নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

সুফিয়া

পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।

সুফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মজ !

২৫ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২

আত্মজ !

রাতের শেষ ট্রেনটাও তখন ছেড়ে গেছে স্টেশন থেকে। লকিয়ত তবু দাঁড়িয়ে আছে কালো ফিতাওয়ালা লাল ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে। এখন চারপাশ সুনসান নিরব। একটু আগে ট্রেনটা যখন স্টেশেনে দাঁড়িয়ে ছিল তখন কুলিদের হাকডাক আর যাত্রীদের আনাগোণায় কয়েক মিনিটের জন্য যেন জেগে উঠেছিল স্টেশনটা। এখন আবার সেই আগের মতো, যেমনটা লকিয়ত দেখেছিল রাত দশটায় স্টেশনে আসার পর থেকে। যেন মৃত প্রাণে জীবনের ঝাঁকি দিয়ে আবার থেমে গেছে সবকিছু।

চাওয়ালা ছেলেটা ভেবেছিল এই ট্রেনেই চলে যাবে লকিয়ত। কিন্তু লকিয়ত দাঁড়িয়ে ঠিক আগের মতো। এ পর্যন্ত পাঁচ কাপ চা খেয়েছে লকিয়ত ছেলেটার কাছ থেকে। একটু হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে দু’জনের মধ্যে এই সূত্রে। তাই লকিয়ত দাঁড়িয়ে আছে দেখে ছেলেটা বলে
আর তো ট্রেন নাই স্যার ?
ও ---- হ্যাঁ। বলে ছেলেটার দিকে ফিরে তাকায় লকিয়ত। ছেলেটা আবার বলে
স্যার, আপনে যাইবেন কই ? অনেকক্ষণ হইল স্টেশনে আইছেন। আপনের চোখের সামনে দিয়া সবগুলা ট্রেন চইলা গেল আর আপনে ঠায় দাঁড়াইয়া রইলেন। আপনে কই যাইবেন কন তো স্যার ?
ছেলেটার কথায় একটু মজা পায় লকিয়ত। কিন্তু ওর প্রশ্নের কোন উত্তর দেয়না সে। বরং ছেলেটার দিকে একটু নুয়ে আস্তে করে বলে
আর এক কাপ চা হবে তোমার কাছে ?
ছেলেটা অবাক হয় লকিয়তের কথায়।
স্যার, আপনে আবার চা খাইবেন ?
লকিয়ত একটু অপ্রস্তুত হয়। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর আবার বলে
থাকলে দাও, না থাকলে আর কি করা ?
আচ্ছা, দাঁড়ান দেখি।
চায়ের ফ্লাস্কটা জোড়ে নাড়াতে নাড়াতে ছেলেটা আবার বলে
আমার অহন বাড়ি যাওনের সময়। চা যতটুকু আনি শেষ ট্রেন আসার আগেই প্রত্যেকদিন শেষ অইয়া যায়। আইজ বোধঅয় একটু আছে।
ফ্লাস্কের তলায় যতটুকু চা ছিল উপুর করে কাপে ঢালে ছেলেটা। আধা কাপের একটু বেশি হয়। কাপটা লকিয়তের হাতে দিয়ে বলে
স্যার, মজা পাইবননা মনে অয়। চা ঠান্ডা অইয়া গেছে।
তাই দাও। বলে কাপটা হাতে নিয়ে একটা চুমুক দেয় লকিয়ত। ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়ে বলে
ঠান্ডা চা স্যার। কাপটা খালি কইরা দেন তাড়াতাড়ি। আমি অহন বাড়িত যামু।
লকিয়ত তৎক্ষণাত পকেটে হাত ঢুকায়। দেখে ছেলেটা বলে
এইটুকুন চায়ের আর কি দাম দিবেন স্যার ? আপনি বরং চা’টা তাড়াতাড়ি শেষ করেন। আমি তাইলে বাড়িতে যাইতে পারি।
ও --- । তুমি তো কাপটা নিয়ে যাবে ? আচ্ছা, তোমার কাপটার দাম কত ?
কি কন স্যার ? এই কাপটা নিয়া আপনে কি করবেন ? পুরানা কাপ।
আরে না, তোমার কাপ নিয়ে আমি কি করব ? এমনি জানতে ইচ্ছে করল।
বুঝছি স্যার। আপনি আজাইরা কথা কইতাছেন। আমার কাপটা দেন, আমি অহন যাই।
ও তাই তো ! তোমার তো বাড়ি যাওয়া দরকার। আচ্ছা যাও।
বলে খালি চায়ের কাপটা ছেলেটার হাতে ফিরিয়ে দেয় লকিয়ত। ছেলেটা দুই পা এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে ডাক দেয় সে।
এই, তোমার নামটা কি সেটা তো জানা হলনা। এতক্ষণ গল্প করলাম তোমার সাথে, বিনা পয়সায় চা-ও খাওয়ালে !
আমার নাম সুজন স্যার।
আবার হাঁটতে শুরু করে সুজন। সাথে সাথে হাত বাড়িয়ে একটা হাত ধরে ফেলে লকিয়ত।
একটু দাঁড়াও। আর একটা প্রশ্নের উত্তর জানার আছে তোমার কাছ থেকে।
কন স্যার। তাড়াতাড়ি কন।
তোমার বাড়ি এখান থেকে কতদূর ?
এই তো স্টেশনের কাছেই।
বাড়িতে তোমার কে কে আছে ?
আমার মা ছাড়া কেউ নাই স্যার এই দুনিয়াতে।
কেন ? তোমার বাবা ?
মায় কইছে আমি ছোডকালে মইরা গেছে।
চল, তোমার বাড়ি যাব।
কেন স্যার ? আমার বাড়ি যাইবেন কেন ?
তোমার মাকে দেখব।
সুজন হঠাৎ তথমতো খেয়ে যায় লকিয়তের এ কথায়। ঝটপট জিজ্ঞেস করে
কেন স্যার ? আমার মায়েরে আপনে দেখতে চাইছেন কেন ? আপনে চিনেন আমার মায়েরে ?
না না। তোমার মাকে আমি চিনব কি করে ? তবে তোমার মত একটা চমৎকার ছেলেকে যিনি জন্ম দিয়েছেন, এতবড় করে তুলেছেন, তাকে একটু দেখতে ইচ্ছে করছে এই আর কি ?
আচ্ছা স্যার, ঠিক আছে চলেন।
চল। বলে একটু এগিয়ে থেমে দাঁড়িয়ে পরে লকিয়ত। সুজন জিজ্ঞেস করে
কি অইল স্যার ? যাইবেন না ?
না, ভাবছি এতরাতে তোমাদের বাড়ি যাওয়া কি ঠিক হবে ?
এইটা আপনে ঠিকই ভাবছেন স্যার। আপনে যাইবেন না মনে অয়। আমি তাইলে যাই।
আর দাঁড়ায়না সুজন। হন্্ হন্ করে হাঁটতে থাকে সে। কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে সুজন পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে লকিয়ত ওর পিছু পিছু আসছে। সুজন জিজ্ঞেস করে
স্যার, আপনে না যাইবেননা কইলেন ?
তোমাকে একটু এগিয়ে দিতে এলাম। এতরাতে একা একা যাচ্ছ। অবশ্য তোমাকে আমিই দেরি করিয়ে দিয়েছি।
কি যে কন স্যার। জন্ম থাইকা এইখানে চলাফেরা করতাছি। আর এইটুকুন তো মাত্র পথ !
তবু আমার মনে হয় তোমাকে এগিয়ে দেয়া আমার উচিত।
স্যার আপনি সত্যিকার কি চান কন তো ?
তোমার মায়ের নাম কি সুজন ?
রাবেয়া। রাবেয়া খাতুন। এইবার আমি যাই স্যার, আপনে থাকেন।
ঠিক আছে যাও।
চলে যায় সুজন। লকিয়ত ওখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে সুজনের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর ভিতর থেকে কথা বলে উঠে অন্য কেউ।
লকিয়ত, এই সুযোগ হাতছাড়া করিসনা। তাহলে চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলবি তোর স্বজনদের। যে অন্যায় তুই একদিন করেছিলি একটা অসহায় নিরপরাধ মেয়ের উপর সেটার প্রায়শ্চিত্ত করার সময় এটাই।
কথাগুলো মিলিয়ে যাবার সাথে সাথে লকিয়ত সুজনের চলে যাওয়া পথ ধরে দ্রুত হাঁটতে শুরু করে।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৪

