নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা স্যার

সুব্রত বৈরাগী

সুব্রত বৈরাগী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সন্ধ্যার কােলে পৃথিবী

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:০০



হঠাৎ শ্রাবণীর ভাগ্যের চাকায় মােড় খেয়ে বসে। ধসে পড়ে মঙ্গলের দরজার পাশে। পৃথিবী বড় রকমের আঁধার হয়ে আসে। সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি সবচেয়ে বেশি অপ্রিয় হয়ে ওঠে। স্বপ্ন ভেঙ্গে চূরমার হয়ে যায়। একটা ঝড়ো হাওয়া ছিন্ন ভিন্ন করে যায় ওর চিরকালের সাধনাকে।
বাদল নামের ছেলেটা বিয়ে করে †অেন্য জনকে। কী বিচ্ছিরি রকমের মিলন। কী দুঃসাহসিক ব্যাপার! এতো কাছে আসা এতো ভালোবাসা সব যেন মিথ্যার দেওয়াল হয়ে গেল, সব যেন বিদ্যুতের চমক। পাঁচ বছরের কাছে আসা ১২টা দিনেই পর হয়ে গেল? ৬২ দিন আগে ওদের রেজিষ্টারি বিয়ে হয়েছিল গােপালগঞ্জ নােটারি পাবলিক্সে। অঞ্চলবাসী শ্রাবণীকে জাের করে উঠিয়ে দিয়ে গেছে স্বামীর বাড়ি।
জল তেল দিয়ে তার জ্ঞান ফেরানো হয়। অজ্ঞানের জ্ঞান ফিরলেও ভাঙ্গা কপাল আর জােড়া লাগে না।

সারা গ্রাম জুড়ে একটা হৈ হােল্লা বেঁধে যায়। মারা মারি ধরা ধরি লেগেই থাকে। মত বিরোধ লাগে ঘরে ঘরে। একটু খানি আগুন ছড়িয়ে যায় অনেক দূর, পুড়ে যায় অনেক কিছু। শীতল পাটি যেন ক্ষণিক তাপে আগুন হয়ে যায়। মন্দির যেন বারাঙ্গনার বাস ভূমি হয়ে গেছে। স্বর্গ সাগর গহ্বরে তলিয়ে গেছে। শ্রাবণীর পায়ের তলায় যেন আগুনের শিখা। এ বাড়ি এখন অন্যের, এ ঘরের ঘরণী সে সাজতে পারেনি। তার মুখ থেকে বার বার প্রস্ফূটিত হতে চায়, “যে আগুনে পুড়ে আমি ছাই হয়ে গেলাম সে আগুন যেন তােমাকেও ক্ষমা না করে। যাতে তুমিও বুঝতে পার আশার বুকে বাণ ছুড়লে সে কতটা ছট ফট করে। যে ঝড়ের আঘাতে আমার পায়ের তলার মাটি ধীরে ধীরে সরে গেল সে মাটির উপর যে দাঁড়াবে সেও যেন এ কম্পনের ধ্বনি শুনতে পায়।” কিন্তু তার মুখ থেকে একটা কথাও বের হলো না। এ বারটা দিন সে বার বার মনের ভিতর বাসর সাজিয়েছে। এ পাঁচটা বছরের পথে পথে সে যত ফুল কুড়িয়ে ছিল তার সে আশার সমাধির উপর তৈরি হয় নতুন ফুলের বাসর। সমাধির কয়লায় যে আগুন তাপ দিয়ে যায় হাজার কলসি জল ঢাললেও তার তাপ কমে না। যত শক্ত ফুলই হােক না কেন সে বাসরের তাপ সহ্য করতে না পেরে নেতিয়ে পড়বেই।

মনে উঠে আসে সেই এস এস সি’র ফলাফল। অনেক কষ্টের পর প্রমোশন হয় এইচ এস সি’তে। একই ট্রলারে পাশাপাশি দু’টি অতি পরিচিত মুখ। এদিনই ভেসে আসে কাছে আসার আভাস বাতাস। সাতপাড় কলেজ, জীবনের প্রথম পদার্পণ বাদলের হাত ধরেই। এতদিন পর যেন ছােট্ট কুটির থেকে বেরিয়ে এসেছে বিশাল পৃথিবীতে। সারা আকাশ জুড়ে রঙ্গিন মেঘের চলা ফেরা। কােথাও দৃষ্টি বন্ধী হচ্ছে না। পরিপূর্ণ সূর্যের কিরণ। কােথাও বাধা নেই পৃথিবীর বুকে পৌঁছতে।
শ্রাবণের জীবন যেন সাধনার জীবন শেষ করে সত্যের সন্ধানে পৌঁছিয়েছে। পৃথিবীর সবার মুখে যেন ঔজ্জ্বল্যের হাসি। সবাই যেন তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সব যেন প্রকৃতির উপহার। জীবনকে ঘিরে ধরছে অন্য জীবনের ছায়া রেখা।

