নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

সুফিয়া

পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।

সুফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প - হঠাৎ বৃষ্টি

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:২১

হঠাৎ বৃষ্টি


ময়ুরি ভেবেছিল রিকশা থেকে নেমেই হিমেলের দেখা পেয়ে যাবে। যেভাবে বলেছে হিমেল তাতে ওরই আগে এসে অপেক্ষা করার কথা। কিন্তু রিকশা থেকে নেমে এদিক-ওদিক তাকিয়ে অবাক হয় ময়ুরি। আশেপাশে কোথাও নেই হিমেল। মোবাইলে সময় দেখে ময়ুরি। সোয়া চারটা বাজে। হিমেল সময় দিয়েছে চারটায়।

তাহলে সে কি ভুল করেছে জায়গা চিনতে ?

মোটেও ভুল হয়নি। এখানেই ওকে আসতে বলেছে হিমেল। একটাই তো এখানে চটপটির দোকান কামিনী গাছের সাথে লাগোয়া।

আবারও এদিক-ওদিক তাকায় ময়ুরি। না,আর কোন কামিনী গাছ নেই কলেজের দেয়াল ঘেঁষে, কোন চটপটির দোকানও নেই। তাহলে হিমেল কি ইচ্ছে করে এমনটা করেছে? কোন কারণে ওর উপর প্রতিশোধ নিতে চাইছে কি হিমেল ?

ঘড়ির কাঁটা সাড়ে চারটা, তারপর পাঁচটার ঘর অতিক্রম করল।
না, হিমেলের দেখা নেই।

হিমেল আসবে না। ইচ্ছে করেই এমনটা করেছে নিশ্চিত হয় ময়ুরি।
কলেজটা আজ বন্ধ থাকলেও চটপটির দোকানে এসময় লোক সমাগম বাড়তে থাকে। তাদের কেউ কেউ ময়ুরির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। অপ্রস্তুত হয় ময়ুরি। তাড়াতাড়ি একটা রিকশা ডেকে উঠে বসে সে।

কোথায় যাইবেন আপা ?

মিজুপাড়া।

আমি ঐদিকে যামুনা।

ততক্ষণে রিকশা কলেজ চত্বর পাড় হয়ে গেছে। রিকশাওয়ালার কথা শেষ হওয়ামাত্র ময়ুরি রিকশা থামিয়ে ছট করে নেমে দাঁড়ায়।

ঠিক আছে, তুমি যাও।

চলে যায় রিকশাওয়ালা। ময়ুরি এখানেই দাঁড়িয়ে আর একটা রিকশা ধরার চেষ্টা করে। এখানে দাঁড়ানো কোন রিকশা নেই। যাওয়া-আসার পথে কোন খালি রিকশা যদি পাওয়া যায় সেটাই একমাত্র ভরসা। কিন্তু কোন খালি রিকশা চোখে পড়ছেনা। যে রিকশাগুলো আসছে সবগুলোতে যাত্রী আছে।

ময়ুরি অসহিষ্ণু হয়ে উঠে।

একটু পেছনে হেঁটে আগের জায়গায় গেলে নিশ্চিত রিকশা পাওয়া যাবে। কিন্তু আবার ওখানে ফিরে যেতে মন চাইছেনা ময়ুরির। লোকজন কি ভাববে কে জানে ? যারা তখন আড়চোখে তাকাচ্ছিল ময়ুরির দিকে তারা হয়তো একটা বাজে মন্তব্য ছুঁড়ে দিবে ময়ুরির দিকে।

জায়গাটা ময়ুরির অচেনা, এর আগে কখনও আসেনি এদিকে। তাই কোনদিকে এগোলে রিকশা পেতে সহজ হবে বুঝতে পাচ্ছেনা সে। অসহায়ের মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে ময়ুরি।

নিজের বোকামীতে নিজের উপর রাগ হয় ময়ুরির। ভাবে,
হিমেলের কথায় বিশ্বাস করে এভাবে চলে আসা ওর ঠিক হয়নি।

হিমেলের সাথে এর আগে মুখোমুখি কোনদিন দেখা হয়নি ওর। ফেসবুকে প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর ফোন নম্বর বিনিময়। সেখান থেকে ফোনে কথাবার্তার সূত্রপাত। আজই প্রথম দেখা হবার কথা ছিল দু’জনের। দিন-ক্ষণ-স্থান ঠিক করেছিল হিমেল নিজেই। অথচ ----।

না, আর ভাবতে চায়না ময়ুরি। নিজের উপর রাগ বাড়তে থাকে ওর। সেই রাগ প্রকাশের পথ না পেয়ে বুকের ভিতর গুমট কান্না হয়ে জমতে শুরু করে।

