নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

সুফিয়া

পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।

সুফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশুতোষ গল্প --- দাদুর লাঠি যাদুর কাঠি

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:১০

দাদুর লাঠি যাদুর কাঠি


লালু দাদুর সাথে তার নাতীদের সখ্যতা দেখে সবাই মজা পায়। রুমকি, লিটু, দানিয়েল মূলত ওরাই লালু দাদুর নাতী বন্ধুর দল। আর ওরা তিনজন মনে করে লালু দাদু হচ্ছে ওদের খেলার সাথী। পড়াশুনা, খেলাধূলা, গল্প-আড্ডা সবকিছুতে চারজন একাত্মা।

পড়াশুনার প্রসংগ যখন এসেই পড়ল তখন বলে রাখি যে, এদের মধ্যে স্কুলে যায় রুমকি আর লিটু। দানিয়েল এখনও স্কুলে যাবার বয়সে পা রাখেনি। আর লালু দাদু ! বয়স সত্তর তো হবেই। সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না। তাই লাঠি ভর করে হাঁটেন। তবে মনের দিক থেকে তিনি ওদের তিনজনের মতো শিশু। তাই সহজেই রুমকি. লিটু ও দানিয়েলের বন্ধু হয়ে উঠেছেন তিনি।

লালু দাদুর সাথে সময় কাটাতে ওরা তিনজন কিন্তু খুব মজা পায়। দাদু কত মজা করে সুন্দর সুন্দর গল্প বলেন ! ওরা হা করে শুনে সেসব গল্প। তবে লালু দাদু যখন তার মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর গল্প বলেন তখন কেমন যেন আনমনা হয়ে যান। গল্প শেষ করে দাদু বলেন,

তোরা কিন্তু মনে রাখবি এটা কোন বানানো গল্প নয়, সত্য ঘটনা।
ওদের তিনজনের মধ্যে রুমকি সবচেয়ে বড়। বয়স সাত/আট বছর হবে। ওর ভিতর অজানাকে জানার দ্বারগুলো খুলতে শুরু করেছে। তাই দাদুর কথার পিঠে সে সাথে সাথে প্রশ্ন করে,

তার মানে তুমি মুক্তিযুদ্ধ করেছ দাদু। তুমি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

হ্যাঁ রে দাদু। তুই ঠিকই বলেছিস।

সাথে সাথে রুমকি উঠে দাঁড়িয়ে দাদুকে একটা স্যালুট দেয়। লালু দাদু অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন,

দাদুভাই, এটা তুই কোত্থেকে শিখলি ? কে শেখাল তোকে ?

রুমকি জবাব দেয়, আমার টিচার শিখিয়েছে। বলেছে,

মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সব সময় সম্মান দেখাতে হয়। আর তাদেরকে সম্মান দেখানোর সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে এটি। এর মধ্য দিয়ে নাকি আমাদের দেশ ও পতাকাকেও সম্মান দেখানো হয়।

রুমকির কথায় লালু দাদুর চোখ দুটি আবেগে ঝাপসা হয়ে আসে। তিনি ডান হাতের পিঠ দিয়ে চোখ দুটি মুছে ফিরে তাকান রুমকির দিকে। এবং সাথে সাথে আরও বেশী অবাক হয়ে যান। কারণ, ততক্ষণে লিটু এবং দানিয়েলও স্যালুট দেয়ার ভঙ্গিতে দাদুর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

লালু দাদু আর নিজকে সামলাতে পারেন না। দু’হাত বাড়িয়ে ওদের তিনজনকে বুকের মধ্যে টেনে নেন। তারপর চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দেন ওদের ছোট্ট মুখগুলো। তার চোখের পানির ভেজা ষ্পর্শ এসে লাগে ওদের চোখে-মুখে।

একটু দূরে দাঁড়িয়ে লালু দাদুর স্ত্রী নুরী দাদু এই দৃশ্য দেখছিলেন। লালু দাদু এতক্ষণ সেটা খেয়াল করেননি। তার আত্মমগ্নতা কাটে নুরী দাদুর কথা শুনে। নুরী দাদু বলেন,

দেখলে তো নিজকে লুকিয়ে রাখতে পারলে না ? বেরিয়ে তোমাকে আসতেই হলো।

লালু দাদু তার স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে একটুখানি মুচকি হাসেন। তার অশ্রুভেজা মুখের এই একটুখানি হাসিতে যেন উড়ে যায় এতদিনের সমস্ত রুদ্ধ বাস্পতাপ। নুরী দাদু সেটা বুঝতে পারেন। এগিয়ে এসে লালু দাদুর মাথায় আলতো করে একটা হাত রেখে বলেন,

