নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা স্যার

সুব্রত বৈরাগী

সুব্রত বৈরাগী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাশা-পাশি

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৫



সুনীল আর সােহাগ পাশাপাশি বসল। দুই জন এই অফিসে চাকরি করে। পদটা সেইম। কারো নিজেস্ব গাড়ি নেই। বাসে করে বাড়ি ফেরে। এক এক জনের তিনবার করে বাস বদল করতে হয়। এক মাস দেড় মান পর এক একজন বাড়ি ফেরে। কখনও কখনও এক সঙ্গেও বাড়ি যায়। আজও সে রকম একটা দিন।

সুনীলের ফােন এলো।
“গাড়িতে উঠছো?”
“হ্যাঁ।”
“সাবধানে এসো।”
“আচ্ছা।”
ফোনটা কেটে দিল। সােহাগ মনে মনে একটু হাসল। হাসিটা একটু ব্যাঙ্গাত্মক। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর মােবাইলটাও বাজল।
“তুমি কি বাজার পর্যন্ত এসে গেছো?”
“ক্যানো?”
“আরে নতুন রঙের একটা সুন্দর শাড়ি বাজারে এসেছে। আমার দারুণ পছন্দ। অবশ্যই আনবে কিন্তু। আর আমার বােন তােমার কাছে কি চেয়েছিল তা মনে আছে?”
“মনে থাকবে না কেনো? তুমি আমাকে কি মনে করো?”
সোহাগ এবার একটু মন খুলে হাসল আর সুনীলের দিকে তাকাল। সুনীল চুপ-চাপ বসে থাকল।
সামনের বাজারে দুজনেই নামল। অনেক পরে আবার একগাড়িতেই উ?ল। সােহাগের ব্যাগটা অনেক ভারী। পাশের সীটে রাখল। এবার আর দুজনে এক সীটে পাশা-পাশি বসতে পারল না। তবু সােহাগ আগ্রহ করে বলল, “বৌদির জন্য কি কিনলেন?”
সুনীল হাত উঁচু করে একটা নকশী আঁকা রুমাল দেখালো। সােহাগের মুখটা হাসিতে খানিক লম্বা হলো।
সামনের স্টাশানে নেমে দুজন দুদিকে চলে গেল। সােনালী দৌড়ে এসে সা হাগের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে গেল। অনেক ভারী ব্যাগ কিন্তু তার কাছে তেমন কিছুই মনে হলো না। অথচ্ এর চেয়ে কত কম ওজের জিনিসও বহন করতে হিমসিম খেয়ে যেত। সােহাগ এক গভীর গাম্ভীর্য নিয়ে বসে পড়ল। সােনালী ব্যাগ নিয়ে ভেতরে চলে গেল। এদিকে সুনীল বাড়ি এসে দেখল বাড়ি একবারেই নীরব। বাড়িতে মনে হয় কেউ নেই। স্বপ্না তার রুমের জানালা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সুনীল তার খাটের উপর বসল। স্বপ্না ফ্যান ছেড়ে দিয়ে সুনীলের পাশে এসে বসল। হাতের উপর হাত রাখল। খানিক মুখের দিকে তাকাল। সুনীলে তার ঘাড়ের উপর একটা হাত দিলে সে তার কাঁধের উপর মাথাটা নিচু করে ফেলল। আর বলল, আজ সারা দিন ধরে আমার মনে হচ্ছে কি যেন একটা হবে ঠিক ভাবতে পারিছিনা, মনেও করতে পারছি না। বুকের ভেতর কেমন যেন থরফর করতে লাগছে। চিনচিন একটা চিকন কাঁপুনি আমার সারা শরীরকে কাঁপিয়ে তুলছে নিজেকে নিজের ভেতর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিনা। তুমি না এলে আমি হয়তো কােন এক সময় মনের অজান্তে এ ঘর থেকে বেরিয়ে যেতাম। কি জন্য বা কেন সে প্রশ্নের কােন উত্তর করতে পারতাম না।”
সুনীল পকেট থেকে রঙিন রুমালটা বের করে দিল। স্বপ্না সেটা নিয়ে চলে যাচ্ছিল।
“দেখলে না কি দিলাম?”
“কিছু কিছু পাওয়া একাকী অনুভব করতে হয়। নইলে সে পাওয়া সস্তা হয়ে যায়। রাগ করো না। তুমি হয়তো ভাবতে পারো, তােমার চেয়ে তােমার দেওয়াটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছি। আমি কেবল পাওয়াটাকে নয় জিনি দিলেন তাকেও আমার মনের গহীনে রাখতে চাই।”
“বেশ।”