এমন সময় আকাশে মেঘের গর্জনে কেঁপে উঠে ময়ুরি। তাকিয়ে দেখে কালো মেঘে সেজে উঠেছে আকাশটা এরইমধ্যে, বৃষ্টি এলো বলে।

আঁৎকে উঠে ময়ুরি। আর কোনদিকে না তাকিয়ে সে সামনের দিকে দ্রুত পায়ে হাঁটতে থাকে। কিছুদূর এগোতেই বড় বড় বৃষ্টির ফোট পড়তে শুরু করে। কিন্তু ময়ুরি দাঁড়ায়না। কোথাও দাঁড়িয়ে বৃষ্টির কবল থেকে নিজকে বাঁচানোর চেয়ে হাঁটাই যুক্তিযুক্ত মনে হয় ময়ুরির কাছে। আরও দ্রুত পা চালায় সে। আর সামনে- পেছনে তাকিয়ে দেখে কোন খালি রিকশা বা সিএনজি পাওয়া যায় কি-না সেই আশায়।

এমন সময় একটা সিএনজি পেছন থেকে এসে জোড়ে ব্রেক কষে থেমে যায় ময়ুরির পাশে। চমকে উঠে ময়ুরি।

আপা, কোথায় যাবেন ?

বাইরে গলাটা একটু বাড়িয়ে শুদ্ধ বাংলায় জিজ্ঞেস করে চালক।

মিজুপাড়া যাব। চলুন না !
আকুতি ঝরে পড়ে ময়ুরির গলায়।

উঠে বসুন।

সিএনজি চালকের প্রতি মনে মনে কৃতজ্ঞ হয়ে উঠে ময়ুরি। উঠে বসে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে সে।

বাসার সামনে যখন সিএনজি থেকে নামে ময়ুরি তখন তুমুল বৃষ্টিতে সয়লাভ চারপাশ। ভাড়া দিতে গিয়ে সিএনজির গায়ে লেখাটার দিকে চোখ পড়ে ময়ুরির। আজকাল এটা একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। সিএনজির নাম রাখা হয় অমুক পরিবহন। এই লোকটারও মনে এই সখের কমতি নেই দেখছি।

মনে মনে কথা ক’টি আওড়িয়ে বাসায় ঢুকে যায় ময়ুরি। নির্বিঘ্নে বাসায় পৌঁছার একটা স্বস্তি মনের মধ্যে আছে বটে, কিন্তু হিমেলের আজকের ব্যবহার মন থেকে কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছেনা ময়ুরি। বরং সেটা ময়ুরিকে কুরে কুরে খেতে থাকে।

রাতে ল্যাপটপ নিয়ে বসতেই এর থেকে উত্তরণের একটা পথ খোঁজে পায় ময়ুরি। আচ্ছামতো কড়া একটা মন্তব্য লিখে দিবে হিমেলের ইনবক্সে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোন মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার কার আগে কয়েকবার ভাবতে হয় হিমেলকে।

ফেসবুকে সরাসরি হিমেলের পেইজে ঢুকে যায় ময়ুরি। কিছু লেখার আগেই চোখ পড়ে ছবিটার দিকে, একটু আগেই পোস্ট করা হয়েছে।

‘হিমেল পরিবহন।’

লেখাটা ষ্পষ্ট পড়া যাচ্ছে সিএনজি’র ছবির গায়ে। ময়ুরির অর্ন্তদৃষ্টি মুহূর্তেই পেছনে চলে যায়।

একদম ঠিক ভেবেছি আমি। এটাই সেই সিএনজি। এটাতে চড়েই আমি আজ বাসায় ফিরেছি। তাহলে এই ড্রাইভারই -------।

দ্রুত ছবির ক্যাপশনেটা পড়ে ময়ুরি।

‘একজন সিএনজি চালক হিসেবে আজ আমি সার্থকতা খুঁজে পেয়েছি-------’।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৪১

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: B:-)

২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৭:৪৬

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকুন।

২| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৩৯

অর্বাচীন পথিক বলেছেন: প্রিয়তে রাখলাম আপু। সময় করে পড়ে মন্তব্য করবো।

শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৭:৪৭

সুফিয়া বলেছেন: ধবন্যবাদ অর্বাচীন পথিক। ভাল থাকুন আপনি।

৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:০৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ছোট্ট কিন্তু ভালই।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৭:৪৭

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ গল্পটা পড়ার জন্য। ভাল থাকুন আপনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.