নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা স্যার

সুব্রত বৈরাগী

সুব্রত বৈরাগী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্য জন ভিন্ন মন

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০৮


ইতিদের ছােট্ট বাড়ি মাত্র দুটো ঘর। ইতিরা আর মিতুরা। লােক সংখ্যাও খুবই কম। ইতির বাবা মা আর ঠাকুর মা। মিতুর মা আর এক ভাই রিপন। গ্রামীণ পরিবেশ। সবাই সরল সহজ। একদিন ইজি বাইকে বসে শ্রাবণ নামের একটা ছেলের সাথে মিতুর পরিচয় হয়। ছেলেটা দেখতে নিরীহ, নীরবী। ওদের মত সহজ সরল। কথা কম বলে। ইজি বাইক ছাড়তে দেরী বলে হঠাৎ কি নিয়ে যেন তারা কথা তােলে।
কয়েকদিন পর ছেলেটার সাথে আবার দেখা হয়। বােধ হয় এখানে ছেলেটা কিছু একটা করে। মিতুর তা জানার ইচ্ছে হলো না। আগের দিনের মত কিছু কথা হলো।
জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাবেন?”
“রাহুথড়।”
“কাদের বাড়ি?”
“জীবনদের বাড়ি।”
“এইতো আমাদের বাড়ির পাশে।”
শ্রাবণ মিতুদের বাড়িতেও গেল। মিতুর সাথে কথা বলতে †দখল পাশের ঘরের মেয়েটি তার দিকে নীরবে তাকিয়ে আছে। সেদিকে কয়েকবার তাকালো। মেয়েটির চােখের কােন পরিবর্তন নাই।
এভাবে কয়েকদিন আসা যাওয়া হলো। শ্রাবণ ইতির দিকে তাকাক মিতু তা চায় না। মিতুদের সাথে ওদের মেশে না। মিতুর দাদা ইতিকে পছন্দ করে এই কথা জানাজানি হলে ইতি ওদের সাথে আর কথা বলে না।
হঠাৎ একদিন শ্রাবণের সাথে ইতির †দখা হয়। বার বার দেখতে দেখতে ইতির মুখখানা পরিচিত হয়ে গেছে। নিঃসংকোচে কথা বেরিয়ে গেল।
“কেমন আছো?”
“ভালো।”
“কোথাও গিয়েছিলে?”
“বাজারে।”
“চলো। তােমাদের বাড়ির দিকে যাব।”
“মিতু দেখলে ভালো হবে না।”
“কেনো?”
“আমাদের সাথে ভালো সম্পর্ক নেই বলে।”
“তাতে আমার কি?”
“সেটা বলা মুসকিল।”
“তোমরা ওদের সাথে মেশো না কেনে?”
“আমার যদি কাউকে ভালো না লাগে আপনি কি সেটা জাের করতে পারবেন?”
“না। তা করবো কেনো?”
“আমার বাবার আয় রােজগার কম। তাই তারা যা খুশি আমাদের তাই ভাবে।”
“আচ্ছা, আজ তােমাদের ঘরে যাব দেখি কি ঘটে। নাকি তােমার আবার সমস্যা আছে?”
ইতির সমস্যা আছে। তবু মিতুকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য বলল, “আমার কােন সমস্যা নেই। আপনার হবে।”
শ্রাবণ আজ ইতির সাথে উঠল। মিতু সেটা দেখল। মুখের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একটা কথাও বলল না। শ্রাবণ বুঝে উঠতে পারল না ব্যাপারটা কি? সে তাদের কে? তাদের কারোই কেউ নয়। শুধু রাস্তার পরিচয়। তাকে কেউ ভালো করে চেনেও না। কি উদ্দেশ্যে ছেলেটা ঘােরে সে খবরও কেউ নেয়নি।
মিতু এখন আর শ্রাবণের সাথে কথা বলে না। শ্রাবণ একদিন বলল, “কেমন আছো?”
“যারা ভুলোনি কথা কয় তাদের কাছে যান। আমার কথা শােনার দরকার নাই।”
শ্রাবণ এখন প্রায়ই ইতিদের বাড়িতে আসে। ইতি ছাড়া ইতির ঠাকুর মার সাথেও তার চরম ভাব। এখন লােকজনের কিছু বলার নেই। শুধু মিতু একটু আড় চােখে তাকায়।
ইতি দিন দিন শ্রাবণের আপন হয়ে দাঁড়ায়। কারণে অকারণে শ্রাবণের প্রতীক্ষা করে। শ্রাবণ এলে সকল কথা গুলিয়ে ফেলে। অনেক সময় কথাই বলে না। কি যেন ভাবে। ঠাম্মা ব্যাপারটা বুঝতে পারে। কিন্তু শ্রাবণকে কিছু বলতে পারে না। তাই গােপনে গােপনে ইতির জন্য পাত্র দেখে।
