নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা স্যার

সুব্রত বৈরাগী

সুব্রত বৈরাগী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাবনায় কেবল মেয়ে

১৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৬



আজ বিকেলে বাজার থেকে এসে রঞ্জনের ঘুম আসছে না। বড় একটা চিন্তায় পড়ে গেল। মাস কাবারী টাকায় তার মাস চলবে না। দ্রব্য মূল্যের দামের সাথে খাপ খাইয়ে সরকার বেতন দিচ্ছে না। নীরবে এক ভাবে পড়ে আছে।

রুমার মাথায় খুন চড়ে যাচ্ছে। এই লােকটার সাথে ঘর করে একদিনও শান্তি পেলাম না। আমাকে ছাড়া অন্য মেয়ে যদি বেশি ভালো হয় আমাকে বিয়ে করার কি দরকার ছিল? অন্য মেয়ে হলে এমন স্বামীর ঘর একদিনের বেশি দুই দিন করতো না। কেবল আমি বলে ঘর করছি।
রুমা কেবল এপাশ ওপাশ করছে। আরেকটা চিন্তা ওর মাথায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ঘুম তাকে ছেড়ে বহুদূরে পালিয়ে গেছে। রঞ্জন কিন্তু ভাবতে ভাবতেই ঘুমে গেছে।

