নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977
(শাহাবাগ নিয়ে প্রচুর লেখা আসছে ব্লগে। একটু ভিন্ন সাধ দিতে এই ছোট গল্পের আয়োজন ।)
আচ্ছা, একজন যৌনকর্মীর কি কোন স্বপ্ন থাকে? তাদের স্বপ্ন কি পায় বাস্তবতার ছোয়া। প্রশ্নটা শুনে কটমট করে আমার দিকে তাকালো তনিমা।মনে হলো তার মেজাজটা চড়ে গেলো খুব। সে আমার হবু স্ত্রী। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে আমাদের দুই পরিবারের লোকজন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে চান। বলা যায়, এ ধরণের একটা সিদ্ধান্তে হয়ে রয়েছে ।
বিয়ের আগে বোধ হয় হবু স্ত্রীকে এধরণের প্রশ্ন করা ঠিকনা। তাছাড়া সেতো আমার দীর্ঘ দিনের প্রেমিকা নয়। আমার কাজিনের কাজিন। কিন্তু চেনাজানা অনেক দিনের। তবে কথাবার্তা বা দেখা সাক্ষাত খুব বেশি ঘটেনি অতীতে। অবশ্য একদিন হয়েছিল দীর্ঘ সময় একসাথে থাকার মত পরিবেশ। সেটি আমার ফুপুর বাসায়। ড্রয়ং রুমে বসে সে, আমি ও ফুপু গল্প করছিলাম। তখন টিভি চ্যানেল জি সিনেমায় বিনোদ খন্না-মাধুরী দীক্ষিতের ‘দয়াবান’ সিনেমাটা হচ্ছিল। একসময় ফুপু রান্না ঘরের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। তনিমা ও আমি চুপচাপ দেখছিলাম।
দয়াবান সিনেমা এক যৌনকর্মীর সাথে কাস্টমারের প্রেম ভালবাসা নিয়ে। এমন সিনেমা বলিউডে হয়েছে বেশ কয়েকটা। যতদূর মনে পড়ে, সঞ্জয় দত্ত-পূজা ভাট্টের ‘সড়ক’ সিনেমার কাহিনীটা এমনই। ‘বাগি’ সিনেমার গল্পও তাই। কিন্তু পেশাগত কারণে যশোরের যৌনপল্লিতে গিয়ে নীলা নামের যে মেয়েটিকে আমি খুজে পেলাম, তার গল্প অবশ্য ওই সব সিনেমার সাথে মেলেনা কোনভাবে। সেকথাই বলতে চেয়েছিলাম তনিমাকে । কিন্তু আমার মুখ দিয়ে "যৌনকর্মী" শব্দটা শুনে যেন বিরক্তবোধ করলো ও। আর তাই সেদিন ওই প্রসঙ্গে তার সাথে হয়নি কোন আলোচনা।
আমি একজন এনজিওকর্মী। এইডস এর ওপর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে আমাকে ছুটে বেড়াতে হয় সারা দেশ।এক জেলা থেকে আরেক জেলা। মূলত পতিতালয় গুলোতে গিয়ে এইডসের ওপর করতে হয় সভা-সেমিনার।যৌনকর্মীদেরকে বুঝাতে হয় কিভাবে এ রোগের ঝুকি এড়ানো যায়। তাদেরকে দিতে হয় বিনামূল্যে কনডম। অবশ্য কনডম দেয়ার কাজটা আমাদের এনজিওর মহিলাকর্মীরা করে থাকেন।তবে আমার কাজ হচ্ছে ফলোআপ করা। আর এই ফলোআপ করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে কাটাতে হয় দিনের পর দিন। তবে সবসময় আমার চেষ্টা থাকে যত তাড়াতাড়ি পতিতাদের মধ্যে এইডস প্রতিরোধক মানষিকতা তৈরি করা যায়।
