নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

সুফিয়া

পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।

সুফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প -- জয়তুন

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৫৯

জয়তুন





জয়তুনের ভাগ্যটাই এমন। যেদিকেই যায় দুঃখের শত-সহস্র ভেরি ওকে আঁকড়ে ধরে। তাই জয়তুন নিজকে নিয়ে বাজি ধরার সব চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছে। সঁপে দিয়েছে নিজকে ভাগ্যের হাতে। মনে মনে বলে



আমি নিজ থেকে আর কিছু করার চেষ্টা করবনা। যে কাজেই হাত দেই সেটাই বুমেরাং হয়ে আমাকেই বিদ্ধ করে। তাই এখন থেকে আমি নিজকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করলাম ভাগ্যের হাতে। ভাগ্য বিধাতা, এরপর আমি শুধু তোমার খেলা দেখব। আমাকে নিয়ে কত খেলা খেলতে পার তুমি, কিভাবে খেলে তুমি তুষ্ট হবে, এরপর শুধু সেটাই দেখব আমি।



এভাবে মন থেকে নিজের ভারটা সম্পূর্ণরূপে নামিয়ে দেয় জয়তুন। কিন্তু তবু মনটাকে ভারমুক্ত মনে হয়না। কিসের একটা হাহাকার যেন ওকে তাড়িয়ে নিয়ে যেতে থাকে।



জয়তুনের স্বামী মনিরুল মারা গেছে বছরও পুরা হয়নি। জয়তুনের মনে হয় এই তো সেদিন বিয়ে হয়েছিল মনিরুলের সাথে। লাল টুকটুকে শাড়ির ঘোমটা টেনে দু’হাত ভরে কাঁচের চুড়ি পরে সে এসেছিল মনিরুলের সাথে সংসার করতে। মনিরুলের উভয় কূলে কেউ নেই। তাই একাই গিয়েছিল সে বিয়ে করতে। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা জয়তুনের বাবা মেয়ের এই সদগতিটা করেই চোখ বুজেন। জয়তুনের বাপের বাড়ির পিছুটান আর কিছুই রইলনা। বাবাকে চিরবিদায় দিয়ে সে মন দেয় মনিরুলের সাথে ঘর-কন্নায়।



জয়তুনের কাছে যদিও মনে হয় সেদিনের ঘটনা। কিন্তু কাগজের পাতায় হিসেব করলে দেখা যায় ছয় বছর সংসার করেছে সে মনিরুলের সাথে। মাঝে মাঝে এ নিয়েও নিজকে প্রশ্ন করে জয়তুন। সত্যিই কি ছয় বছর সংসার করেছে সে মনিরুলের সাথে ? একে কি সংসার করা বলে ? বিয়ের ছয় মাসের মাথায় গাড়িচাপা পড়ে মনিরুলের কোমড় অবধি অবশ হয়ে গেল। বিছানায় পড়ে থাকা একটা মানুষকে নিয়ে সংসারের বৈঠা টেনে নিয়ে যাওয়া কি কম কথা ? সেটাও পেরেছে জয়তুন। প্রতি মুহূর্তে নিজের ইচ্ছেকে গলাটিপে হত্যা করেছে সে। মনিরুলকে বুঝতে দেয়নি তার বুকের হাহাকার।



কিন্তু মনিরুল সব বুঝতে পারত। বিশেষ করে জয়তুনের প্রতি মুহূর্তের দেহ-মনের যুদ্ধটা কিছুতেই ওর চোখ এড়িয়ে যেতে পারতনা। কিন্তু অক্ষম শরীরটা নিয়ে তার করার কিছুই ছিলনা। মাঝে মাঝে বলত



আমি তোর জীবনটা শেষ কইরা দিলাম রে জয়তুন !



জয়তুন ম্লানমুখে উত্তর দিত



এইসব নিয়া তুমি একদম ভাইবনা। তুমি তো আমারে উদ্ধার করতেই বিয়া করেছিলা। ঐ সময় যদি তুমি আমারে বিয়া না করতা তাইলে বাজানের মরণের পর আমি কোনহানে গিয়ে খাড়াইতাম ?



কিন্তু তরে আমি উদ্ধার করতে পারলাম কই ? তর কোন খায়েস মিটানের ক্ষমতাই ত অহন আমার নাই। এই পঙ্গু মানুষডারে লইয়া তুই সারা জীবন কেমনে থাকবি ? আর থাকবিই বা কেন ? তর শরীর-মনের আহলাদ বইলা একটা কথা আছেনা ?



