নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

সুফিয়া

পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।

সুফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প - সন্দেহ

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৬

সন্দেহ


আর নতুন করে ভাবব কেন বলো ? তুমি তো অনেক আগেই সব ভাবনার ইতি ঘটিয়ে দিয়েছো।
তোমার এ কথাটা ঠিক নয়। আমাকে নিয়ে তুমি এভাবে ভাবতে পারনা।
তাহলে কিভাবে ভাবব বলো ?
যা সত্য তা নিয়ে ভাববে।
তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছ তোমাকে নিয়ে আমি যা ভাবি, যা বলি, তার সব মিথ্যা ? সব ভুল ?
হাসনার এ কথার কোন উত্তর দেয়না ইকবাল। চুপ করে থাকে সে। এটাকে সুযোগ ভেবে হাসনা আবার বলে
এখন কথা বলছনা কেন ? তুমি না সত্যবাদী যুধিষ্ঠির ! তাহলে সত্যি কথাটা বলো। স্বীকার করো যে নায়লার সাথে তোমার একটা সম্পর্ক আছে, সেটা তুমি লুকোতে চাও সবার কাছে।
সংযত হয়ে কথা বলো হাসনা। তুমি ভাল করেই জানো যে নায়লার সাথে আমার এমন কোন সম্পর্ক নেই যা কারও কাছ থেকে লুকোতে হয়। তুমি মিছিমিছি নিজকে ছোট করছ।
নিজকে ছোট করি আর যা-ই করি, আমি একটুও মিথ্যা বলছিনা। তোমাদের দু’জনের সম্পর্ক যে কতদূর গড়িয়েছে তার অনেক প্রমাণ আমার কাছে আছে।
থাকো তুমি তোমার প্রমাণ নিয়ে - বলে মোবাইলটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় ইকবাল। একা ঘরে হাসনা নিজে নিজে কতক্ষণ গজরায়। তারপর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।

হাসনার মনে হয় ওর মতো দুঃখী মানুষ এই পৃথিবীতে খুব কমই আছে। বাবা-মা মারা গেছে ও যখন ক্লাস নাইনে পড়ে। তারপর থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত সময়টা কেটেছে ভাই-ভাবীর আশ্রয়ে। সেই সময়টা খুব একটা সুখের ছিল বলা যায়না। তবু ভাই-ভাবী ভাল ঘর-বর দেখে ওকে বিয়ে দিয়েছে। হাসনা ভেবেছিল ওর অসুখী সময়ের এবার চিরবিদায় ঘটবে। ইকবালকে নিয়ে একটি সুখের বৃন্দাবন তৈরি করবে সে। ওর এ পর্যন্ত সমস্ত অতৃপ্ত ইচ্ছা পূরণ করবে সে।

কিন্তু বিয়ের এক বছরের মাথায় হাসনা আবিস্কার করে নায়লাকে, তার স্বামীর আশপাশে সব সময় ছায়ার মতো জড়িয়ে আছে। কারণে-অকারণে রাত বিরাতে ইকবালের কাছে নায়লার ফোন আসে, কথা বলে ইকবাল অনেকক্ষণ ধরে নায়লার সাথে। এসব দেখে হাসনার মনের সুখী গৃহকোণে ভাঙচুর হতে থাকে।
কিন্তু বরাবরই ওর প্রতি হাসনার অভিযোগকে অস্বীকার করে আসছে। অথচ হাসনার সন্দেহ মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য এরচেয়ে ভাল কোন যুক্তিও দেখাতে পারছেনা সে। সত্যটা বলতে গেলে বিপত্তি আরও বাড়বে বৈ কমবেনা। তাই হাসনার এত চাপাচাপি সত্ত্বেও সে নায়লার বিষয়ে কোন কথা বলেনা। হাসনার সব অভিযোগ নিরবে সহ্য করে নেয় ইকবাল।

কিন্তু আজ একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলেছে হাসনা। সহ্য করতে না পেরে ইকবাল বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। গিয়ে বসে বারান্দার ইজি চেয়ারে। শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবতে চেষ্টা করে পুরোনো দিনগুলোর কথা।

নায়লা ছিল ওর খেলার সাথী। শৈশবে দু’জনের মধ্যে ছিল গলায় গলায় ভাব। নায়লার বাবা-মারা গিয়েছিল নায়লার জন্মের কিছুদিন পরই। তাই বন্ধুত্বের সূত্রে ইকবালের বাবার কাছ থেকে সে আদায় করে নিয়েছিল বাবার স্নেহ-আদর-ভালবাসা। এবাড়ি-ওবাড়ি হলেও দুই পরিবারের মধ্যে ছিল অবাধ যাতায়াত।
কিন্তু বিপত্তি ঘটল একদিন। ইকবাল তখন সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ওর মা মারা যায় বহুদিনের পুরাতন একটা রোগের অবসান ঘটানোর জন্য অপারেশন করাতে গিয়ে। মুখ থুবড়ে পড়ে ইকবালের ভবিষ্যত। চোখে অন্ধকার দেখে ইকবালের বাবা। এ সময় ইকবালের প্রতি স্নেহের হাত বাড়িয়ে দেয় নায়লার মা। ইকবালকে মায়ের মমতা দিয়ে আগলে রাখতে চেষ্টা করে সে। ভর্তি হয় ইকবাল কলেজে। তারপর ইউনিভার্সিটি।

নায়লার সাথে চিঠি বিনিময় হয়। সাদামাটা সেই চিঠি। নায়লা তার মায়ের কথা লিখে, খায়ের চাচা অর্থাৎ ইকবালের বাবার কথা লিখে সেসব চিঠিতে।