এই চাকরি আমার খুব পছন্দের। কেননা সমাজের একশ্রেনীর নারীদের সংস্পর্শে যাওয়া যায়, যাদেরকে কেবল ভোগ বিলাসে ব্যবহার করেন নানা পেশার ও বয়সের মানুষ। আর আমার কাজ হলো ওই সব নারীদের সুস্থ ভাবে বাচিয়ে রাখা। তাদের সুরক্ষার ব্যাপার নিশ্চিত করা। যদিও এ চাকরির ব্যাপারে তীব্র আপত্তি রয়েছে আমার পরিবারের সবার। বিশেষ করে আমার মায়ের। তিনি কাউকে বলতে পারেননা, তার ছেলের এনজিওর চাকরিটা কি।
একবার আমার বড় মামা এলেন ভারত থেকে। তিনি খুব পরহেজগার ব্যক্তি। পাঞ্জাবি ছাড়া অন্য কিছু পরেননা । হিন্দু রাষ্ট্র ভারতেও তিনি সবসময় টুপি মাথায় দিয়ে চলাফেরা করেন।একওয়াক্ত নামাজ কাজা করেন না। কথায় কথায় আলহামদুলিল্লাহ, সোবহান আল্লাহ ও নাউজিবিল্লাহ বলে থাকেন।
একদিন, ঢাকায় মিরপুরে আমাদের বাসায় মা, আমার ছোট বোন ও বড় মামা একসাথে বসে গল্প করছিলেন। বড়মামা মায়ের কাছে একটু আফসোস করে বললেন, বাংলাদেশে এলাম এক সপ্তাহ হলো, আমার বড় ভাগ্না সজিব সাহেবের দেখা পেলাম না। ও কবে ফিরবে ঢাকায়?
মা বললেন, আর তিন দিন পর ঢাকায় আসবে। অফিসের কাজে মংলা গেছে। সেখান থেকে কাল যাবে যশোর।
কি চাকরি করে সজিব মিয়া?
- একটি এনজিও তে ভাইজান।
এনজিও মানে।
- মানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
ওর কাজ কি সেখানে?
মামার ওই প্রশ্নের উত্তরে মা ঠিক গুছিয়ে কিছু বলতে পারেননি।পরে ছোট বোন সুমি সহজভাবে বড়মামাকে গুছিয়ে বললো, "এইডস" প্রতিরোধের ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজটা করে ওই এনজিও। ভাইয়া ওদের অফিসের বিভিন্ন কাজ সুপারভাইজ করে।
তার মানে সজিব ওই অফিসের ম্যানেজার।
- না ঠিক ম্যানেজার না, সমন্বয়কারী, ছোটবোন উত্তর দিলো।
কিন্তু এইডস নিয়ে আবার কি সমন্বয় করে বেড়ায়।
মা ও ছোট বোন চুপ থাকলো।
মামা বললেন, এইডসতো মেয়েদের শরীর থেকে ছড়ায়। খারাপ মেয়েদের কাছে গেলে পুরুষ মানুষেরও ওই রোগ হয়। কথা শেষ করে মামা সরাসরি প্রশ্ন করলেন, সজিব ওইসব খারাপ মেয়েদের কাছে যায় নাকি?