রাহ ত তুমি এইসব কথা। আমার চিন্তা তোমার করন লাগবনা। তুমি নিজে কেমনে ভালা থাকবা হেইডা ভাব।



মনিরুলকে এখানেই থামিয়ে দিয়ে উঠে যায় জয়তুন সেখান থেকে। মনিরুল স্বগোক্তি করে বলে



আমার ভালা থাহন উপরওয়ালা ঠিক কইরা ফেলাইছে। এরচেয়ে ভালা থাহন ত আমার আর অইবনা। কিন্তুক তরে লইয়া আমার খুব ডর লাগে। হেই কথা তরে কই কেমনে ? শেষকালে আমার কারণে না তর মাথায় কলংকিনীর বদনাম চাপে !



মনিরুল সবটাই বুঝতে পারে। ওকে দেখার নাম করে লুৎফর কেন ঘন ঘন এবাড়িতে আসে ? কিন্তু ও যতদিন চোখের সামনে আছে ততদিন জয়তুন নিজকে নিয়ে অন্য কিছু ভাববেনা। অথচ মনিরুল চায় জয়তুন নিজকে নিয়ে ভাবুব। স্বার্থপর হোক জয়তুন, ওকে ছেড়ে চলে যাক। আকারে-ইঙ্গিতে মনিরুল জয়তুনকে বুঝাতেও চেয়েছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বন্ধন ছিন্ন করার কথা। কিন্তু জয়তুন সেসব বুঝেও না বুঝার ভান করে।



লুৎফরের সাথে জয়তুনের যা কথা হয় তা মনিরুলের সামনেই হয়। তবু মনিরুল ওদের চোখের অন্য ভাষাটা পড়তে পারে।

শেষে কঠিন সিদ্ধান্তটা মনিরুল নিয়েই ফেলে।



একদিন বেলাল মিয়ার বাড়ির কাজ সেরে ঘরে এসে জয়তুন দেখে মনিরুল নিঃসাড় হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে শুকিয়ে দুই গালে লেগে গেছে। পাড়া-প্রতিবেশীরা দেখে মত দেয়, মনিরুল বিষ খেয়ে মরেছে। কিন্তু মনিরুল বিষ পেল কিভাবে ? ও তো নড়াছড়া করতে পারেনা। কে দিল ওকে বিষ ?

সবার সন্ধিগ্ন দৃষ্টি জয়তুনকে বিদ্ধ করে। প্রশ্নের গুঞ্জনও এক সময় মিলিয়ে যায়। শুধু জয়তুনের মনের জিজ্ঞাসা দ্বিগুণ আক্রোশে জ্বলে উঠে।



লুৎফর ! কি কইরা আর বিশ্বাস করি তরে ?



দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে কথাটি উচ্চারণ করে জয়তুন। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে



আমার ভালা থাহনের এই জায়গাটাও তুমি কাইরা নিলা ? খুশী অইছ ত তুমি ?

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৪৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: মন খারাপ করা গল্প । ভাল লেগেছে ।

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৩

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য। ভাল থাকুন সব সময়।

২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: গল্পে জয়তুনের কষ্টগুলো স্পষ্ট।
++

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৩

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য। ভাল থাকুন আপনি।

৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: আমার আপন মামাতো বোন এর জীবনের গল্পটা অনেকটা এমনই। তবে বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তার স্বামী মারা যায়।


আমাদের সমাজের জয়তুনরা ভাল থাকুক সব সময়।

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৪

সুফিয়া বলেছেন: গল্পটা তো আমাদের সমাজের অতি চেনা। জয়তুনদের নিয়ে ভাগ্য বিধাতা এমনি করে খেলা করে।

ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য।

৪| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৪৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর লাগল গল্পটা।
সমাজের তথাকথিত এই নিচু সমাজের মানুষদের নিয়ে খুব একটা লেখা হয়না। আপনি সে সাহস দেখিয়েছেন। তাই অভিনন্দন।
আরো কাজ করবেন এই নিয়ে আশা করি।
গল্পের শেষে মন খারাপ হয়ে গেল :-&

১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:২৩

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আরণ্যক রাখাল। আমার গল্পটা পড়ার জন্য ও সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য।

আপনি ঠিকই বলেছেন, এদের জীবনাচার নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবিনা। আমি মাঝে মধ্যে চেষ্টা করি এই চরিত্রগুলোকে আমার লেখায় তুলে আনতে।

ভাল থাকুন আপনি।

৫| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৩৬

আমি তুমি আমরা বলেছেন: দুঃখজনক পরিণতি :(

১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:২৪

সুফিয়া বলেছেন: জ্বি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

৬| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৪৮

প্রকাশক পপি চৌধুরী বলেছেন: ভালো লাগলো গল্পটি। ধন্যবাদ চমৎকার লেখাটি পাঠকদের উপহার দেয়ার জন্য।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:২৫

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ পপি আপা গল্পটা পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য। ভাল থাকুন আপনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.