নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

সুফিয়া

পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।

সুফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেয়ে তুমি মেঘ বালিকা

৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:২১

মেয়ে তুমি মেঘ বালিকা


রাতভর তুমুল বর্ষণের পর সকালবেলা ঝলমলে রোদে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। বীথি ঘুম থেকে উঠে সামনের বারান্দায় গিয়ে বাইরে তাকিয়েই মুগ্ধ হয়ে যায়। সবুজ গাছ-গাছালির ডগায় সকালের কচি সোনা রোদ যেন আহলাদে ঢলে ঢলে পড়ছে। ভাল লাগে বীথির। ইচ্ছে করে অনেকক্ষণ ধরে সবুজের বুকে রোদের হুটোপুটি খেলা দেখতে। বীথি ঘর থেকে একটা টুল এনে বারান্দায় বসে পড়ে।

আজ বীথির অফিস ছুটি। ফরহাদও নেই, অফিসের কাজে চট্টগ্রাম গেছে, ফিরবে আগামীকাল। কাজের বুয়া আসবে সেই দুপুর নাগাদ। কাজেই সকালটা ইচ্ছেমতো কাটানোই যায়। মনটা ফুরফুরে লাগে বীথির। সে বারান্দার গ্রীলে মাথা রেখে আনমনে তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে।

সুখের কোন রং হয় কি-না বীথির জানা নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে বীথির মনে হচ্ছে সময়টা সুখের রং জড়িয়ে ওর সামনে হাজির হয়েছে। বীথির ইচ্ছে করে রঙিন এই সুখকে গায়ে মেখে নিতে। গ্রীলের ফাঁক দিয়ে বাইরে হাত বাড়ায় বীথি। তারপর সেই হাত আলতো করে মুখে ঘষে। সাথে সাথে অতীতের স্মৃতি-মোড়ানো একটা সময়ের পর্দা সরে যায় বীথির সামনে থেকে।

বীথির বয়স তখন বার ছুঁই ছুঁই করছে। ইচ্ছেমতো খেলাচ্ছলে এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরে বেড়ায় যখন তখন। সঙ্গী খেলার সাথী সুমন। বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি বরাবরই বীথির খুব প্রিয়। বৃষ্টি নামলে ওকে ঘরে আটকে রাখার সাধ্য কারও ছিলনা।

সেদিনও বর্ষা নেমেছিল। তবে একটু দূরে, মিয়া পাড়ায়। বীথিদের বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে ছিল ঝলমলে রোদ। বীথি তখন সুমনের সাথে পুকুড় পাড়ে খেলায় মত্ত। এই দৃশ্য দেখে সে চীৎকার করে উঠে।

সুমন দেখ, দেখ। মিয়াপাড়ায় বৃষ্টি হচ্ছে। চল, বৃষ্টি ছুঁয়ে আসি।

একটু পরে বৃষ্টি আমাদের পাড়ায়ও চলে আসবে। উত্তর দেয় সুমন।
সে তো পরে। এখন চল আমরা দৌড়ে গিয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে আসি। এক দৌড়ে যাব, আর এক দৌড়ে ফিরে আসব। চল সুমন।

ঠিক আছে চল - বলে দু’জনে ভোঁ দৌড় মিয়াপাড়ার দিকে।

বৃষ্টি তখন প্রবলবেগে ধেয়ে আসছে এদিকে। আনন্দে চীৎকার করতে করতে সেদিকে দৌড়াচ্ছে বীথি আর সুমন। বীথি সামনে আর সুমন পেছনে। সুমন বরাবরই একটু নাদুস-নুদুস। দৌড়াতে গিয়ে বার বার পেছনে পড়ে যাচ্ছিল বীথির। এক সময় ধাবমান বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেয় বীথিকে। বীথি আনন্দে চীৎকার করে উঠে।

চল সুমন ফিরে যাই। বৃষ্টি আমাদের পাড়ায়ও চলে এসেছে।

উল্টোদিকে দৌড়াতে থাকে বীথি। কিন্তু কোথায় সুমন ? বীথি চীৎকার করে ডাকতে থাকে। সুমন, সু-ম-ন। কোন সাড়া দেয়না সুমন। বীথির চীৎকার বৃষ্টির শব্দের সাথে মিশে হারিয়ে যায় বার বার।