মা চুপ থাকলেন। ছোট বোন কিছুক্ষণ পর উত্তর দিলো, মামা চাকরিইতো ওদেরকে নিয়ে।ওদের কাছে গিয়েতো ......।
বোনের কথা শেষ হওয়ার আগেই বড় মামা অনাবরত বলতে থাকলেন নাউজিবিল্লাহ...... অস্তাকফিল্লাহ.....।
ওইসব মেয়েগুলো তো দোজখে যাবে।সঙ্গে করে আমার ভাগ্নাকেও নিয়ে যাবে।
ছি: ছি: ছি: ।
এতদূর লেখাপড়া শিখে ভাগ্না আমার কি সব চাকরি করছে। অস্তাকফিল্লাহ। আমি বেশ বুঝতে পারছি, আজ সজিবের বাবা বেঁচে নেই বলে এত অধপতনে যাচ্ছে ছেলেটা। ওরে ফোন করে বলিস, ওইসব নাফারমানী চাকরি-বাকরি না করে।
মামার কথামত আমার চাকরি ছাড়া হয়নি। বরং এই সময়ের মধ্যে আমার দায়িত্ব ও বেতন দুটোই বৃদ্ধি পায়। একই সাথে আরও একটা ব্যাপার ঘটে যায়। আর সেটি হলো যশোরের মাড়য়ারি মন্দির পতিতালয়ের নীলা নামের এক যৌনকর্মীর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা।
যৌনকর্মী নীলা আট-দশটা মেয়ের মত কথায় কথায় গালিগালায করেনা কাউকে।গাঢ় লিপিস্টিক ও পাউডার দিয়ে সারা মুখ সাদা করে দাড়িয়ে থাকেনা পতিতালয়ের গলির মুখে। রাস্তায় নেমে জোর করে সাধারণ পথচারিদের টেনে ধরেনা। খদ্দেরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়না মানিব্যাগের সব টাকা। তার রয়েছে বাধা ধরা কাস্টমার, যারা কেউ সচারচার দিনের আলোয় পতিতালয়ে আসেনা। পুলিশকে টাকা দিয়ে তারা গভীর রাতে নীলার সাথে সময় কাটিয়ে যায় ।
পতিতালয়ের পরিবেশে বড়ই বেমানান নীলা । আসলে কোন মেয়েতো ইচ্ছা করে পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসাবে গ্রহন করেনা। আমাদের বাঙালি সমাজে এমন কোন মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যে স্বেচ্ছায় অন্ধকার গলিপথে পা বাড়ায়। আসলে ভাগ্যর নির্মম পরিহাস তাদেরকে টেনে আনে এপথে। কখনও বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে। কখনও বা পরিস্থিতির শিকার হয়ে।
নীলার আসল নাম সুফিয়া খাতুন। তার পতিতা হওয়ার গল্প বেশ দীর্ঘ । তার বাবা ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক। সুফিয়াকে অনেক কষ্ট করে তিনি লেখাপড়া করাতেন। মাধ্যমিক পাশ করার পরপরই গোটা পরিবারকে ঋণের সাগরে ভাসিয়ে চির বিদায় নেন তার বাবা হযরত আলী । তখন ভিটেবাড়ি বিক্রি করে কোন রকম দেনা শোধ করেন তার মা।বাবার মৃত্যুর পাচ মাসের মধ্যে মা'ও হয়ে যান পর। তিনি একটা বিয়ে করে চলে যান অন্যত্র। অবশ্য সঙ্গে করে তিনি সুফিয়াকে সেখানে নিয়েও যান। কিন্তু সৎ বাবাকে কোনভাবেই পছন্দ হতো না তার। আর তাই কিছুদিন পর দূর সম্পর্কের এক খালার আহবানে পাড়ি জমায় ঢাকা। ওই খালা থাকতেন গুলশানে। খালু মস্ত বড় ব্যবসায়ী। বিশাল বড় বাসায় খালা-খালু ও ছেলে-মেয়েসহ পাচ জন থাকতো। সেখানে বয়স্ক একজন মহিলা ছিলেন চাকরাণী হিসেবে। খালার ছোট দুই ছেলে-মেয়েকে গোসল করানো, খাওয়ানো, তাদের সাথে খেলা করাসহ নানা কাজ সময় কাটতো তার। ওই বাড়িতে মানুষ-মেহমান লেগেই থাকতো। মাঝের মধ্যে পার্টিও হতো। সুফিয়া সারাদিন ঘরে থেকে সংসারের সব কাজ সামল দিতো । দিনগুলো তার খারাপ চলছিল না। কিন্তু কি আশ্চার্য ! একদিন রাতে খালা নামের ওই মহিলা তাকে জোর করে ঢুকিয়ে দিলো খালুর ঘরে। তারপর যা হবার তাই হলো। মধ্যবয়সী খালু পুরুষটা তাকে ছিড়েকুড়ে খেলো। পরের দিন দুপুরে বাড়ির ড়্রাইভারের সহায়তায় পালিয়ে গেলো সুফিয়া। কিন্তু পালিয়েও যেন বাচা হলোনা তার।
