নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজায়েত শামীম

শামীম সুজায়েত

ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977

শামীম সুজায়েত › বিস্তারিত পোস্টঃ

খিলওয়াড়ি: ভারতের মধ্যপ্রদেশের বান্ছড়া'র নারী

১০ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৩

ভারতের মধ্যপ্রদেশের মালওয়া এলাকার বান্ছড়া গ্রামে বসবাসরত পরিবারগুলো সবসময় কামনা করে তাদের ঘরে প্রতি বছর জন্ম হোক কন্যা শিশু।

কিন্তু কন্যাভ্রূণ হত্যার লজ্জাকর পরিসংখ্যানের দিক থেকে এগিয়ে ভারত। আমাদের দেশেও এটি ঘটছে। তবে তাদের দেশেই সবচেয়ে বেশি হত্যা হয় কন্যাভ্রণ। সেই হিসাবে বান্ছড়া নামের গ্রামের মানুষের এমন কামনার নেপথ্য কারণ কি?



ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় বান্ছড়া জাতিকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি লেখা।এটি পড়ার পর আমাদের সবারই মনে হবে, ওদের থেকে আমরা অনেক অনেক ভাল্। আমাদের পারিবারিক বন্ধন, বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, স্নেহ, কন্যা সন্তানের প্রতি আমাদের মমতা তুলনাহীন।



ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বান্ছড়া জাতি বা গ্রামের মানুষ নারীকে মনে করে টাকার গাছ। ওই সমাজে নারীরা তাদের দেহ বিক্রি করে সংসার চালাবে, বাবা-ভাই-চাচা'রা বসে বসে তার উপার্জিত টাকায় খাবে। কি নিষ্ঠুর তাদের মানষিকতা। লেখাটির অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো:



মধ্যপ্রদেশের মালওয়া এলাকার এই বান্ছ্ড়া-রা মেয়ে চান যৌনকর্মী তৈরি করার জন্য। এটাই তাঁদের পরম্পরা। মেয়েরা ১২-১৪ বছর বয়স থেকে বেশ্যাবৃত্তি করে বাবা-মা-ভাইকে খাওয়াবে, সংসার চালাবে। এটাই তাঁদের সাবেক রীতি। এই মেয়েদের স্থানীয় একটা নামও আছে: ‘খিলাওয়ারি’। মহা-উত্সাহে নিজের বাবা-কাকা-দাদারাই খিলাওয়ারির দালাল হিসাবে কাজ করেন, খদ্দেরদের সঙ্গে দরদস্তুর চালান।

দশ-বারো বছর এই ভাবে শরীর নিংড়ে নেওয়ার পর, মেয়ের বিয়ের জোগাড়যন্তর শুরু হয়। তাতেও পরিবারের মহা লাভ। কারণ বিয়েতে মেয়ের বাবা মোটা অঙ্কের পণ পাবেন ছেলের বাড়ি থেকে। এত দিনের রোজগেরে মেয়েকে এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায়! ছেলের বাড়ি কম করে ৫০ হাজার টাকা কন্যাপণ না দিলে বিয়ে বাতিল। ১৯৯১ সালের জনগণনা রিপোর্ট বলছে, বান্ছ্ড়াদের অর্ধেকের বেশি মেয়েই অবিবাহিতা। দরিদ্র জনজাতির কত জনের আর ক্ষমতা আছে ৫০ হাজার টাকা পণ দিয়ে বাড়িতে বউ আনার!



প্রশ্ন উঠতে পারে, পরিবর্তিত সামাজিক অবস্থায় মেয়েদের মধ্যে থেকে কোনও প্রতিবাদ ওঠেনি কেন? এক-দু’জন ব্যতিক্রমী প্রতিবাদিনীর ইতিহাস যে নেই তা নয়। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বান্ছ্ড়া মেয়েদের জীবনের সঙ্গে এই প্রথাকে এমন ভাবে গেঁথে ফেলা হয়েছে, এমন ভাবে ছোটবেলা থেকে তাঁদের মগজধোলাই হয়েছে যে প্রতিবাদটা সে ভাবে দানা বাঁধতে পারেনি। এই অপ্রতিবাদে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে দারিদ্র ও অল্পশিক্ষা।