বীথি কাঁদতে কাঁদতে সুমনের বাড়ি গিয়ে খবর দেয়। বাড়িশুদ্ধ সবাই দৌড়ে আসে মিয়াপাড়ার রাস্তায়। অনেক খুঁজাখুঁজি করেও সুমনের হদিস মিলেনা। দ্রুত রাস্তার ধারের মজা পুকুরে নামে লোকজন। নোংরা গন্ধময় পানিতে অনেকক্ষণ খুঁজাখুঁজি করে ঘন কচুরিপানার ভিতর থেকে সুমনের নিথর দেহটা তুলে আনা হয়। সবাই মিলে প্রাণপণ চেষ্টা করে সুমনকে বাঁচাতে। সুমনের পেট থেকে অনেক পানি বেরিয়ে এলেও বাঁচানো যায়নি সুমনকে।

সেই থেকে বৃষ্টিকে ঘিরে এক ধরনের মোহময় আবিষ্টতা কাজ করে বীথির ভিতর। আগেও বৃষ্টি ভাল লাগত বীথির, ওটা ছিল শুধুই ভাললাগ। কিন্তু সুমনের মৃত্যুর পর থেকে বীথির কাছে বৃষ্টিকে মনে হয় অচিনপুর থেকে ধেয়ে আসা মহাজাগতিক এক প্রসবন। সে সব পারে। মানুষের হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনাকে মুহূর্তেই একাকার করে দিতে পারে।
এই বৃষ্টির কারণেই সুমনকে হারিয়েছে বীথি। কিন্তু তবু বৃষ্টির প্রতি এতটুকু বিরাগ নেই তার। বীথির মনে হয় তার মনের আঙিনায় সুমনের যে স্মৃতি সেটাকে জাগিয়ে রেখেছে এই বৃষ্টি। এই মুহূর্তে বৃষ্টির ষ্পর্শমাখা প্রকৃতিতে সুমনের হাসি মুখটি ভেসে উঠছে বার বার। বৃষ্টি সেটা দেখতে পাচ্ছে। সুমন যেন ডাকছে বীথিকে।

বীথি আয়, বৃষ্টিতে খেলবি আয়।

বীথি দরজা খোলে আনমনে হেঁটে গিয়ে দাঁড়ায় সামনের লনে। হঠাৎ একটা দমকা বাতাসসহ বৃষ্টি এসে ওকে ভিজিয়ে দেয়। সম্বিৎ ফিরে পায় বীথি।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:০৪

সুফিয়া বলেছেন: পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:৩৩

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: বিষাদের গল্প, আর একটু বড় করে গুছিয়ে লিখলে আরও ভালো লাগতো।

ভালো থাকুন সুফিয়া আপা, শুভকামনা রইল।

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:০৭

সুফিয়া বলেছেন: গল্পটা নির্দিষ্ট শব্দের মধ্যে লিখতে হয়েছে ফরমাশে অনুযায়ী। তাই ইচ্ছেমতো মনের পাখা মেলানো সম্ভব হয়নি। ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটা পড়ার জন্য এবং সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য। ভাল তাকুন সব সময়।

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:০৭

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান মাহবুব গল্পটা পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য। ভাল থাকুন সব সময়।

৪| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৬

দীপংকর চন্দ বলেছেন: বিষণ্নতা!!

সুন্দর নামকরণ!!

শুভকামনা অনিঃশেষ।

অনেক ভালো থাকবেন। সবসময়।

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:০৮

সুফিয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটা পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য। আপনিও ভাল থাকুন সব সময়।

৫| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:১০

আহমেদ জী এস বলেছেন: সুফিয়া ,



সুখের কোন রং হয় না । রংয়ের তুলিতে এঁকে নিতে হয় ।

"বোকা মানুষ বলতে চায়" এর সাথে মিলিয়ে বলি - আর একটু কিছু থেকে গেলো বোধহয় ।

শুভেচ্ছান্তে ।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩০

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আমার লেখাটা পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য। আপনাদের পরামর্শ মনে রাখলাম।

ভাল থাকুন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.