সুফিয়ার কাছে একটি ব্যাপার এখনও আশ্চর্য লাগে এই ভেবে যে, ড্রাইভার কমল তাকে নিয়ে একই ছাদের নিচে স্বামী-স্ত্রীর মত বসবাস করলো, অথচ তার প্রতি একটুও মায়া জন্মালোনা লোকটার। স্রেফ অল্পকটা টাকার জন্য তার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে দিলো ওই নিষ্টুর লোকটি, যাকে স্বামী হিসেবে ভেবে নিয়েছিল সুফিয়া।
মংলার পশুর নদীর তীর ঘেষে গড়ে ওঠা বানিসান্তা পতিতালয়ে তাকে বেচে দিয়ে চলে যায় কমল। আর সেখানে সর্দ্দারাণী চম্পার মেয়ে হিসেবে শুরু হয় তার নতুন জীবন। সে সুফিয়া থেকে হলো নীলা। হটকেকের মত চলতে থাকলো নীলার যৌবনের রসগন্ধ। সে মেনেও নিলো বাস্তবতাকে। তার আর কোন উপায় ছিলনা। তাছাড়া সেতো আর এমন নয়, যে কেউ তাকে কখনও ছুঁয়ে দেখেনি।
টানা তিন বছর মংলার বানিসান্তা পতিতালয়ে ছিল সে। ওই সময়ের মধ্যে তার দু'বার গর্ভপাতও ঘটানো হয় । যশোরের মাড়য়ারি মন্দির পতিতালয়ে চলে আসার পর আবারও একবার গর্ভবতী হয়ে পড়ে। তবে সেবার আর বাচ্চা নষ্ট করেতে রাজি হয়নি সে। তাইতো এই পতিতালয়ে জন্ম নেয় তার একটি কন্যা সন্তান। নাম রাখে প্রতিভা।
সাধারণত সেমিনার করার জন্য আমাকে যেতে হতো পতিতালয়ে। তাছাড়া মাঝের মধ্যে যেতাম নীলা ও তার মেয়ের খোজ-খবর নিতে। সভা-সেমিনারের সময় শহরের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিও উপস্থিত থাকেতেন। তাদের সবারই নজড় কাড়তো প্রতিভার মিষ্টি চেহারা। বাচ্চাটা সভামঞ্চের চারপাশে ঘুরঘুর করতো। একবারতো স্থানীয় পৌর চেয়ারম্যান ঘোষণা দিলেন, পিতৃপরিচয়হীন এ শিশুটির জন্য তিনি ব্যক্তিগত ভাবে প্রতিমাসে পাচশ করে টাকা দেবেন। পতিতালয়ের নাইটগার্ড কাসু মাসে মাসে গিয়ে চেয়ারম্যানের এক কর্মচারীর কাছ থেকে নিয়ে আসতো টাকা। তবে পৌরপিতার সেই সহযোগিতা পাচ-ছয় মাসের বেশি আর অব্যাহত থাকেনি। মাঝের মধ্যে আমি কিছুকিছু টাকা দিয়ে আসতাম নীলার কাছে। বাচ্চাটা পতিতালয়ের পরিবেশে বড় হতে লাগলো। এটা নিয়ে চিন্তিত থাকতো নীলা। কেননা সে সবসময় চাইতো তার মেয়ে লেখাপড়া শিখে মানুষ হোক। পতিতালয়ের এই নোংড়া জীবন যেন তাকে স্পর্শ করতে না পারে।
নীলা ও তার মেয়ে প্রতিভার কথায় পরে আসছি। তার আগে বলে নেই তনিমার সাথে শেষ পর্যন্ত বিয়ে আমার হয়নি। কেননা আমার চাকরি ও কাজের পরিধি তাদের পছন্দ ছিলনা। তাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, পতিতাদের নিয়ে যারা কাজ করে, তাদের চরিত্র কিছুটা হলেও কলুষিত হয়ে যায়।
আসলেই কি তাই? এটি নিয়ে আমি কখনও কোন তর্ক-বিতর্কে যাইনি। সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছি। তারপরও নানা ভাবেই ভেঙে গেছে আমার বিয়ে। আমিই মনে হয় বাঙালি সমাজের প্রথম পুরুষ, যার বিয়ে ভেঙেছে পরপর তিনবার। আর তিনবারই একই কারনে। আমার একটা সমস্যা আছে। আর তা হলো বেশি কখা বলা। সবকিছু খোলাসা করে দেয়া। কোন ভাবেই আমি রিজার্ভ থাকতে পারিনা। আসলে মানুষ যেকাজ বা যেজিনিসটা বেশি পছন্দ করে এবং যেটি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে, তা নিয়ে কথাবার্তা একটু বেশি বলে। তাছাড়া একটি ক্ষেত্রে আমি মোটেও পারদর্শী নই।