আজ আর না করোনা গো। দেখাওনা তোমার লাঠির সেই যাদুটা। আমার মনে হয় আজই এটার উপযুক্ত সময়।

কিন্তু ------। আমি তো অনেকদিন ধরে ---------।
লালু দাদুকে কথা শেষ করতে দেননা নুরী দাদু। এখানেই থামিয়ে দিয়ে বলেন,

আজ যদি তুমি না বলো তাহলে এদের প্রতি তোমার অবিচার করা হবে। আমার মনে হয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এতদিন ধরে তুমি যে বঞ্চনার শিকার হয়েছ তার অনেকটাই পুষিয়ে দিয়েছে আজ ওরা তিনজন। এরচেয়ে বেশী আর তুমি কিছু চেয়োনা গো। বরং এখন তোমার এদেরকে প্রতিদান দেবার পালা।

নুরী দাদুর কথায় লালু দাদু বলেন, তুমি ঠিকই বলেছ নুরী।
রুমকি, লিটু, দানিয়েল এতক্ষণ তাদের দুই দাদুর কথা অবাক হয়ে শুনছিল। এবার তিনজনই লালু দাদুকে ছেকে ধরে।

বলনা দাদু, বড় দাদু কি যাদু জানে ! আমরা দেখব।
নুরী দাদু বলেন, হ্যাঁ দেখবে। তোদের বড় দাদুকে বল। এক্ষুণি দেখিয়ে দিবে।

এক্ষুণি ? তিনজন একযোগে প্রশ্ন করে।
নুরী দাদু বলেন, হ্যাঁ এক্ষুণি। তোরা একটু অপেক্ষা কর।

ততক্ষণে লালু দাদু তার হাতে ধরা লাঠিটির উপরের বাঁকা মাথাটি একটু ঘুরান। অমনি লাঠিটির নিচ দিকে একটি সরু মাথা বের হয়ে আসে। দাদু লাঠির মাথা আরও ঘুরিয়ে নিচের সরু অংশের সম্পূর্ণটা বের করে আনেন। ওরা তিনজন অবাক হয়ে সেই দৃশ্য দেখে। নুরী দাদু বলেন,

তোরা একটু সরে দাঁড়া। তোদের দাদু মাটিতে কি আঁকে দেখ।
তারপর চেয়ারটা এগিয়ে দেন লালু দাদুকে বসার জন্য। দাদু চেয়ারে আরামমতো বসে লাঠির সরু মাথা দিয়ে মাটির উপর একটানে এঁকে ফেলেন বাংলাদেশের একটি মানচিত্র। তারপর এর ভিতর এঁকে দেন বাংলাদেশের একটি জাতীয় পতাকা। রুমকি অবাক হয়ে দেখে তার বড় দাদুর আঁকা মানচিত্রটি হুবহু তার বইয়ে আঁকা বাংলাদেশের মানচিত্রের মতো। লালু দাদু ততক্ষণে লাঠিতে ভর করে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,

সবাই স্যালুট কর আমাদের জাতীয় পতাকাকে।

রুমকি, লিটু, দানিয়েল, ওদের দাদা-দাদু সবাই একসংগে স্যালুট করে বাংলাদেশের মানচিত্রকে। এরপর লালু দাদু আবার চেয়ারে বসে লাঠি দিয়ে দেখান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এই মানচিত্রের কোন কোন জায়গায় যুদ্ধ করেছেন। দাদু একটু থামতেই লিটু প্রশ্ন করে,

এমন করে মানচিত্র আঁকা তুমি শিখলে কি করে ?
সাথে সাথে রুমকি বলে,

হ্যাঁ দাদু। আমি জানি মানচিত্র আঁকা অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু তুমি কত সহজে এঁকে ফেললে। কি করে শিখলে দাদু বলনা ।

লালু দাদু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদেরকে কত কিছু করতে হতো সে তোরা জানিস না। কোথায় অপারেশান চালাব, কিভাবে কোন পথে যাব ইত্যাদি পরিকল্পনা করার জন্য বাংলাদেশের মানচিত্রটা তখন খুব প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সব সময় হাতের কাছে মানচিত্র পাওয়া যেতনা অথবা একটি মানচিত্র নিয়ে সবাইকে টানাটানি করতে হতো। আমি একাজটি করার জন্য কাঠি দিয়ে মাটি কিংবা বালির উপর বড় করে বাংলাদেশের মানচিত্র এঁকে নিতাম। সেই থেকে অভ্যাস হয়ে গেছে। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেও একাজটি করতাম আমি।

