইছে। দুজন রাস্তার পূর্ব পাশে দাঁড়াল। বাতাসে পােশাক দুলছে। পশলার চুলগুলিও এলো-মেলো হয়ে এলো। প্রান্ত পশলার দিকে তাকাল। পশলাকে হঠাৎ কেমন যেন মনে হলো। মনে হলো বাতাসের পাখায় ভর করে পশলা এক নতুন পথে একাকী হাঁটছে। দিগন্তের ছায়া ওর পিছনে পড়ে গেছে। ওর সমস্ত অঙ্গে রেশমী চুরির আওয়াজে ঝড় তুলছে। কাউকে সঙ্গী হতে ডাকছে।
প্রান্ত বলল, “এভাবে আসা কি আপনার ঠিক হলো?”
“আমি তাকে বিশ্বাস করি।”
“কখনও কখনও বিশ্বাস হারিয়ে যায় আর তখনই মানুষ কাঁদে। সে কান্নায় কাউকে দােষী করা যায় না।”
“আমি কি ভুল করেছি?”
“বিশ্বাস থাকলে ভুল করেননি।”
“আমি কি এতোটুকু বিশ্বাস করতে পারি না? তাছাড়া সেই আমাকে আসতে বলছে।”
গাড়িতে হর্ণ বাজল। দুজনে গাড়িতে উ?ল। এবার যেন পশলার একটু ঘুমের ভাব এলো। প্রান্তর কাঁধের উপর ঘুমে পড়ল। প্রান্ত ভাবল এটাও কি বিশ্বাস? এ বিশ্বাস ভঙ্গুর। যৌবনের উপর বিশ্বাস রাখা যায় না। এ আগুন জ্বলে উঠতে পারে।

সকাল আটটায় গাড়ি কােম্পানিগঞ্জ এলো। গাড়ি থেকে নামল। পশলা বলল, “চলেন, এক সাথে খাই।”
একটা সাধারণ হােটেলে তারা খেয়ে নিল। এবার আলাদা হওয়ার পালা। পশলা প্রান্তর হাত টেনে ধরল। বলল, “আমাদের পথ যদি শেষ না হোত বড় ভালো হােত।”
“ছোট পথ তাই এতো সুন্দর। লম্বা পথ সুন্দর হয় না। তাছাড়া আপনি কিন্তু আপনার ফেসবুক বন্ধুর কাছে আসছেন।”
“আপনি আমার †স বিশ্বাসে একটু ফাটল ধরিয়ে দিয়েছেন।”
“আচ্ছা, ভালো থাকবেন।”
“আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জানলেন না?”
“বলুন।”
“Pashla”

কোম্পানিগঞ্জ থেকে ঢাকা আসার গাড়ি মাত্র একটি। এম. আর. ছাড়া আর কােন গাড়ি যায় না। রাত আটটায় আবার গাড়ি ঢাকার দিকে রওনা হবে।
সন্ধ্যায় প্রান্ত এসে দেখল পশলা স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে, “কি হলো?”
“আপনার কথাই ঠিক। আজ সারা দিন ওর মোবাইল বন্ধ।”
“এখন কােথায় যাবেন?”
“আপনি একটা পথ দেখান।”
“আমিইতো আমার পথ হারিয়েছি। চাকরিটা হয়নি।”
“আপনি কি এ গাড়িতে আবার ফিরবেন? আমি আপনার সাথে যেতে চাই। আমি এখন নিরুপায়।”
“এ গাড়ির পথ ছােট। চলুন আমরা আরো দীর্ঘ পথ হাঁটি।”
পশলা প্রান্তর পাশে এসে দাঁড়াল। নীরবে প্রান্তর মুখের দিকে তাকাল। সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়ে প্রান্তর বাম হাতটা ধরল। ওর সমস্ত শরীর তির তির করে কাঁপছে।
নিজবাড়ি
২৫/০৬/২০১৬ইং

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৫৩

রিএ্যাক্ট বিডি বলেছেন: হমমমমমম

২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫২

আইশা কবির বলেছেন: আমাদের বাড়ি টেকেরহাট

৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৪৩

জগতারন বলেছেন: আমার বাড়ী টেকের হাট। আমার মণে হয় লেখকের বাড়ী সাতপাড়।

৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমার বাড়ি বিক্রমপুর, মুন্সিগঞ্জ।
কিন্তু আমি টেকের হাট মোল্লার হাট মোড়ল গঞ্জ সব জাগাতেই গিয়েছি।

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫০

সুব্রত বৈরাগী বলেছেন: আমার বাড়ি কাশিয়ানী থানার (গোপালগঞ্জ) রাজপাট ইউনিয়নের পাঁচকাহনীয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.