আর তা হলো বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে পারা। সেটি মোবাইল ফোনে হোক বা সামনা সামনি কারোর সাথে কথা বলার সময় হোক। আর তাই সত্যকথা বলার কারণেই আমার বিয়ে নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত আমি নিজেই পিছিয়ে গেছি। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে ক'বার কোন পাত্রীর চাচা, মামা বা আত্নীয় স্বজন কেউ আমার কাছে ফোন করেছেন এবং আমার অবস্থান জানতে চেয়েছেন, সে ক'বারই দেশের কোন না কোন পতিতালেয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে আমি ব্যস্ত ছিলাম। তাই সরল বিশ্বাসে প্রতিত্তুরে বলতাম, "পতিতালয়ে আছি।" হয়তো এসব কথাবার্তা শুরুতেই পাত্র সম্পর্কে বিরুপ মনোভাব তৈরি করেছিল কনেপক্ষের মনে।
পতিতালয়ে ঘুরে ঘুরে কেটে গেলো আমার জীবন যৌবন। বয়স এখন পৌছেছে বিয়াল্লিশের কোঠায়। নীলার মেয়ে প্রতিভার বয়স নয় বছর। সে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। আমি এখনও চির কুমার রয়ে গেলাম। তবে পিতা হয়েছি। পিতৃ স্নেহে আগলে রেখেছি প্রতিভাকে। যদিও তার ডি এন এ টেস্ট করলে আমার সাথে মিলবেনা। তবুও আমি তার পিতা। কেননা এ্ই পৃথিবীতে তার আর কেউ নেই। নীলাতো মারা গেছে বছর পাঁচেক আগে।তার মৃত্যু আমাকে ব্যথিত করেছে খুব। তার মৃত্যুর সময় "Working Sex: Power, Practice, and Politics" শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে আমি কলকাতায় অবস্থান করছিলাম। দেশে ফেরারও অনেক পরে খবরটা পাই। সাথেসাথে ছুটে যাই যশোর। তারপর জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে দত্তক নেই প্রতিভাকে।
আমার কাছে একটা ব্যাপার খুব কষ্ট দেয়। নীলা ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেলো কেনো ! পতিতালয়ের স্যাতস্যাতে গলিপথে এডিস মশার বাসা বাধারতো কথা নয়। ডেঙ্গুজ্বরে মারা যাওয়া উচিৎ ছিল তার সেই দূর সম্পর্কের খালা ও খালুর। তাদের বাড়ির ড্রাইভার কমল মারা গেলেও ভাল হতো বেশি। সৃষ্টিকর্তা আসলে কি ভাবেন, কোনটা করেন, সেটি একমাত্র তারই সিদ্ধান্ত । আমরাতো কেবল তার খেলার পুতুল । আর এদিকেতো বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন আমার ধর্মভিরু বড় মামাও। বছর ছয়েক আগে তিনি বলেছিলেন, পতিতাদের নিয়ে কাজ করার কারণে দোজখে যাবে তার ভাগ্না। তবে আমার কাছে মনে হয়, একজন এতিম কন্যাকে মানুষ করে তোলার দায়িত্বটাই হয়তো রুদ্ধ করবে আমার দোজখে যাওয়ার পথ।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০৫
শামীম সুজায়েত বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই বেবি ফেস।
গল্পটা বইমেলায় লিটিল ম্যাগ কর্ণারে শব্দতরীর ষ্টলে পাওয়া যাচ্ছে "নীড় গল্প গুচ্ছ" নামের ছোট গল্পের সংকলিত বইতে।
প্রকাশনায় রয়েছে ব্লগারস ফোরাম ।
২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৩
ধূসর সপ্ন বলেছেন: সাবাস ভাইজান!-পৃথিবীর দরকার এই রকম কিছু শ্রেষ্ট সৃষ্টির ।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩৭
শামীম সুজায়েত বলেছেন: ধন্যবাদ ভা্ইজান, কষ্ট করে পড়ার জন্য। ভাল থেকেন।
