নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা স্যার

সুব্রত বৈরাগী

সুব্রত বৈরাগী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সর্বনাস

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:০১

১৯৭১ সাল। চারিদিকে যুদ্ধের তীব্র আওয়াজ। ঘরে ঘরে মৃত্যুর হাহাকার। ঢলে পড়ছে তাজা রক্ত। ঠিক সে সময়, দেখা দিল আরেক মৃত্যুর হাতছানি। মরণ ব্যাধি কলেরা।
রনবীর তিন ছেলে আরেক মেয়েকে নিয়ে স্ত্রীর সাথে সুখে ঘর করছিল। বড় ছেলে যতিন এইচ এস সি পাশ করেছে। যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মেঝ ছেলে রথীন এস এস সি পরীক্ষা দেবে। মরণ ব্যাধি তার এই দুই ছেলেকে এক সাথে আক্রমণ করল। বড় ছেলেটার যুদ্ধের গতি পাল্টে গেল। শুরু হলো মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ।

পাশের গ্রামের ডাক্তার বনমালী বাবু কােথায় যেন পালিয়ে আছে। দুই দিন ঘুরে একবারও তার দেখা হলো না। উনার মেয়ে বাড়িতে যেয়ে একটু দেখা হলো। ওষুধ নিয়ে এসে দেখল বড় ছেলেটা নীরব হয়ে গেছে। তিন চার বার ডাকল। ডাক তার কানে গেল না। নাড়ী এখনও চলছে। হয়তো বেশি সময় চলবে না।
বিকেলের দিকে বড় ছেলেটা তার জীবন যুদ্ধ সমাপ্ত করল। শােকে তাপে পরিবারটি ভেঙ্গে পড়ল। রাত শেষ হতে না হতেই স্ত্রীকে আক্রমণ করল মরণ ব্যাধিটি।
রনবীর একেবারেই ভেঙ্গে পড়ল। তার বুকের মধ্য কারা যেন আগুন লাগিয়ে দিল। সে কােথায় যাবে? কার কাছে থাকবে? ছােট ছেলে রঞ্জিত বড় একা। অন্যেরা খুব একটা এদিকে আসছে না। তাছাড়া যারা সচেতন তারা হয় যুদ্ধে গেছে নয় পালিয়েছে। রনবীর বড় নিরুপায়।
সকালে মেজ ছেলে আর স্ত্রী মারা গেল। বিকেলে ছােট ছেলেটারও শুরু হলো। তিন দিনের মাথায় ছােট ছেলেটাও। রনবীরও বিছানা নিল কিন্তু মৃত্যু তাকে কাছে নিল না। বিছানা ছেড়ে তার উঠতে ইচ্ছে করল না। কান্না করতেও ইচ্ছে করল না। ও কার জন্য কাঁদবে। ওর কান্না শােনার কেউ নেই। স্থির করল যুদ্ধে যাবে। কিন্তু কার জন্য যুদ্ধ করবে? হ্যাঁ পেয়েছে। মৃত্যুর জন্য সে যুদ্ধ করবে। সে মৃত্যু চায়। মৃত্যুর ইচ্ছে না থাকলে কেউ যুদ্ধ করতে পারে না। যে মরার জন্য লড়ে সে কখনও হারে না।

রনবীর কাঁধে অস্ত্র নিল। দেশ মাতার শান্তির লক্ষ্যে সে তার পাপিষ্ঠ জীবন অঞ্জলি দেবে। মুক্তি নেবে এ সংসার থেকে। কিন্তু কার বুকে সে বন্দুক ধরবে। তার চােখে ভেসে উঠছে সমস্ত পরিবারের মুখ। এ বন্দুকটাই যতিন কাঁধে নিয়েছিল। এ বন্দুকের প্রত্যেকটি স্পর্শে সে যতিনের কথা শুনতে পায়। সে যতিনকে খুব কাছে পায়। যতিন বলে , “বাবা আমরা খুব তাড়াতাড়ি স্বাধীন হবো।”
দেশ স্বাধীন হলো। স্বাধীন দেশের মুক্ত বাতাসে তার চুল দােল খেতে লাগল। চারটি সমাধির পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ধীরে ধীরে বসে পড়ল। মেয়েটি এসে পাশে দাঁড়াল। বাবার পাশে বসল। দুই হাত দিয়ে বাবার চােখের জল মুছে দিল। রনবীরের কান্না বেড়ে উঠল। সে হাউমাউ করে কেদেঁ উঠল।
মানুষ সব কিছু হারালেও বেঁচে থাকার মত সান্ত¦না থাকে। আশা আবার নতুন করে আশা জাগায়। নতুন করে বাঁচতে শেখায়।
২৩ মে ২০১৬ইং
কানাই বাগচীর বাড়ি,
কাশিয়ানী, গােপালগঞ্জ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:০৫

সুব্রত বৈরাগী বলেছেন: আমার আপন জ্যাঠা মশাইকে নিয়ে লেখা। উনি এখনও বেঁচে আছেন (রনবীর নয় আসল নাম মনোরঞ্জন মেয়েটার নাম মুক্তি নয় বাসন্তী।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৪৩

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা রইল।

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:১৪

সুব্রত বৈরাগী বলেছেন: স্বাধীনতার রক্তিম শুভেচ্ছা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.