এখন কেন করনা দাদু ?
আবার প্রশ্ন করে লিটু। দাদু বলেন,

এখন থেকে ঠি--ক করব। তোদের জন্য বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকব আমি। কিন্তু খবরদার, কখনও যেন পা দিয়ে মাড়াসনে এই মানচিত্র।

না দাদুভাই, আমরা কখনও তা করবনা। বাংলাদেশের মানচিত্রের মতো তোমার যাদুর লাঠিও আজ থেকে আমাদের কাছে খুব প্রিয়।

কি বললি ? যাদুর লাঠি ?
আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করেন লালু দাদু। রুমকি, লিটু, দানিয়েল তিনজন সমস্বরে জবাব দেয়,

হ্যাঁ দাদু। তোমার লাঠি যাদুর কাঠি। তারপর তিনজন একযোগে নাচতে নাচতে বলে,
দাদুর লাঠি যাদুর কাঠি। দাদুর লাঠি যাদুর কাঠি।

দাদা-দাদু দু’জনই বিস্ফারিত চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন। তাদের দৃষ্টিতে ঝরে পড়ে একঝাঁক আনন্দরাশি।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৩

মীর সজিব বলেছেন: B-)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০১

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৫

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সম্মান দেখানো, দেশ এবং দেশের মানচিত্রকে সম্মান দেখানো আমাদের বাচ্চাদের মধ্যে ছোট বেলা থেকেই এভাবে গেঁথে দিতে পারলে, তারা বড় হয়েও এটা ধরে রাখবে। খুব ভালো একটা বার্তা দিয়েছেন গল্পে।
খুব ভালো লিখেছেন সুফিয়া। নিরন্তর শুভ কামনা রইলো।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৩

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভকামনা রইল আপনার জন্যও। থাকবেন।

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩২

ঢাকাবাসী বলেছেন: বেশ ভাল লাগল।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৫

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন।

৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩৮

তুষার কাব্য বলেছেন: ভাল লাগল।শুভকামনা...

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৬

সুফিয়া বলেছেন: আপনার জন্যও রইল অনেক অনেক শুভকামনা।

৫| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১০

সুপ্ত আহমেদ বলেছেন: অনেক সুন্দর হয়েছে !! আরো ভালো লেখা চাই ! একটাই দাবি মানতে হবে মানতে হবে =p~ =p~ =p~

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৫০

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ সুপ্ত। অনেক ভাল লাগল আপনার মন্তব্য। সত্যি বলতে কি সকালবেলা মনটা ভাল লাগায় ভরে গেল আপনার মন্তব্য দেখে।

আপনার দাবী আমাকে এগিয়ে যাবার পথে উৎসাহ যুগাবে একথা জোড় দিয়ে বলতে পারি।

ভাল থাকুন আপনি নিরন্তর। 

৬| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:২৪

মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: অনেকদিন পর। হয়তো, আমিই অনেক দিন পর এলাম নাকি? যাই হোক, গল্পটা চমৎকার হয়েছে। খুব ভালো লাগলো।

ভালো থাকবেন, সব সময়।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৫৩

সুফিয়া বলেছেন: আপনার ভাল লাগা দেখে আমারও খুব ভাল লাগছে। ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য।

ভাল থাকুন নিরন্তর।

৭| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৪৪

জাফরুল মবীন বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন।

শ্রদ্ধা জানবেন।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:০১

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ জাফরুল ভাই। ভাল থাকবেন।

৮| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২

ফাহিমুল ইসলাম বলেছেন: ব্যাপক মজা পাইছি:P:P:P

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১৪

সুফিয়া বলেছেন: আমার মনে হয় মজা পাওয়ার চেয়ে গল্পের থিমটা উপলব্ধি করা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। সেটা আপনি করেছেনও। আপনার পরের মন্তব্য সেই ইংগিত বহন করছে।

ধন্যবাদ আপনাকে।

৯| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩

ফাহিমুল ইসলাম বলেছেন: : মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সম্মান দেখানো, দেশ এবং দেশের মানচিত্রকে সম্মান দেখানো আমাদের বাচ্চাদের মধ্যে ছোট বেলা থেকেই এভাবে গেঁথে দিতে পারলে, তারা বড় হয়েও এটা ধরে রাখবে। খুব ভালো একটা বার্তা দিয়েছেন গল্পে।
খুব ভালো লিখেছেন সুফিয়া। নিরন্তর শুভ কামনা রইলো।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১৩

সুফিয়া বলেছেন: আপনার জন্যও অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইল। ভালো থাকুন নিরন্তর।

১০| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৩

এহসান সাবির বলেছেন: শুভ বসন্ত।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:১০

সুফিয়া বলেছেন: শুভ বসন্ত। ভালো থাকবেন নিরন্তর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.