৩| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৮
ট্যামময বলেছেন: ইনশাল্লাহ, একজন এতিম কন্যাকে পিতৃস্নেহে মানুষ করে তোলার দায়িত্বটাই হয়তো রুদ্ধ করবে আপনার দোজখে যাওয়ার পথ।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২২
শামীম সুজায়েত বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ট্যামময়।
সেটিই বুঝাতে চেয়েছি। পিতা-মাতাহীন এতিম একটি শিশুকে পিতৃস্নেহে মানুষ করে তুলার মনোবৃত্তি একজন মানুষের জীবনে রুদ্ধ করতে পারে দোজখে যাওয়ার পথ।
৪| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০০
শামীম সুজায়েত বলেছেন: বুঝলাম না ব্যাপারটা। এখানে দেখাচ্ছে ৩ টি মন্তব্য। কিন্তু "বাকিটুকু" পড়তে গিয়ে কোন মন্তব্য খুঁজে পাচ্ছি না।
জানিনা কে কিভাবে মন্তব্য করেছেন।
আফসোস লাগছে পড়তে না পেরে। যদিও আমি মন্তব্যর মডারেশন অপশনে গিয়েছিলাম। কিন্তু কি ভাবে কি হলো বোধগোম্য নয়। আবার মন্তব্য মুছে যাওয়ার অপশনেও কিছু নাই।
যাইহোক সকল ব্লগার বন্ধু ও পাঠককে জানায় শুভকামনা।
৫| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১০
নিষ্কর্মা বলেছেন: খুব ভালো লাগল।
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২৫
শামীম সুজায়েত বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ নিষকর্ম। ভাল থেকেন।
৬| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩২
কায়সার ইয়াসিন বলেছেন: অসাধারণ...
একটি সালাম আপনার প্রতি।।
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৩
শামীম সুজায়েত বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই কায়সার ইয়াসিন।
সালামটা আমার গল্পের নায়ক সজিবকে পৌছে দেবো।
ভাল থেকেন।
৭| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৪
বলেছেন: অত্ত্যন্ত ভাল লাগল। অমনোযোগি হয়ে পরেছি তবুও ভাল লাগল। আর একবার পরব সময় করে এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। ধন্যবাদ এত সুন্দর পোষ্টটি দেওয়ার জন্য।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৫
শামীম সুজায়েত বলেছেন: সময় মত আপনার মন্তব্যের প্রতিত্তুর করা হয়নি বলে ক্ষমা করবেন প্লিজ।
লিখতে লিখতে আরও গুছিয়ে নিয়েছে। সময় করে আরও একবার চোঁখ বোলাতে পারেন।
ভাল থাকবেন।
৮| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৮
হিজবুল বাহার বলেছেন: একজন এতিম কন্যাকে পিতৃস্নেহে মানুষ করে তোলার দায়িত্বটাই হয়তো রুদ্ধ করবে আপনার দোজখে যাওয়ার পথ।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৫
শামীম সুজায়েত বলেছেন: সময় মত আপনার মন্তব্যের প্রতিত্তুর করা হয়নি বলে ক্ষমা করবেন প্লিজ।
ভাল থাকবেন।
৯| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩১
প্রতিবাদকন্ঠ বলেছেন: নিজে ঠিকতো দুনিয়া ঠিক ভাই...তবে নীলার কষ্টময় জীবনের কাহিনী শুনে মনটা খুব খারাপ হল সমাজে তথাকথিত (খালু) নামের এইরকম নরপিশাচরা আছে এখনও যারা ভদ্রতার মুখোশ পরে থাকে ,তবে আপনি একটা বড়ই মহৎ কাজ করেছেন ভাই আল্লাহ অবশ্যই এর প্রতিদান দিবে আপনাকে.আপনার প্রতি আমার অসংখ্য শুভকামনা রইল। ভাল থাকবেন ভাই...