এরই মধ্যে হঠাৎ চিঠি লেখা বন্ধ করে দেয় নায়লা। চিঠি লেখে ইকবালের বাবা। নায়লার বিয়ে ঠিক হয়েছে, ইকবাল যেন বাড়ি যায়। ইকবালের মনের ভিতর কোথায় যেন একটা অন্যরকম অনুভূতি দোল খায় চিঠিটা পড়ার পর। কিন্তু কারও কাছে প্রকাশ করেনা সে। যথারীতি বাড়ি যায় ইকবাল নায়লার বিয়েতে। সব মিটে গেলে আবার ফিরেও আসে হলে। মনটা সর্বদা উদাস হয়ে থাকে ইকবালের। বিক্ষিপ্ত কিছু চিন্তা মনে জমা হতে চায়। তবু নিজকে অগোছাল হতে দেয়না ইকবাল।

এভাবে চারমাস কেটে যায়। এমন সময় একদিন চিঠি পায় পাশের বাড়ির রহমত চাচার। ইকবালের বাবা নায়লার মাকে বিয়ে করেছে। চিঠিটা পড়ে রাগে-দুঃখে দু’হাতে নিজের মাথার চুল টেনে ধরে ইকবাল। ছিঃ ছিঃ। বুড়ো বয়সে এমন ভীমরতি কি করে হলো দু’জন মানুষের ?

এরপর থেকে বাবার সাথে আর যোগাযোগ করেনি ইকবাল। যোগাযোগ হয়নি নায়লার সাথেও। এই কিছুদিন আগে, তিন/চার মাস হবে, নায়লার একটা চিঠি পায় ইকবাল। নায়লা লিখেছে
“আমরা দু’জন একই ব্যথায় ভুক্তভোগী। আমাদের দু’জনের কেউ কারও কাছে মুখ দেখানোর ইচ্ছে নেই জানি। তবু আজ তোমাকে আমার বড় দরকার। একবার কি আসবে ?”
ইতি--- নায়লা।

ঠিকানা ধরে ছুটে গিয়েছিল ইকবাল নায়লার কাছে। কিন্তু এই নায়লাকে দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলনা সে। নায়লার কড়িকাঠের শরীরটা বিছানার সাথে প্রায় মিশে গেছে। জীর্ণ-শীর্ণ একটা ঘরে দশ বছরের একমাত্র ছেলে রতন ওর দেখাশুনা করে। রতনের বাবা অফিসে দুর্নীতির দায়ে জেলে গিয়েছিল যখন তখন রতন নায়লার পেটে। জেলেই এক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় রতনের বাবা। সহায়-সম্বল যা ছিল একে একে বিক্রি করে ছেলেকে নিয়ে এ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে নায়লা। কিন্তু এখন আর কোন উপায় নেই ওর হাতে। ডাক্তার বলে দিয়েছে, শরীরের যা অবস্থা তাতে নায়লা বড়জোড় আর দুই/তিন মাস আয়ু পেতে পারে। এমন অবস্থায় ছেলের কথা ভেবে ইকবালের শরণাপন্ন হয় সে। ইকবাল যেন রতনের বেঁচে থাকার একটা পথ করে দেয়।
এরপর থেকেই নায়লার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে ইকবাল, খোঁজ-খবর নেয় নায়লা ও রতনের। আজও অফিস থেকে ফিরে নায়লার ফোন পায় ইকবাল। ফোন করেছে রতন। ওর মায়ের শরীরের অবস্থা ক্রমশ আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

এই ফোনের সূত্র ধরেই হাসনা এতটা বাড়াবাড়ি করেছে। চিন্তার এ পর্যন্ত আসতেই ইকবালের মনে পড়ে সে মোবাইলটা ডিসকানেক্ট না করেই বিছানায় ফেলে দিয়ে এসেছে। ভাল করে শুনা হয়নি আরও কি বলতে চেয়েছিল রতন।

দৌড়ে রুমে যায় ইকবাল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে লাইনটা ইতোমধ্যে কেটে গেছে। তাড়াতাড়ি ফোন করে ইকবাল। রতন ফোন রিসিভ করেই চীৎকার করে কাঁদতে থাকে।
মামা, আম্মা নেই --------।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:১২

জেন রসি বলেছেন: গল্পের মাঝামাঝিতে অপ্রত্যাশিত চমক আছে।

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৪৬

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ জন গল্পটা পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য। ভাল থাকুন আপনি।

২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:২০

সুশান্ত হাসান বলেছেন: ভালো!!!

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৪৭

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

৩| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৫১

শায়মা বলেছেন: :(

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪২

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য। ভাল থাকবেন।

৪| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৫৬

যুগল শব্দ বলেছেন:
ভালো গল্প লিখেছেন আপু।
সন্দেহের অনল সত্যি নিভৃতে পুড়িয়ে মারে। ++

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪৩

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ যুগল গল্পটি পড়ার জন্য ও সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য। ভাল থাকুন।

৫| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:২১

ঢাকাবাসী বলেছেন: চমৎকার লাগল।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪৩

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ ঢাকাবাসী। ভাল থাকুন।

৬| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৪৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্পটি লাগল বেশ!

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪৪

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ প্রোফেসার। ভাল থাকুন সব সময়।

৭| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:৩০

আমি সৈকত বলছি বলেছেন: অসাধারন গল্প।

খুবই প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা গল্পটি সত্যিই চমৎকার হয়েছে।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪৪

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ সৈকত গল্পটি পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য।

৮| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:০৩

মনোয়ার মিলন বলেছেন: :-D :-)

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪৫

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ । ভাল থাকুন।

৯| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:১২

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: ভাল লাগলো ।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৪০

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ ইমতিয়াজ। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.