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: গল্পটা বেশ লাগলো তবে গল্পের নায়কের নামটা ভাল লেগেছে "লকিয়ত"

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫০

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ ইমতিয়াজ। স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানবেন।

২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:২৩

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫১

সুফিয়া বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। ভাল থাকনে আপনি। স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানবেন।

৩| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭

মনিরা সুলতানা বলেছেন: সুন্দর লিখছেন আপা...

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫২

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ মনিরা আপা। ভাল থাকুন আপনি।


স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানবেন।

৪| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:১৩

অর্বাচীন পথিক বলেছেন: বেশ অন্য রকম একটা গল্প পেলাম

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটা পড়ার জন্য। ভাল থাকুন সব সময়। মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানবেন।

৫| ২৬ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৪২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অন্য রকম একটা গল্প। সুন্দর। প্লাস

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫

সুফিয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটা পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন। ভাল থাকুন আপনি।

মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানবেন।

৬| ২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:১০

জাফরুল মবীন বলেছেন: একটা সুন্দর গল্প উপহার দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ বোন।

মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

ভালো থাকুন এ শুভকামনা রইলো।

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৬

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ জাফরুল ভাই গল্পটা পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য। ভাল থাকুন আপনি সব সময়।

মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানবেন।

৭| ২৬ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১৭

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর গল্প। চমৎকার সমাপ্তি। ভাল লেগেছে ।

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:২৩

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ সেলিম ভাই গল্পটা পড়ার জন্য ও সুন্দর করে মন্বব্য করার জন্য। ভাল থাকুন আপনি সব সময়।

স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা রইল।

৮| ২৬ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:১৯

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ভালবাসার টানে এভাবেই ফিরে ফিরে আসতে হয় বারংবার...

গল্পে ভালোলাগা রইল।

শুভকামনা নিরন্তর। ভালো থাকুন প্রতিক্ষণ।

২৭ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:৩৬

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটা পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য।

ভাল থাকুন আপনি।

৯| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৪৪

আরজু পনি বলেছেন:
লেখায় অনেক ভালো লাগা রইল।

ট্যাগ আর বিভাগ এই দুটো অপশন চাইলে কাজে লাগাতে পারেন। যেখানে আপনি আপনার লেখার বিষয় উল্লেখ করে দিতে পারে।

অনেক শুভকামনা রইল।

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:০১

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আরজুপানি পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য। আপনার সুন্দর পরামর্শ কাজে লাগাতে চেষ্টা করব। ভাল থাকুন আপনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.