১০| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩৩
প্রতিবাদকন্ঠ বলেছেন: নিজে ঠিকতো দুনিয়া ঠিক ভাই...তবে নীলার কষ্টময় জীবনের কাহিনী শুনে মনটা খুব খারাপ হল সমাজে তথাকথিত (খালু) নামের এইরকম নরপিশাচরা আছে এখনও যারা ভদ্রতার মুখোশ পরে থাকে ,তবে আপনি একটা বড়ই মহৎ কাজ করেছেন ভাই আল্লাহ অবশ্যই এর প্রতিদান দিবে আপনাকে.আপনার প্রতি আমার অসংখ্য শুভকামনা রইল। ভাল থাকবেন ভাই...
১১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩৩
প্রতিবাদকন্ঠ বলেছেন: নিজে ঠিকতো দুনিয়া ঠিক ভাই...তবে নীলার কষ্টময় জীবনের কাহিনী শুনে মনটা খুব খারাপ হল সমাজে তথাকথিত (খালু) নামের এইরকম নরপিশাচরা আছে এখনও যারা ভদ্রতার মুখোশ পরে থাকে ,তবে আপনি একটা বড়ই মহৎ কাজ করেছেন ভাই আল্লাহ অবশ্যই এর প্রতিদান দিবে আপনাকে.আপনার প্রতি আমার অসংখ্য শুভকামনা রইল। ভাল থাকবেন ভাই...
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৬
শামীম সুজায়েত বলেছেন: সময় মত আপনার মন্তব্যের প্রতিত্তুর করা হয়নি বলে ক্ষমা করবেন প্লিজ।
ভাল থাকবেন।
১২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৫
অিপ পোদ্দার বলেছেন: সুন্দর লেখা। মনকে ছুঁয়ে যায়।
১৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৫
অিপ পোদ্দার বলেছেন: সুন্দর লেখা। মনকে ছুঁয়ে যায়।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৩
শামীম সুজায়েত বলেছেন: সময় মত আপনার মন্তব্যের প্রতিত্তুর করা হয়নি বলে ক্ষমা করবেন প্লিজ।
ভাল থাকবেন।
১৪| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫৪
নাইনটিন টেনটিন বলেছেন: অনেক ভালো কাজ করছেন। আল্লাহ আপনার সহায় হোন।
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৫৭
শামীম সুজায়েত বলেছেন: নাইনটিন টেনটিন
হা, হা.................... ভাই ভাল কাজটাতো করেছে আমার গল্পের নায়ক সজিব।
ভাল থাকবেন ভাই। দেখা হবে।
১৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪২
সকাল রয় বলেছেন:
দারুন লেখাটা
২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩০
শামীম সুজায়েত বলেছেন: Thanks a lot Sakal Roy
১৬| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫৬
সানফ্লাওয়ার বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর একটা গল্প
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:৫৪
শামীম সুজায়েত বলেছেন: ভাল লাগলো জেনে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা রইলো।
১৭| ২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৫৪
শামীম সুজায়েত বলেছেন: সানফ্লাওয়ার,
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থেকেন।
১৮| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৪
শামীম সুজায়েত বলেছেন: পোদদার: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য। ভাল থেকেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫২
বেবিফেস বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আর শুভ কামনা রইল বাবা-মেয়ের জন্য।