আজকাল বিনা পয়সায় পাত্র পাওয়া সম্ভব নয়। অন্তত বিয়ের খরচ বিশ চল্লিশ হাজার টাকা দরকারই। ইতির বাবার কােন ব্যাবস্থা নাই। অবশেষে রিপনের সাথেই বিয়ে দিতে রাজী হয়। মিতু বাদ সাধে। কিন্তু, রিপনের পছন্দের সাথে পেরে ওঠেনা।
বিয়ের আলোচানা এগিয়ে যায়। কিন্তু শ্রাবণের যাওয়া আসা কমে না। আগের মতই চলে। সেদিন মিতু বাড়িতে নেই। ইতিকে কেউ চােখে চােখে রাখবে না। আড়ি পেতে শােনার কেউ নেই তারা কি বলছে।
ইতি বলল, “আমার প্রতি কি আপনার কােনই অনুভূতি জাগে না? আমি এভাবে এতো দূর পর্যন্ত এসেছি কেবল আপনার অনুভূতিকে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।”
“রিপন, তােমাকে অনেক ভালোবাসে।”
“কিন্তু, আমি কেবল তাে-তোমাকে চাই। তােমাকে ছাড়া আমি ওকে ভাবতে পারি না।”
“তবে ওকে আশা জাগালে কেনো?”
“আমি ওর আশা জাগাইনি। আমি জানি ওর সাথে এমনটি করলে তুমি আমাকে হারানোর ভয়ে আরো কাছে চাইবে।”
শ্রাবণ নীরব কােন কথা নেই।
“কেনো, তুমি কি চাও?”
“তুমি ওর মাঝে সুন্দর জীবন কাটাও।”
“কেবল একজনের চাওয়ায় ভালোবাসা সুন্দর হয় না।”
“তোমার চাওয়া আমি পূরণ করতে পারবো না।”
“কেনো?”
“কারণ, আমি বিবাহিত।”
“সত্যি বলছো?”
“হ্যাঁ।”
“তবে আমাকে নিয়ে এমন করলে †কনো?”
“ওর (স্ত্রী) মাঝে আমি যেটা পাইনি তা অন্যের মাঝে খুঁজছিলাম। যাচাই করতে চাইছিলাম সকল নারী এক কিনা।”
“কি পেলে?”
“আমি তােমাকে আমার চাওয়ার মত করে †পয়েছি।”
“কিন্তু আমাকে শেষ করে। তুমি তােমার ঘর মজবুত করতে আমার ঘর ভাঙ্গলে?”
“এ ঘর ভাঙ্গাই ছিল। নতুন ঘর মজবুত করে বাঁধো। যাতে না ভাঙ্গে।”
“তুমি পারবে আমার সেই সামর্থ্য আমায় ফিরে দিতে?”
“সামর্থ্য শক্তির উপর নির্ভর করে সম্পর্কের উপর নয়। তুমি চেষ্টা করো।”
“এই মুহুর্তে আমার অসহায় কান্না ছাড়া আর কিছুই নাই। আমি কাঁদতে চাই। তুমি চলে যাও।”
“তোমাকে যেদিন থেকে ভালো লেগেছিল সেদিন থেকেই বুঝতে পারছি এটাই আমার বেদনা। নারীরা যদি এমন হতে পারে আমার স্ত্রী পারল না কেনো?”
“যেমন আমি আর পারবো না।”
“মানুষের জন্ম একবার কিন্তু জীবন দুটো। একটা বিয়ের আগে আরেকটা বিয়ের পরে। বিয়ের আগের জীবন সে কেবল রঙিন স্বপ্ন আঁকা আর বিয়ের পরের জীবন বাস্তব মুখর পৃথিবী। তাছাড়া, বিয়ের আগে মানুষ ঘর বাঁধতে শেখে ঘর বাঁধেনা। ঘর বাঁধে বিয়ের পরে। তােমার বিয়ের পরের দিন তােমার স্বামীই তােমার সব। তুমি যে ঘর বাঁধবে আমি কেবল সে ঘর বাঁধতে শিখিয়েছি। এখন তুমি ঘর বাঁধবে।”
শ্রাবণ চলে গেল। ইতির দুই চােখে বাঁধন মানল না। ঠাম্মা এসে বলল, “আমি জানতাম, এমন একটা ঘটনা ঘটবে। যে মনের মূল্য দেয় না মিছে তার জন্য চােখের জল। এ জল মুছে ফেল।”
“ঠাম্মা, ও আমাকে কাঁদিয়ে গেল। কেমন করে সে জল মুছে ফেলি?”
“ও যেমন করে চলে গেল।”
শ্রাবণ বাড়িতে এলো। সাথী নীরবে বসে আছে। শ্রাবণ পাশে বসল। বলল, “তোমাকে আজ একটু অন্য রকম সাজাতে চাই।”
“পারব না। আমি আমার মত করে সাজতে চাই।”
“তা হলেতো হলো না।”
“কি হলো না?”
“তুমিও তােমার মত করে আমাকে পেলে না। আমি অন্যেরই রয়ে গেলাম।”
১৪.১২.২০১৪ইং
তেঁতুলিয়া, কাশিয়ানী, গােপালগঞ্জ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.