“তুমি আমাকে মনে রেখে একটা জিনিস এনেছো। এই মনে রাখাকে আমি তুচ্ছ বা অবহেলা করবো না।”
সুনীল দেখল তার জন্য একগ্লাস শরবত রেখে ছিল তা ওর দিতেই মনে নেই। ঢাকনাটা ফেলে শরবত গ্লাস খেয়ে নিল।
অনেকদিন হলো। সোহাগের সাথে আসা হয়ে ওঠেনা। সারা দিন পাশা-পাশি কাজ করে। কেবল কাজের কথাই হয়। সেদিন ওকে দেখে সুনীলের একটু চিন্তা হলো। বলল, “সােহাগ সাহেব, আজ আমাকে নিয়ে যাইয়েন?”
আজও দুজন পাশা-পাশি বসল। কিন্তু কােন কথাই হলো না। সুনীল বলল, “খুব সমস্যায় আছেন? শেয়ার করেন। সমস্যা কমবে।”
“কিভাবে শেয়ার করবো বুঝতে পারছি না। ঘরের কথা কি করে পরকে বলবো।”
“ঘর যদি মজবুত থাকে তবে অন্যকে বলতে নেই কিন্তু, ঘর যদি নড়-বড়ে হয়ে যায় তখন অন্যের সাথে শেয়ার করা যায়।”
“সামনে আসেন বুঝতে পারবেন।”
গাড়ি নীরবে চলছে। সামনের স্টাশনে দুজনে নামল। সুনীল সােহাগের সাথে খানিক হেঁটে চলল। দেখল সামনের গাছতলে এক মহিলা ব্যাগ-ট্যাগ নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। সােহাগ সুনীলকে বলল, “আপনি একটু এখানে দাঁড়ান।”
সোহাগ চলে গেল। মহিলার কাছে গেল। সামনা-সামনি দাঁড়াল। দুজনই নীরব। এক সময় সােহাগ বলল, “চলো, বাড়ি ফিরে যাই।”
“যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে আমি যেতে যাই না।”
“তোমার জন্য আমি কি না করেছি। আমি যে এতোটাাকার দেনা তাও তােমার জন্য। তুমি যা বলেছো আমি মুহুর্তে তা এনে দিয়েছি। একজন ৭৫ টাকার রুমাল কিনেছে আমি তােমার জন্য সাড়ে সাত হাজার টাকার শাড়ী কিনেছি।”
“৭৫ টাকার রুমালে ভালোবাসা ছিল। দামী শাড়ীতে ভালোবাসা ছিল না।”
“তুইতো চেয়েছিলে।”
“তুমি আমার চাওয়া পূরণ করেছো। কিন্তু নিজে থেকে কিছুই দাওনি। কেবল চেয়ে কিছু হয় না। ভালোবাসার জন্য কিছু দিতে হয়।”
“চাওয়া পূরণ করাও ভালোবাসা। তুমি যদি আমার ভালোবাসার অভাবে চলে যাওয় তবে আমি তােমাকে বাঁধা দেব না। কারণ, আমি তােমাকে আমার সাধ্যের সব কিছু দিয়েছি। এর বেশি আর দিতে পারবো না।”
সোহাগ ফিরে আসতে চাইল। সুনীল ধীরে ধীরে স্বপ্নার দিকে হেঁটে এলো। বলল, “কিছু মনে না করলে আমি একটু কথা বলতে চাই। আমি সােহাগ সাহেবের সাথে তিন বছর ধরে চাকরি করছি। হয়তো আপনার মত করে চিনতে পারিনি। তবু মনে হয় সােহাগ সাহেব লােকটা একেবারেই খারাপ নয়। তারপরও সংসার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেনে নিতে হয়। অন্য কেউ নিজের মত হয় না তাকে গড়ে নিতে হয়। গড়ে নেয়ার দায়িত্ব কেবল একজনের নয়। দুজনেরই।”
“কিন্তু।”
“আজকের কিন্তু নীরবই থাক। এ নীরবতাও ঐ রুমালের মত ভালোবাসার। নিজে যদি কেবল চাই তবে অন্যে দেওয়ার সুযোগ পাবে কখন? সেতো কেবল চাওয়ার পিছেই ছুটবে।”
সুনীল নীরবে হেঁচট চলে এলো। ওর পাশে কেউ নেই। ওর পাশের মানুষটি আজ অন্য একজনের পাশে। যে কেবল তার পাশে থাকার।
১৬ মে ২০১৮ইং
গোপালগঞ্জ পিটিআই।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: ভালোবাসার মানূষের সাথে শেষমেষ বিয়ে না হওয়াই ভালো।

২| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৩

কাইকর বলেছেন: ভালবাসা!!!!

৩| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: দুজনকেই বুঝতে হবে। বর্তমানে মধ্যবিত্তের জন্য সুখ পাওয়াটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.