প্রেম মানুষের জীবনে এক ঝলক হাসি নিয়ে আসে। জীবনকে ভরে দেয় ধন, ঐশ্বর্যে। নদীর স্রােতের মত দুকূল ভাসিয়ে আবার বিলিন হয়ে যায় সাগর মােহনায়। নদীর স্রােত সাগরে মিশে গেলে আর কােন দিন সে নদীতে ফিরে আসে না।
গোধূলির লাল আলো হঠাৎ করে থেমে যায়। পৃথিবীতে নেমে আসে সন্ধ্যার বাণী। দিগন্ত জুড়ে যে আবীরী রং তা ঘােলাটে হয়ে আসে। আকাশ পাড়ের গাছেরা লাল আলোয় ঢেকে অধিকার করে পৃথিবীকে। সন্ধ্যার জীবন চলতে থাকে চাঁদের হাসির মত ফুলের বনে। নির্জন মুখের হাসি শীতল বাতাস। থর থর ভালোবাসার কম্পন, শির শির এক ঠাণ্ডা অনুভূতি অস্তিত্বকে নাড়া দেয়। চাঁদের আলোতে গা ভাসিয়ে চলতে থাকে জীবনের পথে। মেঘের কথা কখনও চিন্তা করেনি। হঠাৎ মেঘে কি প্রস্তুতি নিতে হবে।

কলেজের রঙ্গিন দিনগুলি রং মাখা ছবির মত ফুটতে থাকে। সাতপার বাজার। দক্ষিণ পশ্চিম মুখী রাস্তা। একটু এগুলেই থমকে দাঁড়াতে হয়। মােড় ফিরলেই কলেজ দেখা যায়। দলে দলে লােক স্বাধীন ভাবে চলছে। সামনের দিকে পায়ে পায়ে।
ছলনাকারীর চােখে যত প্রেম থাক না কেন, সত্যিকারে সে ভালোবাসে না। ছলে কৌশলে সে নিজেকে এড়িয়ে যায়। জীবনে তারা সুখী হয় না, ভালোবাসা পায় না। পুরোণো ছলানাকে ভালোবাসা মনে করে কাঁদে। জীবনের জলসা ঘরে তারা কেবল নর্তকী, প্রেয়সী নয়। তারা প্রেম বিলায় চােখের নেশায় মনের মমতা দিয়ে নয়।
শ্রাবণের জীবন চলে নীরব কান্নার বাসরে। কালকের খােলা আকাশ আজ মেঘে ঢাকা। চিরদিনের চলার পথ আজ বন্ধ। ও ভুলে গেছে পাখির ডাক, জীবনের হাসি, ও ভালোবেসে ফেলছে কান্নাকে।

জীবনের যে পথ আমার ছিল গাে তােমার ছায়ায় আঁকা
সে পথ তেমনি আছে সবুজ ঘাসে ঢাকা।

হেমন্তের এ গানকে ও ওর জীবনের জীবন্ত উপহার হিসাবে ধরে নেয়। জীবনতো একবার। মৃত্যুও। প্রেম জীবনের মৃণাল, যৌবনের চেতনা। প্রেম যাকে ছেড়ে যায় পৃথিবীতে তার বাঁচার আশা কম। মৃত্যু তার সাধনা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ভালোবাসা পাল্টে যায়। মানুষ আবার বাঁচতে চায়।

শ্রাবণ আকাশ পানে তাকিয়ে থাকে। চির চেনা সেই আকাশ। আজ আর মুক্ত মনের পাখিরা পাখা মেলে আকাশে বিচরণ করে না। সুরের ভুবনে কােন শুকতারা উদয় হয়নি। পুব আকাশের আলো ঢলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে। জলের উপর আলোর রশ্মি ঝিল মিল করছে। “তুমি পারলে আমাকে চিরদিনের মত দূরে ঠেলে দিতে? একবারও কি আমার কথা তােমার মনে পড়ল না? একবারও না? এমন কি কথা ছিল? আমার দুঃখটা কি একবারও তােমার কাছে দুঃখ বলে মনে হলো না? মনে কি হলো না, এই আমি সেই আমি যে তােমার একদিন চিরদিনের সত্য ছিলাম? পারলে নিজের স্বার্থে আমাকে ফেলে যেতে?”

দুর্বলকে যারা আঘাত করে তারা কাপুরুষ। নিজের আত্মবিশ্বাসকে যারা পরের কথায় বলি দেয় তারা অমানুষ। ভালোবাসাকে যারা অবজ্ঞা করে তারা বেঈমান, তারা প্রতারক। এই প্রতারণার প্রেমে ভরাডুবি ঘটে জীবনের। শ্রাবণ তাদের বাইরে নয়।
প্রেমের আগুনে কেউ পােড়ে, কেউ পথ দেখে, কেউ ঘর বাঁধে, কেউ নিঃশেষে জীবনকে আত্মদান করে। জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি একদিন সবচেয়ে বেশি অপ্রিয় হয়ে যায়।

ক্লান্ত সূর্য যখন লাল আলো ছড়ায় পৃথিবী তখন রঙ্গিন দেখায়। যেন হলির রঙে সাজছে। সন্ধ্যার ঘন আঁধার আস্তে আস্তে গ্রাস করে নেয় সে রঙ্গিন ভুবন। পৃথিবী হারিয়ে যায় আঁধারের কােলে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৩২

আবু আফিয়া বলেছেন: পুরোটাই পড়েছি, ভাল লাগল, ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.