কি ভাবে বান্ছড়া জাতির মধ্যে ঢুকলো অনৈতিকতা



প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় দেড়শো বছর আগে ব্রিটিশ সরকার মালওয়া প্রদেশের নীমচ এলাকায় তাদের ‘গ্যারিসন’ তৈরি করে। সেনাদের শারীরিক চাহিদার জন্য মেয়ে দরকার। বুদ্ধিমান ব্রিটিশ সরকার পাশের রাজস্থান থেকে যাযাবর বান্ছ্ড়াদের নিয়ে এসে নীমচ, মান্ডসোর, রতলামের মতো কয়েকটা জায়গায় স্থায়ী বসতি তৈরি করে দেয়। যাযাবররা ঘর পেল, আর ব্রিটিশ সৈন্যরা মেয়ে। ব্রিটিশভোগ্যা বান্ছ্ড়া মেয়েরা মোটা টাকা নজরানা পেত। লোভ আর আলসেমি বেড়ে গেল ওই জনজাতির পুরুষের। মুফতে এত টাকা বাড়িতে এলে আর কষ্ট করে খেতি-বাড়ির দরকার কী? বরং মেয়েটাকে বাড়িতে রেখে যত্নআত্তি করা ভাল। সোনার ডিম দেওয়া হাঁস হাতের মুঠোয় রইল। যৌন পেশাই সামাজিক পরম্পরা হয়ে গেল বান্ছ্ড়া মেয়েদের। সরকারি হিসাবে মান্ডসোর-নীমচ-এর ৬৩টি গ্রাম আর রতলাম জেলা মিলিয়ে এখনও প্রায় ১২০০ বান্ছ্ড়া মেয়ে এই পেশার সঙ্গে জড়িত।



দশ বছর বয়স হতে না হতেই দেয়া হয় প্রশিক্ষণ

বিস্ময়কর ব্যপার হলো মেয়েদের দশ-বারো বছর বয়স হতে না হতে তাঁদের তৈরি করতে শুরু করে দেন পরিবার বা পাড়ার কোনও পুরনো খিলাওয়ারি। এতে কোনও রাখঢাক নেই। খদ্দেরদের মাথা কী করে ঘোরাতে হবে, কী রকম হবে সাজসজ্জা-হাঁটাচলা, গর্ভনিরোধক ব্যবস্থাই বা কী ভাবে নিতে হবে, কী কী যৌন কলাকৌশল জানতে হবে ক্লাস চলে নিয়মিত। কিছু দিন নিজেদের সঙ্গে ‘শিক্ষার্থী’দের হাইওয়ের ধারে নিয়ে যান পোক্ত খিলাওয়ারিরা। তা ছাড়া বাড়ির লাগোয়া ডেরায় দরজা-জানলার ফাঁকফোকরে চোখ লাগিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় হবু খিলাওয়ারিকে। ট্রেনিংয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ এটাও। অন্ধকারে চুপ করে দাঁড়িয়ে ঘরের ভিতর চলতে থাকা যাবতীয় ঘটনা দেখতে হবে!



যেভাবে হয় মনোরঞ্জন

আনন্দবাজারে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব বাড়িতেই একটা ‘আউট-হাউস’ থাকে। খালি ঘর, মেঝেতে চাটাই পাতা। এটাই খদ্দের মনোরঞ্জনের ‘ডেরা’। খদ্দের মানে মূলত নীমচ-মান্ডসোর হাইওয়ে আর মুম্বই-জয়পুর হাইওয়েতে যাতায়াতকারী ট্রাক-ড্রাইভারেরা। এখন অবশ্য আশপাশের গেস্টহাউস-হোটেলেও মেয়েদের ডাক পড়ে। রাস্তাচলতি অনেক গাড়িও মেয়েদের তুলে নেয়। সন্ধে নামার আগেই হাইওয়ের দু’পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন খিলাওয়ারিরা। প্রায় প্রত্যেকের হাতেই একটা করে টর্চ। অন্ধকার হাইওয়েতে ছুটন্ত ট্রাক, ম্যাটাডর, গাড়ির উপর এসে পড়ে টর্চের আলো। ওটাই ইঙ্গিত: এখানে পরিষেবা মিলতে পারে। খদ্দের-প্রতি মোটামুটি ২০০-৮০০ টাকা। খদ্দেরকে বাড়ির ডেরায় নিয়ে গেলে দর ঠিক করেন বাড়ির বাবা-দাদারাই।