রুমা সকালে ঘুম থেকে জেগে মুখ গম্ভীর করে নীরবে কাজ করে চলছে। রঞ্জন ঘুম থেকে জেগে দেখল অনেক বেলা হয়ে গেছে। তড়ি-ঘড়ি করে জেগে রুমাকে বলল, “তুমি আমাকে ডাক দাওনি কেনো?”
“অনেক মানুষকে ভেবে একটু শান্তিতে ঘুমইছো তাই বিরক্ত করি নাই।”
রঞ্জন বুঝল কাজ হয়েছে। আর কােন কথায় কাজ হবে না। মেয়েদের এই একটা দােষ সে যা বুঝবে তাই বুঝবে কারো সাথে শেয়ার করবে না। এমন ভাব দেখাবে যে সে অনেক বুদ্ধিমতী। সে যা বুঝছে তা বােঝার ক্ষমতা অন্য কারো নাই।
কয়েকদিন এরকম চলছে। রঞ্জন স্কুল থেকে ফিরে যদি বলে অমুক ম্যাডাম আজ দারুণ একটা ক্লাশ নিয়েছে। কথা বলার ভাবটাই যেন আজ বদলে ফেলছে। তাহলে রঞ্জনের সে দিনটা বাতিল। আর কােন অবস্থাতেই রুমার সহযোগিতা পাওয়া যাবে না।
সেদিন হঠাৎ করে রঞ্জন ডিপিএড এর ডাক পায়। তার ক্যারিয়ার উন্নত হবে বলে সে দারুন খুশি। রুমাও একটু খুশি খুশি বেতন বাড়বে সব কিছুই ভালো হবে। কিন্তু, রঞ্জনের এতো খুশি দেখে রুমা একটু ভাবতে লাগল। যখন শুনল রঞ্জন হােস্টেলে থাকবে এবং ঐ পাশা পাশি মহিলাদের হােস্টেল সেই তার মাথা মােচড় দিয়ে উঠল।
“তোমার হােস্টেলে না থাকলে হয় না?”
“কেনো?”
“না এমনি।”
“আসলে ডিপিএডে বহুত কাজ থাকে হেস্টেলে থাকাই ভালো।”
রুমা মাথা ঝাকিয়ে, “তা বুঝতেই পারছি। কাজের কােন অভাব নাই।”
“সকাল সাতটায় পিটি।”
“বিকেল পাঁটায় একটু ভ্রমণ। এই আরকি..।”
“তা ঠিক বলছো সারা দিন যে পরিশ্রম তাতে বিকেল বেলা একটু না ঘুরলে মনে শান্তি আসবে না, ঘুমে সমস্যা হবে।”
“আরে বাবা, ঘুমানো কি দরকার আছে রাত্রেও ঘুরবা। লােকেরতো আর অভাব নেই।”
“আচ্ছা, নারী কি এতোই সস্তা? হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়?”
রুমা পাশ ফিরে শুলো। কােন সারা শব্দ করল না। রঞ্জন অনেক চেষ্টা করে একটু কাছে নিল। তবু গাল ফুলিয়েই থাকল।
সকালে সব কিছু গুছিয়ে রঞ্জন গােপালগঞ্জের দিকে রওনা দিলো। রুমা যেন কিছুই দেখল না। ঘরে এসে নীরবে শুয়ে পড়ল। সারা দিন কােন কাজ করল না।
বিকেলে রঞ্জন ফােন দিলে মােটা-মুটি একটু কথা বলল।
পরের দিন রুমা ফােন দিয়ে দেখল রঞ্জনের নাম্বারটি ব্যাস্ত। কয়েক বার চেষ্টা করল। পরে থ হয়ে বসে থাকল। রঞ্জন অনেক বার ফােন দিল ফােন ধরল না। প্রায় সপ্তাহ ধরে এ রকম চলল। রঞ্জন ব্যাপারটা বুঝতেই পারল না।
রঞ্জন বৃহস্পতিবার বাড়ি এলো। রুমাকে অনেক বুঝাল কিন্তু কােন কাজ হলো না। সে কােন কথাই বলল না। পরের দিন বিকেলেই রঞ্জন হােস্টেলে এলো। সে আর কােন যােগাযোগই করল না। কিন্তু দুদিনের বেশি থাকতে পারল না। মঙ্গল বার রাত্রে সে রুমাকে ফােন দিল কিন্তু সংযোগ দেয়া সম্ভব হলো না। অনেকবার চেষ্টা করল ঐ একই ব্যাপার। বৃহস্পতিবার বাড়ি এসে দেখল রুমা মােবাইল রেখে বাপের বাড়ি চলে গেছে। রঞ্জনের খুব খারাপ লাগল। সারা রাত তার ঘুম এলো না। রুমার বিগত দিনের সকল কথা ভাবল। আসলে নারী এও পারে। তাদের মন কিভাবে বদলায় তা সে নিজেও বুঝতে পারে না। বােঝে না বলে বহু পুরুষের অন্তরে চিরদিনের জন্য জ্বলে নীরব অগ্নি। যা জ্বলে না কিন্তু দহন করে।
পরের দিন রঞ্জন পিটিআইতে ফিরে এলো। সবার সাথে মিশতে কিছুটা সময় লাগল। তবু তাকে মিশতে হলো।
পর পর দুই বৃহস্পতিবার বাড়ি এলো না। বাড়িতে আসতে ইচ্ছেই করল না। কেমন যেন একটু একা হয়ে গেল।
পরের বৃহস্পতিবার নাম রেজিস্ট্রশনের জন্য সার্টিফিকেট নিতে বাড়িতে এলো। এসে দেখল রুমা বাড়িতে। রঞ্জন কােন কথা বলল না। বাজার থেকে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরল। রুমা রান্না করেছিল কিন্তু রঞ্জন বাজার থেকে খেয়ে আসছে। রুমাও তেমন একটা অনুরোধ করল না।
রঞ্জন ঘুমতে যাচ্ছে না। চেয়ারে বসে এ কাজ সে কাজ খুঁজছে। খুবই ব্যাস্ত। রুমা রঞ্জনের গা ঘেষে দাঁড়াল। রঞ্জন তবুও তার দিকে তাকাল না। রুমা তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। রঞ্জন তার দিকে ফিরে তাকাল। রুমা বলল, “আমি না খেয়ে থাকলে তুমি খুশি হবে?”
রঞ্জন †কান কথা বলল না।
“তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারলাম না। ভেবেছিলাম, আর কােন দিন ফিরে আসবো না। কিন্তু, কি নিয়ে থাকবো তার কিছুই খুঁজে পেলাম না। আমি যে ক্যান এমন হই তা বুঝে উঠতে পারি না।”
রুমার চােখ দিয়ে জল গড়িয়ে গেল।
রঞ্জন রুমার হাত ধরল। হাত ধরে বলল, “তুমি আমাকে বেশি ভালোবাসো বলে এমন হয়।”
“তুমি কি তা সত্যি বুঝতে পারো?”
“পারি।”
“তবে ক্যানো বলো না, তুমি অন্য কাউকে নিয়ে ভাবছো না?”
“অন্য কাউকে নিয়ে ভাবার অবসর †কনো দাও? কেনো বুঝনা সে ভাবনাটা তােমাকে নিয়েও হতে পারে?”
সন্দেহ সংসার শেষ করে দেয়। সন্দেহেরও একটা মাত্র আছে। মানুষ যাকে বেশি ভালোবাসে তাকেই তত সন্দেহ করে। আর এই সন্দেহ তার ভালোবাসা হারানোর। মনে রেখ, যে তােমাকে সন্দেহ করে সে তােমাকে একটু হলেও ভালোবাসে। কিন্তু সেই সন্দেহই সেই ভালোবাসাকে শেষ করে যায়। যা †রখে যায় তা †কবল †বঁচে থাকার জন্য পাশা-পাশি থাকা।
০৯ জানুয়রি ২০১৮ইং
গোপালগঞ্জ পিটিই, †গাপালগঞ্জ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: সুন্দর হয়েছে। মনে হচ্ছে একটি অনবদ্য প্রেম।

২| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৩০

সজিব ইসলাম বলেছেন: এই রকম অনেকেই আছে রুমার মতো ফিরে এসে কাছে এসে দাড়ায় না, তখন সে সংসারটার কি অবস্থা হয় জানেন? আর আপনার এই রুমার এই ধরনের কেরেক্টারটা নিয়মিত কতদিন আপনার ভালো লাগবে?

৩| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: রমা রজ্ঞনের প্রেমটা সন্দেহের অবসান হওয়ায় ভাল লাগছে।শুভেচ্ছা নেবেন।

৪| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:১৯

খাঁজা বাবা বলেছেন: বাস্তববাদী গল্প।
ভাল লাগল :)

৫| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
রুমা নামের একটা মেয়ের সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল এক সময়।

গোপালগঞ্জের পোনা গ্রামের মানূষজন ভালো না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.