জাপানের গেইশ এবং ভারতের খিলওয়াড়ি

বছর ছ’সাত আগে চমকে দিয়েছিল মার্কিন ছবি: ‘মেময়ার্স অব আ গেইশা’। ‘গেইশা’ মানে জাপানি ঐতিহ্যবাহী নারী ‘এন্টারটেনার’, শিল্পী। নাচ, গান, বাজনা, আদবকায়দা, ফ্লার্টিংয়ে তুখড়। আর অবশ্যই যৌনতায়। এ-ও জাপানের ‘পরম্পরা’। বাইরে এঁদেরও ভরপুর সামাজিক সম্মান। রাজকীয় জীবনযাপন।

এখানেও প্রশিক্ষণপর্ব রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ৮-৯ বছর বয়স থেকে শুরু হয় মেয়েদের শেখা। পুরোদস্তুর গেইশা হওয়ার আগের ধাপে থাকা নাবালিকাকে বলা হয় ‘মাইকো’। নাচ-বাজনার তালিমের পাশাপাশি কেমন ভাবে মুখে বিখ্যাত সাদা মেক-আপ করতে হবে, কেমন হবে চুল বাঁধা বা কিমোনো পরার স্টাইল, কী ভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে মোহিত করতে হবে পুরুষকেসব কিছুর টানা, কষ্টসাধ্য ট্রেনিং হয়। তবে মাইকো-র উত্তরণ হয় গেইশা-তে।

কিন্তু আজকের জাপানের গেইশারা ধাপে ধাপে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন আজকের ভারতের খিলাওয়ারিদের থেকে। জাপানের ফুলেফেঁপে ওঠা অর্থনীতি, বিপুল শিল্পোন্নতি এবং পরিচ্ছন্ন পুনর্বাসন নীতি গেইশাদের নতুন প্রজন্মের সামনে জীবনধারণের অনেক সরণি খুলে দিয়েছে। তাঁরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পার হচ্ছেন। কম্পিউটার চালাচ্ছেন, কলকারখানায়-শিল্পসংস্থায় চাকরি পাচ্ছেন। অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। কিছু শহর কিংবা রিসর্ট টাউনে কিছু গেইশা এখনও রয়ে গিয়েছেন। তাঁরাও কাজ করেন নিজেদের শর্তে, নিজেদের তৈরি নিয়মে, কারও যৌনদাসী হয়ে থাকেন না। যৌন পেশা চালাবেন না শুধু ‘এন্টারটেন’ করার কাজ করবেন, সেটা আধুনিক গেইশা নিজে ঠিক করেন। বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের নিজস্ব ইউনিয়ন অফিস রয়েছে। কোনও গেইশাকে ক্লাব বা পার্টির জন্য ভাড়া করতে হলে, স্টেজ পারফর্ম্যান্সের জন্য চাইলে বা পর্যটন কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হলে কাছাকাছি ইউনিয়ন অফিসে যোগাযোগ করে তাদের বেঁধে দেওয়া রেট ও সময় মেনে চুক্তি করতে হয়।



স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের ভুমিকা

১৯৯৯ সালে পুলিশ ‘নির্মল অভিযান’ চালু করল। বান্ছ্ড়া মেয়েদের এই পেশা থেকে বার করে স্কুল-কলেজে ভর্তি করা শুরু হল। গণবিবাহ আসর বসিয়ে অনেককে বিয়ে দেওয়া হল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগও ফিকে হয়ে এল। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে আর এক বার এগোনো হয়েছিল। অভিযান চালিয়ে হাইওয়ে থেকে ধরা হল ৮৮ জন খিলাওয়ারিকে। পুলিশ তাঁদের প্রস্তাব দিল: হয় জেলে চলো, নয়তো বিয়ে করো। নিজের পছন্দের ছেলে থাকলে ভাল, নয়তো পুলিশই ভাল ছেলে খুঁজে দেবে, যৌতুক হিসাবে দেবে ৬ হাজার টাকা। ৪৪ জন খিলাওয়ারি বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন। বাকিদের ‘জবালি’ প্রকল্পে পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। এক বছর কাটতে-না-কাটতে সেই প্রকল্পও মুখ থুবড়ে পড়েছে। নীমচ-মান্ডসোর হাইওয়ের ধারে আবার মেয়েদের ভিড় জমছে।



আনন্দবাজারে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির লিঙ্ক

http://www.anandabazar.com